Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

শিক্ষিতদের বেকারত্ব (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:ডা. জাহেদ উর রহমান।

বেশ কিছুদিন ধরে একটা অভ্যাস হয়েছে। মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে সেই সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পাতায় চলে যাই। সেখানে গিয়ে সেই সংবাদে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখার চেষ্টা করি, মন্তব্য পড়ি। মনোযোগ দিয়ে এটাও খেয়াল করি আমার নিউজ ফিডে এই সংবাদ কতজন শেয়ার করছে বা সেই প্রসঙ্গে কী মন্তব্য করছে। এটা আমাদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে খুবই প্রাথমিক হলেও একটা ধারণা দেয়।

প্রথম আলোর একটি সংবাদের প্রতিক্রিয়া
‘রাজমিস্ত্রির দৈনিক মজুরি ৯৪০, টাইলস মিস্ত্রির ১,১০৫ টাকা’—মাসখানেক আগে প্রথম আলোতে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল এই শিরোনামে। নির্মাণ ও কাঠশিল্পের জন্য চূড়ান্ত হওয়া ন্যূনতম মজুরির প্রজ্ঞাপনের ওপর ভিত্তি করে সংবাদটিতে এই সেক্টরে মজুরির চূড়ান্ত প্রস্তাবিত হার নিয়ে সংবাদটি করা হয়েছে। শিরোনামেই দেখা যাচ্ছে, রাজ ও টাইলস মিস্ত্রির প্রস্তাবিত মজুরি কম-বেশি ১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এমন একজন মিস্ত্রি মাসে কম-বেশি ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

তখনই প্রথম আলোর ফেসবুক পাতায় এই পোস্টে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া খেয়াল করছিলাম। এই কলাম লেখার সময় এই পোস্টে ২০ হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন বা প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ১ হাজার ২০০-এর মতো এবং এতে মন্তব্য আছে ২ হাজার ৩০০। প্রথম আলোর ফেসবুক পাতার মানদণ্ডে পোস্ট এনগেজমেন্টের বিবেচনায় এটা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য।

সেই পোস্টের নিচে অনেকগুলো মন্তব্য পড়লাম। অনুমান করছি, এই কলামের পাঠকও বুঝতে পারছেন মোটাদাগে মন্তব্যগুলোর বক্তব্য কী। প্রথম আলো পত্রিকার ফেসবুক পেজে যাঁরা লাইক দিয়েছেন, যাঁদের সামনে প্রথম আলোর স্ট্যাটাস যায়, তাঁরা মূলত কলেজ-ভার্সিটি পাস করা মানুষ। এর মধ্যে যাঁরা পোস্টে রিঅ্যাক্ট করেন কিংবা বিশেষ করে মন্তব্য করেন, তাঁরা অপেক্ষাকৃত তরুণ। মন্তব্যে কেউ সিরিয়াসলি কথা বলেছেন কিংবা কেউ মজা করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু প্রায় সব মন্তব্য তাঁদের হতাশার এক দুর্দান্ত প্রতিচ্ছবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পাওয়ার পরও একজন তরুণের বাংলাদেশের বাজারে চাকরি না পাওয়া, চাকরি পেলেও অত্যন্ত সামান্য বেতন পাওয়া—এসব নিয়ে কথা বলছেন সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পাওয়ার পরও কোনোমতে একটি চাকরি পেলেও অনেক ক্ষেত্রেই ১০-১২ হাজার টাকা বেতন পাওয়ার কথা উল্লেখ করে অনেকেই স্যাটায়ারের ঢঙে আক্ষেপ করে এই প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি মাস্টার্স পাস করে তাঁদের টাইলস মিস্ত্রি হওয়াই উচিত?

শিক্ষিতদের বেকারত্ব: কয়েকটি জরিপ
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই দেশে যিনি যত বেশি শিক্ষিত, তাঁর বেকার থাকার সম্ভাবনা তত বেশি। ‘বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণসমাজের মধ্যে কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব’ শীর্ষক এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। সবচেয়ে বেশি বেকার স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে, প্রায় ৩৭ শতাংশ। আর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে ৩৪ শতাংশের বেশি বেকার। আর এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্বের হার যথাক্রমে ২৭ ও ২৮ শতাংশ।

আর সম্প্রতি একই সংস্থার আরেক জরিপে উঠে এসেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬ শতাংশ, অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশই বেকার থাকছেন। ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর শেষ করে চাকরি পান। ৭ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো অন্য কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর বা কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করছেন কিংবা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ৩ শতাংশ নিজ উদ্যোগে কিছু করছেন।
আরেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে দেখা গেছে, দেশে শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই বেকারের হার বেশি। ৪৭ শতাংশ শিক্ষিতই বেকার।

আরেকটা বিষয় এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের চাকরিরত মানুষদের মধ্যে খুব বড় একটা অংশ আন্ডার-এমপ্লয়েড, অর্থাৎ তাঁরা তাঁদের যোগ্যতার তুলনায় নিচু পদ এবং পারিশ্রমিকে কাজ করছেন।

বিসিএস-হুজুগ: মূল ব্যাধির আরেকটি উপসর্গ
বিসিএস নিয়ে এখন যা চলছে, সেটা বেশ কিছুদিন থেকেই আর আগ্রহের পর্যায়ে নেই, নেই হুজুগের পর্যায়েও—এটা পরিণত হয়েছে ভয়ংকর এক উন্মত্ততায়। দেশের জনসংখ্যার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ বিসিএস নামক এই মরীচিকার পেছনে উন্মাদের মতো ছুটছে। এটা আসলে মরীচিকাই— সর্বশেষ বিসিএসে যখন পৌনে পাঁচ লাখ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন, তখন শূন্য পদের সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ১০০-এর মতো।

গ্র্যাজুয়েশনের পর থেকে বয়স ৩০ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত ৭-৮ বছর তরুণেরা বিসিএস পরীক্ষার পড়া ছাড়া আর কিছুই করছেন না। এখন আবার এই দাবিও উঠে আসছে, বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার বয়সসীমা ৩৫ হতে হবে। অর্থাৎ অসংখ্য তরুণ দীর্ঘ এক যুগ বিসিএস নামের মরীচিকার পেছনে ছুটতে চায়।

আগের অনুচ্ছেদে যে লিখলাম ‘গ্র্যাজুয়েশনের পর থেকে’, সেটাও বেশ কিছুদিন ধরে আর সঠিক তথ্য নয়। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে স্নাতক শ্রেণিতে পড়ুয়া অসংখ্য ছাত্রছাত্রী তাদের পড়াশোনার মূল বিষয় বাদ দিয়ে বিসিএসের পড়াশোনা করায় মত্ত। ভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের পড়ার টেবিলে তাঁদের মূল পড়াশোনার বইয়ের চেয়ে বেশি দেখা যায় বিসিএস প্রস্তুতির বই।

এই দেশের লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী তাঁদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রোডাক্টিভ সময়ের একটা বড় অংশ এভাবে অপচয় করছেন বিসিএসের পেছনে ছুটে। এমনকি যখন তাঁদের বয়স শেষ হয়ে যায়, তখন দেখা যায়, তাঁরা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনায় তেমন উল্লেখযোগ্য দক্ষতা নিয়েও বেরোতে পারেননি। শিক্ষার নিচু মান আমাদের চিরকালীন সমস্যা, কিন্তু এই পর্যায়ে পড়ার সময়ে বিসিএস নিয়ে মূল ফোকাস রাখতে গিয়ে তাঁদের দক্ষতা অর্জন পড়ে যায় আরও তলানিতে। এই দেশে বিসিএস পরীক্ষার যে কাঠামো, তাতে সেটা প্রকৃত মেধাকে মূল্যায়ন করে না, করে কিছু মুখস্থবিদ্যাকে, তাই সেটাকে ধর্তব্যের মধ্যকার বিষয় বলে মনে করেন কম মেধার ছাত্রছাত্রীরাও।

সরকারি চাকরি লোভনীয়, আছে চাকরির নিশ্চয়তা, ভালো বেতন, অবসরের পর পেনশন, চাইলেই আছে অবৈধ পথে অকল্পনীয় পরিমাণ উপার্জনের পথ, আছে ক্ষমতার দোর্দণ্ড প্রতাপ (বহু ক্ষেত্রেই সাংবিধানিক এবং আইনি চৌহদ্দির বাইরে)। কিন্তু দেড়-দুই দশক আগেও বিসিএস নিয়ে এমন উন্মাদনা ছিল না। কারণ, শিক্ষিত তরুণদের জন্য নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি চাকরির সুযোগ ছিল। বিসিএস-হুজুগ একটা উপসর্গ, মূল রোগ তরুণদের কর্মসংস্থানের অভাব।

আমরা কেন যেনতেনভাবে স্নাতক/স্নাতকোত্তর তৈরি করছি?
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) হচ্ছে ৩৮টি উন্নত দেশের সংগঠন, যারা গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী। এরা শুধু উচ্চ আয়ের দেশই নয়, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকেও (এইচডিআই) এই দেশগুলো অত্যন্ত উচ্চ স্কোরের অধিকারী।

এই দেশগুলোর শিক্ষাব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশজুড়ে আছে সরাসরি কর্মমুখী শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ (ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং, ভিইটি)। দেশভেদে ভিন্নতা থাকলে এর কিছু পরিসংখ্যান জেনে নেওয়া যাক। এসব দেশে সেকেন্ডারি স্কুল পর্যায় থেকেই ভিইটি প্রোগ্রামে যুক্ত হয় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আপার সেকেন্ডারি পর্যায়ে একই প্রোগ্রামে থেকে যায়। আর সেকেন্ডারি পর্যায়ে ভিইটি প্রোগ্রামে যুক্ত না হওয়া শিক্ষার্থীদের ৪২ শতাংশ আপার সেকেন্ডারি পর্যায়ে ভিইটি প্রোগ্রামে যুক্ত হয়।

এই ধরনের শিক্ষায় যুক্ত হওয়ার হার বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১২ শতাংশ। পৃথিবীতে শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হবে, সেটার জন্য যথেষ্টের বেশি নজির আছে। সেই পথে না হেঁটে আমরা হেঁটেছি একেবারে উল্টো পথে। এমনকি এখনো এই ব্যাপারে সরকারের কোনো রকম বোধোদয় হয়েছে বলে মনে হয় না। প্রতিবার সংসদ অধিবেশনে দেখা যায় এক বা একাধিক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিল আসে। সারা দেশে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। আছে সরকারি-বেসরকারি কলেজ। সব কটি থেকে যেনতেনভাবে, বাজারের সঙ্গে একেবারে সম্পর্কহীন যেকোনো বিষয়ে অসংখ্য স্নাতক/স্নাতকোত্তর তৈরি করছি আমরা। এই দেশ শিক্ষিত তরুণের হতাশার দেশ হবে, বেকারত্বের দেশ হবে, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে?

কী হবে বর্তমান কর্মহীন তরুণদের?
তাত্ত্বিকভাবে ধরে নেওয়া যাক আজ থেকে এই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আমূল পাল্টে গেল। তাহলেও এর ফল পেতে লাগবে আরও অনেক বছর। তার আগে বিদ্যমান ব্যবস্থা থেকে বেরোবেন আরও অনেক স্নাতক/স্নাতকোত্তর। বর্তমানেই দেশে অসংখ্য স্নাতক/স্নাতকোত্তর তরুণ বেকার আছেন। প্রতিবছর দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে বের হন পাঁচ লাখের মতো তরুণ। অথচ দেশে সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে চাকরি তৈরি হয় সাকল্যে দেড় লাখের মতো। এই চাকরির সুযোগ কি সহজে বাড়বে?

দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির জন্য আমাদের সামনে ক্রমাগত যে তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয় সেটার ব্যাপারে সন্দেহ করার ব্যাপার আছে। আমাদের দেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ না হলেও ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে এই বিষয়টি নিয়ে। বিজেপি সরকারের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রামানিয়াম ‘ইন্ডিয়াস জিডিপি মিস-ক্যালকুলেশন: লাইকলিহুড, ম্যাগনিট্যুডস, মেকানিজমস, অ্যান্ড ইমপ্লিকেশন’ শিরোনামের পেপারে নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করেছেন, ভারত যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখায়, সেটা কারসাজিপূর্ণ । এই কলামে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলাপের সুযোগ নেই, কিন্তু এটুকু বলে রাখি, তিনি যেসব সূচক ব্যবহার করে তাঁর হাইপোথিসিস প্রমাণ করেছেন, আমাদের দেশের সেসব সূচকও একই বার্তা দেবে।

ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো বাংলাদেশের অর্থনীতি আদতে অনেক সমস্যাসংকুল। তাই আমরা নিশ্চিতভাবেই তাহলে বলতে পারি, আমাদের স্নাতক/স্নাতকোত্তরদের চাকরি অদূর ভবিষ্যতে নিশ্চিত করতে পারবে না এই দেশের অর্থনীতি।

প্রচলিত শিক্ষার মান নিশ্চিত করে শিক্ষার্থীদের তার পঠিত বিষয়ে দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রেই যখন আমরা এত ব্যর্থ, তখনই ধেয়ে আসছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব। উন্নত দেশগুলোই এই পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, তখন এই ঢেউয়ে আমাদের কী অবস্থা হবে, অনুমান করতে পারছি তো? তরুণদের কর্মহীনতার পরিস্থিতি কেমন হবে অদূর ভবিষ্যতেই? কেউ কি আদৌ ভাবছে আমাদের তরুণদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে?

মাস্টার্স করে কেন টাইলস মিস্ত্রি হব না?
পড়াশোনা করে কোন ধরনের পেশায় আমরা যাব, সেটা আসলে নির্ভর করে আমাদের তৈরি কতগুলো ন্যারেটিভ বা বয়ানের ওপরে। দীর্ঘকাল ঔপনিবেশিক শাসনে শাসিত হয়ে উপনিবেশ স্থাপনকারীদের কেরানির চাকরি করে আমাদের দেশের বহু মানুষের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক/স্নাতকোত্তর পাস করে টেবিলে বসা একটি চাকরির কথাই ভাবি। কিন্তু ধীরে হলেও এই বয়ানগুলো ভেঙে পড়ছে। ভেঙে পড়তেই হবে।
শিক্ষিত তরুণদের অনেকেই প্রচলিত ভাষ্যের বাইরে এসে ডেস্ক-জবের চিন্তা বাদ দিয়েছেন বলেই এই দেশের কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের ক্ষেত্রে বিপ্লব হয়ে গেছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক সফল তরুণকে নিয়ে মিডিয়ায় আসা রিপোর্টে দেখা গেছে, পাস করার পর দীর্ঘদিন চাকরি খুঁজে সময় নষ্ট করে ব্যর্থ হওয়ার পর ওসব সেক্টরে যুক্ত হয়েছেন। অনেকে বাসায় খাবার তৈরি করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবসা করছেন। জীবিকার সংকটে পড়ে অনেক শিক্ষিত তরুণ রাইড শেয়ারিং করছেন গাড়িতে কিংবা বাইকে।

স্নাতকোত্তর পাস করে যদি বছরের পর বছর খুঁজেও চাকরি না পাওয়া যায়, পেলেও যদি বেতন হয় ১০-১২ হাজার টাকা, তাহলে চাকরি খোঁজা তো বাদই দেওয়া উচিত। টাইলস মিস্ত্রি হয়ে যদি মাসে ৩০ হাজার টাকা উপার্জন করা যায়, তাহলে কেন শিক্ষিত তরুণ টাইলস মিস্ত্রি হবেন না? আমরা অনেকেই সেটা হতে চাই না। কারণ হচ্ছে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ন্যারেটিভ বয়ান হচ্ছে—শিক্ষিত মানুষ মিস্ত্রির কাজ করেন না। অথচ ইউরোপ-আমেরিকায় এমন বিভিন্ন কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন অসংখ্য মানুষ আয় করেন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা মানুষের চেয়ে ঢের বেশি।

শুধু রাষ্ট্রীয় নীতির কারণে, রাষ্ট্রের অবহেলার কারণে, লাখ লাখ তরুণ তাঁদের নিম্নতম জীবিকার সংকটে আছেন। সক্ষম জনগোষ্ঠীর উচ্চ হার, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির সুবিধার সময় দেশের সেই তরুণদের উচিত হবে এই সৎ উপার্জন করা যায়, এমন যেকোনো পেশাতেই নেমে পড়া। বর্তমান সমাজের বহু ভাষ্য বা বয়ান আছে, যেগুলো এই সমাজটাকে উচ্ছন্নে নিয়ে গেছে। সেগুলো মানতে গিয়ে আমরা ধ্বংস করছি নিজেরদের সম্ভাবনাময় জীবনকেও। কিন্তু বিশ্বাস রাখি তারুণ্যে, তাঁরাই পাল্টে যান, তাঁরাই পাল্টে দেন।

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ অক্টোবর ০৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ