Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

পরাশক্তির মর্যাদা পুনরুদ্ধারে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র কতটা সফল হতে পারবে (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:ড. মারুফ মল্লিক।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একটা উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে বিভিন্ন কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা। যুক্তরাষ্ট্রের আশপাশে কোনো শক্তিশালী শত্রু নেই, যার সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজের শক্তি দেখাবে। তাই নিজের ক্ষমতা, শক্তি ও সামর্থ্য প্রমাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বারবার আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরাশক্তি হিসেবে উত্থান। কিন্তু এই পরাশক্তির সূর্য এখন অস্তাচলে। ম্রিয়মাণ ভাবমূর্তিকে আবারও শক্তিশালী অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে জ্ঞানের জগৎ—সর্বত্রই আধিপত্য প্রমাণের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে অবস্থার খুব বেশি হেরফের হচ্ছে না। একসময় যুক্তরাষ্ট্রের কল্পিত শত্রু ছিল বামপন্থী বিপ্লবীরা। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুর আসনে চলে আসে ইসলামপন্থীরা। উভয়কেই যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন দেশে গিয়ে হামলা করে, যুদ্ধ করে, নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করে বৈশ্বিক মোড়লের ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করেছে। এভাবেই যুক্তরাষ্ট্র একাধিপত্য বিস্তার করেছিল।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পার্ল হারবারে জাপানের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে কোনো হামলা হয়নি। একমাত্র ইসলামি সংগঠন আল কায়েদার টুইন টাওয়ারে হামলা ব্যতিরেকে। বরং যুক্তরাষ্ট্রই বিভিন্ন দেশে গিয়ে হামলা করেছে এবং যুদ্ধ করেছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সফল হতে পারেনি। বরং সেই শত্রুর হাতেই যুদ্ধের ময়দান ফিরিয়ে দিয়ে লেজ গুটাতে হয়েছে। ভিয়েতনাম থেকে আফগানিস্তানে—একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাই।

ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অংশ নেয়নি। তবে এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কৌশলগত পরাজয়ের মুখে আছে। রাশিয়া শক্তি প্রয়োগ করে ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকা দখল করেছে। ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে রাজনীতি করছে রাশিয়া। গ্যাস সংকটে ইউরোপের এখন ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। সার্বিকভাবে জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে নাগরিকদের আয় থেকে ব্যয় বেড়েছে। জনজীবনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এসব কারণে ট্রান্স আটলান্টিক জোটের সম্পর্ক এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে।

ঠিক এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আল কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা বা তাইওয়ানে ন্যান্সি পেলোসির সফরকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনা যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন কোনো পথের ঠিকানা দেবে কি না, এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর আগে অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র নাসার জেমস টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশের ৪৬০ কোটি বছর আগের ছবি তুলে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল। পররাষ্ট্রনীতিতে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অর্জন প্রয়োগ করা হয়। তবে এসব পদ্ধতি শান্তিকালীন পররাষ্ট্রনীতিতে কার্যকর হয়। কিন্তু যুদ্ধ, অস্ত্রের ঝনঝনানি, হামলা, হত্যার এই সময়ে সফট পাওয়ার দিয়ে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করা কঠিন। তাই মহাকাশের ছবি খুব বেশি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেনি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেন যুদ্ধের চোরাবালি থেকে বের হয়ে আসতে আবার সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের ময়দানেই ফিরতে হলো।

জাওয়াহিরি হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রকে সম্ভবত সহায়তা করেছে একসময়ের শত্রু তালেবান। সঙ্গে পাকিস্তানও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম অবশ্য কিরগিজস্তানের কথা বলে তালেবান ও পাকিস্তানের ওপর থেকে চাপ কমানোর চেষ্টা করছে। তবে যার সহায়তা নিয়েই হোক জাওয়াহিরিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র যেন অনেকটা জানিয়ে দিল, ‘আমরা এখনো মরিনি। আমাদের শক্তি এখনো নিঃশেষ হয়নি।’ জাওয়াহিরিকে হত্যা করতে যুক্তরাষ্ট্র ২০-২২ বছর ধরেই চেষ্টা করছে। অবশেষে তারা সফল হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, কাবুলে সিআইএ ড্রোন হামলা করে জাওয়াহিরিকে হত্যা করেছে। কিন্তু আলাপটা হচ্ছে, জাওয়াহিরিকে মার্কিনদের হাতে তুলে দিল কে—তালেবান না পাকিস্তান? আবার এমনও হতে পারে উভয়েই জাওয়াহিরিকে মার্কিনদের হাতে তুলে দিয়েছে। তবে এটা নিশ্চিত পাকিস্তান বা তালেবানদের সম্মতি ছাড়া জাওয়াহিরিকে হত্যা করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অসম্ভব ছিল। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই হত্যাকাণ্ডÐনিয়ে আফগান শাসক তালেবানদের খুব বেশি প্রতিক্রিয়া চোখে পড়েনি। সম্ভবত তালেবানদের রাজি করিয়েই জাওয়াহিরিকে হত্যা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাই প্রথাগত কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তালেবানরা। আর ওদিকে ইমরান খানবিহীন পাকিস্তানের সম্মতি পেতে যুক্তরাষ্ট্রকে বিন্দুমাত্র ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কারণ, ইমরান পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে আফগানিস্তানে যেকোনো ধরনের হামলার বিপক্ষে ছিলেন।

জাওয়াহিরিকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ অব্যাহত রাখার বার্তা দিয়ে রাখল সবাইকে। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ শেষ হয়েছে ধারণা করে নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ কম। বরং সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের অংশ হিসেবে যেকোনো দেশে যেকোনো সময় যুক্তরাষ্ট্র হামলা করতে পারে। এ পথ আপাতত খোলা রাখল যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা সৃষ্টি করে চীনকে ব্যতিব্যস্ত রাখার নীতি অবলম্বন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিতে যদি চীন যুদ্ধের ফাঁদে পা দেয়, তবে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের স্বস্তির। কারণ, এ যুদ্ধে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইনসহ অন্য মিত্রদের নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের উসকানিতে সাড়া দেবে না। সামরিক মহড়া, শক্তি প্রদর্শন ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই চীনের কর্মকাণ্ড সীমিত থাকবে। চীন ইতিমধ্যেই তাইওয়ানের জলসীমায় যুদ্ধবিমানবাহী রণতরি মোতায়েন করেছে। পেলোসির তাইওয়ান ত্যাগের পর তাইওয়ানের আশপাশে জলসীমায় সামরিক মহড়া চালাবে। তিন দিনের এ মহড়া চলাকালে বিদেশি জাহাজ ও বিমানকে জলসীমা ও আকাশসীমায় প্রবেশ না করতে বলেছে বেইজিং।

এর মানে হচ্ছে আপাতত তাইওয়ান নিয়ে কোনো যুদ্ধ হচ্ছে না। যুদ্ধ না হলে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা সৃষ্টির প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত কার্যকর হবে না। বরং এ সুযোগে চীন তাইওয়ানের ওপর আরও বেসামরিক চাপ প্রয়োগের সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যেই তাইওয়ান থেকে পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কালোতালিকাভুক্ত করেছে।

শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, যদি যুদ্ধ শুরুই হয়, তবে তাইওয়ানকে ইউক্রেনের মতোই পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে। ইউক্রেনকে ন্যাটোভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে রাশিয়াকে যুদ্ধে নিয়ে আসা হয়েছে। রাশিয়া ঠিকই ইউক্রেনের কিছু এলাকা দখল করে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কোনোভাবেই ইউক্রেনকে সহায়তা করতে পারেনি। দূর থেকে কেবল হম্বিতম্বি করেছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

চীন তাইওয়ানে সামরিক অভিযান শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র নানা ধরনের হুমকি-ধমকি হয়তো দেবে। কিন্তু তাইওয়ান যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সিরিয়া, ইরাক ও আফগানিস্তানে বড় ও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে যুদ্ধ শুরু করার সক্ষমতা আগের মতো নেই। বিভিন্ন দেশে কল্পিত শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আর রাশিয়া বা চীনের মতো রাষ্ট্রীয় সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এক জিনিস নয়। আর চীন ও উত্তর কোরিয়ার সম্মিলিত শক্তির বিপক্ষে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হবে। ফলে চীন সহজেই তাইওয়ান দখল করে নিতে পারবে।

জাওয়াহিরির হত্যা বা তাইওয়ানের উত্তেজনা কি যুক্তরাষ্ট্রের হারানো অবস্থান ফিরিয়ে দেবে? সম্ভবত না। সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের নাম করে দুর্বল, দরিদ্র দেশগুলোতে হামলা করা যাবে বড়জোর। কিন্তু এতে অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো বিভিন্ন দেশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। অনেক দেশেই চীন বিনিয়োগ নিয়ে ঢুকে গেছে। ফলে চীনের দিক থেকে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বরং যুদ্ধবাজ পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রকে যদি পরাশক্তি হিসেবে টিকে থাকতে হয়, তবে যুদ্ধের কৌশল পরিবর্তন করে মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে জোরালোভাবে কাজ শুরু করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এবং সারা বিশ্বে কীভাবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়, এসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া দরকার। যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি যা যাওয়ার তা চলে গেছে। পরাশক্তি হিসেবে এখনো যতটুকু আছে, তা ধরে রাখতে হলে বিভিন্ন দেশের ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। কারণ, এই ফ্যাসিস্ট ও কর্তৃত্ববাদী শাসকদের বেশির ভাগই চীন-রাশিয়া অক্ষে চলে গিয়েছে। তাই এসব দেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করলে এরা আবারও যুক্তরাষ্ট্রের অক্ষে চলে আসতে পারে। তখন পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছুটা হলেও ভাবমূর্তি রক্ষা পাবে।

***ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ০৬, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ