টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) সূচকগুলোর ওপর কোভিড-১৯–এর প্রভাব আরও এক থেকে তিন বছর থাকবে। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ২৮টি এসডিজি সূচকের ওপর মাঝারি ও তীব্র মাত্রায় কোভিডের প্রভাব লক্ষ করা গেছে। এর মধ্যে ৫৭ শতাংশ সূচকে মাঝারি মাত্রায় ও ৪৩ শতাংশ সূচকে তীব্র মাত্রায় কোভিডের প্রভাব পড়েছে। অভিঘাত বেশি পড়ছে পিছিয়ে পড়া মানুষের ওপর।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত মূল প্রবন্ধে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর কোভিডের প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
উল্লেখযোগ্য এসডিজি সূচকগুলোর মধ্যে রয়েছে—দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনগোষ্ঠী, কৃষিবহির্ভূত অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান, কাজ বা পড়াশোনায় নেই এমন তরুণ গোষ্ঠী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু, নারীর ওপর গৃহনির্যাতন, স্যানিটেশন সুবিধা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি সুবিধা এবং জিডিপি-রাজস্ব অনুপাত ইত্যাদি।
মূল প্রবন্ধে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষের ক্রয়ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হবে। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। এই পিছিয়ে পড়া মানুষের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য তাদের ক্রয়ক্ষমতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি আয়ও বাড়াতে হবে।’
পিছিয়ে পড়া মানুষের আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে ৯টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো স্থানীয় টাকার মান স্থিতিশীল রাখা, সুদের হার সমন্বয় করা, নিত্যপণ্যের শুল্ক-কর কমানো; কর্মসংস্থান করলে করপোরেট কর হ্রাস; দাম নিয়ন্ত্রণে টিসিবির কর্মসূচি বিস্তৃত করা; বিদ্যুৎ জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মতো ভর্তুকি পাওয়া খাতগুলোর পুনর্বিন্যাস; সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারণ; বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) টাকা খরচে সাশ্রয়ী হওয়া এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
সার্বিকভাবে এসডিজি সঠিকভাবে চলছে কি না, তা নিয়ে তথ্যের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। এই বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কোভিড পরিস্থিতিতে এসডিজির সূচকগুলোর কী অবস্থা, তা জানতে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব আছে। এখন আর তথ্যের ঘাটতি নয়; তথ্যের অন্ধত্ব আছে। যেমন, বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ইস্যু রয়েছে। সামনে নির্বাচন। তাই মূল্যস্ফীতির ইস্যুটি রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে অতিমারী কী প্রভাব ফেলবে?’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য এবং বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের সমন্বয়ক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী।
সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দারিদ্র্যসীমার একটু ওপরে থাকা বহু মানুষ গরিব হয়ে গেছেন। সে জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ঢেলে সাজানো উচিত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে গত দুই বছরে বাজেট বরাদ্দ কমেছে। পরিবেশের ইস্যুটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু প্রমুখ।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ১১, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,