Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ব্যর্থ গণ–আন্দোলনের বেদনায় ভুগছে শ্রীলঙ্কা (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: আলতাফ পারভেজ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা নিয়ে দুই মাস আগের মতো আর আগ্রহ নেই। অথচ সেখানে দৈনন্দিন সংকটের তীব্রতা মোটেও কমেনি।

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে আলু দিচ্ছে, এমন খবর ওই দেশে বেশ আলোচিত এখন। শ্রীলঙ্কায় খাবারের তালিকায় আলু বেশ পরিচিত একটি নাম। তবে এ মুহূর্তে অনেক কিছুর মতো আলুরও অভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ থেকে আলু যাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ামাত্র সেখানকার ডেইলি মিরর–এর ডেপুটি সম্পাদক জামিলা হোসেন টুইটারে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ পারলে যেন আলু সেদ্ধ করে পাঠায়। কারণ, সংকট কেবল খাবারের অভাব নয়, খাবার সেদ্ধ করার মতো জ্বালানিও তো নেই!’ জামিলা হোসেনের টুইটে রসিকতার পাশাপাশি যে গভীর বেদনাও মিশে আছে, সেটা বোঝা দুষ্কর নয়।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ মুহূর্তে শ্রীলঙ্কা নিয়ে দুই মাস আগের মতো আর আগ্রহ নেই। অথচ সেখানে দৈনন্দিন সংকটের তীব্রতা মোটেও কমেনি। বাড়তি দাম দিয়ে খাদ্যশস্য কেনা গেলেও গ্যাস খুব দুর্লভ। কলম্বোয় দৈনন্দিন চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগ জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে। রাইফেল হাতে জওয়ানদের পাহারা ছাড়া সেই গ্যাস সিলিন্ডার বিতরণ করা যায় না।

মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোতে তরুণেরা একদিকে জিনিসপত্রের বাড়তি দাম জোগাড় করতে পেশাগত জীবনে দিশাহারা—অন্যদিকে নারী, শিশু আর বৃদ্ধদের দীর্ঘ সময় যাচ্ছে গ্যাসের খোঁজে। একই রকম দুর্ভাবনা আছে কেরোসিনে। সংকট মেটেনি বিদ্যুৎ সরবরাহেও।

কিন্তু রাজপথ দুই মাস আগের মতো উত্তপ্ত নেই। বিরোধী দলগুলো রাজাপক্ষেদের দাবার চাল একত্রে দাঁড়িয়ে মোকাবিলা করতে পারেনি। চীন-ভারতও স্থানীয় শাসকদের পাশেই আছে মনে হচ্ছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের সঙ্গে কুলীনদের সম্পর্কে যে ফাটল দেখা দিয়েছে, তার কোনো ভালো সমাধান এখনো কেউ হাজির করতে পারেনি কলম্বোয়।

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া যেভাবে জনরোষ সামাল দিচ্ছেন

রাজপথের বিক্ষোভ ঠান্ডা করতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে যে ‘অপ্রচলিত কৌশল’ নেন, তা বেশ ভালো ফল দিয়েছে তাঁর বংশের জন্য। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ভাই মাহিন্দাকে সরিয়ে সেখানে বসান তিনি বিরোধী শিবিরের রনিল বিক্রমাসিংহেকে। আপাতদৃষ্টে চমকপ্রদ ‘সমন্বয়বাদী’ এই পদক্ষেপে অনেকগুলো উদ্দেশ্য সাধন হয় তাঁর। রাজাপক্ষেদের প্রতি জনরোষ আর আগের মতো নেই এখন। মানুষের নজর সরে গেছে প্রধানমন্ত্রী পদের দিকে।

দেশে-বিদেশে সবাইকে প্রেসিডেন্ট বোঝাতে পেরেছেন তিনি বিরোধী শিবিরকে নিয়ে সংকট সামাল দিতে চান। মূল বিরোধী শিবির সাজিথ প্রেমাদাসার ‘সঙ্গী জন বালাওয়াগা’ (ঐক্যবদ্ধ জনশক্তি) এখনো তাঁর পদত্যাগের দাবিতে অনড় আছে।

কিন্তু রনিলকে পাশে পেয়ে ক্ষমতার দড়ি পুরোপুরি আগের মতোই গোতাবায়ার হাতেই থাকছে। দেশটির শক্তিশালী সামরিক আমলাতন্ত্রের জন্যও এ রকম সমাধান স্বস্তিকর। তাতে রাজনীতির পরিসরে এমন কেউ ঢুকে পড়তে পারছে না, যারা রাষ্ট্রকাঠামোর সংস্কার করতে উদ্ধত হবে। পুরো দেশের এত দুঃখ, কষ্ট, হয়রানির জন্য রাজাপক্ষেদের কারও বিচারের মুখেও পড়তে হয়নি। ওই বংশের কেউ কেউ অবশ্য নীরবে দেশ ছাড়ছেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষে ইতিমধ্যে এমপি পদও ছেড়েছেন। সবার ধারণা, তিনি দেশ ছাড়বেন। তাঁর স্ত্রী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছেছেন।

মূলত প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ‘সহযোগিতা’য় রাজাপক্ষেরা প্রায় গণ-অভ্যুত্থানের হাত থেকে রেহাই পায় এবার। রনিল বলছেন, দেশের এ মুহূর্তের সংকটে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রয়োজন।

সে কারণেই রাজাপক্ষেদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সংস্কারের আগে তিনি রাজনৈতিক সংস্কারকে স্থগিত রাখার পক্ষে। তবে দেশটিতে এমন বিপুল রাজনৈতিক কর্মী পাওয়া যাবে, যাঁরা রনিলের চলতি ভূমিকাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন। আবার এমন রাজনীতিবিদও কম নেই, যাঁরা রনিলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মন্ত্রিত্ব নিচ্ছেন।

এমনকি খোদ সাজিথের অনেক সহযোগীও গোতাবায়া ও রনিলের মন্ত্রী হচ্ছেন। কুলীন রাজনীতির ভেতরকার এ রকম নীতিহীনতা, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে সুযোগ বুঝে মন্ত্রী-এমপি হওয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই আছে। শ্রীলঙ্কায় সেসবই চলছে।

সংবিধান সংশোধন করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা

রনিল বিক্রমাসিংহে এর আগে কয়েকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শ্রীলঙ্কায়। এবারের পরিস্থিতি একবারেই ভিন্ন। নিজে ছাড়া তাঁর দলের আর কেউ নেই পার্লামেন্টে। এক আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে পারা অবিশ্বাস্য এক উদাহরণ। তবে কেবল প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসে নেই তিনি। বিরোধী নেতাদের মন্ত্রী বানিয়ে পাল্লা ভারী করাও তাঁর একমাত্র কৌশল নয়। নিজের অবস্থানকে ন্যায্যতা দিতে এবং পরিবর্তনবাদী ভাবমূর্তি গড়তে তিনি সংবিধানে পরিবর্তনেরও ডাক দিয়েছেন।

সে লক্ষ্যে পার্লামেন্টে সংবিধানের ২১তম সংশোধনীর প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। যে প্রস্তাবের মূলকথা হলো, প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা কমিয়ে সেসব মন্ত্রিসভার হাতে নেওয়া। এ ছাড়া প্রস্তাবিত সংশোধনীর বড় একটা চাওয়া হলো, এমন একটি ‘সাংবিধানিক পরিষদ’ করা, যারা সাংবিধানিক পদগুলোর নিয়োগ দেবে। বাংলাদেশের বিবেচনায় এমন পদগুলোর মধ্যে আছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ইত্যাদি।

এসব পদে নিয়োগ ও পরিবর্তনের ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে সরানোর দাবি শ্রীলঙ্কায় বেশ পুরোনো। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এটা সুশাসনের এক বড় শর্ত হয়ে আছে। শ্রীলঙ্কায় চলতি সংকটেরও একটা বড় কারণ ছিল গোতাবায়া নির্বাহী ক্ষমতার জোরে সাংবিধানিক পদগুলো আত্মীয়-পরিজন-অনুরাগী দিয়ে ভরে ফেলেছিলেন। তবে রনিল চাইলেও প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা কমিয়ে সংবিধানে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটাতে পারবেন বলে মনে হয় না। কারণ, দেশটির পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ‘পডুজানা পেরামুনা’র মালিক রাজাপক্ষেরা।

এই গোত্র সিংহলি-বৌদ্ধ-জাতীয়তাবাদের সেই ভাবধারার প্রতীক, যারা দেশে সিংহলি আধিপত্য কমার বিপক্ষে। তামিল ও মুসলমানদের ক্ষমতার পরিসরে কোনো ধরনের বাড়তি হিস্যা দেওয়ার বিরোধী জনমত এখনো সিংহলি সমাজে শক্তিশালী। শহুরে সিংহলি মধ্যবিত্ত আপাতত রাজাপক্ষেদের বিরোধী হলেও সিংহলি জাতীয়তাবাদ থেকে তাদের বড় অংশের চূড়ান্ত মোহমুক্তি ঘটেছে, এমন বলা যায় না। এমনকি দেশটির বামপন্থী শিবিরেও সিংহলি পক্ষপাতিত্বের ছাপ আছে।

সংকটের কারণ কেবল মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ নয়

শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষেদের সৌভাগ্যের একটা দিক হলো—মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধ তাঁদের সুযোগ করে দিয়েছে নিজেদের কর্মকাণ্ডের ফলাফলকে কিছুটা অপরের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার। শ্রীলঙ্কায় এডিবির পরামর্শক অধ্যাপক মাইক মুর বেশ কয়েকবারই বলেছেন (যেমন ২০ মে, বিবিসি), শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের সামান্য অংশই বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ঘটেছে।

বরং এটা বৈদেশিক ঋণ নিয়ে নানান খামখেয়ালির ফল। এ রকম খামখেয়ালির আরেক গোড়া রয়েছে এসব দেশের রাজনীতি-অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে। যে ‘নীতি’ সব সময় গুটিকয়েক মানুষ ‘নির্ধারণ’ করে। এই ‘গুটিকয়েক’রা উন্নয়নের চমক দেখাতে চেয়ে ঋণ শোধ করার বিষয়টি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়াকেই অগ্রাধিকার দেয়।

২০০৮ সালেও শ্রীলঙ্কার বিদেশি দেনা ছিল মাত্র ১৬ বিলিয়ন। সেটা কাদের সিদ্ধান্তে এক যুগের ভেতর তিন গুণ ছাড়িয়ে গেল, কারা এর সুবিধাভোগী হলো, সেসব প্রশ্নের উত্তর ২০২২ সালে কেবল দেশটির জনগণ চাইতে শুরু করেছিল। তখনই সেখানে জরুরি অবস্থা জারি হয় এবং সেনা নামে। আইএমএফ অবশ্য ২০২০ সালের শুরু থেকে শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করছিল তার অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে। সুতরাং আজকের সংকটটি মহামারি বা ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঘটেছে, এমনটি পুরোপুরি সত্য নয়। ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণগ্রস্ত দেশটিকে এ বছর প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ শোধ করার কথা। দুই বছর আগেও এ নিয়ে এখানকার শাসকদের কোনো উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, প্রস্তুতি ছিল না।

উল্টো কয়েক বছর আগে গভীর সমুদ্রবন্দর, চোখধাঁধানো বিমানবন্দর আর উন্নত সমরাস্ত্রের সজ্জা দেখিয়ে জনগণকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, তারা নিম্নমধ্যম আয়ের জনপদ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ইউরোপ হয়ে উঠছে। আসন্ন দুর্যোগ আড়াল করতে এই শাসকদের ছোট ছোট অঙ্কে ডলার দিয়ে পাশে থেকেছিল নয়াদিল্লি ও বেইজিং। ভারত এ বছরের শুরুতে দুই দফায় শ্রীলঙ্কাকে দেড় বিলিয়ন ডলার দিয়েছে এবং আরও ২ বিলিয়ন ডলার দিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছিল।

চীন ১০ বিলিয়ন ইউয়ান কারেন্সি সোয়াপ (মুদ্রা বিনিময়) করেছে কলম্বোর সঙ্গে, ডলারের হিসাবে যা প্রায় দেড় বিলিয়ন। এভাবে রাজাপক্ষেদের মদদ দেওয়ার সময় চীন-ভারতে মতো কোনো মুরব্বি শ্রীলঙ্কার কুলীনদের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনের কথা বলেনি। আসন্ন সংকটেরও আভাস দেয়নি। শেষ পর্যন্ত সেই সংকট এসে গেছে অর্থনীতিশাস্ত্রের নির্মোহ ফর্মুলায়। লজ্জায় উদোম হয়ে এপ্রিল থেকে বিদেশি দেনা শোধ স্থগিত রাখতে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে।

চীন-ভারত বন্ধুত্বের সমীকরণ পাল্টাচ্ছে

শ্রীলঙ্কার চলতি সংকট শুরু থেকে চীনের জন্য বিব্রতকর ছিল। রাজাপক্ষেদের বড় এক অর্থনৈতিক বন্ধু এবং অনুপ্রেরণা তারা। রনিল এখন ক্রমে দেশটিকে চীনের প্রভাব থেকে বের করে আনতে চাইছেন। এটিও বেইজিংয়ের জন্য উদ্বেগের। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপটিতে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল কোনো উপস্থিতি দেখতে ইচ্ছুক নয় চীন। ভারতও শ্রীলঙ্কাকে তার ‘নিরাপত্তার অংশ’ মনে করে। গত কয়েক মাসে এখানে চালকের আসনে খানিক ভাগ বসাতে পেরেছে তারা। শ্রীলঙ্কা বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতেও বড় পরিবর্তন এসেছে। হিন্দু-তামিলদের পাশে থাকতে গিয়ে বৌদ্ধ-সিংহলি কুলীনদের প্রতি কঠোর থাকার নীতি পাল্টে নিয়েছে তারা। বৌদ্ধধর্মের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা দেখাতে শ্রীলঙ্কা থেকে ভিক্ষুদের সফরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ভারতে। একই সঙ্গে গোতাবায়া-রনিল মডেলকেও ‘কৌশলগত নিরপেক্ষতার’র সঙ্গে নিয়েছে নয়াদিল্লি। যদিও তামিলরা চাইছিল রাজাপক্ষেদের পূর্ণ বিদায়।

ভারতের হাইকমিশনারের উল্টো ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে চীনের রাষ্ট্রদূতকে। হঠাৎই তিনি গেলেন দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে—হিন্দু তামিল ও মুসলমান তামিলদের জনপদে। সর্ব উত্তরে নাল্লুর সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দিরটিতে চীনের রাষ্ট্রদূতকে পূজা দিতেও দেখা গেল কিছুদিন আগে। এই দৃশ্য সিংহলিদের জন্য বিস্ময়ের—ভারতীয়দের জন্য উদ্বেগের। কারণ, নাল্লুর থেকে দক্ষিণ ভারত একেবারে কাছাকাছি।

তবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া এ মুহূর্তে চীনের বন্ধুত্ব নিয়ে আগের মতো আর উচ্ছ্বসিত নন। এটা অস্বাভাবিকও নয়। বরং যা স্বাভাবিক, চীন-ভারত উভয়ে শ্রীলঙ্কায় নিজেদের বন্ধুত্বের বলয় নতুন করে বিন্যস্ত করে নিচ্ছে। দর্শকসারি থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররাও। ফলে চলতি সংকটের ভেতর দিয়ে শ্রীলঙ্কার মানুষের পুরোনো জীবনধারাই কেবল নয়, দেশটির ভেতরে-বাইরে শত্রু-মিত্রের ধারণায়ও অনেক বদল ঘটছে।

আইএমএফের নানা শর্ত

রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর কেবল আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক নয় এডিবি, জাপানসহ অনেক দেশ শ্রীলঙ্কাকে সাহায্যের আশ্বাস দিচ্ছে ক্রমাগত। মনে হচ্ছে, দেশটিতে গণ-অভ্যুত্থানধর্মী কিছু না ঘটায় এ রকম সব আন্তর্জাতিক শক্তি স্বস্তি পেয়েছে।

তবে তারা যা দিচ্ছে এবং দিতে চাইছে, তা হলো স্বল্প পরিমাণে খাবার, ওষুধ ইত্যাদি। দান-খয়রাত হিসেবে এসব দিয়ে অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতেরা নিজেদের সামাজিক ভাবমূর্তি বাড়াচ্ছেন শ্রীলঙ্কায়। কেবল আইএমএফ এখনো দয়ার হাত বাড়ায়নি। ডলার–সংকটের মুখে তাৎক্ষণিক বড় হস্তক্ষেপে দরকার তাদেরই। তারা অক্সিজেন দেওয়ার আগে রোগীকে অনেকগুলো শর্ত বেঁধে দিতে চলেছে।

যার মধ্যে আছে কর বাড়ানো, ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া, উন্নয়ন খাতে ব্যয় কমানো, লোকসানি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বেচাবিক্রি করা ইত্যাদি। এ রকম পদক্ষেপগুলোর পরিণতি কী হবে, সেটা বোঝা দুঃসাধ্য নয়, তবে এ মাসেই এসব নিয়ে ‘চুক্তি’ হচ্ছে। অদক্ষ রাজনীতিবিদ ও প্রশাসকদের কর্মকাণ্ডের বোঝা বইতে হবে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের নতুন করে। সামনের দিনগুলোয় জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে।

কৃষি উৎপাদন আরও ব্যয়বহুল হবে। চাকরির বাজার আরও সংকুচিত হবে। বিশেষভাবে বাড়বে জ্বালানির দাম। সেনাবাহিনী পাশে থাকলে আইএমএফের এ রকম ‘পোড়ামাটি নীতি’ ঠিকভাবেই বাস্তবায়ন করা যাবে বলেই রনিল ও গোতাবায়ার ভরসা। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এটা নিশ্চিত হতে পারছে না, যে প্রশাসন দেশটির এখনকার সংকটের জন্য দায়ী, তারা অক্ষত থাকাবস্থায় ডলারের নতুন বস্তাগুলো ঠিকঠাকভাবে মানুষের কাজে লাগবে কি না।

দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা সিনড্রোমের মূল কারণ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও জবাবদিহিহীনতা। সন্দেহাতীতভাবে পুরোপুরি মানবসৃষ্ট ‘দুর্যোগ’ এসব। মোটাদাগে রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া কেবল ডলার দিয়ে এসব ‘ব্ল্যাকহোলের’ মুখ বন্ধ করা কঠিন। কিন্তু এ রকম পদ্ধতিগত রাজনৈতিক সংস্কারের কথা আইএমএফের পক্ষে বলা শরমের ব্যাপার। আবার খাবার টেবিলে বাংলাদেশের আলু দেখেও একধরনের সংকোচ বোধ করবে লঙ্কানরা। ব্যর্থ গণ–আন্দোলনের বেদনা বহুমুখী।

****আলতাফ পারভেজ ‘শ্রীলঙ্কার তামিল ইলম’ (ঐতিহ্য, ২০১৭) গ্রন্থের লেখক।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: জুন ১৫, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ