Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

রাস্তায় নামা কঠিন হলে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদের ভাষা তৈরি হয় (২০২৩)

Share on Facebook

হাতে গীতাঞ্জলি, যা পেরেকের আঘাতে রক্তাক্ত। আর মুখে টেপ লাগানো বিষণ্ন মুখের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে। দেশে মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বাধা এবং সব ধরনের নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে ভাস্কর্যটি তৈরি করেছিলেন চারুকলার একদল শিক্ষার্থী। গত মঙ্গলবার বিকেলে ভাস্কর্যটি মাথা তুলে দাঁড়ানোর এক দিন পর সেটি ‘গুম’ হয়ে যায়। কবিগুরুর ওই ভাস্কর্যের ভাঙা অংশ বৃহস্পতিবার রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পড়ে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘গুমের রাজনীতিতে’ রবীন্দ্রনাথও গুমের শিকার হয়েছেন। মানুষের অধিকারের পক্ষে তৈরি করা একটি ভাস্কর্য নষ্ট করার মধ্য দিয়ে সরকারের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তোষামোদি আচরণ প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ভাস্কর্য পছন্দ করেনি। রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ভাস্কর্যটি স্থাপনের পর সমালোচনা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী। তিনি প্রথম আলোকে বলেছিলেন, একটা ভাস্কর্যের পাশে আরেকটা ভাস্কর্য স্থাপন করা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। অনুমতি ছাড়া এটি বসানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে ভাস্কর্য স্থাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি আছে।

এরপর বুধবার রাতে ভাস্কর্যটি অদৃশ্য হয়ে যায়। পরদিন সকালে সেখানে বড় ব্যানারে লেখা ছিল, ‘গুম হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ’। পরে জানা গেল, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলেছে; যা স্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। তিনি গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা যে কাজটি করেছে, তাতে বিশ্ববরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথের প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হয়নি। যে ভাস্কর্যটি আছে আমাদের, দেশের অর্জন এবং ইতিহাসের প্রতীক (রাজু ভাস্কর্য), সেটিকে অবমাননা করা হয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ এটি সরিয়ে দিয়েছে।’

লেখক, শিল্পী, সাংবাদিকসহ দেশের সব পর্যায়ের মানুষের স্বাধীন মতপ্রকাশে বাধা এবং কড়াকড়ির প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথের এই ভাস্কর্য চলতি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে রাখার পরিকল্পনা ছিল উদ্যোক্তাদের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো প্রতিবাদ করতে গেলে বিরোধী রাজনীতির তকমা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ভাস্কর্যটির মাধ্যমে যে প্রতীকী প্রতিবাদ হয়েছে, সেটা মিছিল–সমাবেশের মতো প্রচলিত ধারায় করতে গেলে হামলা ও মামলার আশঙ্কা ছিল।

এই ভাস্কর্য তৈরির নেতৃত্বে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র শিমুল কুম্ভকার। অমর একুশে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীর স্টল বরাদ্দ না পাওয়ার বিষয়টি যখন স্পষ্ট হয়, সে সময়ই তাঁরা ভাবেন কীভাবে এর প্রতিবাদ জানানো যায়। সেই ভাবনা থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ভাস্কর্য নির্মাণ। শিমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সবাই ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলাম, যা মানুষকে নাড়া দেবে।’ চারুকলার একদল শিক্ষার্থী সাড়ে ১৯ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটি তৈরি করেছিলেন বাঁশ, থার্মোকল ও বইয়ের কাগজ দিয়ে।
শিক্ষার্থীরা প্রথমে বইয়ের ওপর পেরেক বসানোর কথা ভাবেন। এরপর একটি চরিত্রের প্রয়োজন হয়, কার হাতে বইটি থাকতে পারে? অনেকের কথাই তাঁরা ভাবেন। শেষে রবীন্দ্রনাথকেই চূড়ান্ত করা হয়। প্রায় ১৫ দিন সময় লাগে ভাস্কর্যটি তৈরি করতে।

এই ভাস্কর্য ঘিরে কোনো প্রতিবাদী লেখা ছিল না। ছিলেন শুধু কবিগুরু। ঠায় দাঁড়িয়ে থেকেই তিনি যেন অনেক কিছু বলেছেন। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে এখন সমবেত প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। মানুষ এককভাবে বা ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিবাদ করছে। সনাতনী প্রতিবাদের জায়গায় পরিবর্তন এনেছে বর্তমান প্রজন্ম। কারণ, প্রচলিত প্রতিবাদের কারণে শারীরিক আক্রমণসহ বিভিন্ন হুমকির আশঙ্কা থাকে। এখনকার প্রজন্ম অনেক সৃষ্টিশীল।

ভিন্নভাবে প্রতিবাদ

প্রতিবাদ বলতে মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন, বিবৃতি যুগে যুগে চলে এসেছে। হালে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। এরপরও কিছু প্রতিবাদ হয় নীরবে, যা মানুষকে ভাবায়, বিবেককে নাড়াও দেয়।

অসুস্থ রাজনীতির প্রতিবাদে ২০০০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে শ দুয়েক মানুষ দেশটির জাতীয় পতাকা ধুয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদী আচরণের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে শুরু হয়েছিল ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ শিরোনামে প্রতিবাদ, যা বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলে। সে সময় লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে সশস্ত্র পুলিশের সামনে নীরবে এক নারীর দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিবাদ জানানোর ছবিটি আলোচনার জন্ম দেয়। ইরানে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং হিজাব পরতে বাধ্য করার প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়, তাতে সারা বিশ্বের নারীরাই সমর্থন জানিয়েছিলেন। কেউ কেউ ওই আন্দোলনের সমর্থনে নিজের চুলও কেটে ফেলেন।

ঢাকা শহরে এর আগেও এমন প্রতিবাদ দেখা গেছে। সাড়ে পাঁচ বছর আগে রাজধানীর দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতির মাধ্যমে সাবধানবাণী লেখা হয়েছিল, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’। আরও লেখা হয়েছিল, ‘সময়টা পক্ষে না, সুবোধের ভাগ্যেও কিছু নেই’। দেয়ালচিত্রে বাক্সবন্দী সূর্য হাতে সুবোধকে পালানোর ভঙ্গিতেও দেখা যায়। কিছুদিন পর নতুন দেয়ালচিত্র দেখা যায়, ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে’।

টিকিট কালোবাজারিসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনায় পরিবর্তনের দাবি নিয়ে গত বছর জুলাইয়ে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন। একাই তিনি শুরু করেছিলেন। অনিয়মের প্রতিবাদে তাঁর এই কর্মসূচিতে অনেকেই সংহতি জানান। রেল কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসেছিল।

এবারের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ প্রসঙ্গে শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘আমরা চেয়েছি মুখে কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে দিতে। নিজেরা কথা না বলে অন্যদের দিয়ে কথা বলাতে।’

শিল্পী ও চিত্রসমালোচক মোস্তাফা জামান প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তায় বের হয়ে একসঙ্গে প্রতিবাদ এখন চাইলেই করা যায় না, সবার মধ্যে ভয় কাজ করে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে আচরণ, তাতে রাস্তায় দাঁড়ানো যায় না। তাই মানুষ নানা উপায় বের করছে। সৃষ্টিশীলেরা সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়। কারণ, প্রতিবাদের তো ভাষা দরকার। প্রতিবাদ তো হতে হবে।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ: ফেব্রুয়ারী ১৮,২০২৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ