Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

স্টিফেন হকিং এবং তার লেখা

Share on Facebook

১৯৮২ সালে হার্ভার্ডে লোয়েব (Loeb) বক্তৃতাবলী দানের পর থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম স্থান এবং কাল বিষয়ে সাধারণের জন্য একটি বই লেখার চেষ্টা করব। মহাবিশ্বের প্রথম অবস্থা এবং কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে ইতিপূর্বে অনেকগুলি বই লেখা হয়েছিল। স্টিফেন ভাইনবার্গের অত্যন্ত ভাল বই ‘প্রথম তিন মিনিট’ (The First Three Minutes) থেকে শুরু করে অত্যন্ত খারাপ বই পর্যন্ত (তবে অত্যন্ত খারাপ বইয়ের নামটা আমি করব না)। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল যে সমস্ত প্রশ্ন আমার সৃষ্টিতত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে গবেষণার পথিকৃৎ, কোনো বইয়েই সে প্রশ্নগুলি নিয়ে সঠিক আলোচনা হয়নি। প্রশ্নগুলি হল : মহাবিশ্ব কোত্থেকে এসেছে? কি ভাবে এর শুরু? কেনই বা এর শুরু হল? মহাবিশ্ব কি শেষ হয়ে যাবে? যদি হয় তবে কি ভাবে হবে? এ প্রশ্নগুলি সম্পর্কে আমাদের সবারই ঔৎসুক্য রয়েছে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এমন জটিল হয়ে উঠেছে যে শুধুমাত্র তার বিবরণের জন্য ব্যবহৃত গণিত আয়ত্তে করতে পেরেছেন খুব স্বল্পসংখ্যক বিশেষজ্ঞ। তবুও মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও নিয়তি সম্পর্কিত মূলগত ধারণাগুলি গণিত ছাড়াই বলা যায়। এবং এমনভাবে বলা যায় যে যাঁদের বিশেষ বৈজ্ঞানিক শিক্ষা নেই, তাঁরাও সেটা বুঝতে পারবেন।…বইয়ে আমি সেই চেষ্টাই করেছি। সফল হয়েছি কি না সে বিচার করবেন পাঠক।

আমাকে একজন বলেছিলেন : এক একটি সমীকরণ ব্যবহার করার অর্থ হবে পাঠকের সংখ্যা অর্ধেক করে কমে যাওয়া। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কোনো সমীকরণই ব্যবহার করব না। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমীকরণ ব্যবহার করেছি – আইনস্টাইনের বিখ্যাত সমীকরণ E=mc2। আমার আশা, এর ফলে আমার ভাবী পাঠকদের অর্ধেক ভয় পেয়ে পালিয়ে যাবেন না।

এ.এল.এস অথবা মোটর নিউরন ব্যাধির মতো একটি দুর্ভাগ্য ছাড়া অন্য প্রায় সব ব্যাপারেই আমি ভাগ্যবান। আমার স্ত্রী জেন এবং আমার ছেলেমেয়ে রবার্ট, লুসি আর টিমির কাছে আমি যে সাহায্য পেয়েছি, তার ফলে আমার পক্ষে মোটামুটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হয়েছে, এবং সম্ভব হয়েছে কর্মজীবনে সাফল্য লাভ করা।…তাছাড়া আছে আর একটি সৌভাগ্য- আমি বেছে নিয়েছিলাম তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা। তার সবটাই মনের ভিতরে কাজ। সুতরাং আমার অসুস্থতা একটা কঠিন প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়নি। আমার বৈজ্ঞানিক সহকর্মীদের প্রত্যেকেই যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। আমার কর্মজীবনের প্রথম ক্ল্যাসিকাল পর্যায়ে আমার প্রধান সহচর এবং সহকর্মী ছিলেন রজার পেনরোজ, রবার্ট গেরক, ব্রাণ্ডন কার্টার এবং জর্জ এলিস্‌। এঁরা আমাকে যা সাহায্য করেছেন এবং আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে যে কাজ করেছি, তার জন্য আমি এঁদের কাছে কৃতজ্ঞ।…১৯৭৪ সাল থেকে আমার কর্মজীবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ “কোয়ান্টাম” পর্যায়ে আমার প্রধান সহযোগী ছিলেন গ্যরী গিবন্‌স্‌, ডন্‌ পেজ্‌ এবং জিম্‌ হার্টল। তাঁদের কাছে এবং আমার গবেষণাকারী ছাত্রদের কাছে আমার অনেক ঋণ। তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক উভয় অর্থেই তাঁরা আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছেন। ছাত্রদের সঙ্গে কাজ করা আমাকে বিরাটভাবে উদ্বুদ্ধ করেছে। আমার আশা, আমি সে জন্যই কোনো কানা গলিতে ঢুকে পড়িনি।…

___________
অনুবাদ – শত্রুজিৎ দাশগুপ্ত

আমাকে প্রায়ই একটা প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয় – এএলএস নিয়ে তোমার কেমন লাগে স্টিফেন? আমি উত্তর দিই – তেমন কিছু লাগে না। আমি যতটা সম্ভব একটা সাধারণ জীবন কাটাতে চাই, আমার অবস্থা নিয়ে খুব একটা ভাবতে চাই না; কোন আক্ষেপ নিয়ে বাঁচতে চাইনা; ভাবতে চাইনা যে অসুখটা আমায় কতকিছু করতে দিচ্ছে না – এমন কতকিছু করার মত জিনিস আসলে আমার খুব একটা নেই-ও।

মনে পড়ছে এটা বেশ দারুণ একটা আঘাত ছিল যখন আমি জানতে পারলাম যে আমার মোটর নিউরন ডিজীজ্‌। ছোটবেলায় থেকেই চলাফেরায় আমি খুব একটা গোছানো ছিলাম না। খেলাধুলায় ভাল ছিলাম না, আমার হাতের লেখা আমার শিক্ষকদের কাছে ছিল একটা হতাশার মতন ব্যাপার। হয়তো এইসব কারণেই আমার খেলাধুলা অথবা ফিজিক্যাল এক্টিভিটি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু অক্সফোর্ডে যাওয়ার পর আমার চিন্তাভাবনা কিছুটা বদলালো, সেই সতের বছর বয়সে। আমি দাঁড় টানা কিংবা নৌকা বাইচে অংশ নিতাম। যদিও একেবারে আদর্শ কিছু একটা ছিলাম না, তবে ইন্টারকলেজ প্রতিযোগিতাগুলোয় আমি ঠিকই আমার স্থান করে নিতে পারতাম, আমার চলে যেত।

আমি যখন অক্সফোর্ডের তৃতীয় বর্ষে, বুঝতে পারমাল আমি দিনে দিনে আরও গণ্ডগোল পাকাচ্ছি, কোনো কারণ ছাড়াই একদুইবার করে ধাপধুপ পড়ে যাচ্ছি। তবে এই ব্যাপারগুলো ধরা পড়লো তার পরের বছরে, যখন আমি কেমব্রিজে। বাবার চোখে ধরা পড়লো। তিনি নিয়ে গেলেন ডাক্তারের কাছে, আমাদের পারিবারিক ডাক্তার। সে আমায় পাঠালো একজন বিশেষজ্ঞের কাছে। তারপর আমার একুশ বছরের জন্মদিনের কিছুদিন পরই আমি হাসপাতাল গেলাম কিছু টেস্টের জন্য। দুই সপ্তাহ থাকলাম সেখানে। আমার উপর অনেক ধরনের পরীক্ষা চললো। হাতের মাংশপেশী থেকে স্যাম্পল নিলো ওরা, ইলেকট্রোড লাগালো শরীরে, তারপর মেরুদণ্ড দিয়ে তেজস্ক্রিয় অস্বচ্ছ তরল কিছু একটা ঢুকালো, তারপর সেটার ওঠানামা দেখতে থাকলো এক্স-রে দিয়ে, আমার বিছানা কাত করে। কিন্তু এতকিছু করার পরও ওরা আমাকে বললো না আমার কী হয়েছে। শুধু বললো যে এটা টিস্যু শক্ত হয়ে যাওয়ার মতন কোনো অসুখ নয়, আর আমার কেসটা নাকি একটু অন্যরকম। কিন্তু আমি বুঝলাম যে ওরা জানে এটা আরও খারাপ হবে, আর এটা নিয়ে ওদের তেমন কিছু করার নেই, শুধুমাত্র ভিটামিন দেয়া ছাড়া। আমি এটাও বুঝলাম যে ভিটামিনগুলোও যে খুব একটা কাজ করবে এটাও তারা আশা করে না। আমার আর খুঁটিনাটি কিছু জানতে ইচ্ছা হোলো না কারণ খুব স্বাভাবিকভাবে সেগুলোর চিত্তাকর্ষক হবার সম্ভাবনা খুব কম।

আমি যে একটা অনারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছি, আর আমি যে অল্পকিছু বছরের মধ্যে মারা যাবো, এই উপলব্ধি আমায় বেশ আঘাত দিলো। এইরকম একটা ব্যাপার আমার সাথে কীভাবে ঘটলো? কেন আমাকে এভাবে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে? তখন আমার মনে পড়লো হাসপাতালের কথা, আমার বিছানার উল্টোপাশে একটা ছেলে ছিলো, আমার মনে আছে, সে লিউকোমিয়ায় মারা যায়। দৃশ্যটা দেখা আমার পক্ষে খুব সুখকর ছিলো না। বুঝতে পারলাম যে আমার চেয়েও খারাপ অবস্থায় অনেক মানুষ আছে। নিজেকে এই ভেবে সান্ত্বনা দিই যে আমার রোগটাতো আমাকে অসুস্থ বানায়নি। তারপর থেকে যখনই আমার নিজের জন্য দুঃখ লাগে, আমার সেই ছেলেটির কথা মনে হয়।

আমার কী হবে এটা যখন জানি না, অসুখটা কত তাড়াতাড়ি ছড়াবে এটাও যখন অজানা, ঠিক সেই মুহূর্তে আমি টের পেলাম আমি বলগা ছাড়া লাগাম ছাড়া কিছু একটা। ডাক্তাররা আমায় বলেছিলো কেমব্রিজে ফিরে যেতে, আমি তখন জেনারেল রিলেটিভিটি আর কসমোলজি নিয়ে সবেমাত্র গবেষণা শুরু করেছি। কিন্তু আমি খুব একটা সুবিধে করতে পারছিলাম না, কারণ আমার গণিতের উপর তেমন কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড ছিলো না। ভাবলাম, যাই হোক, পিএইচডি শেষ করা পর্যন্ত তো আমি বেঁচে থাকবো না। নিজেকে কেমন যেন একটা ট্র্যাজিক চরিত্র মনে হতে লাগলো।…সেই সময় আমার স্বপ্নগুলো কেমন অস্বাভাবিক হোতো, ডিস্টার্বড লাগতো। আমার রোগনির্ণয় হওয়ার আগেই আমি জীবন নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। কোনোকিছু করাকে আমার পুরোপুরি অর্থহীন মনে হতে লাগলো। তবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর আমি একবার স্বপ্নে দেখলাম কেউ যেন আমাকে খুন করেছে। আমি হঠাৎ টের পেলাম যে এই দুনিয়াতে মূল্যবান অনেককিছুই করার আছে; আমি যদি বেঁচে যাই, আমি সেইসব করতে পারি। আমি আরও একটা স্বপ্ন দেখতাম, অনেকবারই দেখেছি, স্বপ্নটা ছিলো নিজেকে বিসর্জন দিয়ে অন্যকে বাঁচানোর স্বপ্ন। ভাবলাম আমি যেহেতু মরেই যাচ্ছি, মরার আগে ভাল কিছু করে মরি না কেন। কিন্তু আমি মরলাম না। সত্যি কথা বলতে কি, যদিও তখন আমার ভবিষ্যতের উপর কালোমেঘের ছায়া ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি একদিন টের পেলাম, খুব অবাক হয়ে, আমি জীবনকে উপভোগ করতে শুরু করেছি…

সূত্র: সংগৃহিত
তারিখ: অক্টোবর ১৪, ২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ