Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

অলৌকিক মুদ্রার খোঁজে এবং প্রতারিত (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:শেখ সাবিহা আলম।

নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে প্রস্তরখণ্ডের ভেতর ‘অলৌকিক’ বস্তুর কথা প্রথম শুনেছিলেন জনৈক মি. এন। প্রস্তরখণ্ডটির বাইরের দিকটা ধাতুর মতো দেখতে। যাঁর হাতে ছিল, তিনি বলেছিলেন অলৌকিক এই বস্তুর এমনই গুণ যে এটা চালকে আকর্ষণ করে। হাজার কোটি টাকা দাম। এরপর থেকে জনৈক মি. এন আছেন সেই বস্তুর সন্ধানে।

যাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। সে কারণেই ছদ্মনামের আশ্রয় নেওয়া। সেই প্রস্তরখণ্ডটার পরে কী হলো? যা তিনি খুঁজছিলেন তা কি পেলেন?

জনৈক মি. এন বললেন, ‘এসব বস্তু আসলে খুবই স্পর্শকাতর। মালিক একটা স্টিলের সিন্দুকে রেখেছিলেন ওটা। ঢাকা থেকে একটা দল গিয়েছিল ওটা কিনতে। সিন্দুক খুলে তাঁরা দেখেন প্রস্তরখণ্ডের গায়ের রং বদলে গেছে, জিনিসটা মাটির। ভেতরে কিছু পাওয়া যায়নি।’

জনৈক মি. এন জানান, অলৌকিক এই বস্তুর উৎস ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় উপমহাদেশে বসানো ম্যাগনেটিক পিলার বা বর্ডার পিলার। এগুলো বেচাকেনার আলাদা লোক আছে। পিলারের ভেতরের গঠনটা এমন, একেবারে শেষের ধাপে তিনটি উজ্জ্বল হলুদ রঙের বোতল আছে। সেই বোতলের ছিপির ওপর আছে কিছু মুদ্রা। অলৌকিক ক্ষমতা মূলত ওই মুদ্রার। বোতলগুলোও অলৌকিক ক্ষমতাধর, ভেতরে পানি থাকলে নিজে নিজেই ফুটতে থাকে। বাড়তি তাপ দিতে হয় না।

দেখেছেন কখনো উজ্জ্বল হলদে রঙা বোতল কিংবা মুদ্রা, এমন প্রশ্নে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলেন জনৈক মি. এন। তবে সেটা পিলারের ভেতর থেকে তাঁর সামনে বের করা নয়, যাঁরা বেচাকেনা করেন তাঁরা কখনো বোতল, আবার কখনো মুদ্রা দেখিয়েছেন। ইন্টারনেটে ভিডিও–ও আছে। সেগুলো অমূল্য কিনা তা জনৈক মি. এন পরীক্ষা করেননি, কেউ কিনে ভাগ্য বদলেছেন, এমন চাক্ষুষ প্রমাণও নেই।

তারপরও জনৈক মি. এন কয়েকজনের সঙ্গে মিলে অমন একটি পিলারের বায়না করেছিলেন। তাঁর সঙ্গীদের মধ্যে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা ‘কোটি’ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন কয়েক দশক ধরে। ম্যাগনেটিক পিলার বা বর্ডার পিলার পাননি, কয়েক বছর আগে মারা গেছেন।

তিনি নিজে কত টাকা খরচ করেছেন, সেটা পরিষ্কারভাবে বলেননি। লাখ দশেক টাকার মতো, এমনটাই বললেন। তবে এখন এসে তাঁর মনে হচ্ছে, তিনি প্রতারকের পাল্লায় পড়েছিলেন। অল্প কয়েক দিন বাদে আরেকটা সূত্র থেকে পেতে পারেন এ আশায় আছেন।

জনৈক মি. এন একা নন। এ আশায় আরও অনেকের ৩৫ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত খরচের খবর আছে ভুক্তভোগীদের স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।

বছরখানেক আগে এক শিল্পপতি এ চক্রের পাল্লায় পড়ে খুইয়েছিলেন দেড় কোটি টাকা। পিবিআই ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলছিলেন কীভাবে চক্রটিকে শনাক্ত করেছিলেন তাঁরা। আর ঠিক কী কৌশল অনুসরণ করেছিলেন প্রতারকেরা।
‘অলৌকিক মুদ্রা কিনবে নাসা’

ভুক্তভোগী ঝিনাইদহ সদর থানায় বছর দেড়েক আগে ৪২০ ধারায় মামলা করেছিলেন। বাদী চান না তাঁর নাম প্রকাশ হোক। পুলিশের বয়ানে তাঁর নাম জনৈক মি. বি। তিনি একজন শিল্পপতি। কত বড় ব্যবসায়ী, তা বোঝাতে তিনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন করে থাকেন, এটুকু বলেই থেমেছেন তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা।

মামলার নথিপত্র ও তদন্তে ভুক্তভোগী যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, সেভাবেই প্রথম আলোকে বলেছেন ঝিনাইদহে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান। ঘটনাটা ছিল এমন।

জনৈক মি. বি এ মামলায় যাঁদের আসামি করেন, তাঁদের সঙ্গে পরিচয় আট–দশ মাসের। তাঁদের একজনের নাম ‘জবা’। জবা বলেন, তিনি ধনাঢ্য পরিবারের ছেলে, বেশ কিছুদিন আমেরিকায় ছিলেন। দেশে ফিরে ব্যবসা–বাণিজ্য করছেন।

খুব দ্রুতই জনৈক মি. বির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন ‘জবা’। কথায় কথায় একদিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসায় কর্মরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন বিজ্ঞানী আছেন। ড. জামান নামের ওই বিজ্ঞানী পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা করেছেন। এখন মার্কিন নাগরিক। তিনি বাংলাদেশে এসেছেন ব্রিটিশ আমলের অলৌকিক মুদ্রার খোঁজে। ওই একটি মুদ্রায় এমন এক দুর্লভ ধাতু আছে, যা নাসার ১০০ বছরের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম। নাসা ওই এক মুদ্রার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দিতে রাজি আছে।

এরপর জবা বলেন, ঝিনাইদহ সদরে লিটন ওরফে সালাম নামের এক ব্যক্তি আছেন। তিনি এ মুদ্রার সন্ধান জানেন। তবে এ মুদ্রা এখন দেশে নেই। আছে ভারতে। ১০ কোটি টাকা খরচা করলে মুদ্রা পাওয়া যাবে। ওই ‘পার্টির’ (বিক্রেতা) যাওয়া–আসার কিছু খরচাপাতি আছে।

ড. জামানের কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু সমস্যা হলো নাসা তাঁকে যে টাকাটা দেবে, সেটা তিনি কোন ব্যাংক হিসাবে গ্রহণ করবেন। এ দেশে তাঁর তিন কুলে কেউ নেই, তাঁর নিজেরও কোনো ব্যাংক হিসাব নেই।

জনৈক মি. বির কাছে সাহায্য চান তিনি। অত টাকার ঝুঁকি নেবেন কি না, দ্বিধায় পড়েন শিল্পপতি। ড. জামান বুঝতে পেরে বলেন, ৫০০ মিলিয়ন ডলারের অর্ধেক তাঁর, অর্ধেক জনৈক মি. বির। এবার সানন্দে রাজি হয়ে যান তিনি।

ঘটনার এ পর্যায়ে যুক্ত হন সালাম ওরফে লিটন। তিনি বলেন, মুদ্রা আছে ভারতে। তাঁরা মুদ্রা যাচাই করে নেবেন। হস্তান্তরের কাজটা হবে সাতক্ষীরার একটা রিসোর্টে। এর মধ্যে একজন বিদেশিকেও হাজির করেন তাঁরা। বলেন, রাশিয়া থেকে আসা ওই ব্যক্তি মুদ্রা বিশেষজ্ঞ।

বায়না উপলক্ষে এবার সালাম পাঁচ লাখ টাকা চান। কদিন বাদেই হাজার কোটি টাকার মালিক যেহেতু হচ্ছেন, জনৈক মি. বি এগিয়ে এলেন। কিন্তু যে তারিখে মুদ্রাটা পৌঁছানোর কথা, সে তারিখে ওটা এল না। এল পরের তারিখে। আরও পাঁচ লাখ টাকা দিলেন জনৈক মি. বি।

এবার পুরো টাকা শোধ করার পালা। ড. জামান কম্পিউটারের বোতাম চেপে দেখালেন তাঁর আমেরিকান এক্সপ্রেস ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৮ কোটি টাকা আছে। বাকি টাকা তক্ষুনি দিতে রাজি হয়ে যান জনৈক মি. বি। দেড় কোটি টাকা দিয়ে দেন তিনি।

এখন মুদ্রা দেখার পালা। একটা ছোটখাটো সিন্দুকের ভেতরে সেই মহামূল্যবান মুদ্রা ভরা। কিন্তু পাসওয়ার্ড জানা না থাকায় বাক্স খুলছে না। অস্থির সবাই। আসামিদের একজন মিছেমিছি ফোন লাগালেন কোথাও। তারপর হিন্দিতে অন্য প্রান্তে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে পাসওয়ার্ড নিশ্চিত হলেন। এরপর খুলল সেই বাক্সের ডালা।

ক্রেতা–বিক্রেতা দুই পক্ষই মোহিত। মুদ্রা থেকে অদ্ভুত আলোর বিচ্ছুরণ, আর সব মুদ্রা পানিতে ডুবে গেলেও ওটি ভেসে আছে। মুদ্রার এই অলৌকিকত্বে সাতক্ষীরার রিসোর্টে উপস্থিত সবাই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েন।

জনৈক মি. বির চোখ আনন্দে চকচক করে। তাঁর স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। ১৮৫৭ সালের এই মুদ্রা নাসার কাছে বিক্রি করে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ বানাবেন।

এবার ড. জামান প্লেনে ঢাকা ফিরে গেলেন। আর জনৈক মি. বি গেলেন সড়কপথে। মূল্যবান ধাতু নিয়ে আসতে পদ্মার এপারে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন তিনি। এত মূল্যবান জিনিস, তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা তো দিতে হবে।

ঢাকায় ফিরে বুঝলেন ঠকে গেছেন

ঢাকায় ফিরে মুদ্রার বাক্সটি খুলে জনৈক মি. বি দেখেন, মুদ্রার গায়ে ১৮৬৪ লেখা, আর মুদ্রাটি কাঠের তৈরি। কোনো ধাতু–টাতু নেই। ততক্ষণে ড. জামানের ফোন বন্ধ। দলের অন্য সদস্যরা এবার নতুন করে টোপ দিলেন। বললেন, এই মুদ্রা বদলে দেবেন। তবে সে জন্য আরও কিছু টাকাপয়সা লাগবে।

তবে জনৈক মি. বি এবার আর টাকা তুলতে পারলেন না। স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা থাকে। তিনি বেঁকে বসেছেন। পরিবারের পীড়াপীড়িতে পরে মামলাও করেন।

ঝিনাইদহে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় পরে তাঁরা পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁরা হলেন আক্তারুজ্জামান, সালাম, মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান ওরফে ড. জামান, আবু তাহের জবা ও শফিকুল ইসলাম স্বপন।

তিনি আরও জানান, জবা নামের যে ব্যক্তি প্রথম টোপটি ফেলেছিলেন, তিনি আসলে অষ্টম শ্রেণি পাস। প্রতারণা করে চলেন তিনি। অবশ্য তাঁর একটি পেয়ারাবাগান আছে। একটা সময় দুবাইয়ে ছিলেন। ড. জামানও বিজ্ঞানী নন, তাঁর নাম মনিরুজ্জামান কামরুল ওরফে জামান। কাপড়ের ব্যবসা আছে, বসুন্ধরায় আছে ফ্ল্যাট। অভিজাত হোটেল ও বেসরকারি একাধিক বিমান সংস্থায় বিশেষ গুরুত্ব পান। মুদ্রা বিক্রেতা সেজে অভিনয় করেছেন আক্তারুজ্জামান। তাঁর বাড়ি সীমান্ত এলাকায়। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে একটি বাসার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে আরও দুটি কাঠের মুদ্রাও জব্দ করেন তাঁরা।

এ ঘটনার তো জট খুলল। কিন্তু গত বছরের জানুয়ারিতে এই প্রতারকদের গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার জানান, ভুক্তভোগী আরও অনেকে। তিনি বলেন, এই অলৌকিক মুদ্রার সন্ধানে সরকারের প্রথম শ্রেণির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাঁর পেনশনের ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা খুইয়েছেন, আরেকজন হারিয়েছেন ৮৪ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের এক স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ২ কোটি টাকা দিয়েছেন, আরও দিতে চান।

সূত্র: প্রথম আলো।
তারিখ: মে ২৬, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ