Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

এ পি জে কালাম – অনেক কথার বাড়ি – ৪( সংগ্রহিত)

Share on Facebook

07/28
তখন ১৯৪১ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। আমরা থাকতাম রামেশ্বরম শহরে। এখানে আমাদের পরিবার বেশ কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছিল। আমার বয়স তখন মাত্র ১০ বছর। কলম্বোতে যুদ্ধের দামামা বাজছে, আমাদের রামেশ্বরমেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য পণ্য, সবকিছুরই দারুণ সংকট। আমাদের সংসারে পাঁচ ভাই, পাঁচ বোন। তাদের মধ্যে তিনজনের আবার নিজেদেরও পরিবার আছে, সব মিলিয়ে এক এলাহি কাণ্ড। আমার দাদি ও মা মিলে সুখে-দুঃখে এই বিশাল সংসার সামলে রাখতেন।

আমি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে অঙ্ক শিক্ষকের কাছে যেতাম। বছরে মাত্র পাঁচজন ছাত্রকে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতেন। আমার মা আশিয়াম্মা ঘুম থেকে উঠতেন আমারও আগে। তিনি আমাকে গোসল করিয়ে, তৈরি করে তারপর পড়তে পাঠাতেন। পড়া শেষে সাড়ে পাঁচটার দিকে বাড়ি ফিরতাম। তারপর তিন কিলোমিটার দূরের রেলস্টেশনে যেতাম খবরের কাগজ আনতে। যুদ্ধের সময় বলে স্টেশনে ট্রেন থামত না, চলন্ত ট্রেন থেকে খবরের কাগজের বান্ডিল ছুড়ে ফেলা হত প্ল্যাটফর্মে। আমার কাজ ছিল সেই ছুড়ে দেওয়া কাগজের বান্ডিল সারা শহরে ফেরি করা, সবার আগে গ্রাহকের হাতে কাগজ পৌঁছে দেওয়া।
কাগজ বিক্রি শেষে সকাল আটটায় ঘরে ফিরলে মা নাশতা খেতে দিতেন। অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই দিতেন, কারণ আমি একই সঙ্গে পড়া আর কাজ করতাম। সন্ধ্যাবেলা স্কুল শেষ করে আবার শহরে যেতাম লোকজনের কাছ থেকে বকেয়া আদায় করতে। সেই বয়সে আমার দিন কাটত শহরময় হেঁটে, দৌড়ে আর পড়াশোনা করে। একদিন সব ভাইবোন মিলে খাওয়ার সময় মা আমাকে রুটি তুলে দিচ্ছিলেন, আমিও একটা একটা করে খেয়ে যাচ্ছিলাম (যদিও ভাত আমাদের প্রধান খাবার, কিন্তু রেশনে পাওয়া যেত গমের আটা)। খাওয়া শেষে বড় ভাই আমাকে আলাদা করে ডেকে বললেন, ‘কালাম, কী হচ্ছে এসব? তুমি খেয়েই চলছিলে, মাও তোমাকে তুলে দিচ্ছিল। তার নিজের জন্য রাখা সব কটি রুটিও তোমাকে তুলে দিয়েছে। এখন অভাবের সময়, একটু দায়িত্বশীল হতে শেখো। মাকে উপোস করিয়ে রেখো না।’ শুনে আমার শিরদাঁড়া পর্যন্ত শিউরে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে মায়ের কাছে গিয়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলাম।

মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতে পড়লেও পরিবারে ছোট ছেলে হিসেবে আমার একটা বিশেষ স্থান ছিল। আমাদের বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিল না। কেরোসিন দিয়ে বাতি জ্বালানো হতো; তাও শুধু সন্ধ্যা সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত। মা আমাকে কেরোসিনের ছোট্ট একটা বাতি দিয়েছিলেন, যাতে আমি অন্তত রাত ১১টা পর্যন্ত পড়তে পারি। আমার চোখে এখনো পূর্ণিমার আলোয় মায়ের মুখ ভাসে।
আমার মা ৯৩ বছর বেঁচে ছিলেন। ভালোবাসা আর দয়ার এক স্বর্গীয় প্রতিমূর্তি ছিলেন আমার মা।

মা, এখনো সেদিনের কথা মনে পড়ে,
যখন আমার বয়স মোটে ১০।
সব ভাইবোনের ঈর্ষাভরা চোখের সামনে
তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাতাম।
সেই রাত ছিল পূর্ণিমার।
আমার পৃথিবী শুধু তোমাকে জানত মা! আমার মা!
এখনো মাঝরাতে ঘুম ভেঙে উঠি।
চোখের জল গড়িয়ে পড়ে।
তুমি জানতে ছেলের কষ্ট মা।
তোমার আদরমাখা হাত আমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দিত।
তোমার ভালোবাসা, তোমার স্নেহ, তোমার বিশ্বাস
আমাকে শক্তি দিয়েছিল মা।
সৃষ্টিকর্তার শক্তিতে ভয়কে জয় করতে শিখিয়েছিল।
সূত্র: এ পি জে আবদুল কালামের নিজস্ব ওয়েবসাইট। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: অঞ্জলি সরকার
বিষয়:
স্বপ্ন নিয়ে ব্যক্তিত্ব

07/28
কোন বিশেষণ এ পি জে আবদুল কালামের জন্য প্রযোজ্য? সারা ভারত তাঁকে যে নামে ডেকে এসেছে, সেই ‘মিসাইলম্যান’, অজাতশত্রু, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা? নাকি এর সব কটাই? যাঁদের জন্য তিনি সারাটা জীবন শুধুই ভেবে এসেছেন, যাঁদের মনে কিছু হওয়ার আগুনটা জ্বালিয়ে দিতে চেয়েছেন, সেই ছাত্রছাত্রীদের সান্নিধ্যেই জীবনের শেষনিশ্বাস যখন ছাড়লেন, তখন এসব কটি বিশেষণই তাঁর জন্য উপযুক্ত বলে মনে হলো।

তিনি ভারতরত্ন হয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি হওয়ার পাঁচ বছর আগে ১৯৯৭ সালে। ২০০২ সালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার খোঁজে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব যখন কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত, তখনই মুলায়ম সিং যাদব এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় একই সঙ্গে আবদুল কালামের নাম প্রস্তাব করেন। কালাম তত দিনে মিসাইলম্যানের পরিচিতি পেয়ে গেছেন। ১৯৯৮ সালে অটল বিহারি বাজপেয়ির নির্দেশে পোখরান-টু করে ফেলে গোটা বিশ্বে হইচই ফেলে দিয়েছেন। ‘অগ্নি’ ও ‘পৃথ্বী’ ক্ষেপণাস্ত্রের বহর বাড়ানোর জন্য তখন তিনি দিনরাত এক করে ফেলছেন। সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি হওয়ার অনুরোধ প্রথমে তাঁকে বিস্মিত করেছিল। কিন্তু যখন দেখলেন, সব দল একভাবে একমনে তাঁকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত, তখন না করেননি। শার্ট ও ট্রাউজার্সের বাইরে আর কিছু তিনি তখনো পরতেন না। বাড়িতে লুঙ্গি ও ফতুয়া। রাষ্ট্রপতি হয়ে সেই প্রথম তিনি সমঝোতা করলেন পোশাকের সঙ্গে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রটোকলের জাঁতায় বিদ্ধ হয়েছেন নীরবে।

যে সমঝোতার সঙ্গে তিনি কোনো দিন আপস করেননি, তা হলো আদর্শ। তিনি আদ্যন্ত ভারতবাসী হিসেবে নিজেকে দেখতে চেয়েছেন এবং সেইভাবে জীবন যাপন করেছেন। অধিকাংশ মানুষ যখন ধর্ম, জাতিসত্তা ও দেশের মধ্যে কোনটি প্রাধান্য পাবে সেই দ্বন্দ্বে জেরবার, আবদুল কালাম তখন ছিলেন নির্ভেজাল এক ভারতবাসী। তাঁর সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলো ছিল ছাত্রছাত্রীদের সাহচর্য। ভবিষ্যৎ ভারতের এই রূপকারদের মনে তিনি জ্বালাতে চেয়েছেন প্রকৃত অর্থে বড় হওয়ার স্বপ্ন। তাঁর দুই বেস্ট সেলার উইংস অব ফায়ার ও ইগনাইটেড মাইন্ডস এই প্রজন্মের নবীনদের স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে। মনে আছে, এক অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের তিনি বলেছিলেন, ‘ঘুমিয়ে যে স্বপ্ন মানুষ দেখে তা স্বপ্ন নয়। স্বপ্ন সেটাই, যা তোমাকে ঘুমোতে দেবে না।’
আবদুল কালামের রাজনৈতিক সংশ্রব কোনোকালেই ছিল না। সেই কারণে, রাজনীতির বাধ্যবাধকতাও ছিল না তাঁর। ফলে রাষ্ট্রপতি হয়ে রাজনীতির আলোয় কোনো সিদ্ধান্ত তিনি নেননি। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাংবিধানিক আবর্তের মধ্যে নিজেকে ধরে রেখেও সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয়টি ছিল লালু প্রসাদের বিহারে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সিদ্ধান্ত। আবদুল কালামের আপত্তিতে বাজপেয়ি সরকার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিল।
আবদুল কালাম সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সময় প্রাধান্য দিয়েছেন বিবেক ও দেশকে। ভারতবাসীর দুর্ভাগ্য, এই ঋষিতুল্য এবং আক্ষরিক অর্থে সন্ন্যাসী অথচ পণ্ডিত ব্যক্তিকে দ্বিতীয়বারের জন্য রাষ্ট্রপতি করা হয়নি। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায়নি আবদুল কালামের। শিশুসুলভ হাসি নিয়ে তিনি ফিরে গেছেন তাঁর প্রিয় জগতে, যেখানে তিনি স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হয়ে নবীন প্রজন্মের মনে প্রকৃত অর্থে বড় ও ভালো মানুষ হওয়ার সলতেয় আগুন ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন।
অকৃতদার, মিষ্টভাষী, নিরামিশাষী, স্বল্পাহারি এ পি জে আবদুল কালাম জীবনের শেষ দিনেও চলে যেতে যেতে সেই কাজটিই করে গেলেন।

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ