Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস-(২০২০) আলোয় আলোয় তাঁরা

Share on Facebook

আনোয়ার পাশা ছিলেন কবি ও লেখক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেই তিনি লিখেছিলেন উপন্যাস রাইফেল রোটি আওরাত। তিনি লিখেছিলেন, ‘আজকে আকাশে-বাতাসে কবিতা নেই/ তবু ভালো লাগে হাসতেই, বাঁচতেই।’ সহজ–সরলভাবে বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু মাত্র ৪৩ বছর বয়সে তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল। এমনই এক ১৪ ডিসেম্বরে। ১৯৭১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন থেকে তাঁকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়েছিল ঘাতকেরা। মিরপুরে বধ্যভূমিতে জলা-জংলায় পড়ে থাকে তাঁর লাশ। যেমন করে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর এদেশীয় সহযোগীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল মুনীর চৌধুরী, শহীদুল্লা কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, সেলিনা পারভীন, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী—নক্ষত্রপ্রতিম আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষগুলোকে। তালিকা ধরে ধরে। শুধু আজকের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসেই নয়, আমাদের সামনে তাঁরা সব সময়ই ধ্রুব নক্ষত্র হয়ে আছেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা দীর্ঘ। তালিকা ধরে ধরে বাংলার শ্রেষ্ঠ মনীষাগুলোকে হত্যা করার নৃশংসতম অপকর্মটির শুরু সেই ২৫ মার্চ রাত থেকেই। ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে তথ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ নামে একটা বই প্রকাশ করে। সেখানে শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ১ হাজার ৭০ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমি শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ প্রকাশ করে। এই বইয়ে বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা আরেকটু নির্দিষ্ট করা হয়, ২০১ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম-পরিচয় কোষগ্রন্থটিতে ঠাঁই পায়। অনেকের ঠিকানা-তথ্য তত দিনে দুর্লভ হয়ে গেছে। ১৯৯৭ সালের ৪ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দারের সম্পাদনায় প্রকাশ করে ১০ খণ্ডের স্মৃতি: ১৯৭১। ১০ খণ্ডে ২৩৮ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্মৃতিচারণা করেন নিকটজনেরা। এই কাজগুলোর জন্য বাংলা একাডেমি এবং রশীদ হায়দার আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়ে রইবেন। তবে তালিকা যে অসম্পূর্ণ, তা সহজবোধ্য।

১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে জাতির যে ক্ষতি হয়, যে মেধাশূন্যতা তৈরি হয়, তা আজও পূরণ হয়নি। তাঁরা ছিলেন আমাদের শ্রেষ্ঠ মানুষ। মুনীর চৌধুরীর মতো শিক্ষক, বাগ্মী, নাট্যকার, প্রগতিশীল কর্মী ও চিন্তাবিদ আমরা আর কোথায় পাব? কবি শামসুর রাহমান লিখেছিলেন, ‘শুনুন মুনীর ভাই, খবর শুনুন বলে আজ/ ছুটে যাই দিগ্বিদিক, কিন্তু, কই কোথাও দেখি না আপনাকে।/ খুঁজছি ডাইনে বাঁয়ে, তন্নতন্ন, সবদিকে, ডাকি/ প্রাণপণে বার-বার। কোথাও আপনি নেই আর।/ আপনি নিজেই আজ কী দুঃসহ বিষণ্ন সংবাদ।’

কোথায় পাব শহীদুল্লা কায়সারের মতো বড় মাপের ঔপন্যাসিক–সাংবাদিককে? আলতাফ মাহমুদের মতো সংগীতজ্ঞ সুরস্রষ্টা কি আর আসবেন? ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র সুরটা যখনই বাজে, তখনই কি আমরা থমকে দাঁড়াই না, আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় ওই সুরের ইন্দ্রজালে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে না?

একাত্তরে যে শত শত বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে নিয়ে আলাদা আলাদা করে অনিঃশেষভাবে বলে চলা যাবে। শুধু একজন সম্পর্কে দুলাইন বলি। অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে বিএসসিতে প্রথম বিভাগে তৃতীয়, এমএসসিতে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয়। ২৬ মার্চ, ১৯৭১ সালে তিনি যাবেন লন্ডনে, উচ্চশিক্ষা নিতে। ২৫ মার্চ রাতে, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যমতে, ‘স্যারকে এরা পিছমোড়া করে দুহাত বেঁধে বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারতে মারতে টেনে নিয়ে যায় অ্যাসেম্বলি ভবনের দিক থেকে, তারপর দক্ষিণ বাড়ির সামনে আরও ২-১ জনের সঙ্গে গুলি করে মারে।’

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন চূড়ান্তভাবে মেধাবী। মেধার চেয়েও বড় আরেকটা বিপজ্জনক অস্ত্র তাঁদের ছিল: বিবেক। তাঁরা বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন। নিজেরাই হয়ে উঠেছিলেন জাতির বিবেকের কণ্ঠস্বর। তাঁরা অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যমুক্ত আধুনিক প্রগতিশীল দেশ চেয়েছিলেন। চেয়েছিলেন মানুষের অধিকারের প্রতিষ্ঠা।

চরম মূল্য দিতে হয়েছে তাঁদের প্রত্যেককে। কবি শঙ্খ ঘোষ তাঁর সহপাঠী বন্ধু আনোয়ার পাশাকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আনোয়ার পাশার কবিতা ‘নদী নিঃশেষিত হলে’ থেকে চয়ন করেছেন, ‘এখনো সজল আশা আছে তবে কোমল মাটিতে ও তৃণমূলে।’ তারপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা ও কথা হওয়ার স্মৃতিচারণা করে শঙ্খ ঘোষ লিখেছেন, ‘আর এই সেদিন, রাজভবনে বলছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান: আমাদের কিছু নাই। সব নষ্ট করে দিয়া গেছে ওরা। তবু ভয় পাই না। কেননা এখনো বাংলাদেশে মানুষ আছে, আর আছে মাটি।’

‘এখনো সজল আশা আছে তবে কোমল মাটি ও তৃণমূলে। এই মাটি ও তৃণের মধ্যে বেঁচে থাকবে আনোয়ার, আর তারই মতো আরও হাজার হাজার শহীদ।’ (সময়ের জলছবি, শঙ্খ ঘোষ)

এই মাটি এবং তৃণের মধ্যে আছেন আমাদের লক্ষ শহীদ। কিন্তু আমাদের শূন্যতা শুধু বেড়েই যাচ্ছে? কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’তে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারব/ আমরা কি তাঁর মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারব?’

আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো কবিতার কথা, স্বাধীনতার কথা বলতে পারছি না! বলতে পারিনি। বুদ্ধিজীবীর কাজ হলো স্রোতের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলা। বুদ্ধিজীবী তিনিই, যিনি চিন্তার বিদ্রোহ করেন, যে চিন্তা বিপজ্জনক। নিজেরা জীবন দিয়েছেন, কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাঁদের কর্তব্য থেকে বিচ্যুত হননি।

২০২০ সালটায় আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হারানোর অপূরণীয় ক্ষতিটা আমরা অনুভব করি বেশি বেশি করে। করোনা অতিমারির কারণে এবং আরও অন্য অসুখে-বিসুখে আমরা গত কয়েক মাসে আমাদের শ্রেষ্ঠ মনীষীদের অনেককেই হারিয়েছি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী—অল্প কদিনের ব্যবধানে বিদায় নিয়েছেন এই দুই জাতীয় অধ্যাপক। কামাল লোহানী থেকে আবুল হাসনাত, তালিকা বেশ বড়। আমরা অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ছি। আমাদের আকাশ থেকে উজ্জ্বলতম নক্ষত্রগুলো নিভে যাচ্ছে একে একে।

অথচ নক্ষত্রের আলোয় পথ চিনেই তো আমাদের সামনে এগোনোর কথা। আমরা যে এখন মাঝ–দরিয়ায় হালহারা তরির যাত্রীর মতো ভাসছি, আর আকাশে তারার নিশানা খুঁজছি।

২০২০-এর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ১৯৭১-এ আমাদের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হারানোর বেদনা এবং ক্ষতি আমরা অনুভব করছি ভীষণ তীব্রভাবে। তবে তাঁদের কাজ, তাঁদের জীবনাদর্শই আমাদের এই তরঙ্গক্ষুব্ধ ভাসানে ভেলা হয়ে উঠতে পারে। সেখানেই আমাদের আশা।

সূত্র : প্রথম আলো, আনিসুল হক।
তারিখ: ডিসেম্বর ১৪,২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ