Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য কেন গণতন্ত্র প্রয়োজন (২০২৩)

Share on Facebook

লেখক:কামাল আহমেদ।

আওয়ামী লীগের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কী এবং কেমন হবে, তা যে খুব একটা স্পষ্ট হয়েছে, সেটা মনে হচ্ছে না। এক অর্থে মনে হয়, সত্যিই আমাদের স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন। কেননা, আমরা স্মার্ট নই, আনস্মার্ট।

না হলে কি ক্ষমতাধর কিছু লোক প্রয়োজনীয় জামানত ছাড়াই ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলোকে জিম্মি করে ফেলতে পারে! তাদের ঋণখেলাপি বলা হলে কি গায়েবি নির্দেশনায় আইন বদল হয়ে যায় এবং ঋণগুলোও নিয়মিত হয়ে যায়? বেকায়দায় পড়া ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে হয় করদাতাদের টাকা দিয়ে তাদের বাঁচানো হয়, নয়তো সাধারণ গ্রাহকদের ওপর নানা অজুহাতে খরচের বোঝা বাড়ে? আনস্মার্ট বলেই বোধ হয় সুদে টাকা ধার নিলেও ব্যাংকিংয়ে ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহারে কোনো সমস্যা হয় না?

আমরা অধিকাংশই আনস্মার্ট বলে কিছু লোক বিদেশে ইচ্ছেমতো টাকা পাচার করতে পারে। ভর্তুকি কমানোর জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ও হাতে গোনা কিছু সুবিধাভোগীকে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ কিংবা কর অব্যাহতি দেওয়া তখনই সম্ভব, যখন বিদ্যুতের ভোক্তা ও তাদের প্রতিনিধিরা আনস্মার্ট হয়।

জ্বালানি তেলের আমদানি খরচ বাড়লে দাম বাড়ে অথচ খরচ কমলে তার সুবিধা ভোক্তাদের না দেওয়াও তো জনগোষ্ঠী আনস্মার্ট বলেই সম্ভব। মাথাপ্রতি আয় গড়ে বাড়ছে অথচ একাধিক বেসরকারি জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এক বেলা খাওয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ সাদাসিধে ও গোবেচারা ধরনের না হলে বৈষম্য নিশ্চয়ই এভাবে প্রকট হতে পারে না। এই তালিকা আরও বাড়ানো যায়, কিন্তু তাহলে স্মার্ট রাষ্ট্র নিয়ে অন্য প্রশ্নগুলো উত্থাপনের জায়গা হবে না।

স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটা পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের ২২তম (ডিসেম্বর ২৫, ২০২২) জাতীয় সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে। তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চারটি ভিত্তি—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটির কথা বলেছেন। তাঁর কথায় প্রতিটি জনশক্তি স্মার্ট হবে। সবাই প্রতিটি কাজ অনলাইনে করতে শিখবে, ইকোনমি হবে ই-ইকোনমি, যাতে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল ডিভাইসে করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মযোগ্যতা’ সবকিছুই ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে হবে। ই-এডুকেশন, ই-হেলথসহ সবকিছুতেই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আমরা তা করতে সক্ষম হব এবং সেটা মাথায় রেখেই কাজ চলছে। একই কথা তিনি বছরের প্রথম দিনে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বই বিতরণের উৎসবেও বলেছেন। তারপর মঙ্গলবার তিনি পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছেন, বিশ্বমানের স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলা হবে।

স্মার্ট নগর, স্মার্ট সমাজের আওয়াজটা উঠেছে প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার কারণেই। বিশেষ করে জনজীবন, রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এআই) কাজে লাগানোর প্রশ্নেই এসব বিশেষণের প্রচলন। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার বিরোধিতা যে আত্মঘাতী, তা নিয়ে খুব একটা বিতর্ক নেই।

কিন্তু এআইয়ের ব্যবহার প্রশ্নে এখন বিশ্বজুড়েই চলছে নানা বিতর্ক। মানুষের কল্যাণে প্রযুক্তিটির ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং ক্ষতি বা অকল্যাণে যাতে তার অপপ্রয়োগ না ঘটে, সে জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বে আইনগত কাঠামো বা বিধিবিধান নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিভিন্ন দেশেই এ প্রযুক্তি ইতিমধ্যে নানাভাবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় কাজে লাগানো হচ্ছে। আর ভালো-মন্দের সে কারণে ফারাক এবং আইনি কাঠামো ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়গুলোও জরুরি ভিত্তিতে নিরসনের প্রশ্ন উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস, যুক্তরাজ্যের প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনালসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন এ বিষয়ে গবেষণা করে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কার্নেগির ২০১৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে অন্তত ৭৫টি দেশ এআইয়ের নজরদারি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যার মধ্যে ৫৬টি দেশে এটি করা হচ্ছে স্মার্ট সিটি নামের প্ল্যাটফর্মে, ৬৪টি দেশে মুখ দেখে শনাক্ত করার ব্যবস্থায় এবং ৫২টি দেশে স্মার্ট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে এআই প্রযুক্তিতে এগিয়ে আছে চীন, বিশেষ করে হুয়াওয়ের মতো কোম্পানি।

চীনা কোম্পানিগুলো চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে (বিআরআই) অংশগ্রহণকারী ৩৬টি দেশের সঙ্গে এআই প্রযুক্তি সরবরাহের চুক্তি করেছে। তবে শুধু চীন নয়, এ প্রযুক্তি সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, ইসরায়েলও যথেষ্ট তৎপর। কার্নেগির প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে উদার গণতন্ত্র থেকে শুরু করে কর্তৃত্ববাদী দেশ সব জায়গাতেই এ প্রযুক্তি নজরদারিতে ব্যবহৃত হচ্ছে, কিন্তু এর অপপ্রয়োগ ঘটছে অগণতান্ত্রিক কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোতে।

প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল এ বিষয়ে জিম্বাবুয়ে সরকারের হুয়াওয়ের প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারির ব্যবস্থার বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে। রবার্ট মুগাবের ৩৭ বছরের শাসনকালে শুরু হওয়া নজরদারির ব্যবস্থায় এআই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে দেশটিতে আইন করে মোবাইল ফোনের সিম রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে।

এর মাধ্যমে ইলেকট্রনিক যোগাযোগে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দেশটির মোবাইল নেটওয়ার্কে টু-জি থেকে শুরু করে ফোর-জি পর্যন্ত সবটাই সরবরাহ করেছে হুয়াওয়ে। ২০২০ সালে হুয়াওয়ে যুক্ত হয়েছে স্মার্ট টেকসই শহর প্রকল্পে। নজরদারির ক্যামেরা নেটওয়ার্ক বসানোর কাজটিও তারা করছে এবং মুখ দেখে শনাক্তকরণের প্রযুক্তি দিচ্ছে আরেকটি চীনা কোম্পানি হিকভিশন।

ব্যক্তিগত তথ্যের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করা ছাড়াই এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার নাগরিক স্বাধীনতার জন্য কতটা বিপদ বয়ে আনতে পারে, তার আরেকটি নজির হচ্ছে হংকং। হংকংয়ে গণতন্ত্রের আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীরা তাই নিজেদের পরিচয় আড়াল করতে ছাতা অথবা রুমাল বেঁধে মুখ ঢাকার কৌশল নিয়েছিল। সরকারি ভাষ্যমতে, সেখানকার স্মার্ট ল্যাম্পপোস্টগুলো ছিল শহরের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিগন্যালিং ও বাতাসের মান পর্যবেক্ষণের জন্য। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা টের পায় যে তাতে আছে নজরদারির ক্যামেরা। বিক্ষোভকারীরা তাই অনেক জায়গায় ওই সব ল্যাম্পপোস্ট ভেঙে দেয়। 

চীনের বহু শহরে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। চেহারা শনাক্তকরণের প্রযুক্তির সাহায্যে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার এবং সেবা লাভের সুযোগ নিয়ন্ত্রিত হয়। অভিযোগ আছে, উইঘুরদের দমনে সেখানকার কর্তৃপক্ষ নজরদারি প্রযুক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, চীন ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস প্ল্যাটফর্ম (আইজেওপি) তৈরি করেছে, যাতে সিসিটিভির ফুটেজ, চেহারা শনাক্তকরণ ডিভাইস এবং ওয়াইফাইতে আড়িপাতার ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটিয়েছে। তৈরি হচ্ছে স্মার্ট পুলিশিংয়ের মডেল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাতেও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞরা তাঁদের সুপারিশমালা হাজির করেছেন। এ বিতর্কের কেন্দ্রে আছে নাগরিকদের ওপর কড়াকড়ি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় নজরদারির কাজে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর এআই প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা বলছে, যদিও রাষ্ট্রীয় নজরদারি সহজাতভাবে বেআইনি নয়, কিন্তু রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করার মানসে সরকারগুলো মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা হরণে ডিজিটাল হাতিয়ার প্রয়োগ করতে পারে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ২০১৯ সালে তাঁর এক রিপোর্টে বলেন যে সরকারগুলো সাধারণত জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার অজুহাতে এর ব্যবহারকে যৌক্তিকতা দিয়ে থাকে। কিন্তু এর অযৌক্তিক ও যথেচ্ছ প্রয়োগ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। তাই জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার প্রশ্নে যৌক্তিকতা নির্ধারণে স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগীয় অনুমোদনের আইনগত ব্যবস্থা প্রয়োজন। এটা হতে হবে কেবল জাতীয় প্রয়োজনে, কোনো সরকার কিংবা কোনো শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থে নয়। 

শুরুতেই বলেছিলাম প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা নাকচ করা যায় না। কিন্তু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্ট হওয়া দরকার। নাগরিকদের সম্মতিভিত্তিক শাসনব্যবস্থা, গণতন্ত্রের রীতিনীতি ও আইনের শাসন ছাড়া স্মার্ট পুলিশ ও স্মার্ট নগরের যেসব নজিরের কথা জানা যায়, তাতে স্মার্ট দেশের চেহারাটা বোঝা খুবই জরুরি।

কার্নেগির যে ২০১৯ সালের প্রতিবেদনের কথা বললাম, তাতে কিন্তু বলা হচ্ছে বাংলাদেশ স্মার্ট সিটি প্ল্যাটফর্ম, স্মার্ট পুলিশিং, চেহারা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং সরবরাহকারীদের মধ্যে আছে হুয়াওয়ে। আর বাংলাদেশ বিআরআই প্রকল্পেরও শরিক।

**** কামাল আহমেদ সাংবাদিক।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ০৫, ২০২৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ