২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছালে স্বল্প সুদে ঋণসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব সুবিধাও থাকবে না। তাই অভ্যন্তরীণ আয় বাড়িয়ে মানবসম্পদে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আঙ্কটাড (United Nations Conference on Trade and Development (UNCTAD))। এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, একক পণ্যের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পণ্যের বহুমুখীকরণে জোর দিতে।
‘এলডিসি প্রতিবেদন ২০২১’-এ এসব কথা বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আঙ্কটাড। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন আঙ্কটাডের এলডিসি শাখার প্রধান রফ ট্রেগার ও অর্থনীতিবিষয়ক কর্মকর্তা জিওভান্নি ভেলেনসিসি। ভার্চু৵য়াল সভায় বক্তব্য দেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে জিওভান্নি ভেলেনসিসি বলেছেন, বাংলাদেশের উচিত হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে জোর দেওয়া। একদিকে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, অন্যদিকে মানবসম্পদের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আরেকটি জায়গায় কাঠামোগত রূপান্তর আনা জরুরি। সেটি হলো, একক খাতের ওপর নির্ভরশীল না থেকে পণ্য বহুমুখী করা।
প্রতিবেদনে আঙ্কটাড বলেছে, এলডিসি থেকে উত্তরণের আগে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে। উন্নত বিশ্ব থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রযুক্তির হস্তান্তর জরুরি। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের হার ভালো নয়। রাজস্ব আদায় বাড়াতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
রফ ট্রেগার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির মেয়াদ আছে আর ১০ বছর। এসডিজি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। করোনার কারণে এসব খাতের অবস্থা নাজুক।
মিয়া সেপ্পো বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্যাপন করছে, ঠিক তখনই এলডিসি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই একই সময়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বারের মতো এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ করেছে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডিপি)। করোনার সময় বাদ দিলে গত এক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচন ও মানবসম্পদ সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। কিন্তু করোনার কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে।
মিয়া সেপ্পো আরও বলেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কম, সেখানে উন্নতি করতে হবে সরকারকে। এলডিসি থেকে উত্তরণের আগে জোর দিতে হবে নতুন কর্মসংস্থানে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ওষুধশিল্প বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। ২০২৬ সালের পর আর মেধাস্বত্ব সুবিধা পাবে না বাংলাদেশ। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা পেতে হলে নতুন করে চুক্তি করতে হবে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, ২০২৬ সালে এই সুবিধার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে বাংলাদেশ। এর মধ্যেই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনসংখ্যার বোনাসকালকে কাজে লাগাতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৮, ২০২১
রেটিং করুনঃ ,