Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

তিনি ছিলেন একজন রানির রানি (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: আশীষ উর রহমান ঢাকা।

আমাদের দেশে রাজা-রানি নেই। রাজা–রানি আছে পুরাণে, রূপকথায়। পুরাণ, মহাকাব্য, মধ্যযুগের কাব্য, পুঁথি আর ঠাকুরমার ঝুলি থেকেই মূলত আমাদের শৈশব–কৈশোরের কল্পনার জগৎকে বর্ণাঢ্য করে তোলে রাজা-রানিদের হরেক রকম কাহিনি। পড়তে শেখার আগেই মা–বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানির মুখে যেসব গল্প শুনে শুনে আমাদের বড় হয়ে ওঠা শুরু, সেগুলোর প্রধান চরিত্রই ছিল রাজা-রানিরা। ঊনবিংশ শতকে কিছু কিছু রাজার অস্তিত্ব থাকলেও এখন আর রাজতন্ত্র নেই। অন্তত বর্তমান প্রজন্মের কাছে রাজ–রাজড়ারা গল্পেরই বিষয়। তারা চিরকাল কল্পনাতেই অমলিন রূপে বিরাজ করে।

পৃথিবীর অনেক দেশেই এখনো নিয়মতান্ত্রিক বা প্রশাসনিক রাজতন্ত্র টিকে থাকলেও রানি বলতে সাধারণভাবে সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথই সুপরিচিত ছিলেন। সে কারণে তিনিই আমাদেরও চোখে দেখা (টিভি পর্দায়) রানি। তাঁর সম্পর্কে অতীত কাল ব্যবহার করতে হলো, কারণ ইতিমধ্যেই পৃথিবীবাসী জেনেছেন, ৯৬ বছর বয়সী রানি ইহলোকের যাত্রায় তাঁর শেষ পদক্ষেপ ফেলেছেন। ব্রিটেনের ইতিহাসে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় সিংহাসন–অধিকারী ব্যক্তি। এমনকি বর্তমান সারা বিশ্বেও তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রপ্রধান।

পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যুর পর এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি উইন্ডসরের মাথায় রানির মুকুট উঠেছিল ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন স্বামী প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে কেনিয়া সফরের সময়। রানি হিসেবে তাঁকে একটি সাধারণ নাম গ্রহণ করতে বলা হলে তিনি ‌‌‘এলিজাবেথ’ নামটিই গ্রহণ করেন এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ হিসেবে পরিচিত হন।

রাজা-রানিদের জীবন স্বভাবতই বর্ণাঢ্য হয়ে থাকে। কিন্তু রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের দীর্ঘ ৭০ বছরের রাজকীয় কর্মজীবন বর্ণিল হয়ে উঠেছিল পৃথিবীর ইতিহাসের অনেকগুলো বাঁকবদল এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বহু তাৎপর্যময় ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করায়। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী। বিশ্বব্যাপী আরও বহু যুদ্ধ, বহু নতুন দেশের অভ্যূদয় প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়মত্রান্ত্রিকভাবে নিজের ভূমিকা রেখেছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও তিনি ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়েছেন। অপর দিকে তিনি দেখেছেন, একদার সূর্যাস্ত না হওয়া প্রবল প্রতাপের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ক্রমাগত ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়া। ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল মিলিয়ে প্রায় ২০টি দেশের স্বাধীন প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠা। চীনের কাছে হংকং হস্তান্তরসহ নানা ঘটনায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন রাজতন্ত্রের নিয়মানুসারেই। সর্বশেষ প্রত্যক্ষ করেছেন বেক্সিটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের সরে আসা। তিনি দেখেছেন প্লেগ থেকে করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে ওঠার মানবিক সংগ্রামও। জাতিসংঘের গড়ে ওঠা তাঁর স্বচক্ষে দেখা। তিনি সুসংগঠিত করেছেন কমনওয়েলথকে। মানুষের মহাকাশ বিজয় দেখেছেন, প্রযুক্তির অভাবিত অগ্রগতি, বদলে যাওয়া সমাজ ও মূল্যবোধ এমনকি তার ঐতিহ্যবাহী রাজপরিবারেও বহু অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন।

রানি তাঁর রাজকীয় নিয়মের কর্মপরিধির বাইরেও সক্রিয় ছিলেন নানাবিধ সেবা ও মানবিক কর্মে। পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ছয় শতাধিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার। এসব কর্মকুশলতায় ব্রিটিশ রানি বিশ্ববাসীরও হৃদয়সিংহাসন জয় করে নিয়েছিলেন। বিশ্বের বহু দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। সিংহাসনে আরোহন করার পরের বছরই তিনি স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছিলেন আকাশ ও সমুদ্রপথে। অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় সে দেশের তিন–চতুর্থাংশ মানুষ তাঁকে দেখতে এসেছিল।

রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সবচেয়ে বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তিনি আমাদের বাংলাদেশেও চার দিনের সফরে এসেছিলেন ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে। সে সময় তিনি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বনির্ভর গ্রাম ও গ্রামীণ জনজীবন দেখতে। রানিকে মুড়ি ভেজে দেখিয়েছিলেন গ্রামের বধূরা। তিনি দেখেছিলেন পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্য। রানির আগমন উপলক্ষে সেই অজপাড়াগ্রামের যথেষ্ট উন্নয়নও হয়েছিল। রাস্তা পাকা করা হয়েছিল, বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেই ভ্রমণের সূত্র ধরে পরে আরও উন্নয়ন হয়েছিল গ্রামটির। গড়ে উঠেছিল অনেক কলকারখানা।

শুধু ব্রিটেন নয়, আরও ১৪টি দেশের রানি ছিলেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। নিজে দেশের ১৫ জন প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। অন্তত ডজনখানেক মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বসবাস করতে দেখেছেন হোয়াইট হাউসে। আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁর প্রাসাদে। তবে প্রচারের আলোর মধ্যে থেকেও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন অনেকটাই প্রচারবিমুখ। গণমাধ্যমে খুব বেশি সাক্ষাৎকার দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। কোনো সফর বা গণ–অনুষ্ঠানেও সেভাবে তিনি বক্তৃতা দিতেন না। ধর্ম বা রাজনীতির বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা থেকেও সংযত থাকতেন তিনি।

রাজকীয় পারিবারিক জীবনেও অনেক ঝড়ঝাপটা সামাল দিতে হয়েছে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে। বড় রাজকুমার যিনি এখন সিংহাসনে আরোহণ করবেন, সেই যুবরাজ চার্লসের সঙ্গে রাজকুমারী ডায়ানার বিয়ে দিয়েছিলেন ১৯৮১ সালে, যাকে সারা দুনিয়া রূপকথার বিয়ে বলে অভিহিত করেছিল। ১৯৯৬ সালে সেই বিয়ে ভেঙে গেল চার্লস ও ক্যামিলা পার্কারের প্রণয়ে। এসব ঘটনা এবং ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসের সুরঙ্গ পথের গাড়ি দুর্ঘটনায় ডায়ানার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর রাজপরিবারের সব সংকট সামাল দিতে হয়েছিল তাঁকে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন মেজ ছেলে রাজকুমার অ্যান্ড্রুর উশৃঙ্খল জীবনযাপনের ঘটনায়। সর্বশেষ দেখতে হয়েছে নাতি হ্যারির রাজপরিবার ত্যাগ করে যাওয়ার ঘটনাও।

অন্যদিকে জীবনসায়াহ্নে এসে তাঁকে বহন করতে হলো মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রেমে পড়া একদার প্রমাস্পদ এবং পরবর্তীকালে সুদীর্ঘ ৭৪ বছরের দাম্পত্যসঙ্গী ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের চিরবিদায়ের বেদনা। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল ১৯৪৭ সালে, ডিউক ৯৯ বছর বয়সে চলে গেলেন গত বছর এপ্রিলে। ডিউক নিজের অতিসম্ভাবনাময় নৌসেনা কর্মজীবন এবং পারিবারিক রাজকীয় উপাধি ত্যাগ করে সব সময় ছায়াসঙ্গী হিসেবে আগলে রাখতেন রানিকে। রাজকার্য পরিচালনায় স্বামীর এই সহযোগিতার কথা রানি উল্লেখও করেছেন বিভিন্ন রাজকীয় অনুষ্ঠানে। দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে হারানোর বেদনা রানিকে আচ্ছন্ন করেছে অবশ্যই। কিন্তু রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী রানির কোনো শোকাশ্রু, কোনো মুহ্যমান মুখাবয়ব প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। অসাধারণ হাসি ছিল তাঁর মুখে। রানিকে সব সময় দেখা গেছে তাঁর সেই চিরচেনা হাস্যোজ্বল মুখে। এই তো নিয়ম যে শোক সহ্য করতে হয় গোপনে–নিভৃতে আর প্রকাশ্যে করতে হয় কেবল আনন্দ।

রানির মৃত্যুতে বিশ্বনেতারা ইতিমধ্যেই শোক প্রকাশ করেছেন। সব দেশের সংবাদমাধ্যমেই তাঁর মৃত্যু এখন প্রধান সংবাদ। সারা বিশ্বে সুপরিচিত থাকায় রানির মৃত্যুর বার্তা সৃষ্টি করেছে এক বৈশ্বিক শোকের আবহ। বিবিসির খবরে দেখা গেল, রানির মরদেহ স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রসাদে থাকলেও অশ্রুসিক্ত বহু লন্ডনবাসী এসে সমবেত হচ্ছেন বাকিংহাম প্রাসাদের সামনে। সেখানে ফটকে ছোট একটি নোটিশে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর সংবাদ ঝুলিয়ে দিয়ে যান কালো পোশাক পরা দুই রাজকর্মচারী। শোকাভিভূত নাগরিকেরা পুষ্পস্তবক এনে রাখেন তার সামনে। বৃষ্টি হচ্ছিল তখন। ভাষ্যকারেরা বলছিলেন, প্রকৃতিও যেন অশ্রুবর্ষণ করছে রানির প্রয়াণে। বৃষ্টির ধারা আর জনগণের অশ্রু মিশে যাচ্ছিল একাকার হয়ে। এমন সময় দেখা গেল বাকিংহাম প্রাসাদের ওপর আকশজোড়া একটি রংধনু ক্রমেই সাত রঙের বর্ণালি মেলে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। শোকাভিভূত মানুষের থেকে ক্যামেরার চোখে গেল রংধনুর দিকে। রানির বর্ণময় জীবনই যেন প্রতিভাত হলো প্রকৃতির এই বর্ণবিভায়।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ শতায়ু হবেন, এমন আশা ছিল। খুব কাছে এসে জীবনের ক্রিজ থেকে সরে গেলেন তিনি। ক্রিকেট তো তাঁর দেশেরই খেলা। ক্রিকেট মাঠে যেমন তিন অঙ্কে পৌঁছানো কঠিন, ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে ততোধিক। সেঞ্চুরি স্পর্শ করা না হোক, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বহু শতাব্দী মানুষের স্মৃতিতে রানি হিসেবে সজীব থাকবেন। অন্তত তাঁর অধস্তন তিন প্রজন্মের (বর্তমান রাজা চার্লস, তাঁর পুত্র যুবরাজ উইলয়াম এবং পরবর্তীকালে তদীয় পুত্র জর্জ) মধ্যে কারও রানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। রানি এখন ইতিহাস। সময় যাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। ইতিহাস থেকে রানির হাস্যোজ্জ্বল মুখ অনেকটা রূপকথার রানির মতো হয়েই উঠে আসবে ভবিষ্যতের মানুষের মনের মনিকোঠায়। রূপকথা ইতিহাস নয়, তবে ইতিহাসের অনেক উপাদানই থাকে রূপকথায়, তা থেকে সৃষ্টি হয় কিংবদন্তির। রানি নেই, রানি পরিণত হলেন কিংবদন্তিতে।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: সেপ্টম্বর ০৯, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ