Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সত্য-উত্তর যুগে যে বিশৃঙ্খলা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: ডা. জাহেদ উর রহমান।

পরীমনি, পিয়াসাসহ কয়েকজন নারীর গ্রেপ্তার মূলত কিছু সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে শায়েস্তা করার প্রাথমিক পদক্ষেপ—অনুমান করি, এমন ভাষ্য আপনার সামনে এসেছে। আপনি সম্ভবত জেনেছেন কারা পরীমনি, পিয়াসা এবং অন্যদের ‘সান্ধ্য উদ্দাম বিনোদনের আসরের’ সঙ্গী, কারাই-বা তাঁদের সঙ্গে নানান অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। আপনার সঙ্গে কাউকে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘রাতের রানি’ হিসেবে।

সাম্প্রতিক কালেই আপনি হয়তো জেনেছেন পদ্মা সেতুর সঙ্গে ফেরির সংঘর্ষ হওয়া মানে হচ্ছে পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। এমন তথ্যও অন্তর্জালে ভেসে বেড়াচ্ছে এখন। আফগানিস্তানে তালেবানের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আপনি হয়তো জেনেছেন তালেবান নিয়ে বিশ্বের নামী প্রায় সব সংবাদমাধ্যম বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অসত্য তথ্য দিয়ে যাচ্ছে।

তালিকাটা অনেক বড় করা যায়, কিন্তু করছি না। আপনি চান বা না চান, আপনার সামনে এমন তথ্য স্রোতের মতো আসছে, আসতেই থাকবে। আপনি বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, এসব তথ্য বিশ্বাস করবে বহু মানুষ এবং সেগুলো তারা প্রচারও করবে। কারণ, এক অদ্ভুত সময়, এক সত্য-উত্তরকালে (পোস্ট-ট্রুথ এরা) আমাদের বসবাস।

সত্য-উত্তরকাল: সত্য এখন আর ‘কঠিন’ নয়
পোস্ট-ট্রুথ এরা বা সত্য-উত্তরকাল শোনার সঙ্গে সঙ্গেই কারও মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, তবে কি ‘ট্রুথ এরা’ বলে কিছু ছিল কখনো? পোস্ট-ট্রুথ নিয়ে আলোচনায় সেই প্রশ্ন আসলেই তোলা হয়েছে খুব সিরিয়াসলি। এই কলামে সেই বিতর্কে না গিয়ে কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক। পোস্ট-ট্রুথ এমন একটা পরিস্থিতি, যখন মানুষ সঠিক তথ্য ও প্রকৃত ঘটনার ওপর নয়, বরং তার বিশ্বাস ও আবেগের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিষয়কে গ্রহণ বা বর্জন করে। এই পরিস্থিতিতে যেকোনো বিষয়ের বিশ্লেষণে মানুষের কাছে তাঁর আবেগ ও বিশ্বাসই প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার প্রশ্নে গণভোটে (কথ্যভাষায় ‘ব্রেক্সিট’) ভুয়া খবর দিয়ে জনমত প্রভাবিত করার ফলে ‘পোস্ট-ট্রুথ’ ভীষণ আলোচনায় এসেছিল। তাই ওই বছর অক্সফোর্ড ডিকশনারি বছরের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল ‘পোস্ট-ট্রুথ’কে। মিথ্যা বা অর্ধসত্যের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রোপাগান্ডার ইতিহাস মানুষের সভ্যতার সমান বয়সী। এই প্রোপাগান্ডা চলত সত্যকে সরিয়ে রেখে বা অর্ধসত্যকে সামনে এনে। মানুষ যদি কখনো সেই বিষয়ের সত্যকে সামনে পেত, তখন অনেকেই তাদের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে আসত। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন।

উত্তরাধুনিকতা (পোস্ট-মডার্নিজম) নামের দার্শনিক তত্ত্ব সত্যের অবজেকটিভিটিকেই (নৈর্ব্যক্তিকতা) প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এই দর্শন তৈরি ও প্রসারের ক্ষেত্রে প্রভাব রাখা অতি প্রতিভাবান কিছু দার্শনিক ‘সত্য’ কনসেপ্টটিকে ভেঙে দিতে চেষ্টা করেছেন। তাঁরা বলেন, অবজেকটিভ সত্য বলে কিছু নেই, যা আছে সব সাবজেক্টিভ। এমন বহু জিনিস আছে, যেগুলো আগে মিথ্যা বলে পরিচিত হলেও পোস্ট-মডার্নিস্টদের ব্যাখ্যায় এগুলো হয়ে উঠেছে অলটারনেটিভ ফ্যাক্ট বা ট্রুথ। এ কারণে কোনো কিছুকে আগের মতো ‘সত্য বা মিথ্যা’ বলে দাবি করার দার্শনিক ভিত্তি ধাক্কা খেয়েছে তাঁদের হাত ধরে।

এই কাজের পথে পোস্ট-মডার্নিস্টরা প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন একটি আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার প্রতিষ্ঠানগুলোকেই। কারণ, সত্য তৈরি করা বা তাকে সত্যায়ন করে আসলে কতকগুলো প্রতিষ্ঠান। সার্বিক পরিস্থিতিতে সত্য দিয়ে অনেক মানুষকে আগের মতো আর কনভিন্স করা যায় না। যাঁরা ‘সত্য’ বিশ্বাস করতে চান না, তাঁরা এখন আর নিজেকে মিথ্যার পথে আছেন বলে মনে করেন না; ভাবেন তাঁরা আছেন সত্যের (অলটারনেটিভ ফ্যাক্ট বা ট্রুথ) সঙ্গেই। অনেকেই বরং প্রতিষ্ঠিত সত্যকেই উড়িয়ে দিতে চান এখন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে মূলধারার মিডিয়ার বহু সংবাদ ‘ফেক নিউজ’ বলে উড়িয়ে দিতে আমরা দেখেছি।

অনেক সময়ই সত্য নিজের বোধ-বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় বলে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম’। আজকের পৃথিবীতে এই পরিস্থিতি আর নেই, সত্য আর এখন ততটা কঠিন নেই, এখন যে কেউ তাঁর কাছে আরামদায়ক ‘সত্য’ পেতে পারেন খুব সহজেই।

কনফার্মেশন বায়াস
মানুষের এমন আচরণ ব্যাখ্যা করতে হলে বুঝতে হবে মানুষের এক মানসিক বৈশিষ্ট্যকে। বাস্তব জীবনে মানুষ যেসব বিষয়ের মুখোমুখি হয়, সেগুলোর মূল্যায়নে মানুষ পুরোপুরি নিরপেক্ষভাবে কখনো বিচার করতে পারে না। এগুলোর মূল্যায়নে মানুষ তথ্য, যুক্তিজ্ঞানের বাইরে গিয়ে বোধ-বিশ্বাসের সঙ্গে মিলে তার বাস্তবতা তৈরি করে। মনোবিজ্ঞানের আলোচনায় এটাকেই কগনিটিভ বায়াস বলে। অনেক রকম বায়াস আছে, কিন্তু যে বায়াসটি প্রায় সব মানুষের মধ্যে কমবেশি পাওয়া যায় সেটি হচ্ছে ‘কনফার্মেশন বায়াস’।

কনফার্মেশন বায়াস বলে, কোনো বিষয়ে আমরা সেসব তথ্য খুঁজি, বিশ্বাস করি, মনে রাখি, কাজে লাগাই, যেগুলো আসলে আমাদের আগের বোধ-বিশ্বাসকে সমর্থন করে। আমরা আসলে আমাদের পূর্ববর্তী বিশ্বাসকেই পোক্ত করতে চাই। একই বিষয়ে আমরা আমাদের ভেতরের চিন্তা, চাওয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কোনো তথ্য, সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। বিবর্তন মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ এই পর্যায়ে আসার পথে মানবমস্তিষ্ক সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা থেকে ধাপে ধাপে সরে এসে কতগুলো প্যাটার্নে ফেলে দিতে শুরু করে। এই প্যাটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা তাকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে, তাকে টিকিয়ে রেখেছে। কারণ, এভাবে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করাটা সবকিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার চেয়ে অনেক দ্রুত হয়।

পশ্চিমের গবেষণায় জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে আমাদের সামনে যত তথ্য আসত, এখন আসে তার সাত-আট গুণ তথ্য। এত তথ্যের মধ্যে সঠিক তথ্য বেছে নিতে গেলে আমাদের পক্ষে একটা প্যাটার্নের মধ্যে থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা অনেক কম শ্রমসাধ্য। তাই সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরিস্থিতি থেকে আমরা ক্রমশ আরও বেশি দূরে সরে যাচ্ছি। কিন্তু এটার ‘বাইপ্রোডাক্ট’ হিসেবে তৈরি হয়েছে একটি সংকট, আমরা জাগতিক সবকিছু আমাদের সেই প্যাটার্নে ফেলেই বিবেচনা-বিশ্লেষণ করতে চাই। আমরা আকৃষ্ট হই, খুঁজি সেসব তথ্য ও সত্যকে, যেগুলো আমাদের সেই প্যাটার্নকে সমর্থন করে; প্যাটার্নের বাইরে গেলে আমরা স্বস্তি বোধ করি না।

সামাজিক মাধ্যমের ‘ইকোচেম্বার’
আমরা আমাদের মনের মতো তথ্য চিরকালই পেতে চেয়েছি। কিন্তু সমস্যা ছিল, একটা সময় যাঁরা তথ্য তৈরি করতেন, সেগুলোকে প্রচার করতেন, তাঁদের অনেক তথ্যই পছন্দ না হলেও আমাদের বিকল্প ছিল না। যেহেতু আমাদের চিন্তা ও বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তথ্য আমরা অনেক সময় পেয়েছি, তখন আমরা হয়তো একেবারে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়, চায়ের আড্ডায় এগুলো নিয়ে সমালোচনা করেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আলাপচারিতা এবং আড্ডাকে এক বিরাট পরিসরে নিয়ে গেছে সামাজিক মাধ্যম, যেখানে লাখো কোটি মানুষ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তাদের চিন্তাচেতনা আদান-প্রদান করতে পারে।

সামাজিক মাধ্যমের এই প্রচণ্ড প্রসার ও ব্যাপ্তি মানুষকে এখন তার চিন্তা এবং বিশ্বাসের সমর্থক তথ্য পেতে সাহায্য করেছে। নিজেদের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে যেমন এসব তথ্যের চালাচালি হতে পারে, তেমনি এসব মাধ্যমকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কতগুলো ‘প্রতিষ্ঠান’ও। ফেসবুকে আছে নানান রকম গ্রুপ কিংবা ব্যক্তি, আবার ইউটিউবে আছে আইপি টিভি চ্যানেল বা ব্যক্তি, যারা এসব মাধ্যমে অনেকের কাছে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পায়। আছে নামসর্বস্ব হাজারো নিউজ পোর্টাল। এসব চ্যানেল, পোর্টাল বা ব্যক্তি কে, কোন ঘরানার, সেটা অনেকেই জানে এবং এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ে বহু মানুষকে তার নিজস্ব ঘরানার সঙ্গে মিল রেখে ব্যক্তি বা চ্যানেলের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেয়। এভাবেই সমমনা, সমচিন্তার মানুষ একই জায়গায় মিলিত হয়, যেখানে তারা তাদের চিন্তা, বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত তথ্য পায় এবং সেই তথ্য যেহেতু কিছু ‘প্রতিষ্ঠান’-এর কাছ থেকে এসেছে, তাই অনেকেই সেসব তথ্যের ব্যাপারে গভীর আস্থা বোধ করে; সত্য হিসেবে গ্রহণ করে সেগুলো।

এটাই সামাজিক মাধ্যমের সেই বিখ্যাত ‘ইকোচেম্বার’, যার মধ্যে অসংখ্য মানুষ এখন বাস করে। এই ইকোচেম্বারগুলো আমাদের প্রত্যেককে নিজস্ব বোধ এবং বিশ্বাসের সঙ্গে মিল থাকা ‘সত্যের’ সঙ্গে বসবাস করার আরাম দেয়। প্রয়োজনে সেসব তথ্য ব্যবহার করার উপযোগ দেয়। আমি নিজেই শুনেছি ‘সচেতন’ এক রাজনীতিবিদকে একটি টিভি টক শোতে তাঁর বলা একটি তথ্যের রেফারেন্স জানতে চাওয়ায় বলেছিলেন, ফেসবুকে পেয়েছি।

বিকল্প সত্য তৈরির কারণ
নানান কারণে মানুষ নতুন নতুন ‘বিকল্প সত্য’ মানুষের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। ২০১৬ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং ব্রেক্সিট গণভোটে এটা হয়েছিল মানুষের মতামতকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য। ভোটের রাজনীতির কারণে এটা চলছে নানান দেশে। এই দেশে যেহেতু নির্বাচন ব্যাপারটা উঠেই গেছে, তাই এখানে ভোটারদের পক্ষে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে ‘বিকল্প সত্য’ নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন নেই। তবে ভোটের বিষয় না থাকলেও রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যেও এখন অনেক ‘প্রতিষ্ঠান’ কাজ করে।

মানুষ তার মতাদর্শের প্রচার-প্রসার চায়। তাই অনেকেই তার মতাদর্শ প্রচার করে অনেক অনুসারী তৈরি করে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার স্বাদ পেতে চায়। সর্বোপরি নানা মাধ্যমে তৈরি করা ভিডিওর ভিউয়ের জন্য, এমনকি ওয়েবসাইটের ক্লিকের জন্য এখন যেহেতু কোম্পানিগুলো অর্থ দেয়, তাই এখন এসব ‘সত্য’ তৈরি কাঁচা টাকারও সন্ধান দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা খুব বড় একটা (অনেক ক্ষেত্রেই প্রধান) কারণ।

এবং ডিপফেক ছবি বা ভিডিও
ঠিক এক বছর আগে মাইক্রোসফট একটি সফটওয়্যার উন্মুক্ত করে বলেছিল তারা আশা করে তাদের প্রযুক্তিটি ডিপফেক শনাক্ত করে মিথ্যা তথ্যকে প্রতিরোধ করতে পারবে। এখানে লক্ষণীয়, মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্ট তাদের বক্তব্যে পূর্ণ নিশ্চয়তা না দিয়ে ‘আশা করে’ কথাটি ব্যবহার করেছে। ডিপফেক হচ্ছে কোনো ছবি বা ভিডিওর মধ্যে একজনের ফেসের স্থলে আরেকজনের ফেস বসিয়ে দেওয়া। ইমেজ এডিটিং সফটওয়্যার দিয়ে এক রকমের ‘গলাকাটা’ ছবি বানানোর চল বহু আগে থেকে থাকলেও সেই তুলনায় ডিপফেক একেবারে আলাদা ব্যাপার। আর আগে ভিডিওর ক্ষেত্রে এটা হতে পারত না। এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ছবি ও ভিডিও যে কারও ফেস পাল্টে ফেলা যায় ইচ্ছেমতো, যা অসাধারণ নিখুঁত।

শুধু একটা স্টিল ছবি থাকলেও সেটা দিয়েই অন্য ভিডিওতে যে কারও ফেস পাল্টে দিয়ে ভিডিও বানানো যায়। ইউটিউবে সার্চ দিয়ে যে কেউ দেখে নিতে পারেন বিখ্যাত সব সিনেমার বিখ্যাত সব দৃশ্যের মূল অভিনেতাকে বাদ দিয়ে অন্য অভিনেতাকে দিয়ে কত ভিডিও তৈরি করা হয়েছে। ২০১৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে তৈরি করা একটি ডিপফেক ভিডিওতে বারাক ওবামাকে দিয়ে এমন সব কথা বলিয়েছে, যা তিনি বলেননি।

শুধু ভিডিওই নয়, এখন সফটওয়্যারের মাধ্যমে কারও কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির মতো করেও কথা তৈরি করা সম্ভব। কয়েক বছরেই যদি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ডিপফেক প্রযুক্তিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে আসে, তাহলে সামনের দিনগুলো কেমন হতে পারে আমরা বুঝতে পারছি নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, অদূর ভবিষ্যতে আমাদের পছন্দসই সব ‘সত্য’ তৈরি হতে থাকবে আরও বিপুল পরিমাণে। তার সঙ্গে যেহেতু ‘অকাট্য প্রমাণ’ ছবি বা ভিডিও পাওয়া যায়, তাহলে মানুষ সেসব বিশ্বাস করবে না কেন?

উদার গণতান্ত্রিক সমাজ টিকে থাকে কতগুলো অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠানের ওপরে ভিত্তি করে। দীর্ঘকালের চর্চায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিকশিত হয়েছে, মানুষকে সত্যের সন্ধান দিয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলোর যে স্খলন ছিল না, তেমন নয়। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সংবাদ প্রতিষ্ঠানের কিছু স্খলন আমাদের সামনে প্রকাশিত হয়েছে অনেক সময়। একে একটা সিস্টেমের স্বাভাবিক ব্যত্যয় হিসেবে মেনে না নিয়ে, একে পুঁজি করেই অনেকে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে মাত্রার এবং ব্যাপ্তির স্খলন দেখা যায়, আমাদের মতো দেশে দেখা যায় তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। মানুষের মোটামুটি আস্থা আছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এ দেশে একেবারেই হাতে গোনা। বাংলাদেশে বেশ কম দামে একটি ফোরজি মোবাইল ফোন পাওয়া যায় এবং কিছু টাকা খরচ করে ইন্টারনেট ডেটা কেনাও যায়। তাই এখন বহু ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে অনেক দরিদ্র মানুষও স্মার্টফোন ব্যবহার করছেন। সামনের দিনগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের এই প্রবণতা নিশ্চিতভাবেই অনেক বেশি বাড়বে।

সত্য-উত্তর যুগ পশ্চিমের শিক্ষিত সচেতন মানুষের দেশগুলোও কতটা সংকটে পড়েছে সেটা আমরা দেখছি। তাহলে বিপুলসংখ্যক অশিক্ষিত, অসচেতন, কুসংস্কারাচ্ছন্ন জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছি আমরা। এর সঙ্গে যোগ করা যাক দেশের ভেঙে পড়া সব প্রতিষ্ঠানকে। এক চরম বিশৃঙ্খল বাংলাদেশ দেখতে পাচ্ছি তো!

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ