Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

চোরের দশ দিন যায়, গেরস্তের এক দিন আসে না (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: সারফুদ্দিন আহমেদ।

চোর যখন টের পায় গেরস্তের বুদ্ধি বাড়ার চান্স নাই, তখন সে আর পালায় না। সে তখন প্রথমে টুক করে গেরস্তের ঘটি চুরি করে বুক চিতিয়ে ঘোরাফেরা করে। গেরস্ত যখন টের পায়, ততক্ষণে ঘটি বেচে খাওয়া শেষ। গেরস্ত চেঁচামেচি করে ‘সিন করে’ বসলে বা চোরকে ধরে ধোলাই দিতে গেলে আশি-নব্বই দশকের বাংলা ছবির শেষ দৃশ্যের মতো চোরের মাসতুতো ভাই চৌকিদার ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’ বলতে বলতে এসে হাজির হয়। সে চোরকে খানিক বকাঝকা করে অতি স্নেহসিক্ত শাসনের সুরে বলে, ‘মাসুদ, তুমি কি ভালো হবা না?’ এরপরও ঘটির শোকে গেরস্ত ফোঁপাতে থাকলে চৌকিদার বলতে থাকে, ‘ফোঁপান ক্যান? ঘটি গেছে তো কী হইছে? বাটি তো আছে। আমি তো আছি। চোর আর ঢুকতে পারবে না। এই যে আমি তারে পাকড়াও করলাম। আপনি নো টেনশনে ঘুমান।’ গেরস্ত ভাবে, কথা তো খারাপ না। বাটি তো আছে। সে ‘নো টেনশনে’ ঘুমায়। পরের রাতে দেখে বাটি নাই। তারপর আবার চেঁচামেচি। আবার চৌকিদারের আগমন। আবার ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’। আবার ‘মাসুদ, তুমি কি ভালো হবা না?’ বলে শাসানো। শেষমেশ গেরস্তকে চৌকিদারের ধমক, ‘মিয়া, ঘটি-বাটি সাবধানে রাখতে পারেন না!’

এভাবে চোরের ‘দশ দিন’ যায়। গেরস্তের ‘এক দিন’ আর আসে না।

বাংলাদেশে অন্তত দুই যুগ ধরে এই চোর-গেরস্তের ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলা চলছে। একটার পর একটা ‘দুই নাম্বার’ কোম্পানি আসছে। একের পর এক নিত্যনতুন কায়দায় তারা পাবলিকের বস্তা বস্তা টাকা মেরে দিয়ে চলে যাচ্ছে।

সবচেয়ে গালভরা নামের যে ব্যবসাপদ্ধতি খুব হিট করেছিল, তার নাম ‘বহুস্তর বিপণন’ পদ্ধতি। সংক্ষেপে এমএলএম। এ পদ্ধতি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির চেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের হাত ধরে। একেবারে প্রান্তিক ও মাটিবর্তী পর্যায়ের যে অর্ধশিক্ষিত অভাবী তরুণ ২৪ ঘণ্টা লুঙ্গি পরে থাকতেন, তাঁকেও এই কোম্পানি ২৪ ঘণ্টা টাই পরে সাহেব সাহেব ভাব ধরে কীভাবে গ্রাহকরূপী ‘মুরগি’ ধরতে হবে, তা হাতে–কলমে শিখিয়েছিল। বলা যায়, টাইয়ের বাজারে বিরাট সাড়া ফেলে দিয়েছিল তারা।

টাই পরা এই ডেসটিনি সাহেবরা প্রথমে তাঁদের বিপণনসংক্রান্ত একটা মতবিনিময় সভার আয়োজন করতেন। সেখানে স্থানীয় কলেজের অধ্যক্ষ বা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বা এ ধরনের ক্লিন ইমেজের সর্বজন শ্রদ্ধেয় লোককে এনে বিনা খরচে তাঁদের গ্রাহক ও বিপণনকর্মীর তালিকায় আনতেন। এই মানুষদের যে তাঁরা কার্যত স্থানীয় পর্যায়ের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ বানাচ্ছেন, তা সেই ভদ্রলোকেরা টের পেতেন না। তিন–চার দিন পর সেই সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির হাতে একটা হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট ধরিয়ে দিয়ে বলতেন, ‘স্যার, আপনার রেফারেন্সে যাঁরা গ্রাহক হয়েছিলেন, তাঁদের কাছে বিক্রি করা প্রোডাক্টের কমিশন এটা। এটা আপনার পরিশ্রমলব্ধ পাওনা।’ এত সহজে অর্থ পাওয়া যায় দেখে সেই শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিরা সক্রিয় হতে শুরু করেছিলেন। যেহেতু সমাজে তাঁরা সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত, সেহেতু তাঁদের সেখানে দেখে দ্রুত অসংখ্য মানুষ ডেসটিনির এমএলএম ফাঁদে পা দিয়েছিলেন।

এভাবে ডেসটিনির রফিকুল আমিনসহ কর্তাব্যক্তিরা পাবলিকের কাছ থেকে মাত্র ৪ হাজার ১১৯ কোটি টাকা মেরে দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে ডেসটিনি বন্ধ হলেও তাদের ৪৫ লাখ গ্রাহকের কেউই টাকা ফেরত পাননি। ঠিক একই তরিকায় এ কাজটি করে যুবক, ইউনি পে টুসহ বেশ কয়েকটি এমএলএম কোম্পানি। এর মধ্যে ২০০৬ সালে যুবক ২ হাজার ৬০০ কোটি এবং ২০১১ সালে ইউনি পে টু ইউ ৬ হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে উধাও হয়ে যায়। একই কায়দায় বারবার লোককে মুরগি বানানো কঠিন। তাই এখন টাউটরা তাদের বাটপারির ধরন বদলেছে। তবে ‘মূলনীতি’ ও ‘স্পিরিট’ তারা ঠিক রেখেছে।

অতি সম্প্রতি আবার পাবলিক ‘আমার ঘটি গেল’, ‘আমার বাটি গেল’ বলে বুক চাপড়ানি শুরু করেছে। না, এবার আর কোনো এমএলএম নয়। এবারের কায়দার নাম ‘ই-কমার্স’। এবার ইলেকট্রনিক্যালি পাবলিকের পয়সা ‘নাই’ হয়েছে। এ দফায় ইভ্যালি, ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, এসপিসি ওয়ার্ল্ড, নিরাপদ ডটকমসহ বেশ কিছু ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের অন্তত তিন হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। শুধু গ্রাহকই নন, মার্চেন্টদের থেকে পণ্য এনে সেই টাকাও পরিশোধ করেনি এই প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সমবায় সমিতির নামে দ্বিগুণ মুনাফার কথা বলে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে উধাও হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এহসান গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে কীভাবে দোজাহানের কামিয়াবি হাসিল করা যাবে এবং সেই প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলে কীভাবে মুনাফিক হওয়ার রিস্ক আছে, তা–ও আমরা ধর্মীয় মাহফিলের বক্তাদের মুখে শুনেছি। ২০০৮ থেকে ২০১৯ সময়ে ২৬৬টি সমবায় সমিতির গ্রাহকদের ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক, যুবকের ঘটনায় গঠন করা কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্ত, সমবায় অধিদপ্তর ও গ্রাহকদের দেওয়া তথ্যমতে, গত দেড় দশকে অন্তত তিন শতাধিক কোম্পানি গ্রাহকের ২০ হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। এসব ঘটনায় বহু মামলা হয়েছে। কোনো কোনো ঘটনায় আসামিরা আত্মগোপন করেছেন। কোনো কোনো মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাননি। টাকা না পেয়ে অনেক আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আবার গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের রাজার হালতে থাকার খবরও আমরা দেখতে পাই পত্রিকান্তরে। চিকিৎসার নামে কারাগার থেকে হাসপাতালে এসে অনলাইনে নতুন কোম্পানি খোলার তাদের পাঁয়তারাও।

ই-কমার্স কেলেঙ্কারির সবকিছুই হয়েছে প্রকাশ্যে, ডিজিটাল মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েবসাইট খুলে গ্রাহককে বিশাল ছাড়ে পণ্য দেওয়ার লোভ দেখিয়েছে। লেনদেন করেছে ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এমন সব প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে বর্তমানে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা শপিং, কিউকম, এসপিসি ওয়ার্ল্ড, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, সিরাজগঞ্জ শপ, নিরাপদ ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, এসকে ট্রেডার্স, প্রিয়শপ, ২৪ টিকিট ডটকম, গ্রিনবাংলা, এক্সিলেন্টবিগবাজার, ফাল্গুনিশপসহ প্রায় ২৬টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক, পুলিশ, র‍্যাব, সিআইডিসহ সরকারের অন্তত ৯টি সংস্থা।

এসব প্রতারণার মৌলিক থিওরি কিন্তু একই। এই প্রতারকেরা সবাই জাতীয় পর্যায়ে ক্লিন ইমেজ আছে, এমন কোনো লোককে তাদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানায়। সেই লোককে দেখে জনগণ বিনিয়োগের আস্থা পায়। পরে ধোঁকা খায়।

অতি আনন্দের কথা, দেশের অর্থনীতি এতটাই এগিয়েছে যে এখন ১০-২০ কোটি টাকার দুর্নীতি বা প্রতারণার এখন আর খবরের কাগজে পাত্তা পায় না। এমনকি শতকোটি টাকার দুর্নীতির খবরও জলভাত হয়ে গেছে। হাজার কোটি টাকার নিচে দুর্নীতি হলে সেটাকে সবাই ‘ছোট চোখে’ দেখে। পাবলিক থেকে প্রতারক—সবাই বোঝেন, চোর ধরার জন্য যে চৌকিদার আছেন, তাঁরাই এখন আর দুর্নীতি নিয়ে ভাবিত নন। ‘প্রভাবশালী মাসুদরা’ এসব করেই থাকে—এ কথা সাধারণ মানুষের বিশ্বাসে বসে গেছে এবং সেটিকে তারা ‘স্বাভাবিক’ বলে গণ্য করছে। সে কারণেই দুর্নীতির হাতেগরম প্রমাণ থাকার পরও মোটা অঙ্কের টাউট–বাটপারের সাধের ‘সততার প্রতীক’ ভাবমূর্তিটি ধুলায় লুটায় না।
বিজ্ঞাপন

প্রশ্ন ওঠে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা বা গ্রাহকেরা ঝুঁকির প্রকৃত চরিত্র সত্যিই কি জানত না বা জানে না?

ব্যাংক থেকে ডাকঘর বা যেকোনো বিধিবদ্ধ সঞ্চয়ের সব পরিচিত পথে যেখানে বার্ষিক ১০ শতাংশের কম সুদ পাওয়া যায়, সেখানে কোনো সংস্থা এক বা দুই বছরে আমানত দ্বিগুণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানই বলে দেয়, এখানে ঘাপলা আছে। যে পণ্যের দাম ৮০ হাজার টাকা, তা কেউ যদি ২০ হাজার টাকায় দিতে চায়, তখন স্বাভাবিক ভাবনাই বলে দেয়, এখানে জালিয়াতি আছে। যুক্তির খাতিরে বলাই যায়, যাঁরা এটা বুঝেও এসব প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখেছেন বা এসব প্রতিষ্ঠানে পণ্যের আশায় আগাম টাকা ঢেলেছেন, তাঁরা আসলে জুয়া খেলেছেন। নিজের টাকায় জুয়া খেলা যেকোনো লোকের ব্যক্তিগত অধিকার। সেই জুয়ায় হারলে তার দায়ও ব্যক্তিগত।

কিন্তু এসব সংস্থা কীভাবে দিনের পর দিন বিনা বাধায় মানুষ ঠকানোর ব্যবসা করতে পারে, তার উত্তর খুঁজতে গেলে অভিযোগের আঙুল সরকারের দিকেও যায়। যেখানে সরকারের কর্তব্য ছিল এ ধরনের সংস্থায় টাকা ঢালার বিষয়ে মানুষকে সতর্ক করা, সেখানে সরকারের অনেক কর্তা ও নেতা প্রকাশ্যেই এই সংস্থাগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

এই জুয়া খেলতে গিয়ে আজ যাঁরা নিঃস্ব, তাঁরা স্বখাতসলিলে ডুবেছেন। লোভ তাঁদের ডুবিয়েছে। এই লোভ অর্থবান হওয়ার লোভ। ভালো থাকতে চাওয়ার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। ভালো থাকার ইচ্ছা যখন মানুষকে কাণ্ডজ্ঞানবিস্মৃত করে, তখন তা ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ১০০ টাকার জিনিস কীভাবে ১০ টাকায় দেওয়া যায়, এ প্রশ্ন না করার মধ্যে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আছে।

সব লোভই যে বন্ধ্যা, তা–ও নয়। ইভ্যালিতে টাকা দিয়ে অনেকে প্রথম দফায় প্রতিশ্রুত মাল পেয়েছে। তাদের প্রাপ্তি দেখে আরও অনেকের লোভ বেড়েছে। তারাও তখন টাকা ঢেলেছে। এ ধরনের কারবারে শেষ দফার বহু লোকের টাকা মার যাওয়াই হচ্ছে প্রথম দিকে টাকা ঢালা লোকের লাভের একমাত্র শর্ত।

এই সংস্থাগুলোকে ‘মাসুদ, তুমি কি আর ভালো হবা না’ টাইপের স্নেহমাখা ভর্ৎসনা করে, বড়জোর কিছুদিন হাজতে রেখে পরে বেকসুর খালাস দেওয়ার রীতি যত প্রতিষ্ঠা পাবে, জালিয়াত সংস্থার বাড়বাড়ন্ত তত হবে। সব মানুষকে লোভী হয়ে ওঠার উৎসাহ দেওয়া হবে। এই খেলা বিপজ্জনক। কারণ, লোভ কারোরই বড় কম নয়।

সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ