Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি: নিজে গর্তে পড়ে তা আরও গভীর করছে সরকার (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: ডা. জাহেদ উর রহমান।

‘খাল কেটে কুমির আনা’—এই কথ্য বাংলা প্রবচনের কথা মনে পড়ল এই দফায় সরকারের জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা দেখে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এই কারণে ‘খাল কেটে কুমির আনা’ নয় যে এতে সরকারের প্রতি জনসমর্থন কমে যাবে; ক্ষমতাসীন সরকার এই ভীতি থেকে দীর্ঘকাল ধরে একেবারেই মুক্ত। এই ভয় অবশ্য ভারতে আছে ভালোভাবেই।

ভারতে নির্বাচনী রাজনীতিতে পণ্যমূল্যের প্রভাব
বাংলাদেশে যে সময় জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হলো, ঠিক তখন ভারতে মূল্য কমানো হয়েছে। এর কারণ হিসেবে ভারতীয় গণমাধ্যমে খুব স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অনেক রাজ্যে লোকসভা এবং বিধানসভার শূন্য আসনে নির্বাচনে বাজে ফলাফল করা বিজেপি সরকার জনরোষকে ভয় করছে। নিকট ভবিষ্যতে উত্তর প্রদেশসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির ভয়েই এই মূল্য কমিয়েছে তারা।

এর আগেও দুই বছর আগে বাংলাদেশের মানুষকে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছিল প্রায় ৩০০ টাকা কেজিতে। অথচ এই পেঁয়াজকেই ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে বোমার সঙ্গে তুলনা করা হয়। ‘অনিয়ন বম্ব’ লিখে গুগল করলে যে কেউ দেখতে পাবেন, ভারতে পেঁয়াজের উচ্চমূল্যজনিত সংকটের কারণে নির্বাচনী রাজনীতি কতটা প্রভাবিত হয়। দিল্লি বিধানসভার ১৯৯৮ আর ২০১৩ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের পরাজয়ের পেছনে যে পেঁয়াজের উচ্চমূল্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক ছিল, সেটা সচেতন মানুষমাত্রই জানেন।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনরা এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত
ভারতের মতো পরিস্থিতি হতে পারত বাংলাদেশেও, যেহেতু দেশে এখন স্থানীয় সরকারের সর্বনিম্ন ধাপ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি আর এর প্রভাবে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সরকারি দলকে এই নির্বাচনে ভরাডুবির ঝুঁকিতে ফেলতে পারত। বাংলাদেশে এখন এমনকি একটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারছে না। বিরোধী দল বিএনপি ঘোষিতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় মাঠে এই মুহূর্তে আছে আওয়ামী লীগই। এর আগেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর কিছু স্থানীয় সরকার ও উপনির্বাচনে বিএনপি যখন অংশগ্রহণ করেছিল, তখনো সেসব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ছিল না। যেহেতু বিরোধী দলের সঙ্গে একটা ন্যূনতম প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনাই নেই, তাই সরকারের জনগণের অসন্তুষ্টিকে পাত্তা দেওয়ার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।
ফলে আমি যে বললাম, ডিজেলের দাম বাড়িয়ে সরকার খাল কেটে কুমির আনছে, সেটা আসলে জনসমর্থন হারিয়ে নির্বাচনে পরাজিত হতে পারে, এই কারণে নয়। তবে সরকার একটা বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিপদটা বুঝতে হলে অর্থনীতির একটি বিষয়, ‘স্ট্যাগফ্ল্যাশন’ সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা দরকার। সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করছি।

জ্বালানির দাম বাড়ানো সরকারের জন্য সত্যিকারের বিপদ তৈরি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই বিপদ হচ্ছে, সমাজে ব্যাপকভাবে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়াজনিত ঝুঁকি। ভুখা মানুষ সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য চরম বিপদ তৈরি করতে পারে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেই টিসিবির ট্রাকের পেছনের লাইনের দৈর্ঘ্য কত দ্রুত বাড়ছিল, খেয়াল করেনি সরকার?

মূল্যস্ফীতি এবং বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি
স্ট্যাগফ্ল্যাশন নিয়ে কথা বলার আগে ইনফ্ল্যাশন (মূল্যস্ফীতি) সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলে রাখা যাক। সহজ কথায়, কোনো দেশের মুদ্রা যখন ক্রয়ক্ষমতা হারাতে থাকে এবং একই পণ্য কিনতে আগের চেয়ে অধিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়, সেই পরিস্থিতিকে বলা হয় মূল্যস্ফীতি। নানান কারণে এই পরিস্থিতি হতে পারে। সাধারণভাবে আমরা জানি, চাহিদার তুলনায় জোগান কম হলে এটা হতে পারে। হতে পারে আরও অনেক কারণে, তবে এই কলামের স্বার্থে দুটি কারণ জেনে রাখি—বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়া এবং কোনো কারণে পণ্যের উৎপাদন মূল্যের উল্লম্ফন।

মূল্যস্ফীতি বেশির দিকে থাকে সাধারণত এমন অর্থনীতিতে, যাতে প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি ভালো থাকে। একটা সহনীয় মাত্রার মূল্যস্ফীতি অর্থনৈতিক উন্নতির নির্দেশক এবং সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করে। উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার ২/৩ শতাংশের মধ্যে থাকা উচিত আর আমাদের মতো দেশে এটা থাকা উচিত ৫ শতাংশের নিচে। এর বেশি যাওয়াটা অর্থনীতির সুস্বাস্থ্যের পরিপন্থী, আর যদি সেটা ডাবল ডিজিট স্পর্শ করে, তাহলে বিপজ্জনক পর্যায়ের শুরু।

বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারি ডেটা অন্য সব সরকারি ডেটার মতোই মোটেও আস্থাযোগ্য নয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে সরকারিভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি। এটা আদৌ সঠিক তথ্য ছিল না। কারণ, গত বছরও এই সংখ্যাই বলা হয়েছিল। অথচ টিসিবির ২০২০ সালের ১ মার্চ ও সাম্প্রতিক বাজার দরের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সে সময়ের তুলনায় এখন মোটা চালের গড় দাম সাড়ে ৩১ শতাংশ, খোলা আটার ২০ শতাংশ, খোলা ময়দার ৩৩ শতাংশ, এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৪৩ শতাংশ, চিনি ১৯ শতাংশ, মোটা দানার মসুর ডাল ৩০ শতাংশ ও গুঁড়া দুধ ১৩ শতাংশ বেশি। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকা পেরিয়েছে। এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির আগেই বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।

সহনীয় মাত্রার মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও উচ্চ মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বিরাট বিপদ তৈরি করে। এর কারণ ‘ইনফ্ল্যাশন এক্সপেকটেশন’ অর্থাৎ মূল্যস্ফীতিজনিত প্রত্যাশা। মানুষ যেহেতু জানে, তার হাতে থাকা অর্থ দ্রুতই মূল্য হারিয়ে ফেলবে, তখন মানুষ ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে, এমন যেকোনো পণ্য এখনই কিনে ফেলতে চায়। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ আরও বেড়ে যায়। ওদিকে পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এবং অনেক বেশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা না থাকার কারণে পণ্য উৎপাদকেরা উৎপাদন কমিয়ে দেন এবং লোক ছাঁটাই করেন। তাতে আরও বেশি মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। এরপর ক্রমাগত এই দুষ্টচক্রটি চলতে চলতে পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে।

স্ট্যাগফ্ল্যাশন আসলে কী
মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে এক বিরল অবস্থা মাঝেমধ্যে দেখা যায়। মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি কিন্তু দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের পরিমাণ অনেক কম। এটাই স্ট্যাগফ্ল্যাশন। স্থবির অর্থনীতি আর মূল্যস্ফীতির মিলিত রূপ এটি।

বিষয়টি প্রথম ভালোভাবে বিশ্ববাসীর নজরে আসে ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের পর ব্রিটেন ও আমেরিকার অর্থনীতিতে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য অনেক পুঁজিবাদী দেশেও এই প্রবণতা দেখা যায়। দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে পরবর্তী বছরগুলোয় অনেক উঁচু পর্যায়ে চলে যায়। একই সঙ্গে সেসব দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে সংকোচন হচ্ছিল; কমে যাচ্ছিল কর্মসংস্থান।

ওই সময়ে মান্দার অর্থনীতিতে সরকারগুলো নগদ টাকার জোগান বাড়াচ্ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, এতে সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও দ্রুতই বিনিয়োগ বাড়বে এবং কর্মসংস্থান তৈরি হবে। কিন্তু দেখা গেল মূল্যস্ফীতি ঠিকই বাড়ল কিন্তু অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলো না। কেন এমন হলো, তার পেছনে অনেকগুলো কারণ আছে কিন্তু বিস্তারিত সেই আলোচনায় যাচ্ছি না। তবে প্রধান কারণটি এই কলামের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। সে সময় বিশ্বের জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক পশ্চিমাদের জন্য জ্বালানি তেল রপ্তানিতে অবরোধ দিয়েছিল। এতে তেলের দাম অত্যন্ত দ্রুত অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ফলে প্রতিটি পণ্য উৎপাদনের মূল্য বেড়ে যায়।

করোনা কি আরেকটি স্ট্যাগফ্ল্যাশন তৈরি করছে?

করোনা কিছুটা কমে আসার পর থেকেই সারা পৃথিবীতে এখন স্ট্যাগফ্ল্য্যাশন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। বিশ্বের নানান পণ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থাটি ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে দশকের পর দশক ধরে। কিন্তু করোনার লকডাউনের কারণে সেটি ভীষণ রকম সমস্যার মুখোমুখি হয়। তাই বহু অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে অনেক। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা জানিয়েছে, খাদ্যপণ্যের দাম এর মধ্যেই এই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ওদিকে দীর্ঘদিন পৃথিবীর অর্থনীতি মন্দার মধ্যে থাকার ফলে জ্বালানি উৎপাদকেরা তাঁদের উৎপাদন অনেক কমিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। এখন পরিস্থিতি দ্রুতই অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ার কারণে হঠাৎ করে সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই বর্ধিত চাহিদা। চাহিদার তুলনায় জোগানের পরিমাণ বেশ কম হওয়ার কারণে অনেক দ্রুত বেড়ে গেছে জ্বালানির দাম। সার্বিক পরিস্থিতিতে তেল উৎপাদকদের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল, যাতে তারা তেলের উৎপাদন বাড়িয়ে এই সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করেন। কিন্তু রাজি হয়নি ওপেক প্লাস। করোনার সময় আর্থিক সংকটের শিকার হওয়া তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন কমের দিকে রেখে এই উচ্চমূল্যের সুবিধা নিয়ে তাদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখছে।

জনগণ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেই গর্তে পড়েছিল। তবে তারা একা পড়েনি, পড়েছে সরকারকে সঙ্গে নিয়েই। হ্যাঁ, সরকারও আছে এই গর্তে। গর্তে পড়লে প্রথমে যা করতেই হয়, তা হচ্ছে গর্তটা যাতে আরও গভীর হতে না পারে সেই চেষ্টা করা। গর্তে পড়ার পরের জরুরি পরামর্শটি সরকার হয় ভুলে গেছে, নয়তো আদৌ পাত্তা দিচ্ছে না।

এই প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বহু দেশে স্ট্যাগফ্ল্যাশনের ঝুঁকি দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে অগ্রিম ভবিষ্যদ্বাণী করা হাতে গোনা অর্থনীতিবিদদের একজন নরিয়েল রুবিনি বলছেন, পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলো মারাত্মক না হলেও মোটামুটি পর্যায়ের একটি স্ট্যাগফ্ল্যাশনের কবলে আছে, যেটা সহসা শেষ হচ্ছে না।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) সম্প্রতি প্রকাশিত যৌথ জরিপে জানা গেছে, করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হওয়া মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ৩ কোটি ২৪ লাখ। সরকারি হিসাবেই করোনার আগে বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল পৌনে ৪ কোটি। অর্থাৎ নতুন দরিদ্রসহ বর্তমানে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে সাত কোটি।

জিডিপির প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় নিয়ে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে সরকার যা–ই বলুক না কেন, এটা এখন খুব স্পষ্ট যে করোনার আগেই শ্লথ হয়ে আসা অর্থনীতি করোনার অভিঘাতে আরও অনেক খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। ওদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতি শ্লথ থাকা এবং বৈদেশিক অনেক কর্মী তাঁদের সঞ্চয় দেশে পাঠানোর কারণে করোনার সময় দেশে ডলার রিজার্ভের বিরাট উল্লম্ফন হয়েছিল। করোনার প্রভাব কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক কর্মীদের টাকা আসায় ভাটার টান শুরু হয়েছে। ফলে এখন দেশে প্রতিদিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমছে। এর ফলে সরাসরি ভোক্তার কাছে যাওয়া আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আবার স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যের প্রায় সব ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো আমদানি করা পণ্য প্রয়োজন হয়, ফলে দাম বাড়ছে সেগুলোরও।

অর্থনৈতিক ধীরগতি, কর্মসংস্থানহীনতা এবং অতি দ্রুত কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া আর সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতি আমাদের এই বার্তা দেয়, বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবেই এক স্ট্যাগফ্ল্যাশন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এই পরিস্থিতিতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, আশা করি বুঝতে পারছি আমরা। দীর্ঘকালের অভিজ্ঞতায় আমরা জানি, এই দেশে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম যতটা বাড়ার কথা, বেড়ে যায় তার চেয়ে অনেক বেশি। স্ট্যাগফ্ল্যাশনের সময় দ্রব্যমূল্য বাড়ায়, এমন পদক্ষেপ নেওয়া স্রেফ মূর্খতা।

ভর্তুকি দেওয়াই হতে পারত সমাধান

ভর্তুকি দিয়ে এক বছর জ্বালানি তেলের মূল্য একই জায়গায় রাখতে গিয়ে সরকারের কম-বেশি ছয় হাজার কোটি টাকা খরচ হতো। অথচ গত সাত বছরে জ্বালানির নিম্ন মূল্যের কারণে পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আয় করেছিল ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ভর্তুকি না দিলেও সরকারকে কিন্তু কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে এমনকি এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না কিনেও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়।

জ্বালানির দাম বাড়ানো সরকারের জন্য সত্যিকারের বিপদ তৈরি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই বিপদ হচ্ছে, সমাজে ব্যাপকভাবে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়াজনিত ঝুঁকি। ভুখা মানুষ সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য চরম বিপদ তৈরি করতে পারে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেই টিসিবির ট্রাকের পেছনের লাইনের দৈর্ঘ্য কত দ্রুত বাড়ছিল, খেয়াল করেনি সরকার?

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবারই শেষ নয়, আরও হতে পারে, এ রকম একটি ইঙ্গিত করে পরিকল্পনামন্ত্রী মূল্যবৃদ্ধির পরদিন বলেছিলেন, আমরা যে জায়গায় চিন্তা করেছি; খাদ (গর্ত) আরও অনেক গভীর। আমি মনে করি, জনগণ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আগেই গর্তে পড়েছিল। তবে তারা একা পড়েনি, পড়েছে সরকারকে সঙ্গে নিয়েই। হ্যাঁ, সরকারও আছে এই গর্তে। গর্তে পড়লে প্রথমে যা করতেই হয়, তা হচ্ছে গর্তটা যাতে আরও গভীর হতে না পারে সেই চেষ্টা করা। গর্তে পড়ার পরের জরুরি পরামর্শটি সরকার হয় ভুলে গেছে, নয়তো আদৌ পাত্তা দিচ্ছে না।

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ১১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ