Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

পরীমণি কথা- সব জাতিয় চিন্তা সংকট ছাপিয়ে জনগনের মাথায় পরীমণিকে রাখা হয়েছে (২০২১ )

Share on Facebook

লেখক: আফসানা বেগম কথাসাহিত্যিক

মামলা পাওয়া গেছে! অবশেষে এমন মামলা পাওয়া গেছে, যা আপনাকে কিছুদিন বা বহুদিনের জন্য দেশের সব রকম অপরাধ, পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, গুম অথবা বিচারবিহীন হত্যাকাণ্ড, দেশের অর্থ দেদার বিদেশে পাচারের সুব্যবস্থা, প্রায় সব ধরনের অপরাধীর শাস্তির বিধান করতে সরকারের ব্যর্থতার সুযোগে বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের হতাশা, প্রকাশ্যে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যার ধারণকৃত দৃশ্য ভুলিয়ে দেবে। সব ভুলে আপনি কেবল একটি দৃশ্যে মহানন্দে আটকে থাকতে পারবেন। পরিসদৃশ একটি মেয়েকে টানাহেঁচড়া করা হচ্ছে, কিছু মাদকের আর রসের সন্ধান পাওয়া আইন রক্ষাকারী বাহিনী তাঁর মুখ থেকে কথা বের করার জন্য নিজেদের আয়ত্তে রাখার সময়কাল বাড়িয়েই চলেছে। আনন্দে বিভোর হয়ে আপনি বুঝবেন, সমাজের কুলাঙ্গার আর দুশ্চরিত্র নারীদের একজন প্রতিনিধিকে শাস্তির দরজায় কড়া নাড়তে দেখলে কী ভীষণ আয়েশ লাগে, ভেতরে-ভেতরে কী প্রচণ্ড উত্তেজনা জেগে ওঠে…কেউ দুম করে লিখে প্রকাশ করে ফেলবেন, কেউ আবার সুড়সুড়ি লাগার মতো শিরশিরে অনুভূতিতে ঘুমাতে পারবেন না, জেগে জেগে ট্যাবলয়েডের জায়গায় প্রতিস্থাপিত দেশের মূলধারা গণমাধ্যমের রিপোর্ট দেখবেন আর পড়বেন।

ভাববেন, কী দারুণ রিপোর্ট হয়েছে পরীমনির হেরেমখানায় কারা যেতেন, বুর্জ খলিফায় সাত রাত যাদের সঙ্গে ছিলেন পরীমনি, প্রথম স্বামীর সঙ্গে এখনো ডিভোর্স হয়নি পরীমনির, শামসুন্নাহার স্মৃতি থেকে পরীমনি হয়ে ওঠার নেপথ্যের কাহিনি, নায়িকার আড়ালে খলনায়িকা! রিপোর্ট দেখতে গিয়ে আপনার শরীর-মনে চনমনে ভাব জেগে উঠবে, এত দিনে পৃথিবীর সমস্ত নষ্টা মেয়ের প্রতিমূর্তি আপনার সামনে উপস্থিত! যে জিঘাংসা পুষে আপনি দিনরাত ঘুরে বেড়ান, তা ঢেলে দেওয়ার এক পাত্র পাওয়া গেছে। সুযোগ পেলেই আপনার কাউকে তীব্র গালাগাল করতে ইচ্ছা করে, জীবনের ব্যর্থতা আর অবদমনের উপর্যুপরি আঘাতে আপনার কাউকে ভীষণভাবে মারধর করতে সাধ হয়, আজ সে সুযোগ এসেছে, সমস্ত রাগ কারও ওপরে ঝাড়ার সুযোগ…আহ্ কী আরাম!

ইচ্ছা হলে গুগলে ‘পরীমনি’ লিখে সার্চ দিয়ে দেখবেন সবচেয়ে বেশি মানুষ যা জানতে চায় তা হলো, ‘পরীমনির ধর্ম’। একমুহূর্ত চুপটি করে ভাববেন, মুসলিম একটা মেয়ে এই সব করল! লজ্জায় মাথা কাটা যাবে আপনার। ভাববেন, অন্য ধর্মের হলে আচ্ছামতো আরেক হাত দেখে নেওয়া যেত। সেসব থাক, পরীমনির কয়েকটা বিয়ের অনুসন্ধানী রিপোর্ট আর ঘনিষ্ঠ ছবি-ভিডিও আপাতত আপনার মন ভরিয়ে দেবে। কিন্তু গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত একটা মেয়ে কিনা শহরে এসে কোনো না কোনোভাবে জেঁকে বসবে, বিশাল বড়লোকি হাঁকাবে, কোটি কোটি টাকার গাড়ি কিনবে—এসব কোনো মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব! আপনিও তো তাঁর মতো একদিন গ্রাম থেকে ঢাকায় পা রেখেছিলেন। কই, ও রকম মুরোদ তো আপনার হলো না! তবে হ্যাঁ, ও রকম শরীর বেচা, নষ্টা মেয়েদের এসব হয়েই যায়। কিন্তু কে দেয় তাদের টাকা? কেন দেয়? এসব নিয়ে আপনি আবার মাথা ঘামাতে যাবেন না যেন! মাথায় চাপ পড়বে, ওসব ভাবার মুরোদও আপনার হবে না। তাই যত্নœকরে সেদিকটা এড়িয়ে যাবেন। এতেই সুবিধা। আপনি বরং মুখরোচক লিংকগুলোর নিচে চটপট পরীমনিকে ধর্ষণ করে সুখ পাওয়ার মতো কিছু মন্তব্য করে ফেলুন, কিংবা যারা ইতিমধ্যে সেখানে এসে তাকে শব্দে-বাক্যে চাবকে ধর্ষণ করে গেছে, তাদের বাহবা দিন। আর তারপর মোক্ষম মুহূর্তটি দেখতে ইচ্ছা করলে আয়েশ করে পরীমনিকে হাতেনাতে ধরার দৃশ্যটিতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিন, চার কোটির চেয়ে বেশিবার লোকে দেখেছে, সোজা ব্যাপার নাকি!

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এলিট সম্প্রদায় তাদের কালো পোশাক ভুলে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ বেশে পরীমনির বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। ভেতরে উৎকণ্ঠিত পরীমনি ফেসবুক লাইভে পুলিশের আর নানান মানুষের সাহায্য প্রার্থনা করছে। অবাক হয়ে লক্ষ করবেন, বাড়ির দরজায় অযাচিত উপস্থিতি আর হম্বিতম্বি দেখে মেয়েটা কি এতটাই উন্মাদ হয়ে গেছে যে বাড়িতে পরা ঢিলেঢালা পোশাকের ওপরে একটা কিছু না চড়িয়েই লাইভে…থাক, আপনি বরং যতটুকু দেখা যায়, দেখুন। পরীমনির ব্রেস্ট লাইন দেখুন, সিনেমায় চাইলে কতই দেখা যায়, কিন্তু এ তো লাইভ! এর আবেদন আলাদা। তাই তো গণমাধ্যম তাঁর বুকের ঠিক ওইখানটাতে ফোকাস করে, সেটাই স্থিরচিত্র করে ইউটিউবে তাদের লিংক ছাড়ে। আপনার আনন্দের সীমা থাকবে না। ক্ষোভেরও। এই মেয়েগুলো সিনেমায় কাপড় খোলে, সে অন্য কথা, তাই বলে পড়িমরি করে সাহায্য চাওয়ার পক্ষে এটা কোনো পোশাক হলো! পারলে আপনি নিজে গিয়ে তাঁর নগ্নতা ঢেকে দিয়ে আসতেন, কিন্তু দেখবেন, ওটাই বারবার রিওয়াইন্ড করে দেখতে আপনার ভালো লাগছে।

যাহোক, পোশাকের কথা বাদ, সবচেয়ে করিতকর্মা বাহিনীর প্রচুর সদস্য একসঙ্গে পরীমনির মতো পুঁচকে মেয়েকে যখন ধরতে গেল, খানিক আশ্চর্য হলে হতেও পারেন, পরীমনি কি তবে বাংলা ভাই কিংবা এরশাদ শিকদারের মতো ভয়ংকর কেউ? বিশ্বজিৎকে বা অভিজিৎকে যারা কুপিয়ে মেরেছে, তাদের মতো সুনির্দিষ্ট ভয়ানক দলের সদস্য? গুম-খুনের হোতা? বোমা বানানোতে ব্যস্ত জঙ্গি? কারখানার ফ্লোরে মানুষকে তালা দিয়ে পুড়িয়ে মারা মালিক? যখন জানবেন এর কোনোটাই নয়, তবু প্লিজ হতাশ হবেন না। আপনার খায়েশ মেটানোর ব্যবস্থা আছে। শিশুকাল থেকে সমাজ আপনাকে কী শিখিয়েছে? মদ আর নারীদেহের ব্যবসা সমাজের সবচেয়ে জঘন্য দুই কাজ। তার সঙ্গে যদি পরীমনির বিলাস আর পরির মতো মুখটাকে মেলানো যায়, তবে তো ছক্কা! অল্প দিনে দামি বাড়ি-গাড়ি ব্যবহার করা মেয়েটা দেহ ব্যবসা করত, মদের বোতল ছিল বাড়িতে, ভাবনার এই খোরাক দিলে আর কিছু লাগে নাকি?

আপনি স্বস্তি বোধ করবেন, এ দেশে আইন বলতে একটাই জরুরি, তা হলো মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন। ভাগ্যিস তা আছে, না হলে বিচিত্র অপরাধে জড়িত যাকে খুশি তাকে পুলিশ ধরত কী করে! পুলিশ গোপনে খবর পেয়েছিল যে পরীমনি কিংবা ইদানীং এ রকম অন্য মেয়েটেয়েদের কাছে ৭৫০ থেকে ৭৮০টি ইয়াবা আর ১২ থেকে ১৯টা মদের খালি বা আধা খাওয়া বোতল থাকে। খুবই গোপন খবর। কিন্তু যদি আপনার জানা থাকে যে এ দেশের সাড়ে সাত লাখ মানুষ প্রতিদিন নেশার দ্রব্য কেনে, তাহলে আপনার মনে কি প্রশ্ন আসবে না যে ওই কটা মাদকের জন্য যদি পুলিশের গোপন খবর পেতে হয়, তাহলে দিন গেলে সাড়ে সাত লাখ মাদকের উৎস খোঁজা এই পুলিশ বা তাদের ‘বড় ভাই’ জাতের জীবদ্দশায় কী করে সম্ভব? এই মানুষগুলো মাদক পায় কীভাবে, কোন পথে বা কার মাধ্যমে দেশে এসে মাদকের বাজার সৃষ্টি হয়, তা নিয়ে আপনি একদম মাথা ঘামাবেন না যেন! চাপ নেবেন কেন শুধু শুধু?

যাহোক, এদিকে বড় ভাইয়েরা বাড়ি ঘেরাও করে দরজা ভাঙার উপক্রম করেছে আর ওদিকে পরীমনি কিনা স্বল্প কাপড়ে লাইভে, আপনার মজাও লাগতে পারে, মেয়েটার কাছে মাদক-টাদক যা ছিল, লাইভের হুজুগে লুকিয়েও রাখতে পারেনি। মুচকি হেসে আপনি ভাববেন, একই দিন যে পুলিশি হেফাজতে লিটন নামের এক শ্রমিক মারা গিয়েছিলেন, পরীমনির টক-ঝাল-মিষ্টি গ্রেপ্তারের খবর টপকে সে কি বিশেষ খবর হতে পারত? মুচকি হাসি তখন বিস্তৃত হাসি হয়ে উঠবে আপনার।

কিছুদিন ধরে অবশ্য বরাবর এ রকম খাট্টামিঠা খবর আপনি পেয়ে আসছিলেন, রাজনীতিবিদেরা যেমন কৌতুক অভিনেতার জায়গা দখল করেছে, আপনি লক্ষ করেছেন আপনাকে ট্যাবলয়েড পড়ে সুড়সুড়ি পেতে হচ্ছে না, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমই আপনার সে চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। আর এটা দারুণ ব্যাপার যে বিধিনিষেধে অপরিকল্পিত পদক্ষেপের কারণে হাঁটাপথে মানুষের মিছিল, পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি, সংক্রমণ ছড়ানোর পক্ষে নানান ভুল পরিকল্পনা, শত শত মৃত্যু আর সংক্রমণ—এই সব দুঃসংবাদকে আপনি পাশ কাটাতে পারছেন। এ রকমটা অবশ্য আগেও দেখেছেন, করোনা পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতি করা সাবরিনার নীতির চেয়ে পোশাক আর শরীর নিয়ে আলাপে আপনি ডুবে থাকতে পছন্দ করতেন। তখন তো আপনার পোয়াবারো, গণমাধ্যম কিংবা সামাজিক মাধ্যম, যেখানেই স্ক্রল করুন, সুশ্রী আর ধনুকের মতো শরীরের সাবরিনার ছবি, বৃষ্টিতে ভেজা। দেখতে দেখতে দেখতে একসময় আপনি ভুলেই গেলেন, সাবরিনা যেন কী করেছিল? ভুলেই গেলেন, অমুক হাসপাতালের পর্দার মূল্য যেন কত ছিল? আর স্যালাইনের ক্যানুলার কত?

যাহোক, আপনার স্বস্তি লাগবে যে র‌্যাব নিজে পুলিশের হাত থেকে এ মামলা ছিনিয়ে নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ মাদক ব্যবসা, এ বিষয়ে তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যগাথা আছে। আপনি নিশ্চিন্ত, র‌্যাব বলেছে, হেলেনা জাহাঙ্গীর, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় পরীমনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। চমৎকার ধারাবাহিকতা, তবে সবখানে দৃশ্যমান নয়। টেকনাফে ইয়াবা ব্যবসার কী হাল এখন? ১০০ ইয়াবা ব্যবসায়ী হাত জোড় করে ব্যবসা ছাড়ার প্রতিজ্ঞা করল, তারা কি ভালো হয়ে গেছে রূপকথার গল্পের মতো? ফুল হাতে পাপ ধুয়ে ফেলা সেই ব্যবসায়ীরা এখন মাদকের কথা শুনলে লজ্জা পায় বুঝি? আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, টেকনাফ কিংবা কক্সবাজারের ইয়াবা আর মাদক ব্যবসায় ধারাবাহিক কোনো অভিযান চলছে কি? প্রশ্ন আসলে আসুক, তত সহজে আপনি উত্তর পাচ্ছেন না।

পাবেন কী করে, তাঁরা এখন খুব ব্যস্ত, কয়েক বোতল মদ, আরও কিছু মাদক দিয়ে পরীমনি কী করেন বা কোথায় পেয়েছেন, এই দু-চার প্রশ্নোত্তরের জন্য প্রথমেই তাঁরা সাত দিন চেয়েছিলেন। নিষ্ঠুর কোর্ট তা হতে দেননি। পরে অবশ্য কোর্ট সদয় হয়েছেন। না হয়ে উপায় আছে, আইসিডিডিআরবির সমীক্ষা অনুযায়ী ৭৫ লাখ মাদকসেবী বছরে মাদকের পেছনে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে, কে জানে এর মধ্যে পরীমনি কত হাজার কোটি টাকা মাদক বেচে আয় করেন! আর করবেন নাই-বা কেন, এ দেশে পরীমনির মতো গুরুতর মাদক ব্যবসায়ী নেই বলেই তো এই মুহূর্তে প্রমাণ হতে চলেছে। আপনি ভাবলে ভাবতেও পারেন, টেকনাফে, কক্সবাজারে বা সারা দেশে যত মাদক ব্যবসায়ী আছেন কিংবা ছিলেন, তাঁদের কয়জনের জীবনবৃত্তান্ত আপনার জানা আছে? তাঁদের কে কয়টি বিয়ে করেছেন, কতজন গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড ছিল, মাদক চোরাচালানি আর বিক্রি করার জন্য আরও কী কী অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েছিলেন, আপনার কি মুখস্থ আছে?

অথচ অদ্ভুত আমোদের ব্যাপার, স্মৃতি কী করে পরীমনি হয়েছেন, তা আপনার জানা। তাঁর জীবনের প্রতিটা বছরের, বিদেশে থাকার প্রতিটা রাতের, বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করার প্রতিটি সন্ধ্যার হিসাব আছে আপনার কাছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম দেখে আপনি আনন্দিত, পরীমনিকে রিমান্ডে রেখে, জামিন না দিয়ে বা কঠোর শাস্তির রায় দিলেই দেশের মাদক সমস্যার সমাধান হবে, একই সঙ্গে সব রকমের ভ্রষ্টাচার নিঃশেষ হবে। কয়েক বোতল মদ আর সামান্য কিছু মাদক হাতে দেশের নিষ্পাপ ধনী লোকদের চরিত্র নষ্ট করা, সুবোধ লোকজনের টাকা হাতিয়ে দামি গাড়ি কেনা, সবকিছুর একটা শেষ হওয়া উচিত। গাড়িগুলোও হয়তো সেসব অনাচারের সাক্ষী দেবে, দেখবেন, দিতেই পারে, তাই তো তাদের জব্দ করা হলো। এখন আপনার অপেক্ষা থাকবে, পরীমনিকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করে কতজনের কাছে পৌঁছানো যায়, কতজনের যাবতীয় সবকিছু জব্দ করা যায়, সেসব দেখা।

তবে কখনো আপনার মনে হতেই পারে, কত কত মামলা আছে, এই করিতকর্মা বাহিনী তা নিজ গুণে হাতে তুলে নেয় না কেন? তুলতুলে চেহারার যে মেয়েটা নিজেকে ঝুলিয়ে দিল আর তাঁর ঘরের দেয়ালে বসুন্ধরার রাজপুত্রের সঙ্গে যুগল ছবি ঝুলতে থাকল, প্রকাশ্য গোপন এই বিষয়টা তারা সামনে আনুক দেখি! তনুকে ধর্ষণ করা হলো, ত্বকীকে হত্যা করা হলো, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হলো, সমাজটাকে পরীমনির মতো মেয়েগুলোকে জ্বালিয়ে খেতে দেখলেও আপনি যে কখনোই কোনো মেয়ের পক্ষে কথা বলবেন না, তা-ও কিন্তু ঠিক নয়। বলবেন, সঙ্গে মিনমিন করে এ-ও বলবেন, যদিও মুনিয়া মেয়েটি ছিল লোভী, তবু আমি চাই এই ঘটনার তদন্ত হোক। কষ্ট হলেও কোনো রকমে কথাটা উচ্চারণ করেই ফেলবেন। কারণ, আপনি নিশ্চিত, বিচার-টিচারের বালাই উঠে গেছে। তারপর একদিন পত্রিকা খুলে আসামির অব্যাহতির কথা জানতে পেরে আপনি দেশের বিচারব্যবস্থার ওপরে লম্বা-চওড়া বক্তব্য দেবেন। সত্যি কথা বলতে কি, পরীমনি হয়তো ও রকম আসামির চেয়ে অনেক দুর্ধর্ষ, তাই মামলাটি বিচারব্যবস্থায় আপনার আস্থা ফিরিয়ে আনল বলে!

আপনার হঠাৎ মনে পড়বে, পরীমনি রাত কাটানো আর খদ্দের খোঁজার বাইরে আরও একটা কাজ করত, তা হলো অভিনয় বা মডেলিং। আরে তাই তো! এ নিয়ে অবাক হলেও জানতে পারবেন সুশীল শিল্পীরা দল থেকে তাঁর নাম কেটে দিয়েছেন। এখন তিনি যদি মামলা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ‘উপস্থিত, স্যার’, ‘উপস্থিত, ম্যাডাম’ বলে হাতে-পায়ে ধরেন, তবে তাঁকে নাকি আবারও ভর্তি করানোর কথা ভাবা যেতে পারে। এসব কথার মানে হলো, মামলার হাওয়া কোন দিকে বইবে, তার ব্যাপারে তাঁদের হিসাব নেই। পরীমনিকে তাঁরা কোনো পদের অভিনেত্রী কিংবা সুপারস্টার মনে করেন না, সেটা স্পষ্টভাবেই জানান, এক কোটি ফলোয়ার তাঁকে নিয়ে যতই পাগল হন, আর ফোর্বস-এ শাহরুখ, কারিনার সঙ্গে তাঁর নাম যতই জ্বলজ্বল করুক, তাতে কিছু যায়-আসে না। তাঁর নামে মামলা হওয়াকেই তাঁরা রাষ্ট্রপক্ষের পাকা রায় বলে মনে করেন। যেহেতু তাঁরা রাষ্ট্রকে চটাতে চান না, নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে গম্ভীর মূর্তি মূর্তি ভাব বজায় রাখতে চান, তাই মামলা হলেই তাঁকে দল থেকে খেদিয়ে দিয়ে সেটা বজায় রাখতে পারেন। এটা করার জন্য কোভিড সংক্রমণের ভয়, বিধিনিষেধের নিয়মকানুন কিছুকেই তাঁরা বাধা মনে করেন না। সোজা এফডিসিতে ছুটে যান। নৈতিক দায়িত্ব বলে কথা। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কাউকে কাউকে উপদেষ্টাও মনে করেন। একজন বললেন, ট্রাফিক পুলিশও তাঁদের খুব মান্যগণ্য করেন। ভুল করলেও সম্মান করেন।

ভালো কথা। তো তাঁদের একজন উপদেষ্টা বড় ভাই একবার ট্রাফিক পুলিশের আইন অমান্য করে গাড়ি ছোটালে পুলিশ তাঁকে আটকায়। তিনি তাঁর অস্ত্র ঠেকিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে বেদম মারধর করেন আর বলেন, ‘তুই জানিস আমি কে?’ ভাইটি তখন একাধিক মামলার আসামিও ছিলেন। একবার র‌্যাব তাঁর বাড়িতে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র পায়। অবৈধ অস্ত্র রাখার কারণে মামলা ও রায়ে কারাদণ্ড হয়। তো ভাইটি বরাবর কুকর্মের পরে অভিনয়ে ফিরে আসেন। তাঁরা তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন, তাতে শিল্পীদের ভাবমূর্তি এতটুকু ক্ষুণ্ন হয় না। যেন আপনি তাঁদের থাপ্পড় মারতে পারবেন কিন্তু অপমান করতে পারবেন না। তাঁদের অবস্থান মাদক থেকে সত্তর হাজার মাইল দূরে কিন্তু যে এফডিসি নিয়ে তাঁদের গর্বের শেষ নেই, সন্ধ্যাবেলা সেখানে গিয়ে মাদক কিনে বা খেয়ে চলে আসার সুবিধা আছে। পুলিশি ঝামেলা না থাকায় ভেতরে অবাধে মাদক কেনাবেচা চলে। ইচ্ছা হলে ২৯ নভেম্বর ২০১৭ সালে প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিপোর্ট পড়ে দেখবেন। গিয়ে দেখবেন, এফডিসির সুইমিংপুল, ঝরনা স্পট, ক্যানটিনের সামনের জায়গা, কড়ইতলা, প্রশাসনিক ভবনের পেছনে, সর্বত্র মাদক কেনাবেচা চলে।

ইলিয়াস কাঞ্চনের ভাষ্যমতে, ‘এ অপরাধ নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর এটা হয়ে আসছে।’ প্রযোজক নেতা, খোরশেদ আলমের মতে, ‘এফডিসির বিভিন্ন কোণে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা সেবন চলছেই।’ তাহলে যা বোঝা গেল, এসবে তাঁদের মূর্তিভাব কেউ একচুল টলাতে পারে না। কিন্তু পরীমনিকে ছেঁচা না দিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালে এফডিসির ‘পবিত্র’ ভাবও থাকবে না আর ভবিষ্যতের বহু রাজনৈতিক পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। সুতরাং, ভাবমূর্তির মহিমায় দর্শক হিসেবে আপনিও উদ্ভাসিত হবেন, টুঁ শব্দটি করবেন না। বরং বলতে পারেন, শিল্পীরা একদম উচিত জবাব দিয়েছে পরীমনিকে, শিল্পী হয়ে কি না মদের বোতল…!

মামলা যখন পাওয়াই গেছে, ধৈর্য ধরুন, মামলা আগেও বাড়বে, পরীমনি বলে কথা! আপনি জানবেন, সমাজের একজন সুপরিচিত নারীকে সুপরিকল্পিত প্যাঁচে পড়তে দেখার মজাই আলাদা।

আফসানা বেগম কথাসাহিত্যিক

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: আগষ্ট ১৪, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ