Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আইএমএফের ঋণ কেন প্রয়োজন দেশে! (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:শওকত হোসেন ঢাকা।

ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্ভবত সবচেয়ে অজনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। দেশে দেশে এখনো আইএমএফের ঋণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়, অনেক সরকারও সহজে যেতে চান না আইএমএফের কাছে। সাহিত্যে নোবেল পাওয়া পর্তুগিজ লেখক হোসে সারামাগো বলেছিলেন, ‘বিশ্ব যে তিনটি প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে—বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও), তারা কেউই গণতান্ত্রিক নয়।’ নোবেল পাওয়া অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিজ বহু বছর ধরেই আইএমএফের বড় ধরনের সংস্কার চেয়ে আসছেন।

সেই আইএমএফের কাছে এবার ঋণ চেয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। চিঠিতে ঋণের পরিমাণের কথা উল্লেখ নেই। তবে বাংলাদেশ আশা করছে, সাড়ে ৪ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। মূলত লেনদেনের ভারসাম্য ঘাটতি মেটাতে এবং বাজেটসহায়তা হিসেবে ঋণ চেয়েছে। আর বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এর মধ্যে রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরটিএস) কর্মসূচির আওতায় ১ বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলারও রয়েছে।

বাংলাদেশ ছাড়াও আইএমএফের ঋণ পেতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিপদে থাকা দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। বাংলাদেশর অর্থনীতি মোটেই শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনীয় নয়। তাদের মতো মহাবিপদেও বাংলাদেশ নেই। দেউলিয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা, আর পাকিস্তানও তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে আছে। তারপরও বাংলাদেশকে কেন আইএমএফের ঋণ নিতে হচ্ছে—সে প্রশ্ন অনেকেরই।

অর্থনীতির চিত্র ও আতঙ্ক

মূল্যস্ফীতি সারা বিশ্বেরই এখন এক নম্বর সমস্যা। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার এখন ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক (-) ১৫.১২ শতাংশ। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাণিজ্যঘাটতি এখন ৩ হাজার ৮৬ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্যঘাটতি। আমদানি ব্যয় ও প্রবাসী আয়ে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধির কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতি এখন ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এটিও বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর সব মিলিয়ে সামগ্রিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৩৭১ কোটি ডলার। অথচ আগের অর্থবছরেও ছিল ৭৫০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত। অর্থনীতির এই চিত্র আইএমএফকে দেওয়া চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।

মূলত সরকারের সব ধরনের আয় কমে গেছে। জ্বালানি সংগ্রহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রাথমিক জ্বালানির সংকটে আছে দেশ। কমাতে হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। বহু বছর পরে লোডশেডিংয়ের অভিজ্ঞতা নিতে হচ্ছে দেশের মানুষকে। এর বাইরে দৃশ্যমান আরেকটি বড় সংকট হচ্ছে ডলারের দাম। বিশ্ববাজারেই ডলার প্রতিদিন শক্তিশালী হচ্ছে। দেশের মধ্যে সরকারকেও এখন টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে। গত জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে প্রায় ১১ শতাংশ। তবে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে খোলাবাজারে। খোলাবাজারে ডলারের দর উঠেছে ১১২ টাকা পর্যন্ত।

সব মিলিয়ে চাপ পড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভে। দেশে বর্তমানে মজুত আছে ৩ হাজার ৯৬৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। অথচ এক বছর আগেই তা ছিল ৪ হাজার ৬৩৯ কোটি ১৪ লাখ ডলার। সাধারণত বলা হয়ে থাকে, তিন মাসের সমান বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থাকাটা অর্থনীতির জন্য স্বস্তিদায়ক। বাংলাদেশে রিজার্ভ কমলেও এখনো তা দিয়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

অর্থনীতি নিয়ে মানুষ আসলে আতঙ্কেই আছে। আতঙ্ক আছে জ্বালানি তেলের মজুত নিয়ে। ডলার সামনে পাওয়া যাবে না বলেও অনেক মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে। ফলে বাড়িতে খাদ্য বা তেল মজুত রেখে দেওয়ার উদাহরণও আছে। অনেকে ডলার কিনেও রাখছেন। এতেও খোলাবাজারে বাড়ছে ডলারের দর। এ রকম এক পরিস্থিতিতেই আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। প্রশ্ন হচ্ছে, আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া এই আতঙ্ক বাড়াবে, নাকি স্বস্তি দেবে।

সর্বশেষ ঋণ ২০১২ সালে

এর আগে বাংলাদেশ সর্বশেষ আইএমএফ থেকে ঋণ নিয়েছিল ২০১২ সালে। সম্প্রসারিত ঋণ কর্মসূচির (ইসিএফ) আওতায় তিন বছরের জন্য নেওয়া হয়েছিল ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সে সময় বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির (জিডিপি) হার ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর চলতি হিসাবে এবং সামগ্রিক লেনদেনের ভারসাম্যেও ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৯ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বা ৯৩০ কোটি ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে ২ দশমিক ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যেত। সে সময় বাংলাদেশ সংকটে পড়েছিল মূলত আমদানির ক্ষেত্রে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়েছিল। দেশের মধ্যেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার। এতেই মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এখান থেকে উদ্ধার পেতেই আইএমএফের কাছে যায় সরকার।

আইএমএফ ও শর্ত

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের শেষ আশ্রয় মানা হলেও এ ক্ষেত্রে আইএমএফের ব্যর্থতাও আছে। ১৯৯৭ সালে পূর্ব এশিয়া সংকটের সময় আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড। তখন আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে আরও বিপদে পড়ে যায় তারা। অর্থনীতির মন্দা আরও তীব্র হয়েছিল, বেড়েছিল বেকারত্ব। ২০০১ সালে আর্জেন্টিনাকে উদ্ধারে নেমেছিল আইএমএফ। সেটিও ছিল আইএমএফের জন্য বড় ব্যর্থতা। আবার সফলতাও আছে। যেমন ১৯৮২ সালে মেক্সিকো এবং সাম্প্রতিক গ্রিস ও সাইপ্রাস। আইএমএফের বিরুদ্ধ বড় অভিযোগ হচ্ছে, সব দেশের জন্যই আইএমএফের শর্ত প্রায় একই। অনেক দেশ এসব শর্ত পূরণ করতেই ঝামেলায় পড়ে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০১২ সালে ঋণ নেওয়ার সময় বাংলাদেশকে দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে ছিল রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার। এর আওতায় বাংলাদেশকে নতুন ভ্যাট আইন পাস করতে হয়েছিল। তখন একটি নতুন প্রত্যক্ষ কর আইন তৈরির শর্তও ছিল, যদিও তা এখনো পাস হয়নি। কর মওকুফ–সুবিধা বাতিলের শর্তও ছিল সংস্থাটির। অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল সরকারের ভর্তুকি ব্যয় কমানো, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বৃদ্ধি, বিনিময় হার আরও নমনীয় করা, খেলাপি ঋণ আদায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি ক্ষমতা বাড়ানো, বাণিজ্যের বাধা দূর করা, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ইত্যাদি।

আইএমএফ সমর্থন পাচ্ছে কেন

অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ আগে থেকেই আইএমএফের ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিল। তাঁদের যুক্তি ছিল দুটি। যেমন অর্থনীতি আইএমএফের নজরদারিতে থাকলে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বের আস্থা বাড়বে এবং সরকার বাধ্য হয়ে সংস্কার করবে।

গত দুই দশকে বাংলাদেশে কার্যত বড় কোনো সংস্কার হয়নি। আইএমএফের শর্ত মেনে ভ্যাট আইন করা হলেও তাতে অনেক গোঁজামিল দেওয়া হয়েছে। কেননা এটি অনুমোদনের সময় বাংলাদেশ আর আইএমএফের ঋণের আওতায় ছিল না। একই কারণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় প্রত্যক্ষ কর আইন আলোর মুখই দেখছে না। বিনিময় হারে কোনো নমনীয়তা ছিল না বলে বাংলাদেশ ব্যাংক দীর্ঘ সময় ধরে ডলারের বিপরীতে টাকাকে শক্তিশালী করে রেখেছিল। ফলে এখন বিপদে পড়ে অল্প সময়ে বেশি হারে অবমূল্যায়ন করতে হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল নজরদারির কারণে বেড়েছে খেলাপি ঋণ, ঘটেছে একের পর এক আর্থিক কেলেঙ্কারি। সব রীতিনীতি ভঙ্গ করে সুদহার বেঁধে দিয়েছে সরকার, যা বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ বছরের পর বছর সংস্কারহীন অবস্থায় আছে। এখন আইএমএফের শর্ত মেনে সেসব সংস্কার করতে হবে। এর অনেকগুলোই জনপ্রিয় হবে না। বিশেষ করে ভর্তুকি হ্রাস, কর মওকুফ–সুবিধা তুলে নেওয়া, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি। সুতরাং ঋণ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বাংলাদেশ আইএমএফকে কী ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটাই হবে দেখার বিষয়।

সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: জুলাই ২৮, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ