Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব তলব ও বেচারা সংবিধান (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: ড. শাহদীন মালিক।

তিন থেকে চার দিন ধরে সংবাদপত্রের খবর, বিবৃতি ও মন্তব্যে সাংবাদিকদের ছয়টি সংগঠনের ১১ জন নির্বাচিত শীর্ষ নেতার ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সংগঠনসহ বিভিন্ন মত ও পেশা থেকে এই পদক্ষেপ মুক্তচিন্তা ও স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আরও ক্ষুণ্ন ও সীমাবদ্ধ করার কর্তৃত্ববাদী প্রয়াস হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বাইরেও হিসাব তলবের এই পদক্ষেপের সাংবিধানিক ও আইনগত দিকটাও আলোচ্য বিষয় হতে পারে। উল্লেখ্য, ইদানীং সংবিধান নিয়ে লেখালেখি করি কদাচিৎ। কারণ, প্রায়ই মনে হয় যে আমাদের হাইকোর্ট ও কিছু আইনজীবীর ক্ষুদ্র গণ্ডির
বাইরে সংবিধান ক্রমেই গৌণ হয়ে যাচ্ছে। হিসাব তলবের ঘটনাটি সংবিধান ক্রমে গৌণ ও ফিকে হয়ে যাওয়াকেই আবার মনে করিয়ে দিল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান ও আইনের অনেক বিধানকেই সামনে নিয়ে আসা যায়। কিন্তু যেহেতু এটা পত্রিকার কলাম, তাই সবকিছুই সারতে হবে কমবেশি ৯০০ শব্দের মধ্যে। এই সীমাবদ্ধতার জন্য সংবিধানের শুধু দুটি অনুচ্ছেদের কথা উল্লেখ করব।

সংবিধানের ৫৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘…এই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে…’। অর্থাৎ নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধান যে সীমারেখা বেঁধে দিয়েছে, তা অতিক্রম করা যাবে না। নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের এই সীমারেখা বলতে প্রধানত বোঝানো হয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলোকে। অন্য কথায়, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে যে মৌলিক অধিকারগুলো আমাদের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে, রাষ্ট্র তার নির্বাহী ক্ষমতাবলে সেই মৌলিক অধিকারগুলো কোনোভাবেই লঙ্ঘন করতে পারবে না। সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, সচিবসহ ডিসি, এসপি, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদসহ নির্বাহী ক্ষমতা যাঁরা প্রয়োগ করেন, তাঁরা কেউই আমাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করতে পারবেন না।

সংবিধানের তৃতীয় ভাগের কয়েকটি মৌলিক অধিকার শর্তহীন। অর্থাৎ কোনো কারণেই বা কোনো অবস্থাতেই এই মৌলিক অধিকারগুলো কেউ কখনো লঙ্ঘন করতে পারবে না। আর কিছু অধিকার আছে, যেগুলো সংসদ আইন দ্বারা ক্ষেত্রবিশেষে কিছুটা সীমিত করে দিতে পারে।

এখন আসি ৩১ অনুচ্ছেদের কথায়। ‘…আইন অনুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না, যাহাতে কোনো ব্যক্তির…সুনাম (এর)… হানি ঘটে…’। গত কয়েক দিনের আলাপ–আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট, হিসাব চাওয়ায় সাংবাদিক নেতাদের সুনামের হানি ঘটেছে। তাঁদের ব্যাপারে স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে সন্দেহ জেগেছে, হিসাব যখন চাওয়া হয়েছে, তার মানে ‘ডালমে কুচ কালা হ্যায়’। কারও ব্যাপারে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের পেছনে অপরাধমূলক ঘটনা জড়িত, সেটা মনে করার যৌক্তিক কারণ থাকলে হিসাব চাওয়া যায়। কিন্তু যৌক্তিক কারণ ছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে কোনো নির্বাহী কর্মকর্তার মনে হলো যে অমুকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব চাই, তাহলে সে ক্ষেত্রে হিসাব চাওয়া এবং এর ফলে সুনামের হানি ঘটানো হলে, তা হবে ৩১ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।

২.

এখন আসি ব্যাংক হিসাব তলব করা বিএফআইইউর কথায়। বিএফআইইউর কথা সংক্ষেপে বলা আছে দুটি আইনে—২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন আর ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিএফআইইউ নিজেই বলেছে, তার মুখ্য উদ্দেশ্য হলো মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর অস্ত্রের (উইপন অব মাস ডেস্ট্রাকশন) বিস্তার রোধকল্পে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ব্যাংকিং হিসাব–নিকাশের অনুসন্ধান করা। তারপর সেই অনুসন্ধানলব্ধ তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানানো।

যেমন মানি লন্ডারিং–সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সংস্থা হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অর্থাৎ কারও ব্যাংকিং হিসাবের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং হচ্ছে, তা মনে করার যৌক্তিক ও দৃঢ়ভিত্তিক প্রাথমিক কারণের ভিত্তিতে সেই অ্যাকাউন্টের হিসাব বিএফআইইউ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছ থেকে তলব করতে পারে। পরবর্তী সময়ে তলবকৃত হিসাব বিএফআইইউ পাঠাবে দুদকের কাছে। তারপর দুদক তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করবে।

৩.

আমরা ধরে নিচ্ছি, বিএফআইইউর বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী যৌক্তিক ধারণা জন্মেছে যে এই ১১ জন সাংবাদিক নেতা মানি লন্ডারিং, টেররিস্ট ফাইন্যান্সিং অথবা উইপন অব মাস ডেসস্ট্রাকশন ফাইন্যান্সিংয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এখন বিএফআইইউ ব্যাংক হিসাব–নিকাশের লেনদেন থেকে তাঁদের এসব অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অকাট্য প্রমাণ জোগাড় করতে চাইছে।

যদি এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রাথমিক দৃঢ় ও যৌক্তিক কারণ না থাকে, সে ক্ষেত্রে বিএফআইইউর এ পদক্ষেপে ১১ জন সাংবাদিক নেতার বিনা কারণে সুনামের হানি নিঃসন্দেহে ঘটেছে। ৩১ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ‘আইন অনুযায়ী ব্যতীত’–এর এ ক্ষেত্রে অর্থ হচ্ছে যে সাংবাদিক নেতাদের এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার দৃঢ় ও যৌক্তিক কারণ ছাড়া তাঁদের ব্যাংকের হিসাব তলব বিএফআইইউ করতে পারে না।

বিএফআইইউ হয়তো বলবে, আমরা মনে করেছি তাঁদের সংশ্লিষ্টতা আছে, তাই হিসাব চেয়েছি। হিসাব পেলে যাচাই–বাছাই করে দেখব তাঁরা আসলেই এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না। যদি জড়িত না থাকেন, তাহলে তো আর অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এ ধরনের ব্যাখ্যা ৩১ অনুচ্ছেদের অধিকারের লঙ্ঘন।
বিজ্ঞাপন

৪.

এবার পরীমনির মৌলিক অধিকারের কথা। বিচারিক আদালতে পরীমনির আইনজীবী তাঁর জব্দ করা মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও গাড়ি ফেরত চেয়ে আবেদন করেন। গাড়ির ব্যাপারে আদালত পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিল করতে মাসখানেক সময় দিয়েছেন। চোরাই মাল, তা টাকাই হোক বা গাড়ি অথবা বেআইনি দ্রব্য যেমন অস্ত্র বা মাদক, পুলিশ অবশ্যই জব্দ করতে পারে। তবে এখানেও সেই একই আইনি কথা—জব্দ করা দ্রব্য বা গাড়ি যে চোরাই মাল, তা মনে করার পর্যাপ্ত যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে। আমি রাত ১০টায় গাড়িতে চড়ে যাচ্ছি, তখন পুলিশ কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া আমাকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি জব্দ করতে পারে না।

পরীমনির জব্দ হওয়া গাড়িটি যে কারও কাছ থেকে তিনি চুরি করেছেন, সেই ধরনের কোনো ব্যক্তির কোনো অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের খবরে চোখে পড়েনি। অনেকটা বিএফআইইউর হিসাব চাওয়ার মতোই। গাড়িটা তো আগে জব্দ করি, তারপর দেখব এটা চোরাই গাড়ি কি না। হতে পারে গাড়িটিতে করে অবৈধ মদ আনা–নেওয়া করা হয়েছিল। কিন্তু এই ‘হতে পারে’ গাড়ি জব্দ করার কোনো যৌক্তিক কারণ নয়। আদালতে প্রথম দিনই পুলিশের আইনগত দায়িত্ব ছিল যে কিসের ভিত্তিতে বা কী অপরাধে জড়িত থাকার কারণে গাড়িটিকে তারা জব্দ করেছে, সেই প্রতিবেদন দাখিল করা। এখন এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়াটা তুলনা করা চলে সেই রীতির মতো যে রীতি হয়ে গেছে—আগে তো রিমান্ডে নিই, তারপর বুঝব রিমান্ডে নেওয়া ব্যক্তিটি কী অপরাধ করেছে। এ ধরনের নির্বাহী আচরণ ও ব্যবহার সংবিধানের পরিপন্থী।

সংবিধানটা রচিত ও প্রণীত হয়েছিল আমাদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য। সংবিধান নির্বাহী বিভাগকে বলে দিয়েছিল যে তোমরা দেশ চালাতে পারো এবং নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে, তবে সংবিধানে দেওয়া নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন না করে। সেই গুড়ে এখন বালি। তাই ‘বেচারা সংবিধান’।

● ড. শাহদীন মালিক বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক।

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ