Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে কতটা এগিয়ে বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ (২০২২)

Share on Facebook

লেখক: ড. মইনুল ইসলাম।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মানের তুলনা করলে যে বিষয়গুলো সামনে চলে আসবে সেগুলো হলো, পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের মানুষ বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনামলে যথাযথ গুরুত্ব পাওয়ায় এবং অপারেশন বর্গার মতো কৃষি সংস্কারের সুফল পাওয়ায় বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের চেয়ে জীবনযাত্রার মানে বেশ এগিয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে গত সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশ থেকে যে ১ কোটি ৩০ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন, তাঁদের ৯০ শতাংশ যেহেতু গ্রামের মানুষ, তাই তাঁদের পাঠানো ক্রমবর্ধমান রেমিট্যান্সের অর্থপ্রবাহ এ দেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনে সচ্ছলতার একটা বড়সড় উপাদান নিয়ে এসেছে, যা পশ্চিমবঙ্গে তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এই একটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গকে এতটা পেছনে ফেলে দিয়েছে যে, এখন পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি অনেক বেশি গতিশীল ও সচ্ছল হয়ে উঠেছে।

আমরা অনেকেই হয়তো জানি না যে, গড় মাথাপিছু জিডিপির দিক থেকেও বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণ পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ জনগণকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মাথাপিছু জিডিপি ভারতের গড় মাথাপিছু জিডিপির সমান হলেও ওখানকার গ্রামীণ মাথাপিছু জিডিপি অনেক কম। কলকাতা, দুর্গাপুর, বর্ধমান ও শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মূল সমৃদ্ধি-কেন্দ্র রয়ে গেছে।

গত বছর বাংলাদেশে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করেছি। ২০২১ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সব শর্ত পূরণ করেছে। এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘নিম্নআয়ের দেশ’ ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশ ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’ ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণ হয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা গ্রামের ভূমিহীন নারীদের কাছে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পৌঁছে দেওয়ার একটা অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে এবং এই সফল উদ্ভাবনটি বিশ্ব স্বীকৃতি অর্জন করেছে। গ্রামীণ ব্যাংক ও কয়েক হাজার এনজিওর ক্ষুদ্র ঋণের সহায়তায় গ্রামীণ নারীর স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সফল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।

বাংলাদেশের নারীদের প্রায় ৩৬ শতাংশ বাড়ির আঙিনার বাইরে অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে ক্রিয়াশীল। দেশের দ্রুত বিকাশমান পোশাকশিল্পে ৩৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আর এই শ্রমিকদের ৬০ শতাংশের বেশি নারী, যাঁদের সিংহভাগই গ্রাম থেকে এসে শহরে কর্মসংস্থানকে বেছে নিয়েছেন। সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক অবস্থানের এসব নারীর প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প খাতে কর্মসংস্থান তাঁদের বঞ্চনা ও চরম দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বৃহদংশই তাঁদের আয়ের একটা অংশ গ্রামে থাকা মা-বাবা-সন্তানের ভরণপোষণের জন্য গ্রামে পাঠিয়ে দেন, যা গ্রামের প্রান্তিক জনগণকে দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে রক্ষা করছে।

কিছুদিন আগেও মনে করা হতো, কৃষি খাতের অগ্রগতি বাংলাদেশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে বেশি। কিন্তু এখন বাংলাদেশের কৃষি খাতেও সমৃদ্ধির ছোঁয়া লেগেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতিমালা গ্রহণের কারণেই কৃষি খাতে এই চমকপ্রদ সাফল্যের ধারা সূচিত হয়েছিল এবং ১৯৯৮ সালের বন্যার ধ্বংসযজ্ঞ সত্ত্বেও ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ দীর্ঘ ৪২ বছর পর ধান উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছিল। দুঃখজনকভাবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ওই কৃষি নীতিমালা পরিত্যাগ করে।

২০০৯ সালে মহাজোট ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের নিষ্ঠাবান প্রয়াসের ফলে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মোটা ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৯৭২ সালে দেড় কোটি টন ধান লাগত আমাদের, অথচ উৎপাদন করতে পারতাম মাত্র ১ কোটি ১০ লাখ টন। গত বছর এ দেশে ৩ কোটি ৮২ লাখ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। ১৭ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যশস্য জোগান দিয়েও এখন প্রায় প্রতিবছর মোটা ধান উদ্বৃত্ত হচ্ছে আমাদের। ধান, গম ও ভুট্টা মিলে ২০২০ সালে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল ৪ কোটি ৫৩ লাখ টন। ৭০ লাখ টন আলুর অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিপরীতে ২০২০ সালে বাংলাদেশে ১ কোটি ২ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়, তরকারি উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ। হাঁস-মুরগির ডিম ও মাংস উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গরুর মাংস ও দুধ উৎপাদনে দেশে এখনো ঘাটতি রয়ে গেলেও মাংস উৎপাদনে কয়েক বছরের মধ্যেই স্বয়ম্ভরতা অর্জন করা যাবে।

ঈদুল আজহার সময় অতীতে চোরাচালানে আসা ভারতীয় গরু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও এখন তার প্রয়োজন হয় না, বরং মাঝেমধ্যে কোরবানির গরু উদ্বৃত্ত থাকছে। আম, আনারস, কলা, পেয়ারা ও কাঁঠালের মতো কয়েকটি প্রধান ফল উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। যদিও প্রতিবছর আমরা ৫৫/৬০ লাখ টন গম আমদানি করিে থাকি। খাদ্যসাহায্য এখন আমাদের বৈদেশিক ঋণ/অনুদানের ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।

উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার, সেচ ব্যবস্থার আওতায় আসায় দেশের অধিকাংশ জমিতে বোরো চাষের সম্প্রসারণ, যথাযথ ভর্তুকি প্রদান, কৃষিঋণ পদ্ধতির সহজীকরণ, ফসলের বহুধাকরণ, কৃষির লাগসই যান্ত্রিকীকরণ, উচ্চফলনশীল ফসল, তরিতরকারি, মাছ, হাঁস-মুরগি ও ফলমূল চাষের ব্যাপক প্রচলন, রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা ইত্যাদি কৃষি খাতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ফলে উৎপাদনশীলতার উল্লম্ফন দেশে একটি কৃষিবিপ্লবের সূচনা করেছে। অবশ্য দেশের জিডিপির মাত্র ১৪ শতাংশ এখন কৃষি খাত থেকে আসছে, যা ক্রমহ্রাসমান। কিন্তু কৃষিতে এখনো দেশের ৪০ শতাংশ শ্রমজীবী মানুষ কর্মরত রয়েছেন।

উপরন্তু, বাংলাদেশের অভিবাসীরা ফরমাল চ্যানেলে প্রতিবছর যে ২২ বিলিয়ন ডলার অর্থ এবং হুন্ডির মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে যে আরও আট-দশ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তা গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় শক্তির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য দ্রুত নিরসনের বড় কারণ এই রেমিট্যান্স প্রবাহ। রেমিট্যান্স প্রবাহের সুফলভোগী পরিবারগুলোর বর্ধিত ভোগ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড়সড় সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

বাড়িঘর পাকা হচ্ছে, অন্যান্য ধরনের বসতঘরেরও মান বৃদ্ধি পেয়েছে, ছেলেমেয়েরা ভালো স্কুল-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, পরিবারের সদস্যদের আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সামর্থ্য বাড়ছে, শিশুমৃত্যুর হার কমছে, স্যানিটারি পায়খানার প্রচলন বাড়ছে, ঘরে ঘরে টিউবওয়েল বসে গেছে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে এসেছে, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত হচ্ছে, গ্রামে শপিং মল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাটেও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। ফলে গ্রামীণ জনগণের মধ্যে প্রায় ৮০ লাখ পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ৪-৫ কোটি মানুষ এখন নিম্নমধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত অবস্থানে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। কৃষি খাতের সাফল্যের পেছনেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য।

কৃষিতে উচ্চফলনশীল প্রযুক্তির প্রসার, সেচব্যবস্থার ব্যাপক প্রচলন, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ, গ্রামীণ যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের পারঙ্গমতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স বিপুল অবদান রাখছে।

পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগুলোর সাক্ষরতার হার এখনো বাংলাদেশের গ্রামীণ সাক্ষরতার হারের চেয়ে অনেক বেশি। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার মানও বাংলাদেশের চেয়ে ভালো, উচ্চশিক্ষিত মানুষও পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি। (মাদ্রাসা শিক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পেছনে টেনে ধরে রেখেছে)। ফলে গ্রামীণ জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা পশ্চিমবঙ্গে অনেক বেশি হওয়ায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ওখানে অনেকখানি দুর্নীতিমুক্ত। অথচ বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের সবচেয়ে বেশি দুর্দশা, যাতনা ও হয়রানি ঘটিয়ে চলেছে স্থানীয় সরকারের দুর্নীতি। এ দেশের গ্রামীণ জনগণের জীবনের আরেকটি বিভীষিকার নাম শাসকদলের নেতা-কর্মীদের মাস্তানি ও গুন্ডামি।

দেশ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাসিত হয়ে গেছে। এমনকি গ্রামের ইউনিয়ন কাউন্সিলের নির্বাচনে এবার যে সন্ত্রাস, খুনোখুনি, মাস্তানি ও জালিয়াতি পরিদৃষ্ট হলো তাতে প্রশ্ন উঠছে, অর্থনৈতিক অভাব-অনটন বেশ খানিকটা কমে গেলেও বাংলাদেশের গ্রামের মানুষ কি ভালো আছেন? অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের সুফল গ্রামীণ জনগণের তৃণমূল পর্যায়েও পৌঁছে গেছে। ওখানকার পঞ্চায়েতগুলো জনগণের অংশগ্রহণমূলক ও জবাবদিহিমূলক স্থানীয় সরকারের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনগুলোও পশ্চিমবঙ্গে জালিয়াতিমুক্ত বলা চলে। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবি সেটাই প্রমাণ করেছে।

*** ড. মইনুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ জানুয়ারী ০৮, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ