Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

পশ্চিম এশিয়ার ‘কোয়াড’ কতটা সফল হবে (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: শরণ সিং

গত বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে আই২ইউ২ (ভারত-ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত-যুক্তরাষ্ট্র) জোটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়ে গেল। গত বছরের অক্টোবর মাসে চার দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই জোট গঠনের উদ্যোগ শুরু করেছিলেন। সম্মেলন শেষে একটি সংক্ষিপ্ত, টাটকা ও দুই পৃষ্ঠার যৌথ বিবৃতি এসেছে। সেখানে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত এবং পরিবেশ দূষণ করে না, এমন জ্বালানি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘আরও উদ্ভাবনমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিজ্ঞানভিত্তিক’ উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

আড়াই বছরের করোনা মহামারি এবং পাঁচ মাসের ইউক্রেন সংকটের প্রেক্ষাপটে নতুন এই জোটের যাত্রা নিঃসন্দেহে আশা জাগায়। রাজনৈতিক সমীকরণের বাইরে গিয়ে বলা যায়, এই দুটি সংকট বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি–সংকটকে গভীর করে তুলেছে। জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের মজুত ফুরিয়ে গেলে রাজনৈতিক শূন্যতা ও অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব সৃষ্টি হয়। এর জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত শ্রীলঙ্কা। শুধু শ্রীলঙ্কা নয়, সারা বিশ্বের সামনে এই সংকট চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আই২ইউ২ জোট নিজেদের নাগরিকদের এবং বন্ধু ও মিত্রদেশগুলোর নাগরিকদের সুরক্ষায় বিকল্প এক উদ্যোগ হয়ে উঠতে পারে।

আই২ইউ২ জোটকে কেউ কেউ পশ্চিম এশিয়ার ‘কোয়াড’ বলছেন। নতুন এই কোয়াডের সফলতা নির্ভর করছে এটি কতটা টেকসই হবে তার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোয়াড এবং মধ্যপ্রাচ্যের আব্রাহাম চুক্তি কতটা ধারাবাহিক হচ্ছে—তার ওপরেও নতুন এই জোটের সাফল্য নির্ভর করছে। আব্রাহাম চুক্তির পর সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কোর সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। এতে ইসরায়েলকেন্দ্রিক একটি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের দুয়ার খুলেছে। এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আরব বিশ্বের আরও দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিতে পারে। এতে করে আই২ইউ২ জোটটির আরও বড় পরিসরে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।

আবার যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় রাজনীতির বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্প কিংবা বাইডেন প্রশাসন বহির্বিশ্বে বহুপক্ষীয় নরম ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে ক্রমান্বয়ে নিজেদের উপস্থিতি কমিয়ে নেওয়ার নীতিতে একমত রয়েছে। গত মার্চ মাসে ইসরায়েল নেজেভ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে ইসরায়েল, বাহরাইন, মিসর, মরক্কো, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা অংশ নেন। প্রথম বৈঠকে ইসরায়েলের ‘প্রধান শত্রু’ ইরান ছিল মূল আলোচ্য। ভবিষ্যতে এই সম্মেলনের আলোচ্যসূচি ও সদস্য—দুই-ই বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ সপ্তাহে তেল আবিব থেকে জেদ্দায় সরাসরি বিমানে এসে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। একই সঙ্গে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে শত্রু থেকে বন্ধুও করেছেন তিনি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তি সৌদি আরব ও ইরানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে কৌশলগত পার্থক্যটা অনেক বেশি। এ বিষয়টি আই২ইউ২ জোটকে শক্ত পায়ের ওপর দাঁড়াতে বাঁধা তৈরি করতে পারে।

আই২ইউ২ জোটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল থাকায় কারও সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া, চীন ও ইরানকে মোকাবিলা করার জন্যই এই জোট করেছে। কিন্তু ‘পশ্চিম এশিয়ান কোয়াড’ যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে, তা থেকে এটা স্পষ্ট যে ভূ-অর্থনীতিতে এই জোটের বিপুল সম্ভাবনা আছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ইসরায়েল সফর করেন। সে সময়ে আই২ইউ২ জোট ভ্রূণ আকারে ছিল। আয়োজক দেশ ইসরায়েল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এটিকে ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ফোরাম’ বলে জানিয়েছিল। যৌথ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত বিনিয়োগের জন্য ছয়টি ক্ষেত্র ঠিক করা হয়েছিল। সেগুলো হলো পানি, জ্বালানি, পরিবহন, মহাকাশ, স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা।

কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন সংকটের কারণে নতুন যে বিশ্ব পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আই২ইউ২-এর উদ্বোধনী সম্মেলনে শুধু খাদ্যনিরাপত্তা ও দূষণমুক্ত জ্বালানির বিষয়টি সামনে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রের মুখপাত্র নেড প্রাইস সম্প্রতি বলেছেন, এই চার দেশই ‘প্রযুক্তির হাব’। এর মধ্যে ভারতের ‘বিশাল বাজার’ রয়েছে এবং সেখানে অন্য তিন দেশের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সম্পদ এবং বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের বিনিয়োগের বড় সুযোগ আছে। উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে ডিজিটাল ভারতের বিষয়ে কথা বলছেন, সেখানে এক লাখ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগের সুযোগ আছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও নিজেদের অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র রয়েছে। আন্তর্জাতিক নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার সদর দপ্তর আবুধাবিতে অবস্থিত এবং ২০২৩ সালের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান আই২ইউ২ সম্মেলনে ভারতে একটি সমন্বিত খাদ্যব্যাংক গড়ে তোলার জন্য ২০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জোটভুক্ত দেশগুলোতে খাদ্য অপচয় হ্রাস, পানি সংরক্ষণ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের জলবায়ু-স্মার্ট প্রযুক্তি ও বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের বিনিময় করবে। এই জোট ভারতে ৩০০ মেগাওয়াট (বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ) নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে।

প্রকৃতপক্ষে আই২জি২ জোটে উদ্বোধনী বিবৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে ভারত সবচেয়ে বেশি লাভবান হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী অংশীদার। দুই দেশের ব্যবসায় আরও সম্ভাবনার বিষয়টি সব সময় আলোচিত হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই দেশের মধ্যকার ব্যবসা ১০০ বিলিয়ন থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।

একইভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যবসায়ী অংশীদার। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৫৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভারত ও ইসরায়েলের মধ্যকার মৈত্রী দিনে দিনে দৃঢ় হচ্ছে। দেশ দুটির মধ্যে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

এসব সম্ভাবনার পরেও আই২ইউ২ জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নও কম নেই। এই জোটের প্রতিটি দেশের আলাদা আলাদা আবেগ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। এসব ভিন্নতা অতিক্রম করে একই সঙ্গে পথচলা কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেক সমালোচক তো বলতেই শুরু করেছেন, এই জোটের কোনো ‘কৌশলগত মূল্য’ নেই। এ জোট তৈরির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চীনকে ধরার নীতি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়ার লাপিডের ‘ইরানকে শায়েস্তা’ করার তত্ত্ব থেকে জন্ম হয়েছে।

কিন্তু ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ভূরাজনীতির চেয়ে ভূ-অর্থনীতির দিকেই নিজেদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখতে চায়। দেশ দুটি আই২ইউ২ জোটকে বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের মঞ্চ হিসেবে এটিকে দেখতে চায়। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোয়াডের সাফল্যকে মধ্য এশিয়ার নতুন কোয়াড কতটা সফল হবে তার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা যায়। গঠনের ১৪ মাসের মধ্যে চারটি সম্মেলন করেছে কোয়াড। এ থেকে নতুন কোয়াডের সাফল্য আশা করা যেতেই পারে।

**** শরণ সিং ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের কূটনীতি ও নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ের অধ্যাপক

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ১৭, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ