Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট।

Share on Facebook

আলোর পরশ – সংগ্রামী লাহিড়ী – ব্ল্যাক হিস্ট্রি মান্থ ফেব্রুয়ারি মাসের লেখা
—————————-
“খুব বড় বিপদ আসছে, বুঝলি? কাগজে দেখলাম, এক ভয়ঙ্কর টেররিস্ট জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে। এই গভর্নমেন্টএর ওপর আর তো ভরসা রাখা যায় না। এমন একজন লোক ছাড়া পেলে কী হতে পারে একবার ভেবে দেখেছিস?” বাবা খবরের কাগজখানা হাতে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলের ধারে এলেন।
ফেব্রুয়ারি মাস, দক্ষিণ গোলার্ধে গরমকাল। গরমে প্রাণ আইঢাই। স্কুল থেকে ফিরেই জেলডা ছোটে বাড়ির পিছনে সুইমিং পুলে। সাঁতার কাটতে ভালোবাসে খুব। আদরে মানুষ হওয়া মেয়ে, বাবা-মা সবকিছুতেই উৎসাহ দেন, জীবন চলে প্রজাপতির পাখনার ছন্দে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় তার রাষ্ট্রে সবকিছুই মানুষের চামড়ার রং দিয়ে নির্ধারিত হয়। এমনটাই দেখে অভ্যস্ত সে। সাদা মানুষ সবার ওপরে। তাই তাদের মত সাদা মানুষের জন্যে আলাদা ক্লাব, আলাদা পার্ক, আলাদা সমুদ্রতট। স্কুল কলেজও আলাদা। বলতে নেই, ভালোই বাসে সে এই ব্যবস্থা, যার পোশাকী নাম আপার্টহেড (apartheid)। কেমন নিশ্চিন্তে নিজেদের মধ্যে নিজেদের নিয়ে থাকা যায়, কালো মানুষগুলোর সঙ্গে মোটেই মুখোমুখি হতে হয় না। সত্যি বলতে কী, ওদের নিয়ে মাথা ঘামায় না কেউ। গায়ের রংই তো দেখিয়ে দিচ্ছে কারা উঁচুতলার মানুষ। প্রিটোরিয়ায় লা গ্রাঞ্জ পরিবারের খাবার টেবিলে সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়ে গল্পগুজব করে। তাদের ভাষা আফ্রিকান্স, পশ্চিম জার্মানির ভাষা। কালো মানুষদের নিয়ে কোনো কথাই ওঠে না। নিজেদের নিয়ে, আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছিমছাম, সুখী এক মধ্যবিত্ত পরিবার। যেটুকু খবর আসে ওই খবরের কাগজের মাধ্যমে।
বাবার কথা শুনে তাই আশ্চর্য হয় জেলডা।
“কে বাবা? কার কথা বলছো?”
বাবার মুখ চিন্তিত, “তুই জানিস না তার কথা। আমরাও যে লোকটাকে খুব জানি তা নয়। ওই যেটুকু আমাদের স্কুলে আর চার্চে শিখিয়েছে, সেটুকুই। কালোচামড়ার ওই লোকটা আমাদের পয়লা নম্বরের শত্রু। দুনিয়ায় সাদা মানুষরাই যে সেরা জাত, সেটা ওই গোঁয়ারগোবিন্দ মানবে না। সেই জন্যেই ওকে জেলে পুরেছিল। তা সেও তো আজ সাতাশ বছর হল।”
“সাতাশ বছর জেলে? বাবা?” জেল্ডার বিস্ময় বাঁধ মানতে চায় না।
“উকিল হয়েছিল ও। ওকালতি পাশ করেছিল, তা সে আজ থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে। তখন থেকেই নাকি বলে আসছে গায়ের রং দিয়ে মানুষকে ভাগ করা চলবে না। বুঝে দ্যাখ একবার, ওদের সঙ্গে আমাদের একই স্কুলে পড়তে হবে, একই ক্লাবে মেলামেশা করতে হবে, একই বিচে স্নান করতে হবে – মামার বাড়ির আবদার!”
“সত্যিই তো, এসব কী কথা?” তার মনটাও বিরূপ।
“ঐজন্যেই তো সরকার ওকে রবেন আইল্যান্ডের জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। একেবারে যাবজ্জীবন। ঠিক করেছিল।”
“যাবজ্জীবন? তাহলে এখন ছেড়ে দিচ্ছে কেন বাবা?”
“পৃথিবী এগোচ্ছে যে, মিলেনিয়াম প্রায় শেষ হতে চললো, এখন নাকি গায়ের রঙের বিচার আর চলবে না। কালো মানুষরা সবাই একজোট। তাদের সঙ্গে পোঁ ধরেছে দুনিয়ার অন্য সব দেশগুলো। প্রেসিডেন্ট ক্লার্ক ভয় পাচ্ছেন, আর বেশিদিন ওকে আটক করে রাখলে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। খুব বিপদ আমাদের।”
সেদিন আর পুলে বেশিক্ষণ থাকা হয় না। উঠে পড়ে জেলডা। মনটা যেন কিসের আশংকায় ভার হয়ে আছে। তাদের সমকক্ষ কিনা ওই কালোকোলো মানুষগুলো?
উনিশশো নব্বই সালের ফেব্রুয়ারী মাসের এগারো তারিখে সেই কুখ্যাত ‘টেররিস্ট’ মানুষটি ছাড়া পেয়ে বেরিয়ে আসে। গোটা দুনিয়ায় সে কী মাতামাতি, সেলিব্রেশন!
কাটে আরো কয়েকবছর। চোখের সামনে কতকিছু বদলে যায়। আপার্টহেড (apartheid) নিয়ম কড়া সমালোচনার মুখে – তুলে দিতেই হবে। প্রেসিডেন্ট ক্লার্কের সঙ্গে নিত্যদিনের দরকষাকষি। তৈরী হয়েছে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস। সবকিছুর মূলেই সেই ছাড়া পাওয়া টেররিস্ট। জেলডা-র মনটা বিরূপ হয়ে থাকে। শেষে নির্বাচনে ওদের লড়তে দিতেই হল, আটকানো গেল না কিছুতেই। বাঁধ একেবারে ভেঙে পড়েছে। বন্যার জলের মত ধেয়ে এল মানুষের সমর্থন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ইতিহাস তৈরী হল প্রথম কালো প্রেসিডেন্টের হাত ধরে!

ততদিনে পুল থেকে বেরিয়ে চাকরি খোঁজার সময়। জেলডা-র পড়াশোনা শেষ। বাবা-মা র সঙ্গে থাকে, বাড়ি থেকে বেশি দূরে যাবে না। তাই কাছাকাছিই খুঁজছে। প্রিটোরিয়ার ক্যাপিটল বিল্ডিংএ গেল ভাগ্য পরীক্ষা করতে। চাকরির অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছে এক সরকারি দপ্তরে। ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বসে আছে। হঠাৎ প্রেসিডেন্টের প্রাইভেট সেক্রেটারি বেরিয়ে এলেন।
“আমাদের একজন টাইপিস্ট চাই, এক্ষুণি, এই মুহূর্তে।”
কি মনে হতে জেলডা হাত তুললো, “আমি টাইপ করতে জানি।”
“গুড।”
ডাক পড়লো একটা ঘরে।
“এটা প্রেসিডেন্টের প্রাইভেট অফিসে একটা কাজ। তুমি কি রাজি আছো?”
জেলডা মাথামুন্ডু কিছু বোঝে না তবে এটুকু জানে যে প্রেসিডেন্টের প্রাইভেট অফিস ইউনিয়ন বিল্ডিংএ। মা-বাবার বাড়ির খুব কাছে। রাজি হয়ে যায়।
প্রথম দিন কাজে যোগ দিতে গেছে, প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারির কাছে গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে। ঘরে ঢুকতে যাবে, বেরিয়ে এলেন একদল মানুষ। প্রেসিডেন্টও আছেন সে দলে। জেলডা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রায় ধাক্কা খায় আর কী!
লম্বা কালো মানুষটি তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। জেলডা বুঝতে পারে না তার কি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাত মেলানো উচিত? সামান্য টাইপিস্ট সে।

দ্বিধায় পড়েও হাত বাড়িয়ে দেয়, “সুপ্রভাত, প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলা।”
কী যেন বললেন নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কালো প্রেসিডেন্ট।
জেলডা একটা বর্ণও বুঝতে পারছে না, নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না তার। কী বললেন প্রেসিডেন্ট?
“এক্সকিউজ মি মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আরেকবার বলবেন?”
স্মিত মুখে সৌম্য মানুষটি আবার বললেন কথাগুলি।
জেলডা ততক্ষণে বুঝেছে, তার কান ভুল শোনেনি। প্রেসিডেন্ট ম্যান্ডেলা কথা বলছেন আফ্রিকান্স ভাষায়, জেলডা-র ভাষায়। তাঁর অত্যাচারীরা যে ভাষায় কথা বলে – “the language of the oppressor”.
সেই প্রথম দেখা। যে ঘটনার কথা ধরা আছে “Good Morning, Mr Mandela” নামের বইতে। জেলডা-রই লেখা।
সেই প্রথম মনে ধাক্কা দিয়ে গেল কিশোরীবেলায় বেলায় বাবার মুখে শোনা কথা। সাতাশ বছর! সাতাশ বছর এই মানুষটা বন্দীজীবন কাটিয়েছে! বাইরের পৃথিবীর থেকে যোগাযোগ ছিন্ন। কত কী ঘটে গেল, পাল্টে গেল, তার খবর পৌঁছলো না। ছ’মাসে একটিমাত্র চিঠি আসতে পারবে। একটিমাত্র চিঠি পাঠাতে পারবেন তিনি। তাও তো শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়া গেল না? জেল্ডা-র মাথা নিচু হয়ে আসে। দাঁড়ানো যায় না ওই সৌম্য মূর্তি আর অমলিন হাসির সামনে।

জেলডা-র জীবন এরপর অন্যধারায় বয়েছিল। আজীবন আপার্টহেড (apartheid)এর সুরক্ষায় লালিত শ্বেতাঙ্গী মেয়েটি কালো প্র্রেসিডেন্টের অফিসে টাইপিস্ট। তারপর পদোন্নতি হতে হতে একসময় ম্যান্ডেলার প্রাইভেট অ্যাসিস্টেন্ট। দীর্ঘ ষোলো বছর ধরে বিশ্বস্ত সহকারী, যতদিন ম্যান্ডেলা প্রেসিডেন্ট থেকেছেন। জেলডা-র নবজন্ম হয়েছিল।
ম্যান্ডেলা তাকে ডাকতেন ‘আলডিনা’ বলে। লোকে বলতো ‘ম্যান্ডেলার সাদা নাতনি’। সারাক্ষণ জেলডা তাঁর পাশে, কী দেশে, কী বিদেশে ছায়াসঙ্গী। ম্যান্ডেলার ডায়রি রাখা, খাওয়াদাওয়া, শরীরস্বাস্থ্যের দেখাশোনা, ভালোমন্দ সবকিছুরই ভার তার হাতে। “”Mandela’s rock” – এমনই নাম হয়েছিল তার। চব্বিশ ঘণ্টার কাজ, কিন্তু বড় ভালোবেসে করা। কালো মানুষটি মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন যে! তাই নিজের ঘরসংসারেরও সময় পাওয়া গেল না। কিন্তু জীবন ভরে উঠলো এক অন্য সুবাসে, মানবতার সুবাস। সে ভাগ্য ক’জনের হয়?

শেষ দেখা হল হাসপাতালে। বৃদ্ধ মানুষটি দুর্বল, জীবনীশক্তি নিভে আসছে। সে চোখের জল সামলে রাখতে পারছে না। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে কোনোমতে বলতে পারল, “আমি তোমার আলডিনা, তোমায় দেখতে এসেছি।”
সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিক। বোজা চোখ খুলে গেল। মুখে হাসি। চেয়ে আছেন, চেয়েই আছেন। জেলডা তার জীবনে এত উজ্জ্বল হাসি আর কখনো দেখেনি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ম্যান্ডেলার পরিবার। তাঁদেরও চোখে জল। “এতো উজ্জ্বল আর চওড়া হাসিটি ‘মাদিবা’ রেখে দিয়েছিলেন শুধু তোমারই জন্যে।” তাঁদেরই একজন বললেন। সেই শেষ দেখা।
তাঁর জীবনের এই আলো-জ্বলা দিনগুলোর কথা ম্যান্ডেলার ছায়াসঙ্গী জেলডা লা গ্রাঞ্জ লিখে গেছেন নিজের বইতে, “Good Morning, Mr Mandela”। বলে গেছেন নানা সাক্ষাৎকারে। বইটির নাম দিয়েছেন সেই কথাটি দিয়ে, যে সম্বোধন জেল্ডা-র জীবনে একদিন পরশমণি ছুঁইয়ে দিয়েছিল। এ লেখার তথ্যঋণ জেলডা-র লেখা সেই বইটি ও বিবিসি-র আউটলুক প্রোগ্রামকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকার।

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখঃ ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ