Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

যাদুঘর নিয়ে কিছু কথা

Share on Facebook

কে যেন বলেছিলেন-একটা জাতি তার আত্মজীবনী লিখে রাখে পুরাবস্তুর মধ্যে, আর সংগ্রহালয় তাকে সংরক্ষণ করে ভবিষ্যত্ প্রজন্মের জন্য (A Nation writes its autobiography in the antiquarian remains and museums preserve them for posterity)। আঠারো-উনিশ শতকের ইউরোপে মিউজিয়ামগুলোর সূচনা পর্বে দু’টি বৌদ্ধিক চিন্তন- রেনেসাঁস এবং এনলাইটেনমেন্ট বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। রেনেসাঁস আগ্রহ জুগিয়েছিল প্রত্নবস্তুতে আর এনলাইটেনমেন্ট নতুন করে প্রকৃতি ও মানুষের কীর্তি সম্পর্কে উত্সাহ সঞ্চার করেছিল। হয়তো এ কথা মনে রেখেই ইউরোপ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রিটিশ মিউজিয়াম (১৭৫৯) আর এশিয়া মহাদেশে ভারতীয় সংগ্রহশালা (১৮১৪)।

বঙ্গদেশে সে যেন এক নতুন যুগের ভোর। সমাজ, সংস্কৃতি, প্রযুক্তিতে অভিনব উন্মাদনা। রামমোহন পাকাপাকি ভাবে বসত করতে এলেন কলকাতায়, রিফর্মিস্ট আন্দোলন শুরু করার অভিপ্রায়ে। কলকাতার প্রথম বিশপ টমাস ফ্যানশ মিডলটন এলেন নতুন ধর্মের প্রচারে। চুঁচুড়ায় দেশের প্রথম ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হল রেভারেন্ড রবার্ট মে সাহেবের উদ্যোগে। নাট্যমঞ্চ চৌরঙ্গী থিয়েটার এবং নাট্য আন্দোলনের উদ্যোক্তা চৌরঙ্গী ড্রামাটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হল এ শহরে। লটারি কমিশন ভার নিল নগর উন্নয়নের। গড় উইলিয়ামে সুপেয় জলের সন্ধানে ১৪০ ফুট গভীর বোরিং-এর কাজ আরম্ভ হল। আর কাকতালীয় হলেও উল্লেখযোগ্য, এই ১৮১৪ খ্রিস্টাব্দেই জন্ম নিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র এবং রামগোপাল ঘোষ, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর বরপুত্র হিসেবে।

নীহাররঞ্জন রায় এই সময়টাকেই আখ্যা দিয়েছিলেন ‘মডার্নিটির শুরু’ বলে। নগর কলকাতার এই উদ্যোগ পর্বে জন্ম নিল এশিয়াটিক মিউজিয়াম যা আজকের ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, এদেশের প্রথম জাদুঘর। ১৮৭১ সালে দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘সুরধুনী কাব্য’র দশম সর্গে লিখেছিলেন-
মনোহর যাদুঘর আশ্চর্য-আলয়,
ধরার অদ্ভুত দ্রব্য করেছে সঞ্চয়,
দেখিলে সে সব নিধি স্থিরচিত্ত হয়ে
ঈশ্বর মহিমা হয় উদয় হৃদয়ে;
বিরাজে পুস্তক পুঞ্জ বিজ্ঞান-দর্পণ
মীমাংসা করেছে সবে জলের মতন।

এশিয়াটিক সোসাইটিতে প্রথম দিকে গ্রন্থাগার ছিল দোতলায় আর সংগ্রহশালা গড়ে উঠেছিল একতলাতে। তাই ‘পুস্তক পুঞ্জ’ এবং ‘অদ্ভুত দ্রব্য’র উল্লেখ করেছিলেন দীনবন্ধু। এশিয়াটিক মিউজিয়াম থেকে ইম্পিরিয়াল মিউজিয়াম হয়ে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে পৌঁছতে সময় লেগেছে চৌষট্টি বছর। কিন্তু বাল্যের লীলাগৃহ আর যৌবনের উপবন তো ভোলার নয়। অষ্টাদশ শতকের শেষ দশকে সোসাইটি প্রকাশ্যে জানিয়ে দিল পুথি, পাণ্ডুলিপি এবং ‘কিউরিওসিটিজ’ সংগ্রহ করা হবে এই ভবনের জন্য। সেকালের বাঙালির কাছে জাদুঘর হয়ে উঠল ‘মরা সোসাইটি’ নয়, ‘কৌতুকাগার’- কৌতূহল জাগানো ঘর। অক্ষয়কুমার দত্ত তাঁর ‘চারুপাঠ’, দ্বিতীয় ভাগ-এ লিখলেন-‘এই কূর্ম একটি প্রস্তরীভূত হইয়া যায়, আমি তাহাই দৃষ্ট করিয়াছি। কলিকাতার ভারতবর্ষীয় কৌতুকাগারে গিয়া দেখিলে তোমরাও অক্লেশে দেখিতে পাইবে।’ তাঁর পৌত্র সত্যেন্দ্রনাথও কম যাননি। ‘মমির হস্ত’ কবিতায় লিখলেন-‘রাজদণ্ড হয়তো গো ধরিয়াছ তুমি/ আজ তুমি কাচপাত্রে কৌতুক আগারে।’ সোসাইটির জাদুঘরের কথা কালীপ্রসন্ন সিংহ থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ সবাই জানতেন। হুতোম বলেছেন-‘পাড়াগেঁয়ে বড় মানুষ শহরে এলেই প্রথমে দালাল পেশ হন। …দালাল সাতপুকুরের বাগান, এসিয়াটিক সোসাইটির মিউজিয়াম- বালির ব্রিজ- বাগবাজারের খালের কলের দরজা- রকমওয়ারি বাবুর সাজানো বৈঠকখানা- ও দুই এক নামজাদা বেশ্যার বাড়ি নিয়ে বেড়ান।’ আবার পরমহংসদেব একদিন দেহ ও আত্মা আলাদা কিনা সে প্রসঙ্গে আলোচনা করছিলেন। বললেন, ‘অনেকদিন হল- আমার তখন খুব ব্যামো। কালীঘরে বসে আছি। মা-র কাছে প্রার্থনা করতে ইচ্ছে হল।

…বল্লুম, মা হৃদে বলে তোমার কাছে ব্যামোর কথা বলতে। আর বেশী বলতে পাল্লাম না। বলতে বলতে অমনি দপ করে মনে এল সুসাইট (Asiatic Society Museum)। সেখানকার তারে বাঁধা মানুষের হাড়ের দেহ (skeleton)। আমি বল্লুম, মা তোমার নাম গুণ করে বেড়াবো- দেহটা একটু তার দিয়ে এঁটে দাও, সেখানকার মত।’
ফিরে আসা যাক ১৮১৪ সালে। জাদুঘরের নান্দীপাঠ শুরু করতে হয় এক বন্দির বন্দনা দিয়ে। বন্দির নাম ডাক্তার ন্যাথানিয়েল ওয়ালিচ। জাতে দিনেমার। পেশা সার্জারি। নেশা দুষ্প্রাপ্য গাছগাছালি সংগ্রহ করা। ১৮০৭ সালে ডেনমার্কের কোপেনহাগেন থেকে ভারতে নিজেদের উপনিবেশে ভাগ্যের সন্ধানে এলেন। একুশ বছরের যুবক। পৌঁছলেন শ্রীরামপুর বা ‘ফ্রেডারিশনাগোর’-এ।

বছরখানেক বাদে ইংল্যান্ড এবং ডেনমার্কের মধ্যে যুদ্ধ বাধল। তার আঁচ লাগল ভারতে। ইংরেজের হাতে অবরুদ্ধ হল ডেনমার্কের কলোনি ফ্রেডারিশনাগোর। ব্রিটিশের ‘প্রিজনার অফ ওয়র’ হিসেবে অবরুদ্ধ হয়ে বসে থাকতে থাকতে তিনি স্বপ্ন দেখেন একটি সংগ্রহশালার। কেননা তাঁর দেশের প্রথম জাদুঘর ন্যাশনালম্যুজিত-এর জন্ম হয়েছে বছর খানেক আগে, যখন তিনি বিদেশে পাড়ি দিলেন। হয়তো ইচ্ছে ছিল সেখানেই তিনি যোগ দেবেন কর্মসূত্রে। পরে একদিন বন্দি নাথান মুক্ত হলেন তাঁর পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ। সুযোগ পেয়ে তাঁর মনোবাসনা জানিয়ে একটি চিঠি লিখলেন এশিয়াটিক সোসাইটির কর্তৃপক্ষের কাছে, একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানালেন। তিনি নিজে অবৈতনিক কিউরেটর হিসেবে স্বেচ্ছাশ্রম দেবেন, আর দেবেন তাঁর সংগ্রহের দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়ার ডুপ্লিকেটগুলো। সোসাইটি অনুরোধ রাখলেন ২ ফেব্রুয়ারি ১৮১৪-র চিঠির সূত্রে। তাঁরা অবশ্য ১৭৯৬ থেকেই যে সব জিনিস সংগৃহীত হচ্ছে তার একটি আশ্রয় তৈরির কথা ভাবছিলেন। নাথানের অনুরোধ তাঁদের অনুপ্রেরণা জোগাল। কোনও ভারতীয় নয়, প্রভু ইংরেজ নয়, একান্ত অচিন এক ওলন্দাজ বিজ্ঞানী একটি নতুন ভাবনার ভিত গাঁথলেন এদেশের মাটিতে। জন্ম নিল এদেশের জাদুঘরের প্রথম কদম ফুল!

একথা সত্যি যে, জাদুঘরের শৈশবে কিংবা আদিপর্বে বিদেশিরাই তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। নানা মূল্যবান উপহার দিয়ে এঁরা বিচিত্র এবং বিভিন্ন প্রকার উপাদানে জাদুঘরকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন ধীরে ধীরে। প্রতিষ্ঠার দু’বছরের মধ্যে ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে একশো চুরাশি রকমের শিল্পদ্রব্য ও কারিগরি বস্তু এল দান হিসেবে। ওয়ালিচ নিজেই দিয়েছিলেন বিয়াল্লিশটি আর রবার্ট হোম নামে সেকালের এক বিশিষ্ট শিল্পী দান করেন বিরাশিটি শিল্পদ্রব্য। মোট সাতাশজন ইউরোপীয় দাতার মধ্যে উইলিয়াম কেরি, এইচ টি কোলব্রুক, এইচ এইচ উইলসন যেমন ছিলেন তেমনই ছিলেন ছ’জন ইংরেজ মহিলা। সূচনাপর্বে অন্য যাঁদের দানে মিউজিয়াম সমৃদ্ধ হচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে ক্যাপ্টেন ডিলন, ব্রায়ান হজসন, কর্নেল কলিন ম্যাকেঞ্জি এবং ড. টাইটলারের নাম উল্লেখযোগ্য। ম্যাকেঞ্জি ১৮১৫ সালের ৫ এপ্রিল জাদুঘরের জন্য নিয়ে এলেন নয়নাভিরাম বোধিসত্ত্ব মূর্তি; গুপ্তযুগের শিল্প, বাদামি বেলে পাথরে তৈরি।

১৮২৮ সালে বেরল জাদুঘরের প্রথম ছবির বই ‘এশিয়াটিক মিউজিয়াম ইলাস্ট্রেটেড, পার্ট ওয়ান’: মিউজিয়ামের নানান সংগ্রহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং পাতা জোড়া ছবি। ছাপা হল লিথোগ্রাফিক পদ্ধতিতে, সেকালের বাঙালিরা যাকে বলতেন, ‘পাতুরিয়া ছাপা’। এনগ্রেভিং করেছিলেন এই নগরেরই বাসিন্দা ডি. স্যাভিঞ্যা এবং জর্জ পিয়ারসন। মোট বাহান্ন রকম দানের মুখবন্ধ হিসেবে লেখা হল- ‘হিন্দুস্থানের নেটিভদের ব্যবহার করা নানা ধরনের সুন্দর ও মনোহারি যন্ত্রপাতি ও কারিগরি জিনিসের মডেল।’ দাতা মিস মার্গারেট টাইটলার।

তবে জাদুঘর প্রতিষ্ঠার আঠারো বছর বাদে ইউরোপীয় ব্যূহ ভেদ করে প্রবেশ করলেন ভারতীয়রা। ১৮৩২ সালের এক তালিকায় মোট ঊনপঞ্চাশ জন দাতার মধ্যে ছ’জন ভারতীয়ের নাম পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে শিরোমণি রামকমল সেন- কেশবচন্দ্র সেনের পিতামহ। এছাড়া ছিলেন মহারাজা কালীকৃষ্ণ বাহাদুর, শোভাবাজারের রাজা রাধাকান্ত দেব, মথুরানাথ মল্লিক এবং শিবচন্দ্র দাস- এই পাঁচ বঙ্গসন্তান এবং সারঘানার বেগম সমরু। বেগম সাহেবা সেদিন দান করেছিলেন সুলতানি আমলের কয়েকটি রৌপ্য এবং তাম্রমুদ্রা। মহারাজা কালীকৃষ্ণ দিয়েছিলেন রান্নার থালা-বাসন, পান-দান এবং একটি কেটলির মডেল। রাধাকান্ত দেব দিলেন একটি বিচিত্র পারাবত-‘এ ইয়ং পিজিয়ন উইথ টু হেডস’। মথুরানাথের দান একটি মালয়ী ছোরা আর শিবচন্দ্র উপহার দিলেন এক গোর্খা ঝান্ডা- একটি লৌহদণ্ড, তার সঙ্গে অনেক রিং বাঁধা। আর রামকমলবাবু কী দিয়েছিলেন? তিনি দিলেন গ্রামীণ বঙ্গসংস্কৃতির উপকরণ-গীতবাদ্যের একচল্লিশটি সরঞ্জাম, চড়ক পুজোর নানা উপকরণ, যার সংখ্যা ষোলো, একটি মাদার গাছের পতাকা এবং বিশ্বাস করুন, একটি শুঁটকি মাছ- ‘এ ড্রায়েড ফিশ’।

বাদ্যযন্ত্রের তালিকায় ছিল ঢোল, ঢোলক, তাশা, ডাগর, জরখাই, কাড়া, রাম আকাড়া, ধামসা, ছোট ঢোল, টিকারা, ডমরু, মাদল, পাখোয়াজ, জয়ঢাক, মৃদঙ্গ, একজোড়া তবলা, দম্পা, দারা, জোড়া খঞ্জনি, ডুবডুবি, বীণ সেতার, সেতার, সারং সারিন্দা, বার্ক, ভোরুং, ভেরি, বংশী, দু’টি সানাই, একজোড়া করতাল, ঝাঁজ, একজোড়া মন্দিরা, কাঁসর, ঘণ্টা, শঙ্খ, নূপুর, ঘুঙুর, মোচাং বা বীণা, তূরী, এবং কাঁসি।

আর চড়ক উত্সবের জিনিসগুলো এরকম: বেত্রাসন, পাটের থলে, সূত্রাসন, রতন আসন, বাঁশের আসন, খুঁটি, দশনখী, বাটি, ভারা, বিশেশয়, তিনটি বাঁশ এবং কপালি, চড়ককাঁটা, বেলচা, দুটো নাগপাশ, আঁকশি, বৈরাগীর মাথার ফেট্টি, জামা, পানপাত্র, দণ্ড, এমনকী একটা আস্ত চড়ক গাছ! সম্পূর্ণ নৃতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাদুঘরের সেই আদিপর্বে এই লোককৃষ্টি সংগ্রহ করা হয়েছিল। আর সেই বছরেই মাদাম বেলনোস আঁকছেন তাঁর সেই পরিচিত চিত্র, ‘ফিস্ট অফ দ্য চড়কপূজা’। চড়কের মিছিল সেদিন যেত কালীঘাটে। বাণ-ফোড়া ইত্যাদির শেষে চড়ক আসত বির্জিতালাওয়ের কাছে চৌরঙ্গিতে, আজকের সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের দক্ষিণে। রামকমলের কল্যাণে চড়ক সেদিন ঢুকল চৌরঙ্গির জাদুঘরে। অশেষ গুণসম্পন্ন এই মানুষটি তখন এশিয়াটিক সোসাইটির নেটিভ সেক্রেটারি এবং কালেক্টর, দু’টি পদ সামলাচ্ছেন। প্রথম পদে যোগ দিয়েছেন ১৮৩২-এর ডিসেম্বরে। অন্য এক বাঙালি হেরম্বনাথ ঠাকুর তখন সোসাইটির সহ-গ্রন্থাগারিক।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ন্যাথানিয়েল যেমন জাদুঘরের প্রথম ইউরোপীয় কিউরেটর তেমনই তাঁর পঞ্চাশ বছর পর, ১৮৬৪তে প্রথম বাঙালি কিউরেটর হয়েছিলেন পূর্ণচন্দ্র বসাক, যদিও অস্থায়ীভাবে। সে বছর এক লক্ষ চার হাজার ছ’শো চল্লিশ জন দর্শক এসেছিলেন জাদুঘরে। দৈনিক গড় তিনশো পঁচানব্বই। ১৮৬৬-র জানুয়ারি মাসে আর এক বসাক জাদুঘরের প্রসিডিংস-এ স্থান পেলেন দাতা হিসেবে। তাঁর নাম বাবু গৌরদাস বসাক- মাইকেল মধুসূদনের আবাল্য সুহৃদ, ‘মাই ডিয়ার গৌর’। তিনি এনে দিলেন যশোরের আকাশ থেকে পড়া একটি উল্কাপিণ্ড। সেটি মাটিতে পড়েছিল ১৮৬৫-র মে মাসে।

১৮৮৭ সালে মিউজিয়ামের প্রশাসনে এলেন আর-এক করিত্কর্মা বঙ্গসন্তান- ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। সে বছর এপ্রিল মাসে কারিগরি ও শিল্পদ্রব্য বিভাগের প্রথম সহকারী কিউরেটর হিসেবে যোগ দিলেন তিনি। ১৮৮৮ সালে গ্লাসগোতে জাদুঘরের যে-আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী হয় সেখানে তিনি অনেক কারুকৃতি নিয়ে গিয়েছিলেন। সে যুগে ভারতীয় শিল্পকলার সঙ্গে ইউরোপবাসীকে পরিচিত করিয়ে দিয়ে তিনি এক অসামান্য সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর লেখা প্রদর্শনীর ক্যাটালগ ‘আর্ট ম্যানুফ্যাকচার্স অফ ইন্ডিয়া’ চারু ও কারুকলার এক সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ। অচিরেই তিনি সাহিত্য সাধনা শুরু করেন। প্রত্নবস্তু উদ্ধার নিয়ে একটি প্রসঙ্গ (মাটি খুঁড়ে পাওয়া এক তাম্রফলকের কথা) আছে তাঁর ‘ডমরুচরিত’-এ। ‘ডমরুচরিত’-এর প্রকাশ কাল ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দ। জাদুঘরের কর্মজীবনের পঁচিশ বছর পরেও তাঁর রচনায় এসেছে তাম্রশাসনের অনুষঙ্গ।

আর এক ঐতিহাসিক-সাহিত্যিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পুরাতত্ত্ব বিভাগের ডেপুটি অফিসার ইন-চার্জের দায়িত্বে এসেছেন ১৯১১-১২ সালে। ১৯১৪ সালে জাদুঘরের প্রথম শতবার্ষিকীতেও তিনি এক সক্রিয় অফিসার ছিলেন। ১৯১০ সালে এক্সক্যাভেশন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন জাদুঘরে। এরপর তিনি প্রত্নতত্ত্ব গ্যালারিটি সযত্নে সাজিয়ে দেন। শতবর্ষে চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ১৮১৪-১৯১৪’ নামে জাদুঘরের একটি প্রামাণ্য ইতিহাস সম্পাদনা করেন। রাখালদাস এই সংকলনে পুরাতত্ত্ব বিভাগের ইতিহাস লিখেছিলেন। গ্রন্থে অবশ্য তাঁর নাম নেই। জাদুঘরের ‘মিনিটস বুক’ থেকে এই তথ্যটি উদ্ধার করেছি। ১৯১২ সালে রাজা জর্জের কলকাতা আগমন উপলক্ষে রাখালদাস একটি সুবিন্যস্ত গ্যালারি উপহার দিয়েছিলেন। তার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে একটি রৌপ্য পদক দেওয়া হয়।

জাদুঘরের প্রাচীন একটি নিদর্শনের কুলপঞ্জী নিয়ে সেকালে এক মজার বিতর্ক উঠেছিল, রাখালদাসও তাতে যোগ দিয়েছিলেন। ছিলেন ডি আর ভাণ্ডারকর। জাদুঘরের সংগ্রহে দীর্ঘদিন ধরে রাখা ছিল একটি প্রাগৈতিহাসিক কুঠারের পাথরের ফলা। হঠাত্ আবিষ্কৃত হল সেই নিওলিথিক কুঠার ফলকে কয়েকটি অক্ষর খোদাই করা আছে। এই এক অভূতপূর্ব আবিষ্কারের ঠেলায় ভারতীয় হরফবিজ্ঞান বা প্যালিওগ্রাফির বয়স একেবারে লাফিয়ে পৌঁছে গেল নব্যপ্রস্তর যুগে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে আলোড়ন উঠে গেল। পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা-বিতর্ক চলল। সেই বিতর্ক বিবাদের নিরসন হল অবশেষে। জানা গেল, জাদুঘরের এক নিম্নবর্গের কর্মচারী অবসর বিনোদনের সুযোগে কিছু অক্ষর আরোপ করেছিল প্রস্তর খণ্ডে। কর্মচারীর নাম কাসিমুদ্দিন। একটি পত্রিকা ছবি ছেপে এই প্রত্নতাত্ত্বিক জাগলারির নাম দিল-‘অসভ্যযুগের পাথরের কুঠার-ফলকে আধুনিক কাসিমুদ্দিনের মার্কা’। জাদুঘরের ইতিহাসে এটি এক চমকপ্রদ সংবাদ। সাধে কি রবীন্দ্রনাথ একবার প্রত্নতাত্ত্বিকদের প্রতি বঙ্কিম কটাক্ষ করেছিলেন, এবং কখনও ভারতীয় জাদুঘর দর্শনে আসেননি! আমাদের কাছে অবশ্য রবীন্দ্রনাথের জাদুঘর অদর্শন নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। জাদুঘরের অফিসিয়াল রেকর্ডগুলো নিরুত্তর। ১৮৭৮-এ যখন চৌরঙ্গিতে জাদুঘরের এই নতুন বাড়ির উদ্বোধন হল, তখনও, পাশেই দশ নম্বর সদর স্ট্রিটে বসে যিনি ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ লিখছেন সেই কিশোর কবি কি একবারও এখানে উঁকি দেননি? ১৯২৭-২৮ এ আর্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল মুকুল দে-র কোয়ার্টারে কিছুদিন কাটানোর সময় কি কলাবিভাগের কিপারের সঙ্গে মিউজিয়াম গ্যালারি ঘুরে দেখেছিলেন! এর প্রমাণ অবশ্য খুঁজে পাইনি।

আর এক বাঙালি, তিনি অবশ্য জাদুঘরের সঙ্গে কর্মসূত্রে যুক্ত ছিলেন না, কিন্তু একটি বই লিখেছিলেন ‘আওয়ার্স উইথ নেচার’ বলে। ছোটদের উত্সাহী করার জন্য সেই বইয়ের একটি অধ্যায়ে তিনি জাদুঘরের প্রাণীবিজ্ঞান গ্যালারি নিয়ে বিশদে লিখেছিলেন। ১৬৮ পৃষ্ঠার এই বই প্রকাশিত হয় ১৮৭৭ সালে। এর ছ’নম্বর অধ্যায়ের নাম ‘রাউন্ড দ্য ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’। চিড়িয়াখানার আধিকারিক এই মানুষটির নাম রামব্রহ্ম সান্যাল। তিনি সেখান থেকে মরা পশুপাখি পাঠাতেন জাদুঘরে স্টাফ করে প্রদর্শন করার জন্য। বইয়ের কথায় মনে পড়ল, জাদুঘরের প্রথম বাংলা ভাষার গাইড বইটি প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে স্যার আশুতোষের নির্দেশে। বইটির নাম ‘মিউজিয়ামের পরিচয় পত্র’। সম্পাদনা করেন ড. বি এল চৌধুরী। সেই বছরই প্রবর্তিত হয় জনপ্রিয় বক্তৃতামালা। ১৯১৩-১৪ আর্থিক বছরে যে ছ’টি বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিল তার শেষটি ছিল বাংলাভাষায়-‘বাঙলার সুপেয় জলের মাছ’। সেই বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন ৩৬৩ জন উত্সাহী মানুষ। তাদের মধ্যে ছিল একদল বাঙালি ছাত্র। বাংলা ভাষণ, গ্রন্থরচনা এসব বিষয়ে স্যার আশুতোষ সেদিন যে-উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার প্রশংসা করতে হয় আজও। ১৯১৪-র শতবার্ষিক উত্সবের আগে শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর উপহার দেন তাঁর বাংলা ব্যান্ড এবং জাপানি বাদ্য সংগ্রহ। এর আগে ১৮৭৪-৭৫ সালে যতীন্দ্রমোহন এবং রানি স্বর্ণময়ীর সংগ্রহ এসেছে জাদুঘরে। জাদুঘরের জন্য প্রত্নসংগ্রহ করে আর এক বাঙালি খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন, তাঁর নাম পূর্ণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে বিহার, কর্নাটক এবং উত্তরপ্রদেশের প্রত্নস্থল থেকে আবিষ্কৃত প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন, পোড়ামাটির শিল্প, সিলমোহর তিনি দান করেন এই সংগ্রহশালায়। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে তিনি মিউজিয়ামের অস্থায়ী প্রত্নবিদ পদে যোগ দেন।

মিউজিয়াম প্রশাসনে আরও অনেক বিশিষ্ট বাঙালি তাঁদের নিজস্ব অবদান রেখে গিয়েছেন। ১৮৮৫-তে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রেসিডেন্ট রূপে মিউজিয়ামের অছি পরিষদের সদস্য হয়েছিলেন রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র। পরে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আবার ১৮৮৬তে। অছি পরিষদ ১৮৪৯ সালে রাজেন্দ্রলালকে বলেন এশিয়াটিক মিউজিয়ামের ‘কিউরিওসিটিজ’-এর একটি ক্যাটালগ লিখতে। ১৮৬৮-তে সেটি আবার পরিমার্জিত হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছিল অনেক দ্রষ্টব্যই হারিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির ভাবনা উনিশ শতকের জাদুঘর পরিচালনায় উল্লেখ্য ভূমিকা নিয়েছিল, এঁদের মধ্যে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত অ্যাকাউন্ট জেনারেল হিসেবে রায় বাহাদুর এন সি বসু, (১৯১১), আর্ট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল রূপে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১২-১৩), রায় বাহাদুর রাজেন্দ্রলাল মল্লিক (১৮৬৯), রাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর (১৮৭১ এবং ১৮৮৫) মহারাজ কুমার প্রদ্যোত্কুমার ঠাকুর (১৮৯৬), অমৃতনাথ মিত্র (১৮৮৭), প্রিন্স জাহান কাদের মির্জা (১৮৮৯), ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৯২) প্রমুখ।
প্রশাসনিক রীতিনীতির স্থিরতা না থাকায় একবার জাদুঘর প্রসঙ্গে সংবাদপত্রে বেশ হইচই হয়েছিল। ঘটনাটি ১৮৭৪-এর ১৪ জানুয়ারির। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দি সাহিত্যের জনক ভারতেন্দু হরিশচন্দ্রকে নিয়ে এসেছেন এশিয়াটিকের জাদুঘরে। প্রবেশ পথে বাধা পড়ল। রক্ষীর দল জানাল পা-মোড়া জুতো ও শির-আচ্ছাদন না থাকলে ওরা সংগ্রহশালায় ঢুকতে দিতে পারবে না। বিদ্যাসাগর জানতে চেয়েছিলেন এই মর্মে কর্তৃপক্ষের কোনও লিখিত বিধি আছে কিনা। পরবর্তীকালে ‘ইংলিশম্যান’ এবং ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা দু’টি সম্পাদকীয় মন্তব্যে তীব্রভাবে জানাল এমন ঘটনার নিন্দা করার ভাষাও তাদের জানা নেই। ‘গ্রেট শু কোশ্চেন’ বা ‘মহাজুতা প্রসঙ্গ’ নিয়ে তোলপাড় হল পত্রপত্রিকায়। অক্ষয়কুমার দত্তের ‘সাধারণী’ জানাল, বিফল মনোরথ বিদ্যাসাগর মশাই নাকি চাণক্য শ্লোকের একটি প্যারডি রচনা করে জাদুঘর থেকে নিষ্ক্রান্ত হন। সেটি এই রকম-
বিদ্বত্ত্বঞ্চ জুতত্বং চ নৈব তুল্যং কদাচন।

স্বদেশে পূজ্যতে জুতা বিদ্যা সর্বত্র পূজ্যতে।
এইভাবে ইংরেজ শাসিত ভারতবর্ষে বাঙালির স্বাদেশিকতাবোধ জড়িত এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল জাদুঘর।
‘রাশিয়ার চিঠি’তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘শিক্ষা ব্যাপারকে নানা প্রণালী দিয়ে এরা ছড়িয়ে দিচ্ছে তার মধ্যে একটি হল ম্যুজিয়ম।’ ভারতীয় জাদুঘরও স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিকে যুক্ত করে তৈরি করেছে এক নতুন শিক্ষাক্রম, যার শ্লোগান ‘মিউজিয়াম ইজ ইয়োর ক্লাস রুম’, ‘জাদুঘর তোমার ক্লাস ঘর’। শতবর্ষ আগে এর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ১৯১৪ সালে জাদুঘরের শতবার্ষিক বক্তৃতায়-‘মিউজিয়াম শু্যড বি রিগার্ডেড অ্যাজ অ্যান অ্যাডজাঙ্কট টু দ্য ক্লাসরুম অ্যান্ড লেকচার রুম, অ্যাজ ও ব্যুরো অফ ইনফর্মেশন, থার্ডলি অ্যান ইনস্টিটিউশন ফর দ্য কালচার অব দ্য পিপল’। উদ্দেশ্য ছিল সর্বশিক্ষার উন্মেষ, পরিকল্পিত এক তথ্যভাণ্ডার নির্মাণ এবং সর্বোপরি মানুষের সাংস্কৃতিক রুচির উন্নয়ন। জানি না তার নানাবিধ কার্যক্রম দিয়ে কতটা দিতে পেরেছে এই প্রতিষ্ঠান। অসংখ্য মানুষ এর নানা পর্বে হাল ধরেছেন এই ভারতীয় জাদুঘরের। গত শতকের শেষ দশকে এই সংগ্রহশালায় নিয়োজিত হয়েছে যে-প্রকল্প তাকে এক কথায় ইংরেজিতে বলা যেতে পারে ‘স্ট্রেচ দাই হ্যান্ডস মিউজিয়াম’। কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘সাতবোন’ রাজ্যের সংগ্রহালয়গুলোর সার্বিক পরিবর্তনে হাত বাড়িয়েছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘর। মানুষের সাংস্কৃতিক প্রত্যাশার সঙ্গত দাবিতে।

তবু অনেক উদ্যোগ বাকি থেকে যায় পরিচালন ব্যবস্থায় দূরদৃষ্টির অভাবে, আন্তরিক আগ্রহ এবং যথোপযুক্ত নিয়োগ পদ্ধতিতে নতুন প্রাণসঞ্চারের প্রতি অবহেলায়। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু একসময় আক্ষেপ করেছিলেন, ভারতীয় জাদুঘর এক ‘মরিবান্ড ইনস্টিটিউশন’। সেই সমালোচনা ক্রমে স্তিমিত হয়ে এলেও সাম্প্রতিক অবক্ষয় গ্রাস করে ফেলতে চাইছে ইতিহাস বাড়িটিকে। নব নব উন্মেষশালিনী প্রতিভা কই? তরুণ মনকে আকর্ষণ করার আরও উদ্যোগ চাই। দুই শতাব্দ শেষে তৃতীয় কল্পে পৌঁছবার অঙ্গীকার নিতে হবে তরুণের স্বপ্ন নিয়ে।

এরই মধ্যে গ্রামগঞ্জেও ছুটে বেড়াতে শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর বা চলমান প্রদর্শনী, প্রাচীন নিদর্শনে সাজানো ভারতীয় শিল্প-ইতিহাস। মিউজিও বাস-এ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রতিরূপ বা রেপ্লিকা দিয়ে ভূতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, প্রাণীবিজ্ঞান, কলা, পুরাতত্ত্ব ও উদ্ভিদতত্ত্বের নিদর্শন। ছোট ছোট জাদুঘরের অলিন্দে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ভ্রাম্যমাণ সংরক্ষণাগার। এই সচল ল্যাবরেটরি গ্রামীণ সংগ্রহশালার শিল্পবস্তুর ফার্স্ট এড বা প্রাথমিক চিকিত্সায় নিয়োজিত হয়েছে।
প্রথম মিউজিও বাসে হরপ্পা যুগ থেকে একাদশ শতাব্দির বাংলার মূর্তিকলা স্থান পেয়েছিল। আনন্দবাজার পত্রিকা সেদিন খবর করেছিল, ‘সিন্ধুসভ্যতা বাসে চেপে গ্রামে যাচ্ছে।’ সেই কাগজেরই ‘অল্পবিস্তর’-এর টিপ্পনী-লেখক শিবরাম চক্রবর্তী এক অবিস্মরণীয় মন্তব্য করেছিলেন-‘বিন্দুতে সিন্ধুর স্বাদ’।

নানাসময়ে মিউজিয়াম যে সাহিত্যকে উসকেছে তার কথা আগেই লিখেছি। বহু কবির কবিতায় পাই এর উল্লেখ। কবি সত্যেন দত্তই চারটি কবিতা লিখেছিলেন ‘মমি’, ‘মমির হস্ত’, ‘যক্ষমূর্তি’, এবং ‘জাদুঘর’ শিরোনামে। একটি কবিতায় তিনি কল্পনা করেছেন মমির মানুষটিকে মিশরের রাজসভার প্রধান কবি রূপে। ‘বাম হাতে তার কবিতার পুঁথি/হরিতালে মোড়া মুখ’ ইত্যাদি!
আর আছেন অবনীন্দ্রনাথ। অবনীন্দ্রনাথ একটি কল্পজগত্ তৈরি করেছিলেন ভূত-জাদুঘর বা গুপ্তিঘর নামে। ভূতখানার কিউরেটর এবং তার অ্যাসিস্ট্যান্ট উপদেব উপাধ্যায় এবং প্রভূত সামন্ত কবি-শিল্পী অবনঠাকুরকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন সেই জাদুঘর যা বলতে গেলে ভারতীয় সংগ্রহালয়েরই এক অতীন্দ্রিয় ছায়াপাত। যেখানে ‘বারান্দা দিচ্ছে গান্ধার শিল্পের গন্ধ/ মৌর্য শিল্পের শৌর্য বোঝাচ্ছে/ সারি সারি জানালা দরজা, আঁঠ সাট বন্ধ/ অলিন্দে বারেন্দ্র শিল্পের খাড়া কটা কবন্ধ।’ নটী বেহুলার মেখুলা শাটি, লখিন্দরের মালাইচাকি, লৌহদন্ত মুনির দাঁতন, লক্ষ্মণ সেনের সান্কি ভাঙা, সম্রাট অশোকের গড়গড়ার মুখনল, উপগুপ্তের প্রেমপত্রের কোণ একটুক, মহেঞ্জোদড়োর বেঞ্জোর কান, নারদমুনির পিয়ানোর তার আর সবশেষে মৈপাল রাজার সুখপাল পাল্কিতে চড়ে ফ্যানটাসির জগত্ থেকে বাস্তবে অবরোহণ- বাংলা সাহিত্যে আদত জাদুঘরের অবিস্মরণীয় এক আধাবাস্তব ছায়াপাত!

সময়সারণি বলে, দুশো বছর ধরে এক অনবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতায় এই ইতিহাস-বাড়ি ছায়া ফেলেছে নগরদর্পণে।
সমাজ নামক এক বিশাল জলাধারে পড়েছে তার প্রতিবিম্ব। কুবাতাস সুবাতাসে সেই জলে কম্পন লাগলে প্রাসাদপুরীটির ছায়াতেও ঢেউ উঠেছে পড়েছে। ধ্বনিকে প্রতিধ্বনি সাড়া দিয়েছে অন্তরে বাহিরে। দুই শতকের বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে রঙ্গ দেখাচ্ছে জাদুঘর। (উইকিপিডিয়া )

সূত্র: সংগৃহিত।
তারিখ: মার্চ ২৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ