তালেবান ক্ষমতা দখলে নেওয়ার তিন সপ্তাহ পর খুলতে শুরু করেছে আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনেক জায়গায় শ্রেণিকেক্ষের মাঝে পর্দা দিয়ে ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা সেনা সরিয়ে নেওয়ায় তালেবান গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০ বছর পর তারা আবার আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে ক্ষমতায় থাকার সময় মেয়েদের শিক্ষা ও চাকরি করা নিষিদ্ধ করেছিল তালেবান। তবে এবার তারা কিছুটা নমনীয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তালেবান বলছে, ইসলামী আইন অনুযায়ী নারীদের সব অধিকারই তারা দেবে। তবে বাস্তবে সেটা কেমন হবে সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। খবর রয়টার্সের
আফগানিস্তানের বড় শহর কাবুল, কান্দাহার এবং হেরাতের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষে নারী শিক্ষার্থীদের আলাদা বসতে হচ্ছে। তাদের পাঠ দেওয়া হচ্ছে আলাদা এবং তাদের চলাচল সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট এলাকায়।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আঞ্জিলা ক্লাসে ফিরে শ্রেণিকক্ষ পর্দা দেখার পর বলেছেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। যখন ক্লাসে ঢুকি, আমার তখন ভয় লাগছিল। আমরা ধীরে ধীরে ২০ বছর আগের সময়ে ফিরে যাচ্ছি।
আঞ্জিলা জানান, তালেবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার আগেও ছাত্র- ছাত্রীরা ক্লাসে আলাদাই বসত। কিন্তু এখন মাঝখানে পর্দা দিয়ে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
ক্লাস কীভাবে চালাতে হবে, সে বিষয়ে আফগানিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সমিতির পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা করে দেওয়া হয়েছ। ছাত্রীদের হিজাব পড়া এবং তাদের জন্য আলাদা প্রবেশ পথ রাখতে বলা হয়েছে সেখানে।
নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী শিক্ষক রাখার কথাও বলা হয়েছে ওই নীতিমালায়। তাছাড়া মেয়েদের আলাদা করে পাঠ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অথবা পর্দা দিয়ে আলাদা করা শ্রেণিকক্ষের কথাও বলা হয়েছে সেখানে।
এটা আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের বেঁধে দেওয়া নিয়ম কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স।
এই নীতিমালার বিষয়ে এবং ভাগ করে দেওয়া শ্রেণিকক্ষের ছবি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে চলবে সে বিষয়ে তালেবান মুখপাত্র তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি।
অবশ্য তালেবান গত সপ্তাহেই বলেছিল, শিক্ষাদান আবারও শুরু করতে হবে, তবে ছাত্র ও ছাত্রীদের আলাদাভাবে রাখতে হবে।
তালেবানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আফগানিস্তানের ‘সীমিত সম্পদ এবং জনবল’ বিবেচনায় পর্দা দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ভাগ করে দেওয়া ‘খুবই যৌক্তিক’। শ্রেণিকক্ষের দুই পাশে একই শিক্ষকের পাঠ দেওয়াটাই ‘সবচেয়ে ভালো’ উপায়।
তালেবান শাসনে কী ধরনের নিয়ম-নীতি জারি করা হতে পারে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের হেরাত ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের একজন শিক্ষক জানান, তিনি এক ঘণ্টার ক্লাসকে দুই ভাগে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথমে মেয়েদের এবং পরে ছেলেদের পাঠ দেবেন।
তার কোর্সের জন্য নাম লেখানো ১২০ জনের মধ্যে সোমবার চার ভাগের এক ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন। অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আগেই দেশ ছেড়েছেন।
ওই শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীরা আজ খুবই মানসিক চাপে ছিল। আমি তাদের আসা-যাওয়া এবং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বলেছি, সামনের দিনগুলোতে নতুন সরকার এ বিষয়ে নীতিমালা ঠিক করে দেবে।
কাবুলের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শের আজম জানান, তার প্রতিষ্ঠান ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদা ক্লাস নিতে অথবা পর্দা কিংবা কাঠের বোর্ড দিয়ে শ্রেণিকক্ষ ভাগ করে নিতে বলেছে।
কিন্তু তালেবানের বিজয়ের মধ্যে দিয়ে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও বেড়ে যাওয়ার ফলে কতজন শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরবে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
তিনি বলেন, আমি জানি না কতজন শিক্ষার্থী ফিরবে। কারণ এখন আর্থিক সঙ্কট রয়েছে এবং বেশ কিছু শিক্ষার্থীর পরিবার কাজ হারিয়েছে।
সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৭, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,