Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

লাশের রাজনীতি, রাজনীতির লাশ(২০২১)

Share on Facebook

লেখক: হাসান তারিক চৌধুরী

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা অর্থাৎ চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর সরানো হবে কিনা- এ নিয়ে সপ্তাহজুড়ে দেশের রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর বর্তমান স্থান থেকে সরানোর যুক্তি হিসেবে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছেন, যেহেতু এই কবরে জিয়াউর রহমানের লাশ কখনোই ছিল না, তাই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে এ কবর অন্যত্র সরিয়ে নিতে কোনো আপত্তি থাকা উচিত নয়। সরকারি দলের বেশকিছু নেতা এর সঙ্গে আরও যুক্ত করেছেন বিভিন্ন সময়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর প্রাঙ্গণে বিএনপির নেতাকর্মীদের সৃষ্ট হট্টগোলের প্রসঙ্গ। ফলে তারা উল্লিখিত কবর সরানোর যুক্তি হিসেবে যে শুধু প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশের অস্তিত্বের প্রসঙ্গটিই এনেছেন, তা নয়; বরং এর সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রসঙ্গ বেশ জোরের সঙ্গেই তুলে ধরছেন। বিরোধী বিএনপির দিক থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতির ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদর্শন, আরেক রাষ্ট্রপতি এরশাদকে কবরে জিয়াউর রহমানের লাশ থাকার সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করা ইত্যাদি যুক্তি হিসেবে হাজির করা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর এ আলোচনা এবারই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেশ কয়েক বছর আগে সংসদ ভবন এলাকা থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে নেওয়ার কথা উঠেছিল। তখনও বিএনপির পক্ষ থেকে স্বাভাবিকভাবে প্রায় একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছিল। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এলে সে বিতর্ক স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল।

অনেকের মনেই এখন প্রশ্ন- আবার নতুন করে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশ নিয়ে কেন আলোচনা তোলা হলো? সরকার কি সত্যিই জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার স্থপতি লুই কানের মূল নকশাকে সম্মান জানাতে এ ধরনের আলোচনা উত্থাপন করছে? কারণ, স্থপতি লুই কানের যে নকশা, সে অনুযায়ী এ ধরনের স্থাপনা না থাকাই যুক্তিযুক্ত। নাকি, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রশ্নকেই সরকার মূল বিবেচনায় নিয়েছে? কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, যেহেতু জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, সে কারণে হয়তো বিএনপিকে আরও বেশি চাপে রাখার কৌশল থেকেই দলটির প্রতিষ্ঠাতার কবরের বিষয়টি সামনে এনেছে ক্ষমতাসীন দল।

বিএনপি মহাসচিব এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ কবর সরানো হবে সরকারের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে হুঙ্কার এবং বাগাড়ম্বর ছাড়া যুক্তিগ্রাহ্য এবং গঠনমূলক কোনো আলোচনা উঠে আসছে না। বিএনপি নেতাদের কে বোঝাবে যে, শুধু পোস্টমর্টেম রিপোর্টের কপি উল্লিখিত কবরে ওই লাশ থাকার প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয়। যে কোনো ব্যক্তির কফিন বহন করাও কফিনে লাশ থাকার প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট নয়। এসব তর্কের ভেতর প্রবেশ করে বিএনপি নেতৃত্ব এক ধরনের রাজনৈতিক ফাঁদেই বারবার পা দিচ্ছে। তাদের বরং বলা উচিত ছিল, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জিয়ার অনুসারীরা বিশ্বাস করে আসছে- এটি তাদের প্রয়াত নেতার সমাধি। এটি তাদের প্রতিষ্ঠিত আবেগ ও অনুভূতির স্থল। ফলে উল্লিখিত কবরে মৃতের দেহাবশেষের উপস্থিতির বিতর্ক এখানে অপ্রাসঙ্গিক। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী রাজনীতিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার বদলে মৃত জিয়াউর রহমানের লাশের পেছনে সময় ব্যয় করছে। ক্ষমতাসীনরা বলছেন, বিএনপি লাশের রাজনীতি করছে। বিরোধীরা কেউ কেউ বলছেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক লাশে পরিণত হবে। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণ এখন লাশের রাজনীতি এবং রাজনীতির লাশ দুটোরই অনাকাঙ্ক্ষিত সাক্ষীতে পরিণত হতে যাচ্ছে!

ইতিহাসে রাষ্ট্রপ্রধানের কবর সরিয়ে নেওয়ার এ রকম তর্ক বা কাহিনি কিংবা রাজনীতি আগেও হয়েছে। স্পেনের স্বৈরশাসক জেনারেল ফান্সিস ফ্রাঙ্কোর কথা আশা করি অনেকেই জানেন। তিনি ছিলেন ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী স্বৈরশাসক। ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার, বিরোধীপক্ষের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন এবং তথাকথিত উন্নয়নের বুলির ওপর ভর করে ফ্রাঙ্কো তিন যুগ স্পেনের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। ২০১৮ সালে স্পেনের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় এসে উল্লিখিত স্বৈরশাসক ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর প্রায় ৪৩ বছর পর তার কবর অন্যত্র সরিয়ে নেয়। স্পেনের সেই মধ্য-বাম সোশ্যালিস্ট দল শুধু তার কবরটাকেই সরায়নি; এর আগে তারা ফ্রাঙ্কোর প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মব্যবসার রাজনীতি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতি নতজানু আর্থিক নীতি, গণতন্ত্রহীনতা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার রাজনীতিকেও ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছিল।

আজ যদি প্রশ্ন করা হয়, জেনারেল জিয়ার গৃহীত রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে আজকের ক্ষমতাসীন দল কতটা দূরে অবস্থান করছে? আজ যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়? কেন মেজর সিনহা রাশেদ বিনা অপরাধে খুন হন- এসব প্রশ্নের ফয়সালা না করে এগোতে চাইলে নিজদেরই রাজনীতির লাশে পরিণত হতে হবে। তাই রাজনীতির ইতিহাসকে নির্মোহভাবে স্বীকার করতে হবে। হতাশ হই, যখন দেখি লন্ডনপ্রবাসী শ্রদ্ধেয় এক কলামিস্ট যখন প্রগতির কথা বলতে গিয়ে তার সাম্প্রতিক এক লেখায় সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক নেতা কমরেড মণি সিংহের চরিত্র হনন করেন। সিরাজ সিকদারের বিচারবহির্ভূত হত্যার পরোক্ষ মদদদাতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি মণি সিংহকে যুক্ত করে বিচারবহির্ভূত হত্যার পক্ষেই প্রকারান্তরে সাফাই গাইতে থাকেন। আমি নিজে তাৎক্ষণিক কমরেড মণি সিংহের সময়কার সিপিবি নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে জেনেছি পুরো বিপরীত তথ্য। তাদের মতে, কমরেড মণি সিংহ সিরাজ সিকদারের বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিবৃতি দেওয়ার পক্ষে ছিলেন। যদিও তিনি ছিলেন সিরাজ সিকদারের রাজনীতির ঘোরতর বিরোধী। সুতরাং লাশের রাজনীতির ভ্রান্ত পথে প্রচলিত অপরাজনীতির বিকল্প গড়ে উঠবে না। সাধারণ মানুষের পক্ষে সুস্থ ও গঠনমূলক দেশপ্রেমিক ধারার বিকল্প রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে লাশের রাজনীতির ইস্যু থেকে সরে এসে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবনের সমস্যাকে রাজনীতির ইস্যু হিসেবে সামনে আনতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী; রাজনীতিক ও কলাম লেখক

সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ০৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ