Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অর্থনীতির গেম চেঞ্জার–৩ এক যুগেই দেশের শীর্ষ কোম্পানি

Share on Facebook

লেখক:শওকত হোসেন; ঢাকা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য এখন অর্থনীতিতে। ৫০ বছরে বাংলাদেশ নামের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ হয়ে উঠেছে চমকেভরা জাদুর বাক্স। সাহায্যনির্ভর বাংলাদেশ এখন বাণিজ্যনির্ভর দেশে পরিণত। তবে যাত্রাপথটা সহজ ছিল না। বড় বড় ঝুঁকি নিয়ে অভিনব পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আমাদের সাহসী উদ্যোক্তারা। এই সাফল্যের পেছনে আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ যেমন ছিলেন, আছেন নীতিনির্ধারকেরাও। মূলত অর্থনীতির এসব অগ্রনায়ক, পথরচয়িতা ও স্বপ্নদ্রষ্টারাই ৫০ বছরে বিশ্বে বাংলাদেশকে বসিয়েছেন মর্যাদার আসনে।
আমরা বেছে নিয়েছি সেই নায়কদের মধ্যে ৫০ জনকে। আমাদের কাছে তাঁরাই অর্থনীতির ‘গেম চেঞ্জার’।

ওয়ালটনের এস এম নজরুল ইসলাম: হাওয়াবদলের কারিগর

তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য। আশির দশকে উত্থান পোশাক খাতের। সত্তরের দশকে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল পাট। রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে পোশাক খাতই টিকিয়ে রেখেছে দেশের অর্থনীতিকে। একসময় কোটাব্যবস্থায় লাভবান হয়েছিল বাংলাদেশ, কোটা উঠে যাওয়ার পরও নিজের অবস্থান আরও সংহত করেছে বাংলাদেশ।

একটা সময় প্রশ্ন ছিল, পোশাক খাতের ওপর অতি নির্ভরতা কতটা বিপদ নিয়ে আসবে অর্থনীতিতে। তখনই আলোচনায় উঠে আসে রপ্তানি বহুমুখীকরণের কথা। সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চলে আসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, ইলেকট্রনিকসসহ কয়েকটি খাতের কথা। এর মধ্যে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও চামড়া খাত সেভাবে এখনো জায়গা নেওয়া যায়নি। জাহাজ নির্মাণ শুরুতে সম্ভাবনার কথা জানালেও উদ্যোক্তারা তা ধরে রাখতে পারেননি। আর ইলেকট্রনিকস খাত তো পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। কেবল সস্তা শ্রম থাকলেই এই শিল্প গড়ে উঠবে না। এর সঙ্গে প্রয়োজন প্রযুক্তির ব্যবহার, বিনিয়োগ, সাহস ও দূরদৃষ্টি।

সারা বিশ্বেই ইলেকট্রনিকস খাতে রয়েছে বড় বড় নাম। এসব ‘জায়ান্ট’দের ভিড়ে জায়গা করে নেওয়া প্রায় দুঃসাধ্য। আর আছে চীনের সস্তা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার ক্ষমতা। বাংলাদেশ ইলেকট্রনিকস শিল্পে জায়গা করে নেবে দুই দশক আগেও তা অনেকের কল্পনায় ছিল না। সেই কল্পনাকেই বাস্তব করেছে ওয়ালটন। আর এ ক্ষেত্রে প্রধান মানুষটি ছিলেন এস এম নজরুল ইসলাম, ওয়ালটন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।

এস এম নজরুল ইসলামের বাবা ছিলেন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। পিতার সঙ্গেই তিনি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। করতেন ঠিকাদারি ব্যবসা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আলাদা ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৭৭ সালে বড় ছেলে এস এম নুরুল আলম রেজভীর নামে রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্স নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যার সংক্ষিপ্ত নাম ছিল আরবি গ্রুপ। সেখান থেকেই শুরু। শুরুতে টেলিভিশন আমদানি করত তারা। পরে নিজেরাই উৎপাদন শুরু করে। সাফল্য আসতে শুরু করলে আরবি গ্রুপ নাম পাল্টে হয়েছে ওয়ালটন। আর এখন তো ওয়ালটনের বিশাল সাম্রাজ্য। ইলেকট্রনিকস খাতের সম্ভাবনার কথা দুই দশক ধরেই বলা হচ্ছিল। এই সম্ভাবনাকে প্রমাণ করেছে ওয়ালটন। সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর একটি শিল্পে বাজার দখল করে অর্থনীতির ধারাই বদলে দিয়েছে ওয়ালটন।

গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এস এম নজরুল ইসলাম মারা যান ২০১৭ সালে। ফলে এখন এটি পাঁচ ভাইয়ের ওয়ালটন। বর্তমান চেয়ারম্যান বড় ছেলে এস এম নুরুল আলম। পরিচালক পদে থাকা বাকি চার ভাই হলেন এস এম শামসুল আলম, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম মাহবুবুল আলম ও এস এম রেজাউল আলম। আর পরের প্রজন্মের তিন পরিচালক এস এম মনজুরুল আলম, তাহমিনা আফরোজ ও রাইসা সিগমা।

রেজভী অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রতিষ্ঠা ১৯৭৭ সালে। তবে ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাকাল ২০০৮ সালে, ফ্রিজের উৎপাদন দিয়ে শুরু। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এখন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। কোম্পানির বাজার মূলধন ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার, বার্ষিক আয় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা আর রপ্তানি আয় ৪ কোটি ডলার।
ওয়ালটন নামটি এসেছে ‘উইন্ড অব অলটারেশন’ থেকে। বাংলায় বলা যায় পরিবর্তনের হাওয়া। বাবা এস এম নজরুল ইসলাম ও তাঁর পাঁচ সন্তানের স্বপ্ন ছিল দেশের শিল্পে পরিবর্তন আনতে হবে, হাওয়া বদল করতে হবে। এই হাওয়াবদলের কাজটিই তাঁরা করে চলেছেন।

যেভাবে পাঁচ ভাইয়ের স্বপ্নপূরণ

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম মুর্শেদ। ১২ বছর আগে প্রকৌশলীর চাকরি নিয়ে ঢুকেছিলেন ওয়ালটনে। বাজার মূলধনের দিক থেকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে ওয়ালটন। এই কোম্পানির সবচেয়ে কম বয়সী এমডির মুখ থেকেই শুনব ওয়ালটনের অর্থনীতি বদলে দেওয়ার গল্প।

ব্র্যান্ড ওয়ালটন হওয়ার আগে এর নাম ছিল আরবি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। ১৯৭৭ সালে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন কিন্তু অন্য একটা ব্যবসা ছিল। সেখান থেকে ধরন পাল্টে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ব্যবসা শুরু। ভিন্ন কিছু করার ভাবনাটা একটা রূপ লাভ করে ১৯৯৯ সালে। আর ২০০০ সাল থেকে ইলেকট্রনিকস ব্যবসা শুরু। ইলেকট্রনিকস পণ্য দেশেই উৎপাদন করাটা কিন্তু সহজ নয়। ব্যবসাটি বোঝার জন্য শুরুতে উদ্যোক্তারা টেলিভিশন, ফ্রিজ, শীতাতপযন্ত্র আমদানি করা শুরু করেন। তখন থেকেই গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ারও (আরঅ্যান্ডডি) শুরু। সেই গবেষণার ফল হিসেবে ২০০৭ সালে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের নিবন্ধন নেওয়া হয়। আর আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার অদূরে চন্দ্রায় জমি কিনে কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৮ সালে। ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির জন্ম সেখানেই।

ওয়ালটনের গল্পটাই হচ্ছে মূলত পাঁচ ভাইয়ের স্বপ্নপূরণের গল্প। পাঁচ ভাইয়ের স্বপ্নই ওয়ালটনকে ইলেকট্রনিকস পণ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে। ইলেকট্রনিকস পণ্যে বাংলাদেশ ছিল আমদানিনির্ভর। নামীদামি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডে বাজার ছিল ভরা। ১২ বছরেই ওয়ালটন যে কেবল অভ্যন্তরীণ বাজার দখল করেছে তা-ই নয়, বরং রপ্তানিও শুরু করেছে।

শুরুর গল্প

প্রথম দিককার একটা গল্প বলি। কারিগরি ত্রুটির কারণে একদম শুরুতেই বিক্রি হওয়া প্রায় দুই শ ফ্রিজ ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল। আমাদের প্রকৌশলীরা তখন নতুন। তাঁরা গবেষণা করেছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ফ্রিজ তৈরির কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। তারপরও শুরুর দুই শ ফ্রিজে সমস্যা দেখা দেয়। তবে পাঁচ ভাইয়ের সাহস ছিল। তাঁরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, কোনো খারাপ পণ্য বাজারে ছাড়া হবে না। ফলে প্রতিটি ফ্রিজ বলতে গেলে কোলে করেই ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

আসলে শুরু থেকেই উদ্যোক্তা পাঁচ ভাই ধৈর্য ধরে লেগে ছিলেন বলেই ওয়ালটন ফ্রিজের বাজারে সফলভাবে ঢুকতে পেরেছে। এরপর ধীরে ধীরে টেলিভিশন, শীতাতপযন্ত্র বা এয়ারকন্ডিশন, ওভেন, রাইসকুকারের মতো ব্যবহার্য অন্যান্য সামগ্রী (হোম অ্যাপ্লায়েন্স) উৎপাদনে যায় ওয়ালটন। আর এখন ওয়ালটনের বড় পণ্য হচ্ছে ওয়াশিং মেশিন ও লিফট। আমরা কিন্তু শুরুর দিকে এই দুই পণ্য নিয়ে কাজ করিনি। কারণ, আস্তে আস্তে আমরা শিল্পটাকে তৈরি করছিলাম। ফলে লিফটের মতো পণ্যও আমরা এখন বাংলাদেশে তৈরি করছি, যা ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর।

বাজারে অবস্থান

একটা সময় ইলেকট্রনিকসে চীনা পণ্যে ভরপুর ছিল বাংলাদেশের বাজার। আর এখন ফ্রিজের বাজারের ৭০ শতাংশই ওয়ালটনের দখলে। এ ছাড়া টেলিভিশনের বাজারের ৩৫ শতাংশ, এয়ারকন্ডিশনের প্রায় ৪০ শতাংশ বাজার ওয়ালটনের। এটা ঠিক টেলিভিশনের বাজার আমরা পুরোপুরি দখল করতে পারছি না। টেলিভিশনের বাজার এতটাই অনানুষ্ঠানিক বা গ্রে মার্কেটের দখলে যে এখান থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। টেলিভিশনে স্টিকার বা লোগো লাগানো খুব সহজ। কোনো এক জায়গা থেকে যেকোনো মানের একটা টেলিভিশন এনে একটি লোগো লাগিয়ে দিলেই হয়। সুতরাং টেলিভিশনের বাজারটা এখনো চ্যালেঞ্জিং আমাদের জন্য।

এয়ার কন্ডিশনের (এসি) বাজারে আমাদের অবস্থান ভালো। মাত্র তিন বছরেই আমরা বাজারের শীর্ষে চলে এসেছি। শব্দে নিয়ন্ত্রণ করা যায় (ভয়েস কনট্রোলড) এমন এসি আমরা বাজারে নিয়ে এসেছি। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা বাংলায় কথা বলাব। অর্থাৎ বাংলায় ভয়েস কনট্রোলড এসি বাজারে আনব।

এই হচ্ছে মূলত ওয়ালটনের ইতিহাস। ওয়ালটনের বাজার মূলধন এখন ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার। আর এখন ওয়ালটন হাইটেকের বার্ষিক আয় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা) কাছাকাছি। আর লক্ষ্য হচ্ছে আমরা এই আয় ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০০ কোটি ডলার এবং ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৫০০ থেকে ৭০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। আর আমরা যদি তা করতে পারি তাহলে ওয়ালটন হবে আয়ের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষ ৫টি ব্র্যান্ডের একটি।

মান নিয়ন্ত্রণ

যেসব ব্র্যান্ড সারা পৃথিবীতে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত, তাদের সঙ্গে শুরু থেকেই আমাদের যোগাযোগ ছিল। তাদের কুলিং প্রকৌশলী, ডিজাইন প্রকৌশলী, স্ট্রাকচারাল প্রকৌশলীদের সঙ্গে আমাদের একটা সহযোগিতার সম্পর্ক ছিল। আমরা কখনোই চাইনি যে কেউ বলুক বাংলাদেশের পণ্যের মান ভালো না। আমরা সব সময়েই আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে চেয়েছি। তাই শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহায়তা নিয়েছি। ‘কোয়ালিটি ফার্স্ট’ এটি আমরা প্রথম থেকেই নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এ কারণেই চার বছর আগে একটি বড় ব্র্যান্ডের কুলিং বিভাগের প্রধানকে আমরা নিয়োগ দিয়েছি। আরেকটি বড় ব্র্যান্ডের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগের প্রধানকে নিয়ে এসেছি। মান ঠিক রাখার জন্য ‘কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স’ নামে আমাদের একটি বিভাগ আছে, তাদের বাইরে নিয়ে গিয়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পাশাপাশি ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টেলিজেন্স’ নামেও আমাদের একটি টিম আছে। পাঁচ বছর পরে, ১০ বছর পরে বিভিন্ন পণ্যে নতুন নতুন কী যুক্ত হবে, এটা নিয়েই তারা কাজ করে। একটা সময় ছিল ইউরোপ-আমেরিকায় যা হয়, এই উপমহাদেশে আমরা তা পাঁচ বছর পরে পেতাম। এটা যাতে আর না হয়, সেটা ঠিক করাই ‘ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টেলিজেন্স’ বিভাগের কাজ।

আমাদের প্রকৌশলীদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে তারা নিজের হাতে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এত এত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ভেতরে আছে, যা এই উপমহাদেশে কমই আছে। ছোট-বড় ১০ হাজার যন্ত্রপাতি আছে আমাদের কারখানায়। সুতরাং কাজ শেখার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর পাবেন না তাঁরা। আমি নিজেই একজন প্রকৌশলী। এসি প্ল্যান্ট আমার নিজের হাতে করা। প্রতিটি যন্ত্রপাতিই আমাদের প্রকৌশলীরাই বসিয়েছেন। এমনকি আমরা যে কম্প্রেসর প্ল্যান্টটা ২০১৭ সালে কিনে এনেছি, বিযুক্ত যন্ত্রপাতি এনে দেশে তা স্থাপন করেছেন দেশীয় প্রকৌশলীরাই। দুই শ প্রকৌশলী টানা তিন মাস কাজ করেছেন বিদেশে, তারপর দেশে আরও টানা তিন মাস কাজ করে এই প্ল্যান্ট বসিয়েছে। বিশ্বের মাত্র ১৫টি দেশ কম্প্রেসর বানায়, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আর দক্ষিণ এশিয়ার অষ্টম দেশ হিসেবে কম্প্রেসর বানাচ্ছে বাংলাদেশ। সুতরাং এ ধরনের শিল্প যদি দেশেই থাকে, তাহলে দেশ থেকে মেধা পাচারও হবে না। আমরা জোর গলায় বলি, বাংলাদেশের যদি উন্নয়ন দেখতে চাও, তাহলে ওয়ালটনে চলে যাও। এখন ৭০০ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে ওয়ালটনের কারখানা। বিশাল জায়গায় ৩০টি কারখানায় ৫৪ ধরনের পণ্য উৎপাদিত হয়। আর মডেল আছে এক হাজারেরও বেশি।

আমরা কর্মকর্তা বা কর্মচারী বলি না, বলি ওয়ালটন পরিবার। এই পরিবারের সদস্য এখন ৩০ হাজার। এই ৩০ হাজার পরিবারের তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা আছে কারখানার মধ্যেই, আর দুবেলা নাশতা। সুতরাং বাজার করা বা রান্নার কোনো চিন্তা করতে হয় না। আমাদের চাওয়া হচ্ছে খাবারের কোনো চিন্তা নেই, সুতরাং কাজটা সবাই মনোযোগ দিয়ে করুক।
বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে নতুন ভাবনা

আমরা অটোমোবাইল বা গাড়ি উৎপাদনে যেতে চাচ্ছি। আসলে আমরা চাচ্ছি আমরাই প্রথম বাংলাদেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ইলেকট্রনিক ভেহিকেল তৈরি করব। এটা এখনো পরিকল্পনা পর্যায়ে আছে। পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদন দিয়েছে। আমরা গবেষণা করছি, সহযোগিতাও খুঁজছি। সময় লাগবে। হুটহাট করে নেমে ব্র্যান্ডের বা দেশের ক্ষতি করতে চাই না।

রপ্তানির সম্ভাবনা

আমরা রপ্তানির প্রতি নজর দিয়েছি। গত আর্থিক বছরে আমাদের রপ্তানি ছিল ১৪ লাখ ডলার। আর এই অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ডলারের। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে হবে ৫ কোটি ডলার। আর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০২৩ সালে রপ্তানি ১০ কোটি ডলারে, আর ২০৩০ সালে ১০০ কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়া। বর্তমানে আমরা সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করছি টেলিভিশন। ওয়াশিং মেশিনও রপ্তানি হচ্ছে। পাশের দেশ ভারতের বাজারে এসি ও ওয়াশিং মেশিন যাচ্ছে নিয়মিতভাবেই। আমাদের পণ্যের চাহিদা এখন প্রচুর। অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করতেই আমরা হিমশিম খাচ্ছি। আমরা তুরস্কে একটি মেলায় অংশ নিয়েছিলাম। সেই মেলার পরে যে পরিমাণ আদেশ পাচ্ছি, তাতে আরেকটি কম্প্রেসর প্ল্যান্ট বসানোর কথাও ভাবছি।

নিজের গল্পটাও বলি

বিশেষ কিছু না। আমি ওয়ালটনে যোগ দিয়েছিলাম ২০১০ সালে। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (আইইউটি) থেকে যান্ত্রিক প্রকৌশল বা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিগ্রি নিই। আমাদের কনভোকেশন হয় ৩ ডিসেম্বর, আর ওয়ালটনে যোগ দিই ২০ ডিসেম্বর। এই ১৭ দিনই কেবল বেকার ছিলাম। আমি কাজ শুরু করেছিলাম এসি বিভাগের গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) বিভাগে। এক জায়গায় বসে নির্দিষ্ট একটি কাজ করতে চাইতাম না। বিভিন্ন জায়গায় যাব, সবার সঙ্গে কথা বলব, নানা ধরনের কাজ করব—এটাই ছিল আমার চাওয়া। তখন আমার অনুরোধে উৎপাদন অর্থাৎ ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে আমাকে পাঠানো হলো। সেখানে নানা ধরনের কাজ হয়। সারাক্ষণই কাজ চলে, নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, সমাধান করতে হয়, মেশিনে সমস্যা হলে তা ঠিক করতে হয়। আসলে সবকিছুর কেন্দ্রেই হচ্ছে এই উৎপাদন প্ল্যান্ট। তিন বছর পরে আমি ফ্রিজ বিভাগে চলে আসি।

এরপর তৎকালীন এমডি আমাকে ব্যবসা কৌশল বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়ে এলেন। এটা ছিল আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট। অর্থাৎ আমাকে উৎপাদন এবং ব্যবস্থাপনা—দুই দিকটিই দেখতে হবে। কারখানা ও করপোরেটের মধ্যে একটা সংযোগের কাজ আমাকে দেওয়া হলো। এখানে আসার পরে বিক্রি, বিপণন, অর্থায়ন, হিসাব, কৌশল—সবকিছু নিয়েই আমার ধারণা তৈরি হলো। এরপর ২০১৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ওয়ালটন। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইন অনুযায়ী মালিক ও পরিচালনা আলাদা করতে হয়। ফলে মূল উদ্যোক্তা পাঁচ ভাই এবং পরের প্রজন্মের তিনজন পরিচালনা পর্ষদে চলে গেলেন। ২০১৯ সালে আমি অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাই। আর ২০২০ সালের অক্টোবরে এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আমি কাজটি উপভোগ করছি। পরিচালনা পর্ষদ আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে। আর আমি স্বাধীনতা দিয়েছি সবাইকে। আমার কাজ ভালো-মন্দ দেখা, পরিকল্পনা করা। এখানে আসলে সবাই সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাজ করে। আমিও এভাবে কাজে বিশ্বাসী।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ নভেম্বর ১১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ