আঙ্গেলা ম্যার্কেলের হাত ধরে জার্মানিতে আধিপত্য গড়ে তুলেছিল মধ্য ডানপন্থী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এসডিইউ)। দেড় যুগের সেই আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে দেশটির সবচেয়ে পুরাতন দল সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টিকে (এসপিডি) সামনে নিয়ে এলেন ওলাফ শলৎস।
১৯১৮–১৯ সালে জার্মান বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এসপিডিই দেশটির সবচেয়ে পুরাতন দল। বহুবার তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করলেও ২০০৫ সালে ম্যার্কেলের আবির্ভাবের পর থেকে তাদের সেই চেহারা আর দেখা যায়নি। ম্যার্কেলের দলের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে তারা।
তবে রোববারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে এসপিডি। আর ম্যার্কেলের দল এসডিইউ পেয়েছে ২৪ শতাংশ ভোট। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এটি তাদের সর্বনিম্ন প্রাপ্ত ভোট।
নির্বাচনে এসপিডির এই সাফল্য নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক জার্মান যেটা অসম্ভব মনে করতেন, সেটাই বাস্তবে করে দেখিয়েছেন কয়েক বছর ধরে ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা এসপিডি নেতা শলৎস।
তবে জোট করে সরকার গঠনের জন্য শলৎসকে এখনো দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হবে। শলৎস ও এসডিইউ নেতা আর্মিন লাশেট দুজনই বলেছেন, ক্রিসমাসের আগেই সরকার গঠনের জন্য তাঁরা জোট গঠন করে ফেলবেন।
জার্মানির চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের অনেক বছরের জোটসঙ্গী ছিল শলৎসের দল। এটা এমন একটা পরিস্থিতি, যেটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হজম করতে হয়েছে তাদের। তবে শলৎস এমন ব্যক্তি, যিনি জাতীয় পর্যায়ে নিজের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছেন।
মহামারির সময় ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন ওলাফ শলৎস। সংকটের সময় নিজেকে অবিচলিত রাখার জন্য জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। জার্মানির পূর্বাঞ্চলে কিছুদিন আগেই ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ ও জরুরি সাহায্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বিতরণ হয়েছিল শলৎসের হাত দিয়েই। করোনার সময়ও একই কাজ করে গেছেন তিনি।
৬৩ বছর বয়সী শলৎস রাজনীতিক হিসেবে মৃদুভাষী। আবেগঘন বক্তব্য দিতে দেখা যায় না তাঁকে। এ কারণে জার্মানিতে অনেকেই তাঁকে ‘শলৎসমাত’ বলেন। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, শলৎসের এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই হয়তো ভোটাররা তাঁকে ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন। শলৎস ভিন্ন দলের নেতা হয়েও এসডিইউ নেতৃত্বাধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সরকার প্রধান হিসেবে ম্যার্কেলের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
একসময় এসপিডির সঙ্গে কাজ করতেন রাজনৈতিক পরামর্শক ফ্রাঙ্ক স্টাউস। তিনি বলেন, অবশ্যই ম্যার্কেল জার্মানির রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব রেখে গেছেন। শলৎস ম্যার্কেলের ‘ক্লোন’ নন। কিন্তু অনেকটা একই ধরনের।
শলৎসের জন্ম জার্মানির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য লোয়ার স্যাক্সোনিতে। তাঁর বেড়ে ওঠা জার্মানির অন্যতম ধনী শহর হামবুর্গে। পরবর্তী সময়ে হামবুর্গের মেয়রও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের রাজনীতি থেকেই তিনি জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন। শলৎস পরবর্তী সময়ে ম্যার্কেলের প্রথম মন্ত্রিসভায় শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফোর্সার গবেষক পিটার মাটুসচেক বলেন, শলৎস এমন ভোটারদের মনও জয় করেছেন, যাঁরা একটা সময় শুধু ম্যার্কেলের কারণে কট্টর রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটদের ভোট দিয়েছিলেন। এবার এসপিডি তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এনেছিল।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও ডয়চে ভেলে অবলম্বনে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন রাকিব হাসান।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,