Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

আশাবাদীর পথে দেশ, মহামারি কাটিয়ে উঠতে! (২০২০)

Share on Facebook

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও কোভিড–১৯ বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালে পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই জিডিপি ঋণাত্মক, বাংলাদেশের মতো অল্প কটা দেশে ধনাত্মক। আইএমএফের ওয়েবসাইটে জিডিপির একটা বিশ্ব মানচিত্র আছে। যেসব দেশে জিডিপি শূন্যের নিচে, মানে ঋণাত্মক ৩ থেকে ঋণাত্মক ৬, তাদেরটা লাল; শূন্য থেকে ঋণাত্মক ৩ কমলা; আর যারা ধনাত্মক, তারা সবুজ। পুরো উত্তর আমেরিকা লাল, ইউরোপ লাল, দক্ষিণ আমেরিকা লাল আর কমলা, অস্ট্রেলিয়া লাল। শুধু বাংলাদেশ, ভারত, চীনের মতো অল্প কটি দেশ প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, থাইল্যান্ড ঋণাত্মক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ, পাকিস্তান ঋণাত্মক ১ দশমিক ৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ধনাত্মক ২ শতাংশ। এটা ২০২০ সালের কথা, আইএমএফের হিসাব। অন্যদিকে ট্রেডিং ইকোনমিকস নামের একটা সাইট বলছে ২০২০-২১ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গতি আসছে, ২০২১ সালের প্রথমার্ধে তা আরও ছুটবে, আর শেষ ছয় মাসে তা গতি বাড়িয়ে সব ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে সামনের দিকে এগোবে, এই হলো এডিবির পূর্বাভাস। এডিবি মনে করে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, আর ২০২১ সালে হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেই যেখানে অর্থনীতিতে মন্দা, বাংলাদেশের অর্থনীতি তখন গতিবেগ-চঞ্চল, যা আমাদের প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে সুবিধাজনক জায়গায় নেবে—এই হলো আশাবাদীদের ধারণা।

ফেসবুকার, কলাম লেখক ও টক শো আলোচকদের তীব্র সমালোচনার মুখেও আমাদের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো আগেভাগে খুলে দেওয়া, দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সুফল দিয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বৃহত্তর অংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজকর্ম অব্যাহতই ছিল। কৃষকেরা কাজ বন্ধ করেননি। মাছ, ফল, হাঁস-মুরগি, গরুর খামারে রীতিমতো কাজ চলেছে। তারপর করোনার ভয় কাটিয়ে মানুষ বেরিয়ে পড়েছে।

কিন্তু করোনা থেমে যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্যানডেমিকের শুরুর কালটা আমরা পার করছি। সবে কলির সন্ধ্যা। আরও বহুদিন থাকবে এই মহামারি। আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা মোটের ওপরে কমেনি। মৃত্যু ওঠানামা করছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা—এসব অবশ্যই আমাদের কঠোরভাবে পালন করে যেতে হবে।

অর্থনীতির বিশ্বমানচিত্র যখন লালে লাল, তখন বাংলাদেশ সবুজ হয়ে আছে, এটা আমাদের মনে সবুজ সংকেত দেয়। কিন্তু বাস্তবে এত এত দুঃখের কাহিনি শুনতে হয়, পড়তে হয় যে মন সান্ত্বনা মানে না। দৈবচয়ন ভিত্তিতে আমরা গতকাল ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০-এর প্রথম আলো হাতে নিতে পারি। তিনটা খবরের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। শেষ পৃষ্ঠায় আছে দুর্গত মানুষের পাশে প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ কার্যক্রমের খবর। পটুয়াখালীর গলাচিপা ইউনিয়নে রাবনাবাদ নদের তীরে বন্যা ও নদের ভাঙনে ঘরবাড়ি, জমি-কাজহারা মানুষ যাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধে, তাঁদের কজনের হাতে চাল-ডাল তুলে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার কর্মীরা।

এই কাজ অনেক দিন ধরেই চলছে এবং প্রায় প্রতিদিনই প্রথম আলোর শেষ পাতায় দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যা, নদীভাঙন, নোনাজলের প্লাবনে দুর্গত মানুষের দুর্দশার কথা এ খবরে স্থান পায়। আমি মানুষের উক্তিগুলো শুনি। তাঁদের কথার সুর অভিন্ন। এমনিতেই অভাব। তার ওপরে বন্যা কিংবা আম্পান। নদীর ভাঙন। তার ওপরে করোনার ছোবল। কাজ নেই। আয় নেই। বিশেষ করে বৃদ্ধ, রোগগ্রস্ত, বিধবাদের অবস্থা বেশি শোচনীয়। দ্বিতীয় যে খবরের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তা ছাপা হয়েছে গতকালের কাগজে ৫ নম্বর পৃষ্ঠায়। শিরোনাম: করোনায় কাহিল সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী। সরেজমিন দিনাজপুর। ‘জেলায় ২০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ৬ লাখ মানুষের বাস। এখন বেশির ভাগের কাজ নেই, ঘরে খাবার নেই।’ একজন নারী কাজ করতেন দিনাজপুরের পারলারে। এখন পারলার বন্ধ। তিনি গ্রামে চলে এসেছেন।

এটা এখন গ্রামগুলোর একটা স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে পড়েছে। আগে উত্তরাঞ্চলের বহু গ্রাম আশ্বিন-কার্তিক মাসে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ত। কাজের সন্ধানে মানুষ যেত দেশের নানা প্রান্তে, কেউ নির্মাণশ্রমিক, কেউ–বা রিকশাচালক, কেউ–বা জাহাজভাঙাশিল্পে কাজ করেন। কিন্তু করোনার করাল দিন শুরু হওয়ার পর গ্রামগুলোতে পুরুষেরা ফিরে এসেছেন এবং বসে থাকছেন। ৩ নম্বর খবরটা ছাপা হয়েছে গতকালের প্রথম আলোর ১৩ পৃষ্ঠায়। সিপিডি, অক্সফাম, এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক কমিটি একটা অনলাইন সংলাপের আয়োজন করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘দেশে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রতিবছর বরাদ্দ বাড়ছে। তবে যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা যতটা পাচ্ছেন, তার চেয়ে বেশি পাচ্ছেন সেই মানুষেরা, যাঁদের প্রয়োজন কম। ভাতাগ্রহীতা নির্বাচনে ব্যাপক ভুলভ্রান্তি যেমন আছে, তেমনি দুর্নীতিও আছে।’

সরকার নানা ধরনের ভাতা দেয়, নিরাপত্তাবেষ্টনীর কর্মসূচি আছে সরকারের, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বন্যার জন্য ত্রাণ। কিন্তু বরাদ্দ যেমন অপ্রতুল, তেমনি অন্তত ১৯-২০ ভাগ এই ভাতা নিচ্ছেন, যঁাদের নেওয়ার কথা নয়। সরকার ঘোষণা করল, ৫০ লাখ পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে দেওয়া হবে করোনাকালের সংকট মোকাবিলায়। এ জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হলো। প্রধানমন্ত্রী ১৪ মে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। কিন্তু কাজ শুরুর পর দেখা যায়, তালিকায় ব্যাপক ত্রুটি, ব্যাপক অনিয়ম। একই ফোন নম্বর ১০০ বার দিয়ে রাখা হয়েছে। ফন্দি স্পষ্ট, ১০০ গরিব পরিবারের প্রত্যেকের আড়াই হাজার টাকা একজন যদি পায়, সে আড়াই লাখ টাকা পাবে। ৯ জুলাই প্রথম আলোর ‘গরিবের টাকায় ধনীর ভাগ’ শীর্ষক খবরে বলা হয়েছিল, ৫০ লাখ পরিবারের জায়গায় তখন পর্যন্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজারের মতো পরিবার এই আড়াই হাজার টাকার বরাদ্দ পেয়েছিল। এক মাস আগের খবর, ঝাড়াই-বাছাই করে ৬ লাখ বাদ দিয়ে ৪৪ লাখ পরিবারের কাছে এ ভাতা পৌঁছানো হয়েছে বা হচ্ছে। তা-ও কম নয়।

এগুলো তো গেল সংবাদমাধ্যমের খবর। নিজের জীবনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা বলি। আমাদের এক লেখক বন্ধু কাজ করতেন একটা সংবাদপত্রে। বেতন হয় না, একদিন বলা হলো, চাকরি নেই। তিনি ফেসবুকে লিখলেন, ‘গ্রামে চলে যাচ্ছি।’ আরেক দিন তাঁর সংগ্রহের বইগুলো বিক্রি করার ঘোষণা দিলেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম, কিছু কিছু বই বিক্রি হয়েছে। এক শিল্পী। ছবি আঁকেন। বাসাভাড়া দিতে পারছেন না, না খেয়ে আছেন, প্রায়ই ফোন করেন। একজন নারীর কুটিরশিল্পের দোকান ছিল। দোকান বন্ধ হয়ে গেলে অপরিচিত আমাকে বলেন, আপনি কি আমাকে কিছু টাকা পাঠাবেন। একজন ছোট প্রকাশক। করোনাকালে তাঁর দোকানে বিক্রি নেই। চোখের সামনে মানুষ কাজ হারাচ্ছে। ঢাকার একজন বাড়িওয়ালা বললেন, তাঁর পাঁচটা ফ্ল্যাটে ভাড়াটে নেই। কাগজে ছবি ছাপা হয়, ঢাকা থেকে লোকে পরিবার-পরিজনসমেত বাক্স-পেটরা নিয়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে।

তবু আশাটাকেই বড় করে দেখব। গরিব মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, বস্তির মানুষ করোনায় পরাজিত হননি। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের এখানে করোনা নাই। এইটা বড় লোকদের অসুখ।’

করোনার বিশ্ব পরিস্থিতি যদি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কোনো সুযোগ এনে দেয়, তা গ্রহণ করে তার সুফল গরিব মানুষ, প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বহু মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঢুকে পড়েছে বা পড়ার মুখে আছে। এই যে চরের মানুষ, উপকূলের মানুষ, পাহাড়ের মানুষ, বানভাসি মানুষ, নদীভাঙা মানুষ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, বস্তিবাসী—এদের জন্য আলাদা করে কাজ করতে হবে। তাদের রুটি-রুজির, আর্থিক নিরাপত্তার, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের জন্য আলাদা করে টেকসই ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশটা শুধু ধনীদের নয়, এই দেশ সবার।

সূত্র: আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক

তারিখ: সেপ্টম্বর ১৮, ২০২০

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ