Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ফ্রান্স, চিলি ও কলম্বিয়ার অভিজ্ঞতা পথ দেখাতে পারে (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:হাসান ফেরদৌস; নিউইয়র্ক থেকে

ক্ষমতার রশি নিজের হাতে ধরে রাখার জন্য শাসকশ্রেণির সব চেষ্টা সত্ত্বেও আজও বিপ্লব ঘটে। শুধু তফাত এই যে বিপ্লবের চিরায়ত পদ্ধতিটি বদলে গেছে।

প্রথমেই স্মরণ করা যাক ভ্লাদিমির লেনিনকে। রুশ বিপ্লবের দুই বছর আগে, ১৯১৫ সালে ‘দ্য কলাপস অব দ্য সেকেন্ড ইন্টারন্যাশনাল’ প্রবন্ধে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে রুশ বিপ্লবের এই রূপকার তিনটি শর্তের কথা বলেছিলেন।

বিপ্লবের জন্য এমন পরিস্থিতির প্রয়োজন যখন শাসকশ্রেণি আর আগের মতো দেশ চালাতে সক্ষম নয় এবং শাসিতশ্রেণি আগের ব্যবস্থা মেনে নিতে রাজি নয়। এই অবস্থা কেবল তখনই ঘটে, যখন শাসিতশ্রেণির কষ্টভোগের সীমা সহ্যের বাইরে চলে যায় এবং তারা আগের মতো মুখ বুজে থাকা প্রত্যাখ্যান করে।

শ্রীলঙ্কায় যেভাবে রাজাপক্ষে পরিবারের ক্ষমতাচ্যুতি ঘটল, তাতে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সব শর্তই মিলে যায়। দেশের মানুষের কষ্ট সহ্যের বাইরে চলে গিয়েছিল, পুরোনো ভাঁওতাবাজি দিয়ে তাদের আর ঘুম পাড়িয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।

রাজাপক্ষে পরিবারের জন্য টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ায় শুধু ক্ষমতা নয়, তাঁরা দেশ ছাড়তেও বাধ্য হন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় এবং ১৯৪৯ সালে চীনে ঠিক এভাবেই সবকিছু ওলট–পালট হয়ে যাওয়া বিপ্লব ঘটে। তবে রুশ বা চীনা বিপ্লবের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার একটা বড় তফাত এখানে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না, এমনকি কোনো স্বীকৃত একক নেতাও ছিল না, যাঁর নেতৃত্বে রাজাপক্ষের ক্ষমতার তাসের ঘর এভাবে ছত্রখান হলো।

একুশ শতকে এসে আমাদের পরিচিত ধ্রুপদি ধাঁচের বিপ্লব আর সম্ভব নয়, এমন কথা অনেকেই বলেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁদের অন্যতম হলেন কোরীয়-জার্মান দার্শনিক ও অধ্যাপক বাইয়ুং চুল-হান। তাঁর যুক্তি, উনিশ-বিশ শতকের বিপ্লবে শাসক ও শোষিতের ভেদচিহ্ন খুব স্পষ্ট ছিল। কে রাজা কে প্রজা, কে মিলমালিক আর কে শ্রমিক, তা বোঝা কঠিন ছিল না।

কিন্তু এখন সে ভেদচিহ্ন অনেকটাই ঘুচে গেছে। এখন শ্রমিক মানে শুধু গতর খাটা মানুষ নয়, জ্ঞান ও বুদ্ধি ব্যবহার করেন যাঁরা তাঁরাও শ্রমিক, শুধু এই সত্যটা তাঁরা সর্বদা সজ্ঞানে স্বীকার করেন না। এখন শাসকশ্রেণি খোলামেলা শোষণের বদলে শ্রমিকশ্রেণিকে নিজের দলে টানতে ব্যস্ত। চুল-হান এই চেষ্টাকে ‘সিডাকটিভ’ বা সম্মোহনী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আজকের শ্রমিক কেবল গতর খাটা শ্রমিক নন, তিনি একধরনের ‘কন্ট্রাক্টর’। তিনি একই সঙ্গে শ্রমিক ও মালিক, তাঁর পক্ষেও সামনে এগোনোর সুযোগ রয়েছে, এমন এক বিভ্রমে তিনি বিশ্বাস করেন। এগোতে ব্যর্থ হলে তিনি মালিক বা ব্যবস্থাকে দায়ী করার বদলে নিজেকেই দায়ী করেন।

অথচ বাস্তব সত্য হলো, ধনতন্ত্রের মৌলিক নিয়মকানুনের কোনোই পরিবর্তন হয়নি, শোষক-শাসিতের বিভেদও বদলায়নি। শুধু চোখের ওপর একটা পর্দা নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে আমাজন বা স্টারবাকসের মতো বিশাল করপোরেশনে ইউনিয়ন গঠন করতে সাধারণ শ্রমিকের অনাগ্রহ থেকেই স্পষ্ট এই পর্দা এখন কতটা পুরু।
অন্য ধরনের বিপ্লব

ক্ষমতার রশি নিজের হাতে ধরে রাখার জন্য শাসকশ্রেণির সব চেষ্টা সত্ত্বেও আজও বিপ্লব ঘটে। শুধু তফাত এই যে বিপ্লবের চিরায়ত পদ্ধতিটি বদলে গেছে। আজ আর শুধু শ্রমিকশ্রেণি নয়, অবহেলিত-বঞ্চিত বিভিন্ন শ্রেণি ও গ্রুপের মানুষের ব্যাপক জোট বা কোয়ালিশন এই বিপ্লবের সামনের কাতারে।

এই বিপ্লব মূলত শান্তিপূর্ণ, মূল উপড়ে ফেলার বদলে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংস্কার এর লক্ষ্য আর তার প্রকাশ ঘটছে বুলেটের বদলে ব্যালটে। সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত তিনটি উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে, যা থেকে বিপ্লবের এই পরিবর্তিত চেহারাটা স্পষ্ট হয়। একে বিপ্লব বলা যায় কি না, তা নিয়ে বাদানুবাদ করা যায়, কিন্তু এরা যে পরিবর্তনের স্পষ্ট সূচনা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সবচেয়ে টাটকা উদাহরণ হলো ফ্রান্স। জুন মাসে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টারি নির্বাচনে সরাসরি বামপন্থী একটি জোট দেশের দ্বিতীয় প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। কড়া বিপ্লবী হিসেবে পরিচিত জঁ-লুক মেলঁশের নেতৃত্বে এই রাজনৈতিক জোট মোট ১৩১টি আসন দখল করে ক্ষমতাসীন মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সব হিসাব-নিকাশ বদলে দিয়েছে। ফ্রান্সে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দলই বরাবর আইন পরিষদে সর্বাধিক আসন দখল করে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, কিন্তু আইন পরিষদে মাখোঁর দলের নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা দারুণভাবে কমে এসেছে। ফলে মেলঁশের সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া নিজের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে। ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে যখন অতি-দক্ষিণ রাজনৈতিক শক্তি ক্রমাগত শক্তি অর্জন করে চলেছে, সেই সময় ফ্রান্সে বাম জোটের এই সাফল্য বিপ্লব বলেই চিহ্নিত হয়েছে।

কীভাবে এই নাটকীয় বিজয় সম্ভব হলো? উত্তরে মেলঁশ নিজে একে ‘জনতার বিপ্লব’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে অভিন্ন কর্মপন্থা তাঁদের বিজয়ের চাবিকাঠি। ফ্রান্সে বামপন্থী দলের অভাব নেই, একসময় তারা ক্ষমতার কেন্দ্রেও ছিল। কিন্তু গত কয়েক দশক রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিভক্তিতে তারা প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। মিলশঁ রাজনৈতিকভাবে নিঃস্ব এই দলগুলো নিয়ে এক নতুন জোট গড়ে তুলতে সক্ষম হন।

তাঁর নিজের লা ফ্রঁস এঁসুমিজ (আপসহীন ফ্রান্স) দল ছাড়াও এই জোটে আরও রয়েছে গ্রিন পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি ও সোশ্যালিস্ট পার্টি। মাত্র তিনটি প্রধান দাবি নিয়ে এই জোট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। দাবিগুলো হলো অবসর গ্রহণের বয়স ৬২ থেকে কমিয়ে ৬০ করা, দ্রব্যমূল্য হ্রাস এবং ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি। একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বদলে এই চার দল সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিটি আসনে শুধু একজন অভিন্ন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে।

এই বাম জোটের পেছনে সবচেয়ে জোর সমর্থন আসে অনূর্ধ্ব-৩০ এমন যুবশ্রেণির কাছ থেকে। অব্যাহত মন্দাবস্থার তারাই প্রধান শিকার। নির্বাচনী লড়াইয়ে বাম জোটের সাফল্যের ব্যাখ্যায় ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ফাবিয়েঁ রুসেল বলেছেন, ‘একা আমরা জিততে পারব না, এ কথা বোঝার ফলেই এই আঁতাত গড়া সম্ভব হয়। ফরাসি জনগণ, বিশেষত শ্রমিক ও যুবকশ্রেণিই আমাদের এই আঁতাত গড়তে বাধ্য করে।’

আরও স্পষ্ট করে বলেছেন মেলশঁ নিজে। তাঁর কথায়, এই বিপ্লবের কেন্দ্রে রয়েছে দেশের মানুষ, যারা ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকলেও আসলে নানাভাবে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত। রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে আমরা কেবল এই সংযুক্তিকে ব্যবহার করে ব্যাপক আঁতাত গড়ে তুলেছি।

দেশের মানুষ কীভাবে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত, তার উদাহরণ হিসেবে পরিবহন ক্ষেত্রের কথা ভাবা যেতে পারে। ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর জ্বালানি তেলের ওপর ‘গ্রিন ট্যাক্স’ আরোপ করায় প্রথমে গ্রামীণ এলাকায়, তারপর শহরাঞ্চলে বিক্ষোভ গড়ে ওঠে। প্যারিসে যে ‘গ্রিন ভেস্ট’ বিক্ষোভ রাজধানীতে প্রায় অচলাবস্থার সৃষ্টি করে, তাতে গ্রাম ও শহরের মানুষ, গরিব ও মধ্যবিত্ত, শ্রমিক ও ছোট ব্যবসায়ী সবাই অংশগ্রহণ করে।

মেলশঁ পরবর্তীকালে যে নির্বাচনী আঁতাত নির্মাণে সক্ষম হন, তার ভিত এই আন্দোলনের ভেতর দিয়েই রচিত হয়। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘কোনো একটি বিশেষ দলের নয়, আমাদের আন্দোলন দেশের সব মানুষের, সেই হেতু তার চরিত্র জাতীয়, কিন্তু তা জাতীয়তাবাদী নয়। আমাদের লক্ষ্য জনতার সার্বভৌমত্ব, যার কথা ট্রটস্কি থেকে গ্রামসি সবাই বলেছেন।’

ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে চিলিতে, সেখানেও দেশ কাঁপানো এক বিপ্লব ঘটে গেছে। ৩৫ বছর বয়সের সাবেক ছাত্রনেতা গাব্রিয়েল বরিচ এখন দেশটির প্রেসিডেন্ট। মাত্র এক যুগ আগেও যেখানে একটি ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল, আজ সেখানে একটি প্রগতিশীল, খোলামেলাভাবে বামপন্থী সরকার জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত হয়ে শাসনভার গ্রহণ করেছে। এই বিপ্লবের আরেক ফল, শুধু নতুন সরকার নয়, ‘জনতার সার্বভৌমত্ব’ স্বীকৃতি দিয়ে একটি সম্পূর্ণ নতুন শাসনতন্ত্র রচনা। এ বছর সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত গণভোটে এই শাসনতন্ত্র গৃহীত হলে চিলি তার ফ্যাসিবাদী অতীতকে চূড়ান্তভাবে বিদায় জানাবে।

ফ্রান্সের মতো এখানেও সাফল্যের কেন্দ্রে একটি বহুভিত্তিক জাতীয় জোট। এর কেন্দ্রীয় শক্তি ছাত্র ও যুবকশ্রেণি। সঙ্গে রয়েছে নারী, পরিবেশবাদী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এদের প্রত্যেকের নিজস্ব দাবিদাওয়া রয়েছে, যার যার নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, কিন্তু একটি ন্যূনতম কর্মসূচি ও লক্ষ্য এদের এক সূত্রে গাঁথতে সক্ষম হয়েছে।

এই ঘটনা রাতারাতি সম্ভব হয়নি। ২০১৪ সালে চিলিতে সোশ্যালিস্ট প্রার্থী মিশেল বাসেলতের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনের মাধ্যমে সামরিক একনায়ক অগাস্তো পিনোশের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক প্রভাববলয়ের পতন শুরু। চারটি ভিন্ন ভিন্ন আন্দোলন তাঁর বিজয়ে সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রথমত, বরিচ ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযাত্রী ক্যামিলা বাইয়েহো ও জর্জিও জ্যাকসন শিক্ষাব্যবস্থার বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে এক নজরকাড়া ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। দ্বিতীয়ত, প্রায় একই সময় খনিজ উত্তোলনের নামে পরিবেশদূষণ যা খনিপ্রধান এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল মুখ্যত বিভিন্ন নারীবাদী গ্রুপ।

তৃতীয়ত, চিলিতে দীর্ঘদিন থেকে অধিকতর মানবাধিকার ও স্থানীয় নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের আন্দোলন চালু ছিল। ছাত্র ও নারী আন্দোলনের স্রোতোধারা তাদের সে আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে। চতুর্থ ধারাটি ছিল অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন, পেনশনব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে যাঁরা দীর্ঘদিন থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বাসেলতের প্রাথমিক সাফল্যকে পুঁজি করে বরিচ ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্মের এই চৌ–ধারাকে একটি অভিন্ন ছাতার তলে নিয়ে আসতে সক্ষম হন। ঝাঁকড়া চুলের এই সাবেক ছাত্রনেতা এখন শুধু তাঁর দেশের নয়, সারা লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রতীক। তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে সফল হন, এই মহাদেশের চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে।

তৃতীয় উদাহরণ কলম্বিয়া। একদিকে সামরিক স্বৈরাচার, অন্যদিকে বামপন্থী সহিংস গেরিলা আন্দোলনে ক্ষতবিক্ষত দেশটি যে অবশেষে তার রক্তাক্ত ইতিহাসকে পেছনে ফেলে আসতে সক্ষম হয়েছে, তার প্রমাণ এ বছর জুনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশি-বিদেশি চক্রের প্রবল বাধা পেরিয়ে প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে সে নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন একসময়ের গেরিলা নেতা গুস্তাভো পেত্রো। এখানেও তাঁর বিজয়ের প্রধান কারণ, নির্যাতিত ও বঞ্চিত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আঁতাত।

অর্থনীতির ক্রমসামরিকীকরণের বিরুদ্ধে যাঁরা এই ব্যাপক আঁতাতে যুক্ত হয়, তারা হলো ছাত্র, গার্হস্থ্য শ্রমিক, প্রতিবন্ধী, শ্রমিক ইউনিয়ন, নারী অধিকার আন্দোলন, সমকামী গ্রুপসমূহ ও পরিবেশ আন্দোলন। কলম্বিয়ার প্রধান সমস্যা ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক প্রান্তীকরণ। ভোটারদের কাছে পেত্রোর অঙ্গীকার ছিল তিনি এই বৈষম্য কমিয়ে আনবেন। খনিজ আহরণের নামে দীর্ঘদিন থেকে কলম্বিয়ায় যেভাবে পরিবেশের ঢালাও ধ্বংস চলছে, পেত্রো তা রোধেও প্রতিশ্রুতি দেন। সংকীর্ণ আদর্শিক প্রবণতা পরিহার করে বৃহত্তর নাগরিক সংহতি নির্মাণে সাফল্যই পেত্রোকে জয় এনে দেয়।
পরিবর্তনের হাওয়া

শ্রীলঙ্কায় পুরোনো ক্ষমতাধর শ্রেণি পরাস্ত হয়েছে, এই পরাজয়ের ভেতর দিয়ে দেশটি একটি সম্পূর্ণ নতুন-সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেখানে ইতিমধ্যে একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি উঠেছে। নাগরিক সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতিসহ একটি পিপলস চার্টার বা গণসনদের খসড়াও রচিত হয়েছে।

একসময় রাজাপক্ষে পরিবারতন্ত্রের হাতে বন্দী শ্রীলঙ্কার মানুষ যদি সজাগ থাকে, কায়েমি স্বার্থবাদীদের পেছন দরজা দিয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ তারা না দেয়, দেশটিতে হয়তো একটি প্রকৃত জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

একই কথা ফ্রান্স, চিলি ও কলম্বিয়া সম্পর্কে। এই তিন দেশের বামপন্থী শক্তিসমূহের নির্বাচনী সাফল্য সত্যি সত্যি কতটা মৌলিক পরিবর্তন আনবে, তা বিচারের সময় এখনো আসেনি। কিন্তু পরিবর্তনের একটি সম্ভাবনা সেখানে সৃষ্টি হয়েছে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না।

উত্তর-দক্ষিণের সব তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশসমূহে দক্ষিণপন্থী দলসমূহ দীর্ঘদিন ক্ষমতা আগলে থাকার ফলে রাজনৈতিক ভূক্ষেত্র প্রগতিশীল বা বামপন্থীদের জন্য প্রবল রকম বন্ধুর ও অসমতল হয়ে পড়েছে।

তাদের সামনে দুটি প্রধান বাধা, নির্বাচনী ব্যবস্থায় অর্থের প্রাধান্য ও বৃহৎ পুঁজির খপ্পরে আটক মূলধারার মিডিয়া। এর সঙ্গে যোগ করুন বামপন্থী বা প্রগতিশীল দলগুলোর শতধাবিভক্তি। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রুপে বিভক্ত হওয়ায় নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় সাফল্য তাদের আয়ত্তের বাইরে।

এই বাস্তবতার মুখে বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সুখ কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। তবু যাঁরা পরিবর্তনের কথা ভাবেন, ক্ষমতার কেন্দ্রে নাগরিক অংশীদারত্বে বিশ্বাস করেন, ফ্রান্স, চিলি অথবা কলম্বিয়ার অভিজ্ঞতা তাঁদের পথ দেখাতে পারে।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুলাই ১৮, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ