Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বিএনপির সমাবেশ রাজনীতিতে কী বার্তা দিল (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:আলী রীয়াজ।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা এবং সমাবেশস্থল নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও ব্যাপক মানুষের সমাবেশ ঘটেছে। ঢাকার সমাবেশে ব্যতিক্রম যা ঘটেছে তা হচ্ছে, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত ছিলেন না, উপস্থিত ছিলেন না কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অনেক নেতা। তাঁদের কারাগারে রেখেই দলকে সমাবেশ করতে হয়েছে। ঢাকার সমাবেশ থেকে বিএনপি ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে এবং তার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছে।

ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং সরকারের পুলিশ বাহিনীর আচরণ, হামলা, মামলা, নিপীড়ন আগের সব সমাবেশের সময়কার মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে, সেটা বলাই বাহুল্য। তদুপরি, সমাবেশের দিন ঢাকার বিভিন্ন মহল্লায় এবং ঢাকার প্রবেশপথে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা যেভাবে পেরেছেন, সাধারণ লোকজনকে হেনস্তা করেছেন। সাধারণ পথচারী এবং বাসযাত্রীদের ব্যক্তিগত মুঠোফোন ‘পরীক্ষা’ করার কাজে নিয়োজিত থেকেছেন। এটি নাগরিকের ন্যূনতম অধিকারের পরিপন্থী। ছাত্রলীগের কর্মীদের এই দায়িত্ব তাঁদের দলীয়ভাবে দেওয়া হয়েছিল নাকি সরকারিভাবে, সেই প্রশ্ন তোলা নিরর্থক—প্রায় এক দশক ধরে, বিশেষত ২০১৮ সাল থেকে রাষ্ট্র, সরকার, দল একাকার হয়ে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে এগুলোকে আলাদা করে চেনা যায় না।

বিএনপি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক দিন চার ঘণ্টা সমাবেশ করলে ঢাকার ‘জনজীবন বিপর্যস্ত হবে’ বলে সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। অথচ তিন দিন আগেই ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টন এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে একজন কর্মীর প্রাণনাশের পর ওই এলাকার জনজীবন যে স্বাভাবিক ছিল না, সেটা সবার জানা, এমনকি তারপরও সেখানে পুলিশ আর আওয়ামী লীগের কর্মীদের যুদ্ধংদেহী উপস্থিতি কোনো অবস্থাতেই স্বাভাবিকতার প্রমাণ দেয় না। শুধু তা-ই নয়, সমাবেশের আগের দিন থেকে ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয়েছিল, সমাবেশের দিন ঢাকায় যান চলাচলের অবস্থা দেখে একে ‘সরকারি হরতাল’ বলেই মনে হয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের যে কত দূর ক্ষতি হয়েছে, সেটা ভুক্তভোগী এবং বিবেচনাসম্পন্ন মানুষ জানেন।

এর আগে ১২ অক্টোবর থেকে বিএনপি দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে নয়টি সমাবেশ করেছে। সেখানকার পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে জনজীবন যতটা বিপর্যস্ত হয়েছে, তার কারণ, ক্ষমতাসীন দল এবং প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ট পরিবহন ধর্মঘট। আতঙ্ক যতটা ছড়িয়েছে, তার উৎস ছিল সমাবেশে যাঁরা আসতে চেয়েছেন, তাঁদের ওপর আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলা, ভীতি যতটা বিস্তার লাভ করেছে, তা হয়েছে বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি কর্মীদের আটক এবং তাঁদের বাড়িঘরে পুলিশের তল্লাশি চালানোর কারণে। কিন্তু এগুলো যে কাজে দেয়নি, তার প্রমাণ হচ্ছে প্রতিটি সমাবেশেই জনসমাগম বেড়েছে। স্বল্পতম সময়ে আয়োজিত ঢাকার সম্মেলনে উপস্থিতি তার একটি উদাহরণ।

এ রকম একটি প্রেক্ষাপটে বিএনপির ১০টি বিভাগীয় সমাবেশের শেষ সমাবেশ থেকে কেবল দাবিদাওয়া উত্থাপিত হয়নি, একই সঙ্গে এসব দাবির ভিত্তিতে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে বিএনপি সফল হবে কি না, সেটা দেখার জন্য আগামী দিনগুলোর অপেক্ষা করতে হবে। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং এসব সমাবেশে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ইতিমধ্যে এর কিছু বৈশিষ্ট্য এবং নেতৃত্বের কিছু দিক লক্ষ করা গেছে, যা আলোচনার দাবি করে।

বিভাগীয় এসব সমাবেশের সূচনা থেকেই বিএনপি কর্মীরা কেবল যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন তা-ই নয়, এসব সমাবেশে আসার সময় বিভিন্ন ধরনের হামলারও মুখোমুখি হয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কাও করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক লোকের উপস্থিতির কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে বলা হয়েছে। যদিও আগের কোনো সমাবেশেই বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেনি, তথাপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ৪ ডিসেম্বরেও বলেছেন, ‘বিএনপি সমাবেশের নামে যদি কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে, তাহলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেবে।’ গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সমাবেশে আসা এবং ফেরার পথে বিএনপি কর্মীদের এ ধরনের আচরণ এ কারণে উল্লেখযোগ্য যে অতীতে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের সমাবেশ এমনকি দলের স্থানীয় পর্যায়ের সম্মেলনেও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালের পর থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ করা হয়েছে; এর ভিত্তি কতটুকু সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় যে গত দুই মাসে এসব সমাবেশের ক্ষেত্রে বিএনপি সব ধরনের উসকানি এড়াতে পেরেছে।

দলের নেতৃত্ব তাঁদের আন্দোলনের এই পর্যায়ে যেকোনো ধরনের সংঘাত পরিহার করতে চেয়েছেন বলেই মনে হয়েছে। নেতারা এই বার্তা কর্মীদের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছেন, এটা দলের কর্মী পর্যায়ের ওপর নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণের লক্ষণ। বিএনপির বিরুদ্ধে একটি বড় সমালোচনা ছিল যে দলের ভেতরে নেতৃত্বে বিভক্তি আছে। এসব বিভক্তিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টার অভিযোগও আছে। কিন্তু এই দুই মাসে তা দেখা যায়নি। এসব সমাবেশের প্রস্তুতি নিশ্চয় দীর্ঘদিন ধরেই নেওয়া হয়েছে; গত কয়েক বছরে দেশে বিরোধীদের সভা-সমাবেশের ওপর বাধানিষেধের মধ্যেই বিএনপি এ সাংগঠনিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে দলের মহাসচিবকে পুলিশ আটক করার পরও এ অবস্থার ব্যত্যয় হয়নি।

তবে ঢাকার সমাবেশের আগে বিএনপির কোনো কোনো নেতার বক্তব্য দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হয়নি। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন বা ১০ তারিখের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে—এ ধরনের বক্তব্য আইনের বিবেচনায়ই শুধু নয়, রাজনৈতিক বিবেচনায়ও যথাযথ বার্তা দেয় না। এতে করে যে ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তা বিএনপির জন্যই ক্ষতিকর।

এসব সমাবেশে কারা যোগ দিয়েছেন, এটা একটা বড় প্রশ্ন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে সমাবেশের আগের দিন, এমনকি দুই দিন আগেই অনেকে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত শহরে উপস্থিত হয়েছেন। এসব অংশগ্রহণকারী দলের নিবেদিত কর্মী-সমর্থক। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যাবে যে এসব সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। প্রধানত দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের উপস্থিতিই এসব সমাবেশকে বৃহদাকৃতি দিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে দিশাহারা মানুষ এটা বুঝতে পারছেন যে রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান খুঁজতে হবে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষেরা তাঁদের বিবেচনায়ই এখন বিএনপির দিকে তাকিয়েছেন। এটা বিএনপির নেতারা উপলব্ধি করতে পারছেন কি না, সেটাই নির্ধারণ করবে বিএনপি ভবিষ্যতে তাঁদের দাবিদাওয়ার কোন দিকগুলোকে প্রাধান্য দেন।

সাধারণ মানুষের বড় এক অংশ অর্থনৈতিকভাবে খাদের কিনারায় পৌঁছে গেছে। তাঁরা কোনো ধরনের সংঘাত বা সহিংসতার চাপ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তবে তঁারা এটা উপলব্ধি করতে পারেন যে তাঁদের এ অবস্থার পেছনে আছে ক্ষমতাসীনদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং নাগরিক হিসেবে তাঁদের ন্যূনতম অধিকার না থাকা। ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার, সমাবেশের অধিকার না থাকা এবং জবাবদিহির অনুপস্থিতি এ অবস্থা তৈরি করেছে। শক্তি প্রয়োগ করে যে শাসন অব্যাহত আছে, দীর্ঘদিন ধরে মানুষ ভয়ের কারণে তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু মানুষ সেই ভীতি থেকে বেরিয়ে আসছে। এটা ক্ষমতাসীনেরা বুঝতে পারছেন কি না, সেটাই প্রশ্ন।

******আলী রীয়াজ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ডিসেম্বর ১৩, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ