Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ইনামুল হককে থাপ্পড়: ‘বিকারগ্রস্ত’ রাজনীতি ও ক্ষমতাচর্চার নমুনা (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: মনজুরুল ইসলাম।

৭২ বছর বয়সী একজন পৌঢ় নাগরিক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর বয়সী আরও অনেকের মতো তিনিও আরামে–আয়েশে অবসর কাটাতে পারতেন। সেটা না করে দেশ নিয়ে, মানুষ নিয়ে ভাবেন। রাজনীতি ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করেন, তাই একটি দলও গঠন করেছেন। তবে রাজনীতিক হিসেবে যতটুকু, তার চেয়ে ম. ইনামুল হক অনেক বেশি পরিচিত প্রকৌশলী ও পানিবিশেষজ্ঞ হিসেবে।

তিনি নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর এবং পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থায় মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পৌঢ়ত্বে এসে তিনি যে লাঞ্ছনা ও বিব্রতকর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন, সেটি আবারও আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধঃপতনকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।

গত শনিবার (ডিসেম্বর ২৪, ২০২২ ) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সর্বজন বিপ্লবী দলের আহ্বায়ক ইনামুল হক আরও তিন নেতা-কর্মী নিয়ে তাঁদের কর্মসূচি পালন করছিলেন। বর্তমান সরকারের বিদায়, ভোটকেন্দ্র দখলমুক্ত নির্বাচন এবং জাতীয় সরকার—এই তিন দফা দাবিতে হরতাল আহ্বান করে প্রচারপত্র বিতরণ করছিলেন তাঁরা। তখন একজন সাংবাদিক মুঠোফোনে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিচ্ছিলেন। সেসময় এক ব্যক্তি এসে আচমকা তাঁর গালে থাপ্পড় মারেন।

যে ব্যক্তি এ ঘটনা ঘটান, তিনি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি বনি আমিন বলে সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে। ওই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যোগ দিতে এসেছিলেন তিনি।

ওপরের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, ইনামুল হকের সঙ্গে তাঁকে লাঞ্ছনাকারী বনি আমিনের পূর্বপরিচয় বা জানাশোনা ছিল না। সুতরাং কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে তিনি (বনি আমিন) এই ন্যক্কারজনক কাজটি করেননি। তিনি যা করেছেন, সেটাকে ‘রাজনৈতিক বিরোধ’ বলা যেতে পারে।

কিন্তু সমস্যা হলো, তিনি যে রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, সেই রাজনীতির মধ্যে রয়েছে ক্ষমতার বিকার এবং ক্ষমতা প্রদর্শনই এখন এই রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের দল ও নেতার সমালোচনা সহ্য করতে না পারা, নিজদের আইন ও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে মনে করা এবং মানুষকে অমর্যাদা ও অসম্মান করা তাই এদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

একটা বিষয় লক্ষণীয়, ইনামুল হককে লাঞ্ছনার ঘটনাটি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়, আলোচিত হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কিছু বিশিষ্টজন এ ঘটনার নিন্দা ও শাস্তির দাবি জানান। কিন্তু ইনামুল হককে লাঞ্ছনাকারী বনি আমিন যে রাজনৈতিক দলের সদস্য, সেই দলের কোনো দায়িত্বশীল নেতা বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু বলেননি।

অবস্থাদৃষ্টে এমন মনে হওয়া অমূলক নয়, তাঁর দল হয়তো এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে ‘অনুমোদন’ দেয় কিংবা এ ধরনের কাজকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে না। তা না হলে এ রকম একটি ন্যক্কারজনক ঘটনায় তারা কীভাবে নিশ্চুপ থাকতে পারে!

আমাদের বুঝতে হবে, ইনামুল হকের মতো যে কেউ যেকোনো দিন ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে পারেন এবং যত্রতত্র এভাবে লাঞ্ছিত হতে পারেন। ক্ষমতাসীনদের এমন বেপরোয়া আচরণের কারণ হলো তারা নিজেদের জবাবদিহি ও আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করছেন।

এ ঘটনায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশও নীরব ভূমিকা ভূমিকা পালন করছে। ঘটনা ঘটার এক দিনের মধ্যেই লাঞ্ছনাকারী চিহ্নিত হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঘটনাটি সম্পর্কে তারা অবগত থাকলেও ‘তাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি’—এমন অজুহাত দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে পুলিশ (শাহবাগে প্রকৌশলী ইনামুলকে চড়, নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২)।

তবে অভিযোগ করলেই ক্ষমতাসীন দলের ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো, বিষয়টা এত সরল নয়। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের কাউকে ধরা বা না ধরার ক্ষেত্রে আমরা পুলিশকে প্রায়ই ‘ওপরের নির্দেশ’ বা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে দেখেছি।
ইনামুল হককে লাঞ্ছনার ঘটনার পর ক্ষমতাসীন দল এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক।

রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে দেশের একজন প্রবীণ নাগরিককে অমর্যাদা ও অসম্মানিত করার ঘটনাকে যদি তারা ‘অনুমোদন’ দেন কিংবা বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা না করেন, তাহলে সেটা দেশের সব নাগরিকের জন্যই ভয়ের কারণ।
আরও পড়ুন
ইনামুল হকের গালে থাপ্পড় কী বার্তা দেয়
প্রকৌশলী ম ইনামুল হককে (বাঁয়ে) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এই ব্যক্তি

আমাদের বুঝতে হবে, ইনামুল হকের মতো যে কেউ যেকোনো দিন ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে পারেন এবং যত্রতত্র এভাবে লাঞ্ছিত হতে পারেন। ক্ষমতাসীনদের এমন বেপরোয়া আচরণের কারণ হলো তারা নিজেদের জবাবদিহি ও আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করছেন। দেশের পরিস্থিতিও তাদের এমন ভাবনার অনুকূলে। বিষয়টি বুঝতে পেরেই হয়তো ইনামুল হক বলেছেন, ‘মামলা করে কী হবে?’ (প্রথম আলো, ২৬ ডিসেম্বর)।

এর আগে কোনো কোনো ভুক্তভোগী বা তাঁর স্বজনেরা বলেছেন, তাঁরা বিচার চান না। তাঁরা হয়তো মেনে নিয়েছেন, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মামলা করে, বিচার চেয়ে কোনো লাভ নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো অন্যায় বা অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো, তাঁকে আইন অনুযায়ী প্রতিকার দেওয়া।

কিন্তু রাষ্ট্র যদি সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় এবং ভুক্তভোগী যদি মনে করে ক্ষমতাসীনেরা আইন–আদালত–বিচারের ঊর্ধ্বে, তাহলে বুঝতে হবে সেই রাষ্ট্রে বড় ধরনের গলদ রয়েছে। একইভাবে যদি কোনো রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয় বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্নমতকে দমন করা, তাহলে সেই রাজনীতির মধ্যেও গলদ আছে, এটা স্বীকার করে নিতে হবে।

ইনামুল হককে লাঞ্ছনার ঘটনা তাই কোনো ছোট বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটা আমাদের রাষ্ট্র ও রাজনীতির যে গলদ, সেটাকে সামনে নিয়ে এল। দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং গণতন্ত্রের যে সঙিন অবস্থা, পুনর্বার তা প্রকাশ করল।

*****মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:ডিসেম্বর ২৯, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ