চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে বেইজিং।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনকে বেইজিংয়ের এই অবস্থানের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের লাইভে এই তথ্য জানানো হয়।
চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানায়, অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ওয়াং ই। দুই সপ্তাহের মধ্যে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ফোনালাপ হলো।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ওয়াং ই বলেছেন, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনাকে উৎসাহিত করছেন। তাঁর মতে, চলমান সংকটটি কেবল আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত চীনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। কিন্তু বেইজিং এখনো ইউক্রেনে রুশ হামলার নিন্দা জানায়নি।
তবে ইউরোপে যুদ্ধকে চীন সমর্থন করতে চাইছে না বলে বেইজিংয়ের কথাবার্তায় প্রতীয়মান হয়। পাশাপাশি মস্কোর সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করতে চায় বেইজিং।
রাশিয়ার সঙ্গে ‘ন্যায্য আলোচনা’ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ ছাড়া ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে রাশিয়ার যে নিরাপত্তা উদ্বেগ, তা স্বীকার করার জন্য এই পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ইস্যুতে আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ এনেছিল চীন। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের এক হাজার টন অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাঠিয়েছে। তাই এই উত্তেজনার জন্য যে দায়ী, তার এখন ভেবে দেখা উচিত, অন্যদের দোষারোপ না করে কীভাবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে এই আগুন নেভানো যায়।
একই সঙ্গে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, চীনা সরকার বিশ্বাস করে না যে নিষেধাজ্ঞা কখনো সমস্যা সমাধানের মৌলিক ও কার্যকর উপায়। তাই চীন সর্বদা যেকোনো একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে। ফলে তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞায় জড়াবে না।
————————————–
তাইওয়ানে বিদেশি হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না: চীন
তাইওয়ানের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সম্পর্ক উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছে চীন। একই সঙ্গে দেশটির সরকার সতর্ক করে বলেছে, তাইওয়ানে যেকোনো ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড ও বিদেশি হস্তক্ষেপের ঘটনা সহ্য করা হবে না।
আজ শনিবার চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাইওয়ানকে নিজেদের মূল ভূখণ্ডের অংশ মনে করে চীন। দ্বীপটিকে একীভূত করার কাজে গতি আনতে গত দুই বছরে তাইওয়ানের আশপাশে সামরিক কার্যক্রম জোরদার করেছে বেইজিং। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে চীনের। কেননা গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের অন্যতম আন্তর্জাতিক মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী হলো যুক্তরাষ্ট্র।
শনিবার চীনের পার্লামেন্টের বার্ষিক অধিবেশনের উদ্বোধনী বক্তৃতায় লি কেকিয়াং বলেন, বেইজিং বরাবর ‘এক চীন’ নীতি মেনে চলেছে। এর অর্থ, তাইওয়ান চীনের মূল ভূখণ্ডের অংশ। তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বিদেশি হস্তক্ষেপ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যক্রম—কোনোটাই সহ্য করবে না চীন।
চীনের প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল এক বিবৃতিতে বলেছে, বেইজিংয়ের উচিত নিজেদের মানুষের উদ্বেগ কমানো ও গণতন্ত্রের উন্নয়নে বেশি মনোযোগ দেওয়া। তাইওয়ানের বেশির ভাগ মানুষ চীনের স্বৈরাচারী শাসন পছন্দ করেন না। তাঁরা চীনের চাপিয়ে দেওয়া যেকোনো রাজনৈতিক কাঠামো, সামরিক ভীতি ও কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের বিরুদ্ধে। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাইওয়ানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলবৎ রাখা জরুরি।
কয়েক বছর ধরে তাইওয়ান নিয়ে একের পর এক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন চীনের নেতারা। প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সর্বশেষ মন্তব্য এর ব্যতিক্রম নয়। এমনটাই মনে করছেন চীনের জিয়ামেন ইউনিভার্সিটির তাইওয়ান-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ লিউ গুওশেন। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি যেটাই হোক না কেন, তাইওয়ান নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অটুট রয়েছে চীন।
বাড়ানো হচ্ছে সামরিক ব্যয়
চলতি বছর সামরিক খাতে আগের বছরের তুলনায় বাজেট বরাদ্দ ৭ দশমিক ১ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং। আজ শনিবার পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তৃতায় জাতীয় বাজেট সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি এ কথা জানান। লি কেকিয়াং জানান, চীনের পরবর্তী জাতীয় বাজেটে সামরিক খাতে বরাদ্দ দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি ইউয়ান বা ২২ হাজার ৯৪৭ কোটি ডলার। টানা সাত বছর ধরে দেশটির সামরিক ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের সামরিক বাহিনীর আগ্রাসী নীতি ক্রমেই প্রকাশিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এ সময় লি কেকিয়াং আরও জানান, পরবর্তী জাতীয় বাজেটে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ মার্চ ০৬, ২০২২
রেটিং করুনঃ ,