Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

‘ঘটনাচক্রে শিক্ষক’ কেন হচ্ছে, উত্তরটা কে দেবে ! (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: মনোজ দে।

সম্প্রতি সরকারের দুজন মন্ত্রী শিক্ষকদের নিয়ে বেশ তীক্ষ্ণ মন্তব্য করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের মধ্যে একটা বড় অংশ ঘটনাচক্রে “শিক্ষক”। যাঁরা হয়তো অন্য কোনো পেশায় না গিয়ে এ পেশায় এসেছেন।’ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বে যে শিক্ষকেরা রয়েছেন, তাঁদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘অবাক লাগে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাঁরা শিক্ষার মূল দায়িত্বে আছেন, তাঁরা সেখানকার প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের কথায় ওঠেন আর বসেন। এ ব্যক্তিত্বহীনতা শিক্ষকতার মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে।’

শিক্ষকদের নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী দুজন মন্ত্রীর মন্তব্যে আমরাও বিস্মিত। কেননা, একটানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছেন তাঁরা। কোনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে খোলনলচে বদলে দেওয়ার মতো যথেষ্ট সময় কি এটা নয়? ঘটনাক্রমে শিক্ষক হওয়া কিংবা প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকদের নাজুক ব্যক্তিত্ব—দুটিই সত্য। কিন্তু এ সত্য তৈরি হওয়ার পেছনে আরও নির্মম সত্য রয়েছে। শিক্ষকেরা আমাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরের কেউ নন। দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্য, ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে যোগাযোগ, দুর্নীতি—এ তিন সূত্র থেকে শিক্ষা, শিক্ষার্থী, শিক্ষকতাকে কতটা বাইরে রেখেছেন তাঁরা?

২০১০ সালে শিক্ষানীতি পাস হওয়ার পর ১০ বছর পেরিয়ে গেছে। শিক্ষানীতির আলোকে নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষাব্যবস্থাকে কতটা গড়ে তুলতে পেরেছেন? শিক্ষানীতির মুখবন্ধে বলা হয়েছিল, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। মানসম্মত শিক্ষা ও দক্ষ জনসম্পদ গড়ার প্রধান শক্তি দক্ষ নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক।’ তাহলে কেন এত দিনেও এমন একটি ব্যবস্থা দাঁড় করানো গেল না, যাতে ঘটনাচক্রে কেউ শিক্ষক না হয়ে যোগ্য, দক্ষ ও শিক্ষার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিরাই শিক্ষক হতে পারতেন। শিক্ষার অনেক মৌলিক প্রশ্নের সুরাহা না হলেও শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর্তাব্যক্তিদের এসব ‘উইশফুল থিংকিং’-এর গিনিপিগ হতে হয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষানীতি সংস্কার না করেই নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রস্তাব করা হয়েছে এ মাসে। জাতিসংঘ–ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কেন্দ্রে রেখে আগামী দিনের নাগরিকদের তৈরি করার চিন্তা করা হচ্ছে। এ জন্য কারিকুলাম ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিক্ষাবিদদের অনেকে মনে করেন, ‘নতুন এ শিক্ষাক্রমের যে ইনটেনশন বা উদ্দেশ্য, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই ইতিবাচক। তবে আগের কারিকুলাম থেকে নতুন কারিকুলামে ফারাক বিস্তর। মাঠের বাস্তবতার চেয়ে এখানে প্রত্যাশার প্রতিফলন অনেক বেশি। যথেষ্ট আলাপ-আলোচনা না করেই শিক্ষাক্রম প্রস্তুত করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে অবকাঠামো এবং শিক্ষকদের যে মান, তাতে বড় ধরনের প্রস্তুতি ছাড়া তড়িঘড়ি করে এটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক বড় একটা বিপর্যয় আসন্ন।’
বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জিডিপির বিপরীতে শিক্ষায় বরাদ্দ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। ইউনেসকোর একটা গবেষণাপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো গড়ে জিডিপির ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যয় করে। তবে বাংলাদেশে এ ব্যয় মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের আগে রয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের (আইইআর) অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান নতুন এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, ‘শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাদের একটা বিশাল চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। বর্তমান এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যে অবস্থান, সেটার সঙ্গে এ রূপরেখা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটেও এটা সাংঘর্ষিক। আমাদের বর্তমান টিচিং ফোর্সের সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক। এটা বাস্তবায়ন করতে হলে শিক্ষক নিয়োগে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার। না হলে এটা বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি করবে।’ (‘নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ’, প্রথম আলো, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক গৌতম রায়ও মনে করেন, শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকদের যথাযথভাবে তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে মূল ও বড় ভূমিকা পালন করবেন শিক্ষকেরা। কিন্তু তাঁদের যথাযথভাবে তৈরি না করে শিক্ষাক্রম চালু করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন অনুসারে দ্রুত যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’ (‘নতুন শিক্ষাক্রম: সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’, আজকের পত্রিকা, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১)

নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে একই বিষয় পড়ানো হবে। প্রচলিত পাঠ্যবইয়ের অনেক বদল হচ্ছে, যুক্ত হচ্ছে নতুন বিষয়। বাংলা ও ইংরেজি থাকলেও ধরনটা বদলে যাচ্ছে। গণিত, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সামাজিক বিজ্ঞান থাকছে। প্রচলিত ধর্ম শিক্ষার বদলে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা নামে একটি বিষয় রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, পরিবেশ ও জলবায়ু এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু নতুন এসব বিষয় কারা পড়াবেন, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। বর্তমান কারিকুলামে স্কুল–কলেজে আইসিটি পড়ানোর মতোই শিক্ষক নেই। সব শিক্ষককেই আইসিটি পড়াতে হয়। জীবন ও জীবিকা নামে বিষয়টা কেন রাখা হচ্ছে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কারিগরি শিক্ষা যখন আলাদাভাবেই আছে, তখন কেন সব শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষা দিতে হবে? বলা হচ্ছে জীবন ও জীবিকা পড়ে কৃষি, শিল্প ও সেবার যেকোনো একটাতে পারদর্শী হয়ে উঠবে শিক্ষার্থীরা। এ ধরনের কর্মমুখী বিষয় পড়ানোর মতো শিক্ষক ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো কোথায়? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন, যাঁরা শিক্ষাক্রম প্রস্তুত করছেন, তাঁরা কি ধরে নিয়েছেন জ্ঞান–বিজ্ঞানের মৌলিক শাখায় বিচরণের চেয়ে বিশ্ববাজারের জন্য সস্তা ও আধা প্রশিক্ষিত শ্রমিক সরবরাহ করা আমাদের নিয়তি।

যেকোনো দেশে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিনির্মাণের জন্যই শিক্ষায় এ বিনিয়োগ জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জিডিপির বিপরীতে শিক্ষায় বরাদ্দ বাংলাদেশে সবচেয়ে কম। ইউনেসকোর একটা গবেষণাপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষাক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো গড়ে জিডিপির ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ ব্যয় করে। তবে বাংলাদেশে এ ব্যয় মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের আগে রয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। দেশ দুটি জিডিপির ২ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যয় করে। ভারত ব্যয় করে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। জিডিপির বিপরীতে শিক্ষায় ব্যয় সবচেয়ে বেশি ভুটান ও নেপালে। দেশ দুটি যথাক্রমে ৭ দশমিক ১ এবং ৫ শতাংশ ব্যয় করে (সোশ্যাল স্পেন্ডিং ইন সাউথ এশিয়া-অ্যান ওভারভিউ অব গভর্নমেন্ট এক্সপেন্ডিচার অন হেলথ, এডুকেশন অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স; রচনা: ক্যারোলিনা ব্লচ)।

আমাদের এখানে যে কেউ শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষক তৈরির জাতীয় মানদণ্ড স্বাধীনতার ৫০ বছরেও তৈরি করা হয়নি। শিক্ষকতা শুধু নিছক একটা পেশা নয়, এটা অনেক বেশি ব্রত। ভালো শিক্ষক তৈরি করতে হলে তাদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো যেমন দরকার, আবার তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করাও জরুরি। ‘ঘটনাচক্রে শিক্ষক’ কিংবা ‘ব্যক্তিত্বহীন’ শিক্ষক কেন তৈরি হচ্ছে? সহজ এ প্রশ্নের উত্তরটা কে দেবে? তবে শিক্ষায় বিনিয়োগ, শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, মানসম্পন্ন ও মর্যাদাবান শিক্ষক তৈরি—সব কটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। রাজনৈতিক দায়টা স্বীকার না করলে এগোনো কি যাবে?

মনোজ দে জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক প্রথম আলো

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ২৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ