Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

ভোট কিংবা ব্যাংক লোপাট ! (২০২২)

Share on Facebook

লেখক:মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

সাম্প্রতিক ও অতীতের কিছু ঘটনা আমাকে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ প্রবাদবাক্যটির কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রথম ঘটনাটি বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ও এর পরবর্তী ঘটনা নিয়ে।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক এবারট স্টিফটুং (এফইএস) আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে দেখতে চায় জাপান।

তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে আমরা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখার কথা শুনেছি, যা পৃথিবীর অন্য কোথাও শুনিনি। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না।’

পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রদূত নাওকিকে ডেকে পররাষ্ট্রসচিব সাক্ষাৎ করেন। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছিলাম। তাঁকে যা যা বলা দরকার আমরা বলেছি।’

ঘটনার ওপর প্রলেপ দেওয়ার জন্য জাপানের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা দুষ্ট লোকের ভুল তথ্যে ‘সাদামনে’ বলেছেন বলে দাবি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘কিন্তু তিনি আসলে বাংলাদেশের একজন ভালো বন্ধু।’ তত দিনে জাপানের শিনানো নদীতে অনেক জল গড়িয়ে গেছে, খবর আসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরে যাওয়ার কথা ছিল।

ওপরের ঘটনাপ্রবাহ আমাকে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে গুলশানে একটি নৈশভোজ-পূর্ব ককটেলসে আমাদের একজন ঝানু কূটনীতিবিদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের আলোচনার কথা মনে করিয়ে দেয়। স্মৃতি থেকে বলছি। কূটনীতিবিদটি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক আবুল আহসান (পরবর্তী সময় পররাষ্ট্রসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূত)।

সে সময় বাংলাদেশে অখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এমনি একটা বেমক্কা মন্তব্য করেন, যা ক্ষমতাসীনদের মনঃপূত ছিল না। অধ্যাপক মহোদয় সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতকে কেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হলো না, তা আবুল আহসানের কাছে জানতে চান। জবাবে আবুল আহসান তাঁকে বলেন, আপনাকে ‘ডিপ্লোমেটিক অপশনস’ ও ‘ডিপ্লোমেটিক অ্যাকশনস’–এর পার্থক্য বুঝতে হবে।

তিনি বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি পরাশক্তি, আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের অন্যতম সহায়তাকারী দেশ, চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করার কাজে সহায়তা করেছে। রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডাকা আমাদের একটা অপশন, কিন্তু নট নেসেসারিলি দ্য বেস্ট কোর্স অব অ্যাকশন। আমরা রাষ্ট্রদূতকে মন্ত্রণালয়ে ডাকিনি। কিন্তু একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রসচিব তাঁকে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত তাঁর মন্তব্যের জন্য পররাষ্ট্রসচিবের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।’

জাপানের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী দেশের রাষ্ট্রদূতকে তাঁর মন্তব্যের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এভাবে ডেকে পাঠানো সমীচীন হয়েছে কি? বিকল্প কিছু কি করা যেত না? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবুল আহসানের উত্তরসূরি কেউ আছে কি এবং থাকলে এভাবে ‘ভাবিয়া করিও কাজ’ করার ও রাজনীতিবিদদের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্মত করানোর ক্ষমতা তাঁদের আছে কি? আশা করি, জাপান ও বাংলাদেশ উভয়েই বিষয়টি অনুধাবন করে এ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেবে ও বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক এগিয়ে যাবে।
পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু আমাদের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ সংযোগ সেতু, যা আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করতে পারে। এটি আমাদের একটি গৌরবময় অর্জন। তবু কথা থাকে।

তখন যদি ‘ভাবিয়া করিও কাজ’ নীতি অনুসরণ করা হতো, তাহলে বিশ্বব্যাংকসহ অন্য দাতা সংস্থার সহজ শর্তের ঋণ পাওয়া যেত। সম্ভবত প্রকল্পটি তাদের তত্ত্বাবধানের কারণে আরও দুই বা তিন বছর আগে সমাপ্ত হতো, ফলে নির্মাণ ব্যয় হয়তোবা এক-তৃতীয়াংশ কম হতো। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার দায় পরিশোধ অনেক কম হতো, ভবিষ্যৎ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাথাব্যথার কারণ হতো না।

উল্লেখ্য যে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রকল্পের অনুমিত ব্যয় ছিল ৭৫৩.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চূড়ান্ত ব্যয় ছিল ৯৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা অনুমিত ব্যয়ের ২৬ শতাংশ বেশি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এক বছর বিলম্ব হয়েছিল। সে তুলনায় পদ্মা সেতুর চূড়ান্ত ব্যয় ৩০,১৯৩ কোটি টাকা, যা মূল অনুমিত ব্যয় ১০,১৬১ কোটি টাকার প্রায় ১৯৭ শতাংশ বেশি। পদ্মা সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে আট বছর, যা মূল অনুমিত সময় অপেক্ষা চার বছর বেশি।
ইসলামী ব্যাংক

দৈনিক নিউ এজ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ব্যাংকের নতুন মালিক গোষ্ঠী কেবল ইসলামী ব্যাংক থেকেই ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন থাকলেও তারা নিঃসন্দেহে একটি জন আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা মিটিয়ে ছিল এবং বেসরকারি খাতে একটি শক্তিশালী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। বিরোধী রাজনীতি শায়েস্তা করা ও ‘কথিত জঙ্গি অর্থায়ন বন্ধ’ করার অজুহাতে ব্যাংকটির মালিকানা সরকারের অনুগ্রহপুষ্ট বিতর্কিত এক শিল্পগোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।

যেমনটি আশঙ্কা করা হয়েছিল, তাই ঘটেছে ইসলামী ব্যাংকে। সেখানে এখন ব্যাংকটিকে বিপন্ন করার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে হয়। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার এক সংবাদ থেকে জানা যায়, ২৪ বছর বয়সী আনকোরা অনভিজ্ঞ যুবক আবদুল্লাহ আল রাকিবের কোম্পানি মেডিগ্রীন। উদ্যোক্তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। কোম্পানি গঠনের ১৪ দিনের মাথায় ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন ৯০০ কোটি টাকা।

কোনো জামানতের প্রয়োজন হয়নি। লাগেনি কোনো ক্রেডিট রিপোর্ট। কোম্পানির ঠিকানায় কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া যায়নি। নথিপত্রে মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা মুঠোফোন নম্বরও নেই। এমন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ৯০০ করে মোট ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক থেকে এর আগের ছয় বছরে প্রতিবছর ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হলেও গত এক বছরেই ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রথম আলো পত্রিকাতেও ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম সম্পর্কে সংবাদ ছাপা হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করলে ব্যাংকটির মালিকানা হস্তান্তর কখনোই অনুমোদন লাভ করত না।

ক্ষমতাসীনদের ক্রীড়নক এসব সংস্থার প্রধানেরা ভুলে যান যে ‘নগরে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না।’ উন্নয়ন হতে হলে এমন কিছু ছোটখাটো অনিয়ম হয় বলে আমাদের অবস্থা দাঁড়িয়েছে সে রাজার অবস্থায়। রাজামশাই বলেছিলেন তাঁর পুত্রের অন্নপ্রাশনের জন্য সবাই যাতে খোঁড়া দিঘিতে রাতে এক ঘড়া করে দুধ দেয়।

সবাই ভাবল, অন্যেরা তো সবাই দুধই দেবে, আমি না হয় একটু জল দিই। ভোর হলে দেখা গেল সবাই জলই দিয়েছে, দুধের দিঘি না হয়ে জলের দিঘি হয়েছে। তেমনিভাবে উন্নয়নের দোহাই দিয়ে সবাই একটু একটু করে অনিয়ম করতে গিয়ে আমরা এখন অনিয়মের সরোবরে হাবুডুবু খাচ্ছি।

স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভোট

সবশেষে জাপানি রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে ফিরে আসি। বাংলাদেশের ভোট নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তিনি তা দুষ্ট লোকের ভুল তথ্যে ‘সাদামনে’ বলেছেন এ ধরনের বালখিল্য উক্তি করে পার পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের মানুষ ও বৈদেশিক মিত্ররা সবাই চায় যে আগামী নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন হোক, যা গত দুটি নির্বাচনে ঘটেনি বলে জনমনে অস্বস্তি রয়েছে।

তাই এখনই নির্বাচনকালীন সরকারকাঠামো ও ইভিএম সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিবর্তিত কঠিন বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো অবস্থাতেই এর অন্যথা হলে চলবে না। তাই ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলে সবাইকে ‘ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না’ প্রবাদবাক্যটি মেনে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

****মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাবেক সচিব ও অর্থনীতিবিদ।

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:নভেম্বর ০৩, ২০২২

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ