Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

নারী সম্পর্কে ভুল বার্তা যেতে পারে সমাজে

Share on Facebook

বিশিষ্টজনের অভিমত

সম্প্রতি বিভিন্ন পেশার কয়েকজন নারীকে গ্রেপ্তারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের যেভাবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছে এবং যেসব শব্দ ব্যবহার করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিশেষজ্ঞ, সমাজ-গবেষক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নারীনেত্রীরা। তারা বলছেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নেওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একই সঙ্গে ‘রক্ষিতা’ কিংবা ‘রাতের রানী’ হিসেবে আখ্যায়িত করাটা আইনবিরুদ্ধ এবং নারীর প্রতি অবমাননা। এ ধরনের তৎপরতা নারী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সমাজে ভুল বার্তা দেবে এবং ধর্মান্ধদের নেতিবাচক প্রচারণার সুযোগ করে দেবে।

বিশিষ্ট নাট্যকার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ সমকালকে বলেন, আমাদের সমাজব্যবস্থায় একজন নারীর চরিত্র হননের জন্য একটা স্থিরচিত্রই যথেষ্ট। যদি কোনো বন্ধুর সঙ্গেও একটা ছবি প্রচার হয়, সেটা ঘিরেই ওই নারীর চরিত্র নিয়ে নানা কথা ওঠে। যারা অভিনয় করেন, শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা করেন তাদের কাজের প্রয়োজনেই অনেক ছবি ওঠে। এই ছবিগুলোর উদ্দেশ্যমূলক ব্যবহার হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এ কথাটা বলছি এই জন্য যে, এ ধরনের বাস্তবতায় একজন নারী কোনো অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাকে আটক করা এবং গণমাধ্যমে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সংবেদনশীল হতে হবে। না হলে তার মিডিয়া ট্রায়াল হয়ে যায় মুহূর্তেই।

‘একজন মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই তিনি অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন না। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী প্রমাণ না হলে তাকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। অথচ এখন একজনকে যে অভিযোগে ধরা হচ্ছে তার চেয়ে বড় হচ্ছে ধরার আয়োজন এবং গণমাধ্যমে উপস্থাপন। যেমন- পরীমণির ক্ষেত্রে এমনভাবে অভিযোগের বর্ণনা করা হলো, মনে হচ্ছে এই মহামারির সংকটময় মুহূর্তে এর চেয়ে গুরুতর অপরাধ এই সমাজে এখন নেই,’ বলেন প্রবীণ এই নাট্যব্যক্তিত্ব।

মামুনুর রশীদ বলেন, ‘চয়নিকা চৌধুরী সমাজে পরিচিত মানুষ। তাকে একটা ফোন করলে তিনি নিজেই পুলিশের অফিসে যেতেন। তাকে এভাবে রাস্তা থেকে তুলে নিতে হবে কেন? এখন দেখা যাচ্ছে সংবাদপত্র, টেলিভিশনে নানা ধরনের গুজব খবর আকারে পরিবেশন করে পুরো সমাজেই একটা ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে ধর্ম ব্যবসায়ী মৌলবাদীরা সুযোগ নেবে। সমাজে নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আরও প্রকট হবে। একই সঙ্গে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার বিরুদ্ধেও রক্ষণশীল প্রচার-প্রচারণা ছড়িয়ে পড়বে।’

বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহ্‌দীন মালিক বলেন, আইন অনুযায়ী বিচার হয়ে দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে। আইনের এই মূল কথাটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ আমরা সবাই প্রায় ভুলে গেছি। আমরা এখন মিডিয়া ট্রায়ালে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে কাউকে জনমনে দোষী প্রমাণিত করতে পারলেই তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে বলে ধারণা করছে। পরীমণিসহ সাম্প্রতিক সময়ে যাদের ধরা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে এখন সে রকম বিচার হচ্ছে। এ রকম আমরা দেখেছিলাম ক্যাসিনোকাণ্ডের সময়। সম্ভবত আমরা মিডিয়া ট্রায়ালে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছি।’

জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর জন্য ছোট ঘটনাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা করোনা আর ডেঙ্গু। সরকার সময়মতো টিকার ব্যবস্থা করতে পারেনি। প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম পরিমাণ টিকা হতে নিয়ে গণটিকা কর্মসূচি শুরু করেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে সাত ডলারে টিকা না কিনে চীনের কাছ থেকে ১০ ডলারে কিনছে। আবার লকডাউনে নিম্ন আয়ের মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবেও কোনো ব্যবস্থা ছিল না। এখন ডেঙ্গুও বাড়ছে। এত সব ইস্যু থেকে মানুষের দৃষ্টি সরানোর জন্যই পরীমণি ইস্যু সামনে নিয়ে আসা। আমার এটাই মনে হয়। এর আগে পরীমণি তাকে হেনস্তার অভিযোগ করেছিল। এখন তার উল্টো রিঅ্যাকশন দেখা যাচ্ছে। এটা যে হবে, তা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যদি কেউ অপরাধ করে, আইন অনুযায়ীই তার বিচার হবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিচারের আগেই বিচার হয়ে যাচ্ছে। অপরাধ প্রমাণের আগেই তাকে গণমাধ্যমের সামনে অপরাধী হিসেবে বর্ণনা হচ্ছে। আমাদের দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী আদালতে অপরাধ প্রমাণের আগে কাউকে অপরাধী বলা যায় না। কাউকে ধরেই অপরাধী হিসেবে বর্ণনা করা সংবিধান ও আইনের লঙ্ঘন।

গত কয়েক দিনে যে নারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই যে আচরণ এবং উপস্থাপনের ধরন দেখা গেছে, তা নারীর প্রতি অবমাননাকর বলে উল্লেখ করেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। তার মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচরণ যেমন সংগত ছিল না, তেমনি গণমাধ্যমও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে খবর প্রচার করেনি। বরং অভিযুক্ত নারীর নামে অসংখ্য কথা অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে প্রচার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, এই নারীরা অনেককে সুযোগ দিয়ে কিংবা নিয়ে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন। এখন জানার বিষয় হচ্ছে, কারা তাদের সুযোগ দিয়েছেন, কারা ব্যবহার করেছেন? সমাজে তাদের অবস্থান কী? তাদের পরিচয় কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা গণমাধ্যম কেউই প্রকাশ করছে না। অভিযুক্ত নারীকে অসংবেদনশীলভাবে উপস্থাপনের কারণে সমাজে নারীর বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকেই উস্কে দেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একজন নারীকে আটক করে কোনো অবস্থাতেই তাকে রাতের রানী বলতে পারে না। এটা আইনি ভাষা নয় এবং প্রমাণ করে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা সম্পর্কে যথেষ্ট শিক্ষা বা জ্ঞান নেই। একজন যদি বিচারে অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবু তাকে রাতের রানী বলা যায় না। এর আগে বোট ক্লাবের ঘটনায় নাসির সাহেবকে গ্রেপ্তারের সময়ও তিনজন নারীকে গ্রেপ্তার করে রক্ষিতা উল্লেখ করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যখন রক্ষিতা শব্দটি উচ্চারণ করেন, তখন তিনি নিজের রুচি ও যোগ্যতা সম্পর্কে একটা খারাপ ধারণা দেন এবং নারী সমাজকে অপমান করেন। এটা বোঝার ক্ষমতা আছে কিনা, সেটাও একটা প্রশ্ন।

তিনি বলেন, ‘রাতের রানী যখন বলা হচ্ছে, তখন রাতের রাজাদেরও সামনে আনা হচ্ছে না কেন? দেখা যাচ্ছে, একজন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার বাসায় পরীমণি গেছেন এবং ১৮ ঘণ্টা থেকেছেন। এই কর্মকর্তাকে শুধু বদলি করলেই হয় না; বরং এই কর্মকর্তাদের গিয়ে গ্রেপ্তার, তদন্ত কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পরীমণিসহ যাদের ধরা হয়েছে, তাদের বাসা থেকে মদ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার ছাড়া আর কোনো অভিযোগ দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বরং যেভাবে অভিযোগ দিয়ে মামলা হয়েছে, সেটা কোনো সুনির্দিষ্ট অপরাধের অভিযোগের মধ্যেই পড়ে না। আর যদি তাদের সবার বাসায় এত মাদকদ্রব্য মজুদ হয়েই থাকে, তাহলে সেটা কীভাবে সেখানে পৌঁছাল? এতদিন এত ঘটা করে প্রচার করে, ক্রসফায়ারের নামে এত মানুষ হত্যা করে যে মাদকবিরোধী অভিযান চলল, তার মধ্য দিয়ে মাদকদ্রব্য আমদানি-বিক্রি কোনোটাই বন্ধ করা সম্ভব হয়নি, এটাই কি প্রমাণ হয় না?’

তিনি বলেন, একজন ব্যবসায়ীর পুত্র এক ব্যাংকের এমডিকে তুলে নিয়ে মারধর করে, বুকে পিস্তল ঠেকায়। তার বিচার কি আমরা দেখেছি? এই নারীদের সামনে অনেক বড় জীবন পড়ে আছে। তাদের ভুল পথে পা বাড়ানোকে অনেক বড় অপরাধ হিসেবে বর্ণনা করে তাদের বাকি জীবন ধ্বংস করাটা দায়িত্বশীলতার পরিচয় নয়, আইনের প্রয়োগও নয়। তারা যদি গঠনমূলক জীবনযাপন না করে তাহলে বুঝতে হয়, এ সমাজ তাদের স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনে যথেষ্ট দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে পারেনি।

সূত্র: সমকাল।
তারিখ: আগষ্ট ০৮, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ