Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সম্পদ কেন্দ্রীকরণ কি বন্ধ করা সম্ভব? -মুহাম্মদ ইউনূস (২০১৬)

Share on Facebook

প্যারিস জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন ২০১৫-এর ফলাফল আমাকে রোমাঞ্চিত ও আশান্বিত করেছে। ৪০ বছর ধরে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের মধ্যে চলা যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসীদেরই জয় হয়েছে। তারা সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে পৃথিবী একটি সত্যিকারের বিপদের মধ্যে রয়েছে এবং আমাদের সবাইকেই একযোগে কাজ করতে হবে।
প্যারিস সম্মেলন আমাকে এই বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত করেছে যে এ ধরনের গণ-আন্দোলন দিগন্তে জমতে থাকা আরেকটি আসন্ন দুর্যোগ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারবে। সমস্যাটি হচ্ছে মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পদ বৈষম্যের ক্রমাগত বিস্ফোরণ। এই বৈষম্য স্থানীয়, জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার যত বাড়ছে, সম্পদের বৈষম্যও ততই বেড়ে চলেছে।
অক্সফাম সম্পদ কেন্দ্রীকরণের ওপর প্রতিবছর আমাদের ভীতিকর আপডেট দিয়ে আসছে। এ বছর তারা বলছে যে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ৬২ জনের সম্পদ পৃথিবীর নিচের অর্ধেক মানুষের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। ২০১৫ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ৮০ জন এবং ২০১৪ সালে সবচেয়ে ধনী ৮৫ জনের সম্পদ তখনকার পৃথিবীর অর্ধেকাংশ মানুষের মোট সম্পদের চেয়ে বেশি ছিল বলে অক্সফাম আমাদের জানিয়েছিল। ছয় বছর আগে, ২০১০ সালে, পৃথিবীতে একই ধরনের ভাগ্যবানের সংখ্যা ছিল ৩৮৮। অক্সফাম আরও জানিয়েছিল যে ২০০৯ ও ২০১৪ সালের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ৮০ জনের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
২০১৬ সালের জন্য অক্সফামের কিছু ভীতিকর তথ্য রয়েছে। তাদের হিসাবমতে, এ বছর পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ সম্পদ সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ মানুষের দখলে থাকবে। অর্থাৎ পৃথিবীর ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে থাকবে পৃথিবীর মোট সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের অবস্থা কী রকম? এ দেশের ৬২ জনের হাতে, নাকি তার বেশি বা কমসংখ্যক মানুষের হাতে নিচের অর্ধেকাংশ মানুষের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে। এটা নিয়ে কি কারও কোনো দুর্ভাবনা আছে? কোনো দেশের নিচের অর্ধেকাংশ মানুষের সম্পদের চেয়ে বেশি সম্পদ যদি একজন লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, তখন কী হবে? নিঃসন্দেহে তিনি হয়ে যাবেন ‘রাজা’। তাঁর ইচ্ছাই হবে দেশের আইন। এমনটা ভাবা কি খুব বেশি হয়ে যাবে?

আমাদের বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদের কেন্দ্রীকরণ একটি বিরামহীনভাবে চলতে থাকা প্রক্রিয়া। আমি এ বিষয়টির প্রতিই আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ধনী মানুষ মানেই কিন্তু অবশ্যম্ভাবীভাবে খারাপ মানুষ—যাঁরা অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পদকে ক্রমাগত কেন্দ্রীভূত করে যাচ্ছেন এবং মানুষে-মানুষে বৈষম্য বৃদ্ধি করছেন—এটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। তাঁরা ভালো হোন মন্দ হোন, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই তাঁদের পক্ষে কেন্দ্রীকরণের কাজটি করে যাচ্ছে। সম্পদ হচ্ছে চুম্বকের মতো। চুম্বক যত বড়, তার আকর্ষণী ক্ষমতা তত বেশি। সে ছোট চুম্বকগুলোকে তার নিজের দিকে টেনে আনে।

সম্পদের কেন্দ্রীকরণ পরিবেশ বিপর্যয়ের মতোই ভয়ংকর। এই ভীতির একটি হচ্ছে, পৃথিবী ভৌতিকভাবে টিকে থাকবে কি না। অপর ভীতিটি মানবতার বিরুদ্ধে, অর্থাৎ আত্মমর্যাদা ও প্রশান্তির সঙ্গে এবং উচ্চতর আদর্শের অনুসন্ধানে বেঁচে থাকার অধিকার মানুষের থাকবে কি না।

যদি সমাজের সব অংশের নিবেদিতপ্রাণ বিজ্ঞানী ও পরিবেশকর্মীদের নেতৃত্বে নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা পরিবেশ বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন করতে পারে, তাহলে একই রোডম্যাপ অনুসরণ করে আমরা ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলা সম্পদ কেন্দ্রীকরণের আসন্ন ঝুঁকি থেকে পৃথিবীকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মানুষকে সমবেত ও উজ্জীবিত করতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। নাগরিকদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় সম্পদ-সামঞ্জস্যের ছোট ছোট দ্বীপ গড়ে তুলতে হবে। পৃথিবীকে, বিশেষ করে তরুণসমাজকে উৎসাহিত করতে হবে যে এটা করা সম্ভব এবং এটা করতেই হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে আমরা অসম্ভবকে দ্রুত এবং আরও দ্রুত সম্ভব করতে পারি। এটিও এমনই একটি অসম্ভব, হাজারো বাধা সত্ত্বেও যাকে আমাদের খুব দ্রুত সম্ভব করে তুলতে হবে।

এটা কীভাবে সম্ভব, আমি এখন সে বিষয়ে বলতে চাই।

মানুষই সবকিছুর কেন্দ্রে

সম্পদ বিস্ফোরণ কি বন্ধ করা সম্ভব? আমার দৃঢ় উত্তর হচ্ছে: হ্যাঁ, সম্ভব। মানুষ চাইলে যেকোনো কিছু করতে পারে, তবে এর পেছনে দৃঢ় ইচ্ছা থাকতে হবে। সরকার ও চ্যারিটিগুলো সনাতন উপায়ে যা করে আসছে, তার দ্বারা এটা সম্ভব না। প্রত্যেককে এটা তার ব্যক্তিগত অগ্রাধিকার হিসেবে নিতে হবে। মানুষকে নিজেদেরই এ জন্য নেতৃত্বের ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে এবং এটা সম্ভব করার জন্য উপযুক্ত নীতি-কাঠামো তৈরিতে এগিয়ে আসতে সরকারের ওপর শক্তিশালী চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা

আমি যখন পেছনে ফিরে তাকাই, আমি দেখতে পাই পরিস্থিতি কীভাবে আমাকে এমন সব কাজে ঠেলে দিল, যেগুলো সম্পর্কে আগে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ জোবরা গ্রামে সেচনির্ভর একটি তৃতীয় শস্য চাষে আমাকে এগিয়ে দিল। এ কাজ করতে গিয়ে আমি গ্রামের মহাজনী ব্যবসার সঙ্গে পরিচিত হলাম। মহাজনী প্রথার ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের আমি সাহায্য করতে চাইলাম। ১৯৭৬ সালে আমি মহাজনদের কবল থেকে তাদের রক্ষা করতে নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে টাকা দিলাম। ক্রমান্বয়ে আরও বেশি লোককে ঋণ দিতে গিয়ে আমার নিজের পকেটের টাকা শেষ হওয়ার উপক্রম হলো। তখন আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে গেলাম আর তাদের অনুরোধ করলাম গরিব লোকজনকে ঋণ দিতে। তারা অস্বীকার করল। শেষ পর্যন্ত আমি নিজে জামিনদার হয়ে তাদের ঋণ দিতে রাজি করালাম। আমি প্রকল্পটির নাম দিলাম ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প’। এরপর কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যক্তিগত আগ্রহে কৃষি ব্যাংক সাহায্য করতে এগিয়ে এল। তারা আমাকে কার্যত প্রধান নির্বাহী বানিয়ে জোবরায় কৃষি ব্যাংকের একটি বিশেষ শাখা খুলল, যা ওই শাখার জন্য আমার নিযুক্ত লোক দিয়ে, যাদের সবাই ছিল আমার ছাত্র, পরিচালিত হতে থাকল। আমি এর নাম দিলাম ‘পরীক্ষামূলক গ্রামীণ শাখা’। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কিছু সদস্যের প্রবল আগ্রহে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকল্পটির কাজ টাঙ্গাইলে সম্প্রসারিত করতে চাইল। ১৯৮৩ সালে আমরা একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাংকে পরিণত হলাম।

তারা যা করে, আমরা করি তার উল্টোটা

আমরা যা তৈরি করলাম, তা কেবল আরেকটি ব্যাংক ছিল না; এটি পরিণত হলো প্রচলিত ব্যাংকের একটি অ্যান্টি-থিসিসে। প্রচলিত ব্যাংক যা করে, গ্রামীণ ব্যাংকে আমরা ঠিক তার বিপরীতটা করতে শুরু করলাম। প্রচলিত ব্যাংকগুলো বড় বড় ব্যবসায়ী ও ধনী ব্যক্তির যেখানে কর্মস্থল, সেখানে কাজ করতে পছন্দ করে। ফলে তারা শহরে কাজ করে। গ্রামীণ ব্যাংক কাজ করে গ্রামে। এমনকি প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পরও গ্রামীণ ব্যাংক আজও কোনো শহর বা পৌর এলাকায় তার কোনো শাখা করেনি। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মালিক ধনী মানুষেরা। গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক গরিব নারীরা, এর পরিচালনা পরিষদেও এই গরিব নারীরা বসেন। প্রচলিত ব্যাংক মূলত পুরুষদের সেবা দেয়, গ্রামীণ ব্যাংক কাজ করে মূলত নরীদের নিয়ে। প্রচলিত ব্যাংকগুলো মনে করে যে গরিব মানুষ ঋণ পাওয়ার যোগ্য নয়। ইতিহাসে গ্রামীণ ব্যাংকই সর্বপ্রথম এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে যে গরিব মানুষ, বিশেষ করে গরিব নারীরা যেকোনো ব্যাংকিং বিবেচনায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য। ‘গ্রামীণ আমেরিকা’ দেখিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও দরিদ্র নারীরা ব্যাংকঋণ দিয়ে তাঁদের জীবনে চমৎকার পরিবর্তন আনতে পারেন। আমেরিকার নয়টি শহরে গ্রামীণ আমেরিকার ১৮টি শাখা রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে ৬০ হাজার নারীকে ঋণসেবা দেওয়া হচ্ছে। এঁদের সবাই নারী। ‘গ্রামীণ আমেরিকা’ এ পর্যন্ত ৩৮০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের প্রথম ঋণের পরিমাণ গড়ে ১ হাজার ডলার। ঋণ পরিশোধের হার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ।

গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের ধারণা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ, এনজিওরা এটিকে গ্রহণ করেছে।

আমি বহুদিন ধরেই যুক্তি দেখিয়ে আসছি যে ঋণকে একটি মানবিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে, যাতে এর প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া যায় এবং এটিকে তার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়া যায়। দরিদ্র লোকজনের জন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমেই কেবল আমরা এই মানবিক অধিকারটি প্রতিষ্ঠা করতে পারি।

সামাজিক ব্যবসা

দরিদ্র লোকজনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমি তাদের আরও অনেক সমস্যার মুখোমুখি হলাম। সেসব সমস্যার কিছু কিছু সমাধানেরও চেষ্টা করলাম। আমি সব সময়ই একেকটি নতুন ব্যবসা সৃষ্টি করে একেকটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। একসময় এটা আমার অভ্যাসে পরিণত হলো: যখনই আমি একটা সমস্যার মুখোমুখি হই, তা সমাধানের জন্য একটা ব্যবসা সৃষ্টি করি। শিগগিরই আমি অনেক কোম্পানি তৈরি করে ফেললাম, সঙ্গে কোম্পানির মতো কিছু স্বতন্ত্র প্রকল্পও। যেমন দরিদ্র লোকজনের জন্য গৃহায়ণ, তাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, স্বাস্থ্যসেবা, নবায়নযোগ্য শক্তি, পুষ্টি, পানি, নার্সিং কলেজ, চক্ষু হাসপাতাল, অটোমেকানিক ট্রেনিং স্কুল এবং আরও অনেক।

ক্রমান্বয়ে এগুলো কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিতে শুরু করল। এগুলো তৈরি হলো টেকসই ব্যবসা হিসেবে। কিন্তু এগুলো থেকে কেউ কোনো ব্যক্তিগত মুনাফা নিতে পারবেন না। বিনিয়োগকারী তাঁর বিনিয়োজিত টাকা ফেরত নিতে পারবেন, তবে এর বেশি নয়। কোম্পানির মুনাফা কোম্পানিতে পুনর্বিনিয়োগ করা হবে তার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের জন্য। এই নতুন ধরনের ব্যবসার আমি নাম দিলাম ‘সামাজিক ব্যবসা’: মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তিগত লভ্যাংশবিহীন ব্যবসা।

আমি অবাক হয়ে দেখলাম, ব্যবসা থেকে ব্যক্তিগত লাভের প্রত্যাশা না করে কেবল সমাজের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কোনো ব্যবসা সৃষ্টি করলে তা দিয়ে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কাজটা কত সহজ।

শিক্ষাকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে

সম্পদ কেন্দ্রীকরণের সমস্যা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হলে শিক্ষাকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল কাজ হয়ে গেছে তরুণদের চাকরির জন্য তৈরি করা। ধরে নেওয়া হয় যে প্রতিটি তরুণকেই চাকরি খুঁজে নিতে সক্ষম হতে হবে। চাকরি খোঁজার সক্ষমতার কাছে শিক্ষার আর সব উদ্দেশ্যই গৌণ হয়ে গেছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিজেকে আবিষ্কার করতে ও জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পেতে একজন তরুণকে সাহায্য করা। এর মূল লক্ষ্য ছিল ‘নিজেকে জানো’। এখন অধিকাংশ সময় তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় ‘তোমার নিয়োগকর্তাকে জানো’—এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য।

শিক্ষার উচিত তাকে উদ্যোক্তা বা চাকরি সৃষ্টিকারী হতে প্রস্তুত করা, চাকরি খুঁজতে নয়।…আমরা যদি তরুণদের চাকরি সৃষ্টিকারী হিসেবে গড়ে তুলতাম, তাহলে বেকারত্ব বলে কিছু থাকত না।

সবাই কি উদ্যোক্তা হতে পারে? এ প্রশ্নটি প্রায়ই আমাকে করা হয়। আমার বিশ্বাস, প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবে একজন উদ্যোক্তা। আমরা এভাবেই পৃথিবীতে আমাদের জীবন শুরু করেছি। বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্ষুদ্রঋণীর প্রত্যেকেই একেকজন উদ্যোক্তা। গ্রামের নিরক্ষর নারীরা যদি উদ্যোক্তা হতে পারে, শিক্ষিত তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কেন? তাদের শুধু যা প্রয়োজন তা হলো একটি সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা এবং আর্থিক কাঠামো।

সম্পদের কেন্দ্রীকরণ রুখতে হলে আমাদের একমুখী সম্পদ প্রবাহের স্থলে দ্বিমুখী সম্পদ প্রবাহ তৈরি করতে হবে। বর্তমান সম্পদ প্রবাহ সম্পদশালীদের দিকে প্রবাহিত হয়। আমাদের প্রয়োজন এমন ধরনের প্রবাহ, যা সম্পদশালীর কাছ থেকে সম্পদ নিয়ে আসবে সম্পদহীনের কাছে।

সামাজিক ব্যবসায়ের মধ্যে আমি এই নতুন শক্তিটি দেখতে পাই। এটা বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহের মতো শক্তিশালী হবে কি না, তা নির্ভর করবে মানুষ কত দৃঢ়ভাবে এর পেছনে দাঁড়াচ্ছে তার ওপর।

পারস্পরিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন ও সুখ-দুঃখের অংশীদার সামাজিক জীব হিসেবে নিজেদের পুনরাবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা সম্পদের কেন্দ্রীকরণকে ঘুরিয়ে দিতে পারি। আমরা তিনটি শূন্য-এর একটি পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে পারি: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ; একটি রুহিতন আকৃতির সম্পদ বণ্টনের বিশ্ব; একটি সমতা, সম্প্রীতি, শান্তি ও সুখের বিশ্ব। আমরা নাগরিকেরা তৎপর হলেই এটা সম্ভব হবে।

আসুন, আমরা সবাই মিলে এটা সম্ভব করে তুলি।

৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে দেওয়া ইংরেজি বক্তৃতার সংক্ষেপিত

অনুবাদ: কাজী নজরুল হক।

মুহাম্মদ ইউনূস: শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা।

সুত্র: প্রথম আলো
তারিখ: ফ্রেবুয়ারী ০৭, ২০১৬

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ