Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

তাম্রশাসন ও ষষ্ঠ শতকের বাংলার ইতিহাস

Share on Facebook

সম্প্রতি আবিষ্কৃত একটি তাম্রশাসন ও ষষ্ঠ শতকের বাংলার ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ
অন্ত-মধ্যযুগ থেকে যে ভূখণ্ড আমাদের কাছে বাংলা নামে পরিচিত, সেই ভৌগোলিক ভূভাগ সাধারণাব্দের প্রথম কয়েক শতকে ভাগীরথী-হুগলি, পদ্মা, করতোয়া, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্রের দ্বারা বিভাজিত চারটি মুখ্য ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত ছিল – বরেন্দ্র বা পুণ্ড্রবর্ধন (উত্তর বাংলা), রাঢ় (পশ্চিম বাংলা), বঙ্গ (পূর্ব বাংলা) ও সমতট (দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা)। পাল যুগে প্রথম বাংলার চারটি ভৌগোলিক অঞ্চল একক রাজনৈতিক শক্তির শাসনের অধীনে আসে।

সম্ভবত সাধারণাব্দের চতুর্থ শতকের মাঝামাঝি, সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকালে বাংলার ভূখণ্ডে উত্তর ভারতের গুপ্ত সাম্রাজ্যের আগ্রাসন শুরু হয়। ষষ্ঠ শতক সাধারণাব্দের মাঝামাঝি কোন সময়ে বাংলা গুপ্ত সম্রাটদের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়। প্রায় দুই শতকের অধীনতার পর বাংলার বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলের শাসকরা আবার স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। প্রাচীন বাংলার এই স্বাধীন শাসকদের রাজত্বকাল সম্পর্কে এক শতক আগেও বিশেষ কিছু জানা না থাকলেও, বিগত কয়েক দশক যাবৎ প্রাপ্ত বহু নতুন তথ্যের ক্রমিক সংযোজন বাংলার ইতিহাসের এই প্রায় অন্ধকার পর্বের পুনর্নির্মাণ করতে যথেষ্ট সহায়তা করে চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় একটি উল্লেখনীয় অভিঘাত সৃষ্টি করেছে সম্প্রতি আবিষ্কৃত একটি তাম্রশাসন। এই তাম্রশাসনটির প্রসঙ্গে আলোচনার পূর্বে আমাদের ষষ্ঠ শতকের বাংলার চারটি ভৌগোলিক অঞ্চলের রাজবৃত্ত সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক।
ষষ্ঠ শতকে বঙ্গ ও রাঢ়

আধুনিক বিদ্বানদের অনেকে ষষ্ঠ শতকের শেষ দশক থেকে সপ্তম শতকের প্রথম কয়েক দশক পর্যন্ত গৌড়াধিপ শশাঙ্ককে গুপ্তোত্তর বাংলার প্রথম স্বাধীন সার্বভৌম শাসক বলে মনে করেন। কিন্তু, গুপ্ত শাসনকালের অবসানের পর, বঙ্গ ও রাঢ় এলাকায়, অর্থাৎ বাংলার দক্ষিণ অংশে, শশাঙ্কের পূর্ববর্তী চার জন স্বাধীন শাসক – দ্বাদশাদিত্য, ধর্মাদিত্য, গোপচন্দ্র ও সমাচারদেবের নাম তাঁদের অভিলেখ থেকে জানা গেছে। শেষ দুই শাসক, গোপচন্দ্র ও সমাচারদেবের নামাঙ্কিত ‘দীনার’ স্বর্ণমুদ্রাও পাওয়া গেছে। ১৯৮০ সালে দ্বাদশাদিত্যের রামশিল তাম্রশাসন আবিষ্কার হবার পর কোন কোন আধুনিক বিদ্বান তাঁকে নালন্দায় প্রাপ্ত একটি মাটির সিলের ভিত্তিতে সমতটের সামন্ত শাসক বৈন্যগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেছিলেন, কিন্তু বঙ্গের এই স্বাধীন শাসক ও বৈন্যগুপ্ত যে পৃথক ব্যক্তিত্ব সে বিষয়ে এখন মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বঙ্গের চার স্বাধীন শাসকের রাজত্বকালের মাত্র ৮টি তাম্রশাসন এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে:
১. দ্বাদশাদিত্যের রাজত্বকালের ১৪তম বর্ষের রামশিল (কোটালিপাড়া উপজেলা) তাম্রশাসন;
২. ধর্মাদিত্যের দুটি কোটালিপাড়া তাম্রশাসন – একটি তাঁর রাজত্বকালের তৃতীয় বর্ষের ও অন্যটি অজ্ঞাত তারিখের; ৩. গোপচন্দ্রের রাজত্বকালের প্রথম বর্ষের জয়রামপুর তাম্রশাসন, ১৮তম বর্ষের কোটালিপাড়া তাম্রশাসন ও ৩৩তম বর্ষের মল্লসারুল তাম্রশাসন এবং,
৪. সমাচারদেবের রাজত্বকালের সপ্তম বর্ষের কুরপালা (কোটালিপাড়া উপজেলা) তাম্রশাসন (এখনও পর্যন্ত অপ্রকাশিত) ও ১৪তম বর্ষের ঘুগরাহাটি (কোটালিপাড়া উপজেলা) তাম্রশাসন।
দ্বাদশাদিত্য, ধর্মাদিত্য, গোপচন্দ্র ও সমাচারদেব, গুপ্তোত্তর বাংলার এই চার শাসকই তাঁদের সংস্কৃত ভাষায় উত্তর ভারতীয় ব্রাহ্মীর পূর্বী ধারার লিপিতে লেখা তাম্রশাসনে ‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি ব্যাবহার করেছেন, যার অর্থ তাঁরা স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন। তাঁদের শাসনের কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল বঙ্গ অর্থাৎ পূর্ব বাংলা। এই চার শাসকের ৬টি তাম্রশাসন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কোটালিপাড়া উপজেলা থেকে পাওয়া গেছে। এই তাম্রশাসনগুলিতে স্থানটিকে বারকমণ্ডল বিষয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। গোপচন্দ্রের তাম্রশাসন তাঁর শাসনকেন্দ্র থেকে যথেষ্ট দূরে, পূর্ব বর্ধমান জেলার মল্লসারুল ও ওড়িশার বালেশ্বর জেলার জয়রামপুর থেকে পাওয়া গেছে। এই প্রাপ্তি তৎকালীন প্রাচীন বর্ধমানভুক্তি ও দণ্ডভুক্তি, অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চল তাঁর রাজত্বের অন্তর্ভুক্ত হবার সম্ভাবনার প্রতি ইঙ্গিত করে। গোপচন্দ্রের স্বর্ণমুদ্রার কথা দীর্ঘদিন ধরে জানা গেছে। তাঁর দুটি স্বর্ণমুদ্রা ঢাকার বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। বিভিন্ন সংগ্রহালয়ে সংরক্ষিত এবং হুগলি জেলার হাসনান ও বাংলাদেশের যশোর জেলার মহম্মদপুর থেকে প্রাপ্ত সমাচারদেবের স্বর্ণমুদ্রাও বহুদিন যাবৎ জ্ঞাত। সাম্প্রতিক কালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মোগলমারিতে উৎখননের সময় সমাচারদেবের স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। সম্ভবত সমাচারদেবের রাজত্বও রাঢ় অঞ্চল পর্যন্ত ব্যাপ্ত ছিল। সমাচারদেবের সুবর্ণমুদ্রায় লেখা ‘শ্রীনরেন্দ্রবিনত’ কথাটি থেকে তাঁকে শৈব বলে অনুমান করা হয়। বঙ্গের এই চার শাসকের মধ্যে কোন রক্তের সম্পর্ক ছিল কিনা তা ঠিক জানা না গেলেও আধুনিক বিদ্বানদের অনুমান দ্বাদশাদিত্য, ধর্মাদিত্য ও গোপচন্দ্র পর পর রাজত্ব করেছিলেন, এবং সমাচারদেব তাঁদের পর রাজত্ব করেছিলেন। বাংলাদেশের কোটালিপাড়া, মহাস্থান ও সাভার থেকে সুধন্যাদিত্য নামের এক শাসকেরও স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে, কিন্তু, ইনি এই চার জ্ঞাত স্বাধীন শাসকদের সঙ্গে কোন ভাবে সম্পর্কিত কিনা জানা যায়নি।

ষষ্ঠ শতকে সমতট
দক্ষিণ পূর্ব বাংলার সমতট অঞ্চলের শাসক চতুর্থ শতক সাধারণাব্দেই গুপ্তদের অধীনতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ স্তম্ভ প্রশস্তিতে সমতটের শাসককে তাঁর অধীনস্থ ‘প্রত্যন্ত নৃপতি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নামতির শালবন বিহার প্রত্নক্ষেত্র থেকে সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সুবর্ণমুদ্রা পাওয়া গেছে। গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে যে সামন্ত শাসকগণ রাজত্ব করতেন, সম্ভবত তাঁরাই ষষ্ঠ শতকের গোড়া থেকে প্রায় স্বাধীনভাবে শাসন শুরু করেছিলেন। সম্প্রতি জাপানি গবেষক রিওসুকে ফুরুই ঢাকার জনৈক সংগ্রাহকের নিজস্ব সংগ্রহে রক্ষিত বৈন্যগুপ্তের ১৮৪ গুপ্তাব্দের (৫০৩-৫০৪ সাধারণাব্দ) একটি তাম্রশাসন তাঁর একটি গবেষণা নিবন্ধে প্রকাশ করেছেন। এই নব আবিষ্কৃত তাম্রশাসনে ৯১ গুপ্তাব্দের (৪০৯-৪১০ সাধারণাব্দ) আর একটি প্রাচীনতর তাম্রশাসন থেকে হুবহু উদ্ধৃত করা হয়েছে। এই উদ্ধৃত তাম্রশাসনে উল্লিখিত শাসক মহারাজা মহেশ্বর নাথচন্দ্র, নিঃসন্দেহে গুপ্ত সম্রাটদের অধীনস্থ শাসক ছিলেন। বৈন্যগুপ্তের শাসনকালের আরও দুটি তাম্রশাসন এর পূর্বে আবিষ্কৃত হয়েছিল – বর্তমান কুমিল্লা জেলার গুনাইগড় থেকে ১৯২৫ সালে আবিষ্কৃত ১৮৮ গুপ্তাব্দের (৫০৭-৫০৮ সাধারণাব্দ) একটি তাম্রশাসন ও ১৯৭৪ সালে ব্যারি মরিসনের একটি নিবন্ধে প্রথম উল্লিখিত ময়নামতির শালবন বিহার প্রত্নক্ষেত্র থেকে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় প্রাপ্ত একটি অজ্ঞাত তারিখের তাম্রশাসন। ফুরুই উল্লিখিত ১৮৪ গুপ্তাব্দের এই তাম্রশাসনটিতে বলা হয়েছে, মহাপ্রতীহার, মহারাজা বৈন্যগুপ্ত ‘পরমভট্টারক’-এর ‘পাদানুধ্যান’ করেন, কিন্তু এর পূর্বে আবিষ্কৃত ১৮৮ গুপ্তাব্দের গুনাইগড় তাম্রশাসনে দেখা যাচ্ছে, তিনি ভগবান মহাদেবের ‘পাদানুধ্যান’ করেন। দুটি তাম্রশাসনেই গুপ্তাব্দের উল্লেখ থেকে অনুমান করা যায়, এই ‘পরমভট্টারক’ অবশ্যই কোন গুপ্ত সম্রাট, এবং তিনি গুপ্তদের অধীনস্থ সামন্ত শাসক ছিলেন। বৈন্যগুপ্তের ১৮৪ ও ১৮৮ গুপ্তাব্দের উভয় তাম্রশাসনই ক্রীপুর জয়স্কন্ধাবার থেকে জারি করা হয়েছিল। তাঁর ১৮৪ গুপ্তাব্দের তাম্রশাসনে আজীবিক শ্রমণসংঘের একটি মণিভদ্র যক্ষের আয়তনের (মন্দিরের) জন্য দান নথিবদ্ধ করা হয়েছে এবং ১৮৮ গুপ্তাব্দের তাম্রশাসনে আচার্য শান্তিদেব প্রতিষ্ঠিত মহাযান বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের একটি অবলোকিতেশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত বিহারের জন্য দান নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
বৈন্যগুপ্তের পর ষষ্ঠ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সমতট এলাকা নাথ ও রাত বংশীয় শাসকদের অধীনে ছিল। ১৯৪৫ সালে বর্তমান কুমিল্লা জেলার কৈলান গ্রাম থেকে প্রাপ্ত শ্রীধারণরাতের রাজত্বকালের অষ্টম বর্ষের তাম্রশাসন থেকে রাতবংশের প্রথম দুই শাসক জীবধারণরাত ও তাঁর পুত্র শ্রীধারণরাতের কথা প্রথম জানা যায়। ১৯৭৯ সালে কুমিল্লা জেলার উড়িশ্বর থেকে তিনটি তাম্রশাসন পাওয়া যায়। এর মধ্যে যে তাম্রশাসনটির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, সেই লেখটি সমতটেশ্বর শ্রীধারণরাতের রাজত্বকালের পঞ্চম বর্ষের। শ্রীধারণরাত খুব সম্ভবত সমতটের স্বাধীন শাসক ছিলেন। শ্রীধারণরাতের এই দুই তাম্রশাসন থেকে জানা গেছে যে তাঁর রাজধানী ছিল দেবপর্বত অর্থাৎ বর্তমান ময়নামতি অঞ্চলে। জীবধারণরাত ও তাঁর পুত্র শ্রীধারণরাতের সুবর্ণমুদ্রার সন্ধান পাওয়া গেছে।
এখনও পর্যন্ত দুই নাথবংশীয় শাসকের তাম্রশাসন পাওয়া গেছে। ১৯০৫ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার (পরবর্তীকালের কুমিল্লা জেলা) কোন একটি স্থান থেকে লোকনাথের ২৪৪ গুপ্তাব্দের (৫৬৩-৫৬৪ সাধারণাব্দ) একটি তাম্রশাসন পাওয়া যায়। এরপর ১৯৬৩ সালে মৌলবীবাজার জেলার কলাপুর গ্রামে মরুণ্ডনাথের একটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়। এই দুই নাথবংশীয় শাসকই সামন্ত শাসক ছিলেন, লোকনাথ ও মরুণ্ডনাথের তাম্রশাসনে ‘সামন্ত’ উপাধি ও লোকনাথের তাম্রশাসনে গুপ্তাব্দের ব্যাবহার তারই দ্যোতক। লোকনাথের ত্রিপুরা তাম্রশাসনে জীবধারণ নামের যে শাসকের সঙ্গে তাঁর যুদ্ধের কথা উল্লিখিত হয়েছে, তিনি অবশ্যই রাতবংশীয় জীবধারণ।

ষষ্ঠ শতকে বরেন্দ্র
প্রথম কুমারগুপ্তের (রাজত্বকাল ৪১৫-৪৫৫ সাধারণাব্দ) তাম্রশাসনগুলির সাক্ষ্য থেকে এটা নিশ্চিত যে, সাধারণাব্দের পঞ্চম শতকে তাঁর রাজত্বকালের প্রায় গোড়ার পর্ব থেকেই বরেন্দ্র বা তৎকালীন পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি গুপ্ত সম্রাটদের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে শাসিত হতো। এখনও পর্যন্ত জ্ঞাত গুপ্ত শাসনাধীন বাংলা থেকে জারি করা ১৬টি তাম্রশাসনের মধ্যে প্রায় সবই পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি এলাকা থেকে জারি করা হয়েছে। গুপ্ত সম্রাট বিষ্ণুগুপ্তের ২২৪ গুপ্তাব্দের (৫৪২-৫৪৩ সাধারণাব্দ) দামোদরপুর তাম্রশাসন বরেন্দ্রভূমিতে গুপ্ত শাসনের শেষ নিদর্শন। সম্ভবত এর কয়েক বছরের মধ্যেই বরেন্দ্র তথা সমগ্র বাংলায় গুপ্তদের অধীনতা মুক্ত হয়। পুণ্ড্রবর্ধন এলাকায় গুপ্ত সম্রাটদের আধিপত্যের অবসানের অব্যবহিত পরে ঠিক কি হয়েছিল, কয়েক বছর আগেও তা জানা ছিল না। এখানে আলোচ্য সম্প্রতি আবিষ্কৃত তাম্রশাসনটি প্রথম এই অন্ধকারময় অধ্যায়ের উপর আলোকপাত করতে সক্ষম হয়েছে, আমরা জানতে পেরেছি গুপ্তোত্তর বাংলার ষষ্ঠ শতকের এ যাবৎ সম্পূর্ণ অজ্ঞাত এক স্বাধীন শাসকের নাম – মহারাজাধিরাজ প্রদ্যুম্নবন্ধু।
প্রদ্যুম্নবন্ধুর সম্প্রতি আবিষ্কৃত তাম্রশাসন
বাংলায় পাল যুগের পূর্ববর্তী কালের শিলালেখ প্রায় নেই বললেই চলে, তাম্রশাসনও কেবল গোটা পঁচিশেক পাওয়া গেছে। অভিলেখ থেকে পাল পূর্ব যুগের প্রাচীন বাংলার ইতিহাস নির্মাণ তাই দুরূহ। প্রাচীন বাংলার ইতিহাসের উপাদানের এই স্বল্পতার পরিপ্রেক্ষিতে এ যাবৎ সম্পূর্ণ অজ্ঞাত এক শাসকের তাম্রশাসন আবিষ্কার একটি মহামূল্যবান প্রাপ্তি। ‘প্রত্ন সমীক্ষা’ পত্রিকায় ২০১৫ সালে প্রকাশিত আর্লো গ্রিফিথসের নিবন্ধে উল্লিখিত এই নতুন আবিষ্কার আমাদের ষষ্ঠ শতকের বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস সম্পর্কে পুনর্বিচার করতে প্রেরিত করেছে।

মহারাজাধিরাজ প্রদ্যুম্নবন্ধুর রাজত্বকালের পঞ্চম বর্ষের এই তাম্রশাসনটি সম্ভবত বাংলাদেশের উত্তরের কোন জেলা থেকে খুঁজে পাওয়া গেছিল। আজ এই তাম্রশাসনটির বর্তমান অবস্থান হংকং-এর পুরাবস্তু সংগ্রাহক ফ্রাঁসোয়া ম্যান্ডেভিলের সংগ্রহে। আনুমানিক ২০১২ সালে তিনি ইতালির মিলান-এর এক পুরাবস্তুর ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই তাম্রশাসনটি ক্রয় করেন। প্রায় সম্পূর্ণ তাম্রশাসনটি পাঠ করা সম্ভব হয়েছে। এই তাম্রশাসনের বাঁদিকে একটি বৃহৎ সিল মুদ্রিত ও তার উপর আর একটি ছোট সিল মুদ্রিত। তাম্রশাসন ও সিলদুটিতে ব্যবহৃত লিপি ষষ্ঠ শতকে প্রচলিত উত্তর ভারতীয় ব্রাহ্মীর পূর্বী ধারা, ভাষা সংস্কৃত। গজলক্ষ্মীর চিত্র সম্বলিত বৃহৎ সিলটি ঘোণাদ্বীপক বিষয়ের অধিকরণের সরকারি সিল, ছোট সিলটি সম্ভবত রাজকীয় মুদ্রা।
এই তাম্রশাসনটিতে প্রদ্যুম্নবন্ধুর অধীনস্থ শ্রী পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির অন্তর্গত ঘোণাদ্বীপক বিষয়ের অন্তর্ভূত মস্তকশ্বভ্র নামের একটি গ্রাম ঘোণাদ্বীপক বিষয়ের মহাপ্রতীহার অবধূত কর্তৃক জয়দেব নামের জনৈক ব্রাহ্মণকে দানকে নথিবদ্ধ করা হয়েছে। এই লেখে প্রদ্যুম্নবন্ধুর দ্বারা নিযুক্ত পুণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির উপারিক বা ঘোণাদ্বীপক বিষয়ের মহাপ্রতীহার – এই দুটি প্রশাসনিক পদের উল্লেখ থেকে মনে হয় প্রদ্যুম্নবন্ধুর আমলেও গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক সংগঠন বজায় রাখা হয়েছিল। প্রদ্যুম্নবন্ধুর ‘মহারাজাধিরাজ’ উপাধি তাঁর স্বাধীনতার সাক্ষ্য বহন করে। এই শাসকের সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত অন্য কোন উত্স থেকে কিছু জানা যায়নি। শুধু তাঁর নাম থেকে তাঁকে বৈষ্ণব বলে অনুমান করা যেতে পারে। তাম্রশাসনের লিপির ছাঁদ থেকে প্রদ্যুম্নবন্ধুর কালপর্ব ৫৫০-৬৫০ সাধারণাব্দের মধ্যবর্তী বলে অনুমান করা হয়েছে। উত্তর বাংলায় গুপ্ত আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে প্রথম স্বাধীন শাসনের সূচনা তিনি বা তাঁর কোন পূর্বপুরুষ করেছিলেন কিনা এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এই তাম্রলেখ থেকে জানা যায়নি।
বিগত কয়েক দশকে আবিষ্কৃত নতুন তাম্রশাসনগুলি থেকে প্রাপ্ত তথ্য গুপ্তোত্তর বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, মহারাজাধিরাজ প্রদ্যুম্নবন্ধুর এই সম্প্রতি আবিষ্কৃত তাম্রশাসনটিও এই কালপর্বের বাংলার, বিশেষ করে উত্তর বাংলার ইতিহাসের পুনর্নির্মাণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে স্বীকৃত হবে।

সূত্র: সংগুহিত।
তারিখ: মার্চ ২৩, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ