Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সাংবাদিকদের ভয় দেখাতেই ব্যাংক হিসাব তলব (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: কামাল আহমেদ।

গণতন্ত্রের অব্যাহত ক্ষয়সাধন রোধে রাজনৈতিক শক্তিগুলোর ধারাবাহিক ব্যর্থতার পটভূমিতে মুক্ত সংবাদমাধ্যমের টিকে থাকা যখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, তখন আরও বেশি হতাশার কারণ হয়েছে সাংবাদিকদের অনৈক্য। বলা যায়, রাজনৈতিক বিভাজনের ধারায় সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোর বিভক্তিতে লাভবান হয়েছে সরকার। একদিকে টেলিভিশন, সংবাদপত্র ও অনলাইন পোর্টালের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার-সমর্থকদের আধিক্য এবং অন্যদিকে সাংবাদিক ইউনিয়নের দলীয়করণ গণমাধ্যমের স্বাধীন ও সুস্থ বিকাশ অনেকটাই রুদ্ধ করে ফেলেছে। এ রকম পটভূমিতে সাংবাদিক নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করার পদক্ষেপ অনেককেই বিস্মিত করেছে। ইউনিয়নগুলো এই অস্বাভাবিক পদক্ষেপকে ‘স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা’ হিসেবেই বিবেচনা করছে। বোঝা যাচ্ছে সরকার স্বস্তিতে নেই। এই পদক্ষেপ সরকারের অস্বস্তি ও অস্থিরতারই বহিঃপ্রকাশ। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অস্থিরতা কেন এবং সাংবাদিক নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রভাব কী হতে পারে।

শুরুতেই বলে নেওয়া ভালো, ইউনিয়নগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেও সাংবাদিক নেতারা ব্যাংকগুলোর কাছে তাঁদের হিসাব তলবের বিষয়ে বেশ জোরালোভাবেই বলেছেন যে তাঁরা চান বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো রহস্য তৈরির চেষ্টা না হয় এবং সে কারণে হিসাবগুলো যেন প্রকাশ করা হয়। এই বক্তব্য ও উদারতার জন্য তাঁদের প্রশংসাই প্রাপ্য। কেননা, রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের বেলায় কোনো কোনো সময় আমরা দেখে অভ্যস্ত যে এ ধরনের পদক্ষেপ, বিশেষ করে যদি তা দুর্নীতি দমন কমিশনের নোটিশ হয়, তাহলে তাঁরা ওই নোটিশ স্থগিত করার জন্য হয় তদবির, নয়তো দ্রুতগতিতে আদালতের দ্বারস্থ হন। সেটা তাঁদের অধিকার এবং তাঁদের সমালোচনা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা শুধু সাংবাদিক নেতাদের দৃশ্যমান নৈতিক অবস্থানের তারিফ করি। এঁদের মধ্যেও যদি কেউ অপ্রকাশ্য তদবিরে নেমে পড়েন, তাহলে তাঁরও সমান সমালোচনা প্রাপ্য হবে।

এখানে আরও একটি কথা স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে সাংবাদিকেরা এই সমাজেরই অংশ, কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নন এবং ফেরেশতাও নন। কিছু কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে অন্যায় এবং অসাধু উপায়ে অর্থ-সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে, সে কথা অস্বীকার করা যাবে না। দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে এঁদের কেউ কেউ যে টিভির লাইসেন্স, পত্রিকা, অনলাইন, আইপিটিভির অনুমতি নিয়ে অল্প দিনেই মিডিয়া হাউসের মালিক হয়েছেন, এমন নজিরও আছে।

টক শোতে এঁদের অন্ধ দলীয় আনুগত্যপূর্ণ বক্তব্য-বিশ্লেষণে বিরক্ত দর্শকেরা অনেকেই টিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, গণমাধ্যম আস্থার সংকটে পড়েছে। সরকারের সংস্থা, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ রকম কারও ব্যাংক হিসাব তলব করলে তাতে বরং সাধুবাদ পেতে পারত। কিন্তু তারা সেই পথে হাঁটেনি। বরং সাংবাদিক ইউনিয়ন ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর নির্বাচিত নেতাদের দোষ-ত্রুটির সন্ধানে জাল ফেলেছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এ রকম কিছু হলে আমাদের কিছু বলার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি-সম্পাদকদের বিরুদ্ধে একই সময়ে একই পদক্ষেপ প্রমাণ করছে যে সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। এঁরা সবাই মিলেমিশে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে অন্যায় উপার্জন করতে পারেন, সেই যুক্তিও হাস্যকর, কেননা তাঁদের রাজনৈতিক বিরোধ মিটে যাওয়ার কোনো আলামতই মেলে না।

আমরা জানি, কিছুদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের ভেতরেই রাজনীতিকেরা ক্রমেই ক্ষমতাহীন হয়ে পড়তে থাকায় এক অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অপরাধ মোকাবিলায় সরকার যে শূন্য সহনশীলতা বা জিরো টলারেন্সের কথা বলত, সেগুলোর সবই প্রায় নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ায় চাপা ক্ষোভ ও সমালোচনা একটু একটু করে প্রকাশ পাচ্ছে। এখন তাই সরকারের সমালোচনার প্রতি জিরো টলারেন্সের ঘোষণা শোনা যাচ্ছে। কিছুদিন ধরে মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনাকে ‘অপপ্রচার’ অভিহিত করে তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছেন। এখন পুলিশপ্রধানও তাঁর বাহিনীকে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, ‘কেউ যেন সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশবিরোধী ও সরকারবিরোধী প্রচারণা’ চালাতে না পারে। দেশবিরোধী প্রচার কী, তার ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তা বন্ধের কথা তিনি বলতেই পারেন। কিন্তু সরকারবিরোধী প্রচার বন্ধের নির্দেশনা কি তিনি দিতে পারেন? বিরোধী দলগুলো কি তাহলে বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেবে? নাকি রাজনীতি ছেড়ে দেবে? পুলিশপ্রধানের এই বক্তব্যকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার অবকাশ কোথায়?

দেশে গণতন্ত্রের যে গুরুতর ক্ষয়সাধন ঘটেছে, তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লক্ষণীয় সংকোচন। এ জন্য যেসব পদক্ষেপ আমরা দেখেছি সেগুলোর মধ্যে আছে গণমাধ্যমের লাইসেন্স নিয়ন্ত্রণ, সংবাদমাধ্যমে অঘোষিত সেন্সরশিপ, গ্রেপ্তার, অপহরণ, নির্যাতন, হত্যা এবং নিবর্তনমূলক ফৌজদারি আইনের অপব্যবহার-যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত আইনটি হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে আইনটি হওয়ার পর মাত্র দুই বছরে এই আইনে মামলার সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যার মানে দাঁড়াচ্ছে, দেশে গড়ে দিনে তিনটি করে মামলা হয়েছে এই আইনে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর গত মে মাসের হিসাব বলছে, করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে কমপক্ষে ৮০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। আর পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২ জন সাংবাদিক, আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭০ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন এবং সাময়িকভাবে গুমের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৫ জন।

সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষার বৈশ্বিক সংগঠন সিপিজে ও ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা যৌথভাবে গত এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাতেই এক পাতাজুড়ে একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল, যার বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশ ও মতপ্রকাশের অধিকার। অর্ধেক পাতার একদিকে ছিল ‘সমালোচনা, মতামত ও কার্টুন অপরাধ নয়’ লেখা, আর অন্যদিকে কার্টুনিস্ট কিশোরের ছবি। বাকি পাতায় ছিল কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা প্রত্যাহার ও আইনটি বাতিলের দাবি। সাংবাদিকতা অপরাধ নয়, সে কথাও ওই বিজ্ঞাপনে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হয়নি, বরং গেল সপ্তাহে পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করায় বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রায় দুই মাসের গুমপর্বের পর কয়েক মাস জেল খাটা ফটোসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের বিরুদ্ধেও একই সময়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে। এ ধরনের মামলা যে হয়রানি ও নিবর্তনমূলক, তার প্রমাণও গত সপ্তাহেই মিলেছে সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের মামলায়। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার, রিমান্ড, তদন্ত, শুনানির ছয় বছরের যন্ত্রণার অবসান ঘটেছে।

প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেসব নতুন নতুন মাধ্যমের আবির্ভাব ঘটেছে, তার কারণে এমনিতেই সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যম এক নজিরবিহীন প্রতিকূলতা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কিন্তু ভুয়া খবর ও গুজবের বিপরীতে মূলধারার সংবাদমাধ্যমই মানুষের ভরসার জায়গা। সেই সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টির ধারা যে ক্রমেই তীব্র হচ্ছে, সাংবাদিক নেতাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ তারই অংশ। সাংবাদিক ইউনিয়নের উভয় অংশই যৌক্তিকভাবে প্রশ্ন তুলেছে, অন্য সব পেশাজীবী বাদ দিয়ে শুধু সাংবাদিক নেতাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঢালাও পদক্ষেপ সুস্থ সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি এবং সাংবাদিক সমাজকে হেয় করার চেষ্টা কি না? করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর প্রকাশের জন্য আমলাদের রোষানলের শিকার সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বেলায়ও আমরা একই কৌশল প্রয়োগ করতে দেখেছি।

সমালোচনা ও ভিন্নমতের প্রতি সরকারের এই মনোভাব বদলানো প্রয়োজন। কিন্তু আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সাংবাদিক নেতাদের বিরুদ্ধে নেওয়া এই অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ সৃষ্টির ঘটনায় মন্দের ভালো যেটুকু দেখা যায়, তা হলো রাজনৈতিক কারণে বিভাজিত উভয় অংশের নেতাদের অভিন্ন উপলব্ধি। সাংবাদিকতা পেশাকে হেয় করা ও মুক্ত-স্বাধীন সাংবাদিকতাকে ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে-তা সে সরকার কিংবা অন্য যেকোনো শক্তিই হোক না কেন, সাংবাদিকদের এখন ঐক্য জরুরি। আশা করি, তাঁরা এখন নিজেদের ঐক্যের দিকে মনোযোগী হবেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সোচ্চার হবেন।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ১৬, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ