Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা নিজের ভবিষ্যতই চুরি করছেন (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

‘আমদানি কমালে ডলার বাঁচবে, রপ্তানি বাঁচবে কি?’ এটা ছিল ২৫ জুলাই ২০২২ আমার প্রথম আলোর মতামত কলামের শিরোনাম। বাস্তবে জোরজবরদস্তি করে আমদানি কমানো হয়েছে, কিন্তু তাতে ডলার রিজার্ভ বাঁচানো যায়নি। ডলার-সংকটে ঋণপত্র নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দেড় বছরে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছেড়েছে, এতে রিজার্ভ কমেছে। পাচার বেড়েছে বলে ডলার-সংকট তীব্র। আগে সাধারণত ঘুষ-তদবির-জাত কালোটাকা, প্রকল্পের চুরি করা টাকা, চাঁদাবাজির টাকা, খেলাপি ঋণের টাকা পাচার হতো। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শত শত বেনামি ঋণের নামে ব্যাংকের অর্থ লোপাট করে পাচারের আয়োজন। 

নভেম্বর মাসের মাত্র দুই সপ্তাহে তিন ইসলামি ধারার ব্যাংক থেকে বেনামে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা ঋণ গেছে, যেখানে গ্রহীতাদের ঠিকানাই নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস ছেলে কোম্পানি গঠনের ১৪ দিনের মাথায় ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। জামানতের প্রয়োজন হয়নি, লাগেনি কোনো ক্রেডিট রিপোর্ট। কোম্পানির ঠিকানায় কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। নথিপত্রে মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা টেলিফোন নম্বরও নেই। এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৯০০ করে মোট ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংক থেকে। ছয় বছরে প্রতিবছর গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হলেও গত এক বছরেই ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ ধরনের ঋণের অর্থ পাচার হচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদদের ধারণা।

ডলার–সংকটের কারণে সরকার আমদানি নিরুৎসাহিত করতে চেয়েছে, কিন্তু কোন এলসি বন্ধ হবে, কোনটা চালু থাকবে, সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নীতিমালা নেই। এতে ব্যবসায় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীদের এলসি বন্ধ হয়েছে, কিন্তু প্রভাবশালীরা অনেকেই এলসি খুলতে পারছেন। ফলে ব্যাংকিং খাতে পাচার কমেনি। ঘটনা যা-ই হোক, এলসি তথ্যগুলো ভবিষ্যতের জন্য অনেক ট্রেস বা চিহ্ন রেখে যাচ্ছে। 

 রিজার্ভ থেকে প্রকল্পে ও রপ্তানি খাতের দেওয়া রাজনৈতিক ঋণও পাচার হয়েছে। আজকের ডলার–সংকটের জন্য মেধাহীন অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত অথবা পাচারের অনুকূল ইচ্ছাকৃত নীতি—কোনোটাই কম দায়ী নয়। যা বলছিলাম, আমদানি কমাতে গিয়ে রপ্তানিও কমতে শুরু করেছে। ডলার-সংকট তীব্র হয়েছে। যেহেতু আমাদের রপ্তানি ও ব্যবসা আমদানিমুখী, সেহেতু এটাই হওয়ার কথা ছিল। এতে আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা হতাশ হয়ে এমন সব পথ নিচ্ছেন, যা কিনা মানি লন্ডারিং বাড়াতে উৎসাহ দেয়। এতে ভবিষ্যৎ ইলেকট্রনিকস বাণিজ্যের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু কৌশলগত বিপদ তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ, চুরি, পাচার ও অপচর্চাগুলো চিহ্ন বা ট্রেস রেখে যাচ্ছে। 

দুই. 

সরকার জ্বালানি-খাদ্য-সারের মতো জরুরি আমদানির বাইরে বাছবিচারহীন এলসি বা ঋণপত্র বন্ধ রেখেছে বিগত কয়েক মাসে। এতে ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ে বিকল্প খুঁজছেন। আধুনিক সময়ে ব্যাংকের ঋণপত্রপ্রক্রিয়াকে কাটিয়ে আমদানি কিংবা রপ্তানি করার বিকল্প সমাধান আছে। হ্যাঁ, লেনদেনটা ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হয়। ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি (নো ইউর কাস্টমার, গ্রাহক তথ্যব্যাংক) বা ই-কেওয়াইসি নামে কিছু ইউরোপীয়-মার্কিন ফিনটেক অ্যালায়েন্স কোম্পানি আছে, যারা ব্যাংকব্যবস্থার বাইরে গিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয় ও পেমেন্ট সংযোগ তৈরি করে। 

বাংলাদেশের আইনে বাঁধা থাকায় সরাসরি ই-কেওয়াইসি বাণিজ্যে যাওয়ার সাহস করেন না ভালো রপ্তানিকারকেরা। এলসি বিকল্পের পাশাপাশি ই-কেওয়াইসি কোম্পানিগুলো ‘এক্সপোর্টার ফাইন্যান্সিং’ করে, যেটা বাণিজ্য বিকাশে খুবই উপকারী। এ ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক শিপিং ডকুমেন্ট আপলোড করলেই ই-কেওয়াইসি শিপমেন্ট ভেরিফাই করে অতি দ্রুত (মাত্র এক সপ্তাহে) রপ্তানি আয়ের বড় অংশ পাঠিয়ে দেয়, এ জন্য এলসি নিষ্পত্তি পর্যন্ত বা ১২০ দিন অপেক্ষা করতে হয় না। অর্থাৎ, ই-কেওয়াইসি বিক্রেতাকে পেমেন্ট করে (স্বল্পমেয়াদি ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) পরে ওই ডলার ক্রেতার কাছ থেকে নিয়ে নেয়। পাশাপাশি এসএমই খাতের ছোট, কিন্তু মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদকেরা, যাঁরা ব্যাংকের এলসি সাপোর্ট পান না, ই-কেওয়াইসি অ্যালায়েন্স তাঁদের ব্যাপক উপকারে আসে। 

এসব ফিনটেক কোম্পানি ও তাদের পার্টনাররা ক্রেতা ও বিক্রেতার সুবিশাল তথ্যভান্ডার তৈরি করে (ট্রেড অ্যান্ড ফাইন্যান্স, প্রোডাকশন, শিপিং ইত্যাদিতে)। গ্রাহক শনাক্তকরণ, অনবোর্ডিং বা ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন, কমপ্লায়েন্স, আগের আমদানি ও রপ্তানি এলসির ডেটাবেজ তৈরি, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং সম্মতি আইন পূরণ, আর্থিক জালিয়াতি শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ ও মোকাবিলা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বিগ-ডেটা, মেশিন লার্নিং এবং ব্লকচেইনের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অর্থাৎ, এরা ইলেকট্রনিক লেনদেনে চরম পর্যায়ে সক্ষম। অনেক ক্ষেত্রে তারা সাধারণ মুদ্রার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সরকার অনুমোদিত ফিনটেক ক্রেডিট, ক্রিপ্টো মুদ্রাও ব্যবহার করে। 

ফিনটেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যাংক, ফাইন্যান্সিয়াল হাউস, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি, শিপিং ও ফরোয়ার্ডিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, বায়ার, কাঁচামাল রপ্তানিকারক, পণ্য উৎপাদক কোম্পানি, বায়িং হাউস কিংবা বন্দর ইত্যাদি বহুবিধ ডোমেইনের কোম্পানি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কৌশলগত অংশীদারত্ব থাকে। গ্রাহকদের জালিয়াতি প্রতিরোধ এবং সর্বোচ্চ মানের ই-কেওয়াইসি সমাধান প্রদানের ফ্রেমওয়ার্ক থাকে। যার ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সমাধান অফার করে এবং বিশ্বস্ত পরিচয় যাচাইকরণ সমাধানগুলোকে আরও অ্যাকসেস যোগ্য করে তোলে। যদিও ধারাটা নতুন এবং বিকাশমান। তথাপি, এটা ব্যাংকের এলসি কিংবা ব্যাক টু ব্যাক এলসি সেবার একটা বিকল্প হতে চলেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে এসব কোম্পানি ই-কমার্স ক্ষেত্রে দুর্দান্ত সাফল্য পেয়েছে, এখন তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্প্রসারণ করতে শুরু করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা গ্রাহক শনাক্তকরণ এমন পর্যায়ে নিয়েছে যে ‘আগে কিনে পরে অর্থ প্রদানের’ সেবা দিতে শুরু করেছে। 

তিন. 

প্রশ্ন হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রক নীতিমালা কেমন হবে? বাংলাদেশে কি ই-কেওয়াইসি অ্যালায়েন্সভুক্ত রপ্তানিকারক বা আমদানিকারক আছে? উত্তর হচ্ছে, বাংলাদেশের কিছু কোম্পানি এই ফ্রেমওয়ার্কে পরীক্ষামূলক যুক্ত আছে। ই-কেওয়াইসি অ্যালায়েন্সভুক্ত রপ্তানিকারক বা আমদানিকারক দেশে আছে, কিন্তু সরকারের কোনো নীতিমালা নেই। ফলে মাঝেমধ্যে দেখা যায়, আমদানি ঋণপত্র ছাড়াই বন্দরে পণ্য আসে, এতে সবাই অবাক হয়। যদিও দুর্নীতির উর্বর দেশে অনেক কিছুই সম্ভব। 

বাংলাদেশ ব্যাংককে ই-কেওয়াইসি নীতিমালা করতে হবে, ফিনটেক ক্রেডিটের ভবিষ্যৎ মাধ্যম নিয়ে ভাবতে হবে। ব্যাংক এলসির নতুন ও দক্ষ বিকল্প নিয়ে গবেষণা করতে হবে। ভবিষ্যৎ রপ্তানির নতুন সরবরাহব্যবস্থায় নিজেকে ইন্টিগ্রেট করার রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। 

পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সচেতন হতে হবে। কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক আমদানি-রপ্তানির নতুন ধারায়, ই-কেওয়াইসি অ্যালায়েন্সে যুক্ত হতে হলে আমদানিতে ওয়ার-ইনভয়েসিং এবং রপ্তানিতে আন্ডার–ইনভয়েসিং করে পাচারের চর্চা থেকে দূরে থাকতে হবে। কেননা, ফিনটেক অ্যাপ্লিকেশন প্রযুক্তিতে যেকোনো পণ্যের অতীত ও বর্তমানের আন্তর্জাতিক বাজারদর ডেটাবেজে থাকবে, এলসি রেকর্ড থাকবে। খুব দূরে যেতে হবে না, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির তথ্যশালায় বাংলাদেশের এলসির বিপরীতে অর্থ পাচারের রেকর্ড আছে। রপ্তানির বিপরীতে কাঁচামাল আমদানির অমিল, রপ্তানি পণ্যের বিপরীতে রপ্তানি আয়ের অমিল অর্থাৎ, মানি লন্ডারিংসহ যেকোনো পাচার ও চুরি সহজেই ধরা পড়ে যাবে। অতীতে জালিয়াতি করে, সময়ে ভালো হয়ে যাওয়া কোম্পানিও আগের ডেটার অ্যানালাইসিসে ধরা খেয়ে অ্যালায়েন্সভুক্ত হতে ব্যর্থ হতে পারে। 

জাল তথ্য ও কোলেটেরাল দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এবং ব্যবসায়ীরা অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্মার্ট চুক্তি কিংবা অপরাপর ডিজিটাল ইনোভেশন কিংবা ফিনটেক সেবার বিকাশের পথ রুদ্ধ করছেন। এই যে জামানত, ঠিকানা, ক্রেডিট রিপোর্ট, ব্যবসার তথ্য যাচাই ছাড়া অর্থাৎ, কেওয়াইসি কমপ্লায়েন্স ছাড়াই দেশের ব্যাংকগুলো একের পর এক বেনামে যোগসাজশে ঋণ দিচ্ছে, এতে তারাও ভবিষ্যতে ই-কেওয়াইসি অ্যালায়েন্সে যুক্ত হতে অযোগ্য হবে। পাশাপাশি জালিয়াতিসহায়ক দুর্বল রেগুলেশনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকেরও ডিজিটাল ক্রেডিবিলিটির সূচক খারাপ হবে। সব মিলে আজকের চুরি, পাচার, এলসি জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, ভুয়া বাণিজ্যিক গ্রাহক কেওয়াইসি, দুর্বল রেগুলেশন ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্ভাবনার ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে অযোগ্যতা তৈরি করছে। অর্থাৎ, নিজের অজান্তেই ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা নিজ নিজ ভবিষ্যৎ চুরি করছেন। 

ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্ভাবনার দুয়ার খোলা রাখতে এক দিকে যেমন দেশের বন্দর ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণে পলিসি রোডম্যাপ দরকার, অন্য দিকে ব্যবসায়ীদেরও পাচার থামিয়ে প্রকৃত ব্যবসায় মনোযোগ দেওয়া দরকার। 

● ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। সিনিয়র সলিউশন আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন নেদারল্যান্ডস।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:নভেম্বর ৩০, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ