Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

‌বাঙলা এবং ঘটি

Share on Facebook

ঘটি আর বাঙাল দুটি শব্দই পুরুষানুক্রমে ব্যবহার করে আসছি আমরা বাংলা ভাষার অন্যান্য শব্দের মতোই। কিন্তু তবুও, আজও এই ঘটি আর বাঙাল শব্দ দুটির উৎস প্রায় অজানা আমাদের কাছে। এপার বাংলা ওপার বাংলা, পূর্ববংগ পশ্চিমবংগ, ইষ্টবেঙ্গল মোহনবাগান, ইলিশ চিংড়ির মতোই বাংগাল আর ঘটি আজ দুই প্রতিপক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বী শব্দ।

ছোটোবেলায় বাঙাল নিয়ে দুটো ছড়া ঘটিদের মুখে মুখে শুনতাম। তার একটি হলো, “বাঙাল মনুষ্য নয়, উড়ে এক জন্তু/ লাফ দিয়ে গাছে চড়ে, ল্যাজ নেই কিন্তু” আর অন্যটি, “বাঙাল/ চিংড়ি মাছের কাঙাল/ পুঁটি মাছের ঝোল/ বাঙালের টিকি ধরে তোল”। আমার জন্ম ১৯৪৭ সালে আর ছড়া দুটিতে ব্যবহৃত বাংলার কথ্য রূপ দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে এই ছড়া দুটি খুব প্রাচীন নয়। দেশভাগের পরে, ওপার বাংলা থেকে আসা বাস্তুচ্যুত মানুষদের প্রতি বিদ্রুপ আর তাদের অসহায় অবস্থাকে হেয় করার এক শহুরে উন্নাসিক মানসিকতাই এইসব ছড়ার উৎস।

বাংলা চলচ্চিত্রেও তখন কমিক চরিত্রের মুখে বাঙাল ভাষা প্রয়োগের রীতি ছিল। ভানু বন্দোপাধ্যায়, জহর গাঙ্গুলি থেকে হালের রবি ঘোষ পর্যন্ত সবাই ই সিনেমায় বাঙাল চরিত্রের নাম ভূমিকায় অভিনয় করে লোক হাসিয়েছেন। বাঙাল মানেই যেন গেঁয়ো ভূত, অমার্জিত চরিত্র, কমিক ক্যারেক্টার। দীনবন্ধু মিত্র, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অমৃতলাল বসু প্রমুখ পশ্চিমবঙ্গ বাসী সাহিত্যিকেরাও তাদের রচনায় বাঙাল চরিত্র সৃষ্টি করেছেন কৌতুক-চরিত্র হিসেবে।

তবে কালীপ্রসন্ন, দীনেশচন্দ্র, কৃষ্ণবিহারী, নীহাররঞ্জন সবাই একটা বিষয়ে একমত। ঘটি-বাঙ্গালের এই দ্বন্দ্ব, পূর্ব-পশ্চিমের এই রেষারেষির ইতিহাস বহু প্রাচীন। চর্যাপদ কে উল্লেখ করে নীহাররঞ্জন লিখেছেন, “বঙ্গাল দেশের সংগে বোধহয় তখনও পশ্চিম ও উত্তরবঙ্গের বিবাহাদি সম্পর্ক প্রচলিত ছিল না। তাহা ছাড়া, পশ্চিম ও উত্তরবঙ্গবাসীরা সম্ভবত বঙ্গালবাসীদের খুব প্রীতির চক্ষেও দেখিতেন না”। অষ্টম শতাব্দীর শেষে, চর্যাপদের পদ রচয়িতা সরহপাদের একটি দোহায় আছে, বঙ্গে জায়া নিলেসি পরে ভাগিল তোহার বিণাণা। মানে, বাঙাল বউ ঘরে এনেছিস, তোর বুদ্ধিসুদ্ধি সব লোপ পেল বলে (বিণাণা চিত্তবান অর্থাৎ সু-চেতনা)!! অথচ, কী চলচ্চিত্রে, কী সাহিত্যে, কী লোককথা কিংবা ছড়া বা দোহায় ঘটিদের নিয়ে কোন ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ নজরে পড়ে না।

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক ছোটগল্প ‘তন্দ্রাহরণ’ এ পুণ্ড্রবর্ধনের বাঙালি রাজকুমারী তন্দ্রা প্রাগজ্যোতিষপুরের বাঙাল যুবরাজ চন্দ্রাননমাণিক্যকে বিয়ে করতে বেঁকে বসলেন। বেঁকে বসার কারণ, “নন্দা ( সখী ) আসিয়া সংবাদ দিয়াছে—যুবরাজ দেখিতে শুনিতে ভালোই, চাল-চলনও অতি চমৎকার, কিন্তু তাঁহার ভাষা একেবারে অশ্রাব্য। ‘ইসে’ এবং ‘কচু’ এই দুই-টি শব্দের বহুল প্রয়োগ সহযোগে তিনি যা বলেন তাহা কাহারো বোধগম্য হয় না”। আবার অন্যদিকে বাঙালরা উত্তর কোলকাতার ঘটিদের এলুম গেলুম খেলুম, নুচি নেবু নঙ্কা উচ্চারণে হেসে গড়িয়ে পড়ে।

উত্তর কোলকাতার বনেদী বাড়িগুলোর সংস্কৃতি কিন্তু প্রকৃত ঘটি সংস্কৃতি নয়। এদের সংস্কৃতি ঔপনিবেশিক যুগে নানান বিদেশী সংস্কৃতি কে আত্মীকরণ করে এক মিশ্র শহুরে সংস্কৃতি। ঘটি সংস্কৃতির মূল ছিল গৌড়ভূমিতে। মূল ঘটি অঞ্চল কিংবা গৌড়ভূমির কিছুটা আজ বাংলাদেশে আর কিছুটা ভাগীরথীর পূর্বতীরে, যেখানে অনেক জায়গাতেই আজ হিন্দুরা সংখ্যালঘু। দেশভাগের আগে পদ্মার পশ্চিম তীর পর্যন্ত মানে, যশোর-খুলনা কেও ঘটি অঞ্চল বলা হতো। বরং পশ্চিমবাংলার নদীয়া, চব্বিশ পরগণার গ্রামাঞ্চলে আদি ঘটি সংস্কৃতির কিছুটা টিঁকে আছে এখনো।

সম্ভবত বাঙাল শব্দটির উৎপত্তি ‘বঙ্গাল’ প্রদেশ থেকে। একাদশ শতকে বঙ্গ আর বঙ্গাল দুটি আলাদা জনপদ ছিল। কিছু দক্ষিণী শিলালিপিতে এই বঙ্গাল প্রদেশের নাম পাওয়া যায়।
প্রায় সমস্ত পূর্ববঙ্গ আর দক্ষিণ বংগের সুন্দরবন সহ সমুদ্রতটশায়ী সমস্ত ভূখণ্ডকে বলা হতো ‘বঙ্গালদেশ’।

‘বাঙ্গাল’ শব্দের ব্যবহার বেশ প্রাচীন। বাংলা সাহিত্যে, মধ্যযুগ থেকেই এই বাঙ্গাল শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। চৈতন্য ভাগবতে এই বাঙ্গাল শব্দের উল্লেখ পাই।

“যাবৎ বঙ্গদেশী বাক্য অনুকরণ করিয়া
বাঙ্গালের কদর্থেন হাসিয়া হাসিয়া
বিশেষ চালেন প্রভু দেখি শ্রীহট্টিয়া
কদর্থেন সেইমত বচন বলিয়া
ক্রোধে শ্রীহট্টিয়গণ বলে হয় হয়
তুমি কোন দেশী লোক কহত নিশ্চয়
তাবৎ শ্রীহট্টিয়ারে চালেন ঠাকুর
যাবৎ তাহার ক্রোধ না হয় প্রচুর”।
অর্থ্যাৎ বাঙাল দের কথ্য ভাষা নিয়ে রসিকতা ও তাদের পেছনে লাগা, সে যুগেও ছিল। বাঙ্গাল বলতে এখানে চৈতন্য ভাগবতকার বঙ্গদেশী কথাটা বলেছেন। চৈতন্য ভাগবতের এই শ্লোকটি যখন রচিত হয়েছিল, ‘গৌড়’ তখনো অবলুপ্ত হয় নি। অর্থ্যাৎ গৌড়ের লোকজন, যাদের গৌড়ীয় বলে হতো তারা বঙ্গদেশবাসীকে বাঙ্গাল বলে সম্বোধন করতেন।

এতো গেলো বঙ্গ বা বঙ্গালদেশের ভৌগলিক সীমানার কথা। এবার আসি ভাষার কথায়। মোদের গরব, মোদের আশা/ আ মরি বাংলা ভাষার দুটি কথ্য রূপ। একটি পদ্মাপারের বাঙাল ভাষা অপরটি ভাগীরথীপারের গৌড়ীয় ভাষা। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষে কিংবা উনবিংশ শতাব্দীর একদম গোড়ায় লেখা রাজা রামমোহন রায়ের লেখা বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ বইটির নাম ই ছিল, গৌড়ীয় ভাষার ব্যাকরণ।

ঘটি কথাটা কিন্তু এসেছে এই গৌড় থেকেই, যেমন এসেছে গুড় শব্দটি। ঘটি শব্দটির সংগে লোটার সম্পর্ক নেই কিছু। গৌড়ীয় থেকে গৌটীয়, তারপরে গৌটিয়>গৌটি>ঘটি। গুড়ের দেশ গৌড়ের অধিবাসী বলেই হয়তো ঘটিরা মিষ্টি বেশি খায় রান্নায়।
তবে, ইতিহাসের চাকা ঘুরেছে অনেকদিন ই। দেশভাগের যন্ত্রণা আর চরম অসহায়তাকে জয় করেও তথাকথিত বাঙালরাই আজ এপার বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্রিয়াকলাপে, শিক্ষায় ও প্রতিষ্ঠায় ঘটিদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে অনেক।

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ১৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ