Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

বাংলাদেশিরা কেন ভারতে যায় !(২০২১)

Share on Facebook

সর্বশেষ স্বাভাবিক বছর ২০১৯ সালে রেকর্ডসংখ্যক ১৫ লাখ বাংলাদেশিকে ভারতীয় ভিসা দেওয়া হয়। এটা ভারতে গমনের জন্য ইস্যুকৃত মোট ভিসার ২০ শতাংশ এবং বিদেশে ভারতীয় মিশনগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ কয়েক বছর আগেও সাড়ে ছয় লাখ থেকে সাত লাখ ভিসা দেওয়া হতো। কাজেই দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছর বাংলাদেশের মানুষ কারণে–অকারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক কালে এ সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তাই একটি সংগত প্রশ্ন, বাংলাদেশের মানুষ কেন সেখানে যায়?

অমিত শাহর ভাষ্য

‘বাংলাদেশের গরিব মানুষ এখনো খেতে পাচ্ছে না’ বলে দাবি করেছেন বিজেপির সাবেক সভাপতি ও ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। অমিত শাহ মুখ ফসকে এ কথা বলেছেন, তা কিন্তু নয়; তিনি এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ‘১০ থেকে ১৫ বছরে বাংলাদেশের এত আর্থিক উন্নয়ন সত্ত্বেও কেন লোকে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশ করছে?’ আনন্দবাজার পত্রিকার এমন প্রশ্নে অমিত শাহ বলেন, ‘এর দুটো কারণ আছে। এক, বাংলাদেশের উন্নয়ন সীমান্ত এলাকায় নিচুতলায় পৌঁছায়নি। যেকোনো পিছিয়ে পড়া দেশে উন্নয়ন হতে শুরু করলে সেটা প্রথমত কেন্দ্রে হয়। আর তার সুফল প্রথমে বড়লোকদের কাছে পৌঁছায়। গরিবদের কাছে নয়। এখন বাংলাদেশে সেই প্রক্রিয়া চলছে। ফলে, গরিব মানুষ এখনো খেতে পাচ্ছে না। সে কারণেই অনুপ্রবেশ চলছে।’

রীভা গাঙ্গুলির বক্তব্য

সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের মতে, অধিকসংখ্যক বাংলাদেশির সে দেশে গমনের ফলে ভারত অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশিরা সেখানে ঈদ ও বিয়ে উপলক্ষে কেনাকাটা ও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। তাই সম্প্রতি করোনার কারণে বাংলাদেশিদের ভারতে যাতায়াত ব্যাহত হলে কলকাতা ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিপণিকেন্দ্র ও হোটেল ব্যবসায়ীদের মাতম ওঠে।

কেনাকাটা ছাড়াও আর যেসব কারণে বাংলাদেশিরা ভারতে যায়, তা হলো চিকিৎসা, পড়াশোনা ও পর্যটন। ভারতের হাসপাতাল ও তৎসংলগ্ন হোটেলের বাংলাদেশি রোগী–নির্ভরশীলতার কারণেই অন্যান্য ভিসা বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি চিকিৎসা ভিসা চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশি পর্যটকদের একাধিক সফর ও অবস্থানে জনপ্রতি দুই হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় ধরলেও এসব খাত থেকে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

অভিবাসনের প্রকারভেদ

উন্নত অর্থনৈতিক সুযোগ, দেশে রাজনৈতিক নিপীড়ন, শিক্ষার সুযোগ প্রভৃতি কারণে মানুষ নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যায়। এদের কেউ যায় স্থায়ী অভিবাসী হয়ে নাগরিকত্ব লাভের জন্য। অন্যরা সাময়িক অভিবাসনের জন্য যায়। যেমন পড়াশোনা, চিকিৎসা, পর্যটন শেষে দেশে ফিরে আসে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ থেকে ভারতে গমনকারী সবাই নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সাময়িক অভিবাসনের জন্য সেখানে যায়। কেননা, ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জি ও সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের আওতায় কেবল বাংলাদেশ, পাকিস্তানও আফগানিস্তানের অমুসলিম নাগরিকেরা দ্রুত নাগরিকত্ব লাভের যোগ্য হবে। এ সুযোগ নিয়ে মুষ্টিমেয় অমুসলিম বাংলাদেশি দেশে তাদের বৈধ ও অবৈধ আয় ভারতে পাচার করে কলকাতার সল্টলেকসহ ভারতের বিভিন্ন শহর ও আবাসিক এলাকায় থিতু হচ্ছে।

অভিবাসনের রাজনৈতিক অর্থনীতি

কতগুলো ঠেলা (পুশ) এবং টানা (পুল) কার্যকারণ অভিবাসনের পেছনে কাজ করে। যেসব কারণ নাগরিকদের বিদেশে ঠেলে দেয়, তা হলো কর্মসংস্থানের অভাব, চিকিৎসাব্যবস্থার অপ্রতুলতা, রাজনৈতিক নিপীড়ন, ধর্মীয় নিপীড়ন, সম্পত্তির ক্ষতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিয়ের সুযোগের অভাব ইত্যাদি। আর যেসব বিষয় নাগরিকদের বিদেশে টেনে নেয়, তা হলো চাকরির সুযোগ, উন্নত জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ, নিরাপত্তা, কম অপরাধপ্রবণতা, আত্মীয় সংযোগ, বিয়ের সুবিধা ইত্যাদি। অভিবাসনের কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের স্থায়ীভাবে ভারতে অভিবাসন গ্রহণের কোনো কারণ বা সুযোগ নেই।

তবে বাংলাদেশিদের ভারতে সাময়িক অভিবাসনের অনেক কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের উন্নততর, সাশ্রয়ী ও সংবেদনশীল চিকিৎসাব্যবস্থা; উন্নত ও সাশ্রয়ী শিক্ষাব্যবস্থা ও পর্যটন অবকাঠামো এবং সাশ্রয়ী কেনাকাটার সুযোগ। মনে রাখতে হবে, অনেক মধ্যবিত্ত, এমনকি নিম্নবিত্তও বাধ্য হয়ে বিদেশে চিকিৎসা শিক্ষালাভ, পর্যটন ও কেনাকাটা করে। যারা এসব সেবা গ্রহণের জন্য ভারতে যায়, তাদের বক্তব্য হলো সেখানে সেবার মান ভালো এবং মূল্যসাশ্রয়ী। কাজেই দেশে এসব সেবার মান বাড়াতে পারলে এবং ব্যয় কমাতে পারলে ভারতে সাময়িক অভিবাসন গ্রহণকারীর সংখ্যা বহুলাংশে কমে আসবে।

কী করতে হবে

চিকিৎসা ও শিক্ষার কথাই ধরা যাক। আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার মান ও অপ্রতুলতা বর্তমান করোনা সংকটে আরও প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। তাই এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চুরি ও অপচয় হ্রাস করতে হবে। এই যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, এগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য চিহ্নিত করা যেতে পারে। যার উদ্দেশ্য হবে বিদেশগামী জনস্রোত থামানো। মনে রাখতে হবে, এসব খাতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে, তাতে দু–তিন বছরের মধ্যেই এ বিনিয়োগ উঠে আসবে। কেবল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করলেই চলবে না; প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রশিক্ষিত চিকিৎসক, শিক্ষা ও প্রযুক্তিবিদদের দেশে রাখার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

এবার আসি কেনাকাটা ও পর্যটন বিষয়ে। এখানে সমস্যা হলো উচ্চমূল্য। বাংলাদেশিদের ভারতে কেনাকাটার প্রধান বিষয় হলো শাড়ি ও পোশাক। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়ায় পোশাকশিল্পের দেশীয় বাজার অবহেলিত হচ্ছে। বস্ত্রকলগুলোকে দেশীয় বাজারনির্ভর করতে হবে। এ খাতের ক্ষুদ্রশিল্পকে প্রণোদনা দিতে হবে।

এর সঙ্গে এক চিমটে দেশাত্মবোধ যোগ করতে হবে। মনে পড়ছে, কাঠমান্ডুতে সাফটা বাণিজ্য দর-কষাকষির ফাঁকে শালের দোকানে গিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় দলনেত্রী মীরা শংকর (পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের রাষ্ট্রদূত)। তিনি শাল দেখলেন, দর জানলেন, কিন্তু একটিও শাল কিনলেন না। অথচ আমাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীর মতো শালের বান্ডিল। ভেবে এখন লজ্জা হচ্ছে! ‘দেশের পণ্য কিনে হও ধন্য’ নীতি অনুসরণ করতে হবে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য কেবল অমিত শাহর একার নয়; এর আগে সে দেশের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি মন্তব্য করেছিলেন, ভারতের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলে বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ তাদের দেশ ছেড়ে দেবে।

ভারতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে মনে হয়েছে, দলিতদের পরই ভারতে সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হচ্ছে মুসলমান ও বাঙালি (হিন্দু-মুসলিমনির্বিশেষে) সম্প্রদায়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এ দুই পরিচয়ই ধারণ করে। তাই বাংলাদেশিদের সম্পর্কে ভারতের শাসকগোষ্ঠীর এ মন্তব্য মোটেই অপ্রত্যাশিত নয়। কেউ কেউ মনে করেন, পশ্চিম বাংলায় ভোটের রাজনীতি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য এসেছে। এটা ঠিক নয়। বহুলসংখ্যক ভারতীয় এ মনোভাব পোষণ করেন। এর মূল কারণ সমাজতাত্ত্বিক। যে কেউ প্রবাসী ভারতীয় লেখক রোহিন্তন মিস্ত্রির আ ফাইন ব্যালান্স বইটি পড়লে এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন।

তাই অমিত শাহর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে কিংবা অধিকাংশ ভারতীয় উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক কাজটি সম্পাদন করে বলে আত্মপ্রসাদ লাভ করার সুযোগ নেই। আমাদের বিপুল জনগোষ্ঠীর ভারতগামিতার রাশ টেনে ধরতে হবে উল্লিখিত পদক্ষেপের মাধ্যমে।

সম্প্রতি উন্নয়ন সূচকের অর্থবহতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠেছে এবং এর পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। আমাদের ক্ষেত্রে তেমন অর্থবহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি সূচক হতে পারে ভারতীয় ভিসাপ্রার্থী ও ভারতে গমনকারী বাংলাদেশির সংখ্যার ৫০ শতাংশ হ্রাস। সেটা সম্ভব হলেই প্রকৃত উন্নয়ন সাধিত হবে এবং অমিত শাহর মিথ্যাচারের সঠিক জবাব দেওয়া হবে।

লেখক: মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ
সূত্র: প্রথম আলো
তারিখ: এপ্রিল ২১, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ