Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

রাজধানীর বাইরেও টু-লেটের ছড়াছড়ি (২০২১)

Share on Facebook

কেবল রাজধানী ঢাকা নয়; করোনা মহামারিতে উপার্জন ও চাকরি হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ ও তাদের পরিবার চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, কুমিল্লা ও যশোরের মতো দেশের অন্য বড় শহরগুলো ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে পুরোদমে। কিন্তু মহানগরীগুলো ছেড়ে যাওয়া লাখো মানুষ এখনও আগের আবাস ও কর্মস্থলে ফিরে আসেনি। এর একটি বড় কারণ, কর্মসংস্থান পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। তাই করোনা সংকটে চাকরি হারানো লাখো মানুষ ফিরতে পারেনি তাদের আগের কর্মস্থলে। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আবার করোনার অজুহাতে শ্রমিকদের বেতনও কমিয়ে দিয়েছে। ফলে তারা পরিবারকে আর শহরে আনার সাহস পাচ্ছেন না।

এর অনিবার্য প্রভাব পড়েছে আবাসিক ভবনগুলোর ওপর। সমকালের ব্যুরো ও অফিসের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেশিরভাগ মহানগরীতে এখনও ‘টু-লেট’-এর ছড়াছড়ি। এতে বিপাকে পড়েছেন ভবন মালিকরা। তাদের বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছে না। অবশ্য কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে খুলনায়। সেখানে খুব বেশি টু-লেট চোখ পড়ছে না। আবার করোনা সংকটের শুরুতে অনেকে দোকান ছেড়ে চলে গেছেন। তার অনেকটি এখনও খোলেনি। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিনের লকডাউনে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েন। এরপর দফায় দফায় বেড়েছে লকডাউন। এতে বেকার হয়ে পড়েন শ্রমজীবী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা। তাদের অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। দীর্ঘ দেড় বছর পর জনজীবন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও শহরে ফিরে আসেননি অনেকেই। এর কারণ জানা গেছে ব্র্যাকের একটি জরিপে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর জরিপ করে গত মে মাসে এই বেসরকারি সংস্থাটি জানায়, ৩৬ শতাংশ লোক চাকরি বা কাজের সুযোগ হারিয়েছেন। ৩ শতাংশ লোক চাকরি থাকলেও বেতন পাননি। আর দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যারা কাজ করেন, তাদের ৬২ শতাংশই কাজের সুযোগ হারিয়েছেন।

চট্টগ্রামের মোড়ে মোড়ে ঝুলছে টু-লেট :চট্টগ্রাম থেকে সারওয়ার সুমন জানান, চট্টগ্রামের চারতারকা মানের নতুন হোটেল বেস্ট ওয়েস্টার্ন গত বছর করোনার ঠিক আগমুহূর্তে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু করোনার প্রথম ধাক্কা সামলাতে না পেরে নগরীর আগ্রাবাদের এ হোটেলের দুই শতাধিক শ্রমিককে ছাঁটাই নোটিশ দেওয়া হয় এক মাসেই। করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও চাকরিচ্যুত সেসব শ্রমিকের অধিকাংশের আর ফেরা হয়নি হোটেলে। তাদের একজন আকাশ মিত্র; আট হাজার টাকা বেতনে বেল বয়ের কাজ করতেন। তিনি জানালেন, তার সঙ্গে চাকরি হারানো সহকর্মী বেশিরভাগ এখনও বাড়িতে আছেন। নতুন করে আর চাকরি হয়নি তাদের।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে গত দেড় বছরে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ছাড়তে হয়েছে লাখো মানুষকে। শহরের অলিগলিতে তাই ঝুলছে এখনও শত শত ‘টু-লেট’। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৬০ লাখ বাসিন্দার ৯০ শতাংশই ভাড়াটিয়া। আগে যারা বাসা ছেড়ে গ্রামে ফিরেছেন, তাদের কেউ কেউ চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। কেউ-বা করোনাতে হারিয়েছেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। ব্যবসা করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বাসা ছাড়ার নোটিশ দেওয়া পরিবারও আছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। করোনা পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হলেও পুঁজির অভাবে নতুন করে আর ব্যবসায় ফিরতে পারছেন না অনেকে। আবার আর্থিক সংকটে গ্রামে নিয়ে যাওয়া পরিবারকেও আর শহরে আনতে পারছেন না কেউ কেউ। এভাবে নানা কারণে আর ফিরতে না পারা মানুষের সংখ্যা হবে লক্ষাধিক।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ, হালিশহর, লালখানবাজার, মুরাদপুর, ষোলশহর, নাসিরাবাদ, পাঁচলাইশ, আলকরণসহ ব্যস্ততম আবাসিক এলাকাগুলোতে শত শত বাসার সামনে ঝুলছে টু-লেট নোটিশ। এসব এলাকার অনেক দোকানপাটও বন্ধ।

আগে এমন নোটিশ সংশ্নিষ্ট বাসা বা দোকানের ওপর ঝোলানো হতো। কিন্তু গ্রাহক না থাকায় এখন শহরের বিভিন্ন মোড়ে ঝোলানো হচ্ছে টু-লেট নোটিশ। আবাসিক এলাকার টু-লেট বাসার পাশাপাশি গলির মুখেও ঝোলাচ্ছেন মালিকরা। গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকার শতাধিক বাসার মধ্যে এখন ৩০ শতাংশই খালি বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতারা। শ্যামলী আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখেও টু-লেট নোটিশ দেখা গেছে অন্তত এক ডজন। আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন রোডের মুখেও ঝুলতে দেখা গেছে টু-লেট নোটিশ। বিভিন্ন মার্কেটেও ঝুলতে দেখা গেছে দোকান বেচাকেনা কিংবা খালি হওয়ার নোটিশ। লাকি প্লাজার বিভিন্ন তলায় এমন নোটিশ আছে এক ডজনের বেশি। সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেট, সেন্ট্রাল প্লাজা ও আখতারুজ্জামান সেন্টারে এ ধরনের টু-লেট ও ক্রয়-বিক্রয়ের নোটিশ আছে অর্ধশত।

লাকি প্লাজায় কাপড়ের ব্যবসায়ী আজমত আলী বাহাদুর বলেন, তার দোকানে আগে ১০ জন কর্মচারী ছিল। তিন শিফটে কাজ করত তারা। এখন বিক্রি আগের তুলনায় অর্ধেক। তাই কর্মচারীর সংখ্যাও অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হয়েছে। সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটের প্রতিটি ফ্লোরে আছে দোকান ভাড়ার নোটিশ। অ্যাপেক্স ফুডস থেকে চাকরি হারানো সালেহা বেগম বলেন, ‘করোনার শুরুতে চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছি আমি। আবার চাকরি হয়েছে, কিন্তু বেতন আগের চেয়ে কম। কর্তৃপক্ষ বলেছে, আগামী তিন বছর এই বেতনে থাকতে হবে। তাই গ্রাম থেকে পরিবারকে আর শহরে আনছি না। দুই সন্তানকে গ্রামের স্কুলেই ভর্তি করিয়েছি।’

সিলেট শহরে ভাড়াটিয়ার অপেক্ষায় ভবন মালিকরা :সিলেট থেকে মুকিত রহমানী জানান, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই সিলেট নগরীর আখালিয়া নেহারীপাড়া ছাড়েন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার মদনপুরের চা বিক্রেতা জসিম। মাসে ছয় হাজার টাকার বাসা ভাড়া বাকি পড়তে পড়তে ৩০ হাজার টাকায় পৌঁছে। পরে বাড়ির মালিককে কিছু ভাড়া প্রদান করে গত বছর অক্টোবরে সিলেট ছাড়েন তিনি। এর পর এক বছরেও সিলেটে ফেরেননি তিনি। জসিমের এক আত্মীয় সমকালকে জানান, মনে হয় না সে আর ফিরবে। রাস্তায় ভ্যানগাড়িতে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত সে। করোনাকালে ভ্যান বিক্রি করে বাড়ি চলে যায়।

শহরে না ফেরাদের তালিকায় রয়েছেন চাকরি হারানো, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত পরিবারকেও শহর ছেড়ে যেতে হয়েছে। শহরের বিশাল একটি অংশ বাসা ছেড়ে দেওয়ায় মালিকরাও পড়েছেন লোকসানে। এখনও অনেকে ভাড়াটিয়া পাননি। সিলেট নগরীর বিভিন্ন মোড়ে এখনও ‘বাসা ভাড়া’ কিংবা টু-লেট লেখা বিপুলসংখ্যক সাইনবোর্ড চোখে পড়ছে।

সিলেট নগরীর অধিবাসীর বিশাল একটি অংশের কলোনিতে বসবাস। কলোনির মালিকরা এখনও আগের মতো ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন। নগরীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরানের কলোনিসহ বেশ কিছু ভবন রয়েছে। তিনি সমকালকে বলেন, করোনাকালে অনেকে বাসা ছেড়ে দেন। অর্ধেক বাসা এখনও খালি পড়ে আছে। সিলেট নগরীর প্রতিটি এলাকায় বিপুলসংখ্যক ভাড়াটিয়া বসবাস করেন। এসব ভবন ও বাসাবাড়ির অনেক মালিক এখনও ভাড়াটিয়ার অপেক্ষায় আছেন।

রাজশাহীতে মেস মালিকদের বিপুল আর্থিক ক্ষতি :রাজশাহী থেকে সৌরভ হাবিব জানান, শিক্ষানগরী রাজশাহীর বাসাবাড়ি ও মেসগুলো মোটামুটি সারাবছর শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ থাকে। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে গত দেড় বছর এসব বাসা ও মেস শিক্ষার্থীশূন্য ছিল। এ সময় রাজশাহীর মেস মালিকরা কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনেছেন বলে সংশ্নিষ্টদের দাবি। দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীশূন্য থাকায় ছোট ছোট মেসের মালিকরা তাদের মেসকে বাসায় রূপান্তর করে পরিবারকে ভাড়া দিয়েছেন। তবে সম্প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে থাকায় আবারও পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে বাসা ও মেস।

রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান জানান, শিক্ষানগরী রাজশাহীতে প্রায় পাঁচ হাজার মেস রয়েছে। এতে প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী সারাবছর পর্যায়ক্রমে থাকেন। তাদের কারণে কখনোই বাসা ও মেস ফাঁকা থাকত না। তাদের কাছ থেকে থাকা-খাওয়া বাবদ মাসে ৭০০ কোটি টাকা পেতেন মেস মালিকরা। গত দেড় বছর করোনার কারণে এসব মেস একেবারেই শূন্য ছিল। মেস মালিকদের হিসাবমতে, গত দেড় বছরে অন্তত সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে মেস মালিকদের।

তিনি বলেন, যেসব বাসাবাড়ি ও মেসের বিপরীতে ব্যাংক লোন রয়েছে, তাদের অনেকেই দেউলিয়া হয়ে যাবেন।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকার মেসগুলোতে শতভাগ আসন বুক হয়েছে। তবে বাজার এলাকার মেসগুলোর ৪০ শতাংশ এখনও ফাঁকা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে প্রায় ৭০ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, করোনার সময় এসব বাসার প্রায় ৩০ শতাংশ ফাঁকা ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং স্কুল খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আবার পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এখন খুব বেশি বাসা ফাঁকা নেই।

ইতিবাচক পরিস্থিতি খুলনায় :খুলনা থেকে মামুন রেজা জানান, করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর অফিস ও কর্মসংস্থান সচল হওয়ায় খুলনায় এখন আর ‘টু-লেট’ সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি নেই। করোনার সময় কিছু ভাড়াটিয়া গ্রামে চলে গেলেও তাদের অধিকাংশ আবার ফিরে এসেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, করোনার লকডাউন চলাকালে খুলনায় বাসা ছেড়েছেন খুব কমসংখ্যক মানুষ। যেসব বাড়ি ফাঁকা হয়েছিল, সেগুলোতে কয়েক মাসের মধ্যেই ভাড়াটিয়া উঠে গেছে। নগরীর হাজি ইসমাইল লিঙ্ক রোডের ২৯ নম্বর বাড়ির মালিকের ছেলে ইয়াসির আরাফাত জানান, গত মে মাসে তাদের চারতলা ভবনের একটি ইউনিট খালি হয়েছিল। ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া তার পরিবারকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে গেছেন। আগস্ট মাসে ইউনিটটি ভাড়া হয়ে যায়।

বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিক ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনায় অভিজাত বহুতল ভবনের বাইরে সাধারণ বাড়িগুলোর ভাড়া মানুষের নাগালের মধ্যেই রয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে গ্রামে চলে গেলেও ফিরে এসেছেন। নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ মো. গাউসুল আজম বলেন, করোনায় কাজ হারিয়ে খুব বেশি লোক এলাকা ছাড়েননি। বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হওয়ায় তার ওয়ার্ডে বাড়ি ভাড়া পাওয়া সব সময় কঠিন।

কুমিল্লায় এত টু-লেট আগে দেখেনি কেউ :কুমিল্লা থেকে কামাল উদ্দিন জানান, নগরীর বাদুরতলার ডাক্তারপাড়ায় পাশাপাশি তিনটি বড় ভবন। প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাট খালি। সেখানে ঝুলছে কয়েকটি ‘টু-লেট’। ওই এলাকার পাশের তালপুকুরপাড় এলাকায়ও কয়েকটি বাসার সামনে টু-লেট ঝুলছে। এভাবে নগরীর অধিকাংশ এলাকার বহুতল ভবন থেকে শুরু করে স্বল্প ভাড়ার ঘরও ফাঁকা পড়ে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, নগরীতে এর আগে কখনও একসঙ্গে এত টু-লেট দেখা যায়নি।

সরেজমিনে নগরীর রেইসকোর্স, ঠাকুরপাড়া, শাসনগাছার উত্তরা আবাসিক এলাকা, চকবাজার, মুরাদপুর, হাউজিং এস্টেট, দক্ষিণ চর্থা, উত্তর চর্থা, বজ্রপুর, চাঁনপুর, শাকতলা, গোবিন্দপুর, মনোহরপুর, বিষ্ণুপুরসহ অধিকাংশ এলাকায় অনেক বাড়ির সামনেই টু-লেট ও বাড়িভাড়া লেখা ঝুলতে দেখা গেছে।

নগরীর ঠাকুরপাড়া এলাকার একটি ভবনের মালিক আবদুল খালেক জানান, করোনার সময় তার তিন ভাড়াটিয়ার মধ্যে ছিল দুটি প্রবাসীর পরিবার এবং একজন শিক্ষক পরিবার। তারা সময়মতো কয়েক মাস ভাড়া দিতে পারেননি। তিন মাসের ভাড়া দিতে না পেরে গত মাসে তারা বাড়িতে চলে যান। নগরীর একটি অভিজাত মার্কেটের শাড়ি বিতানের কর্মচারী সালেহ আকরাম বলেন, তিন ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। দক্ষিণ চর্থা এলাকায় আট হাজার টাকা ভাড়ায় দুই রুমের বাসায় থাকতেন। এখন সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই পরিবারকে মুরাদনগরে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সেখানে অন্তত ঘর ভাড়া তো দিতে হবে না।

স্বল্প আয়ের লোকদের নিয়ে নগরীতে কাজ করেন ব্র্যাক কর্মী সামছুন নাহার। তিনি বলেন, করোনা শেষ হতে চললেও অনেকের হাতে কাজ নেই। কিছু কাজ থাকলেও উপার্জন করা অর্থ দিয়ে স্বল্প আয়ের মানুষের দু’বেলা খাবারই জোটে না। তাই অনেকেই বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন।

নগরীর টাউন হল এলাকার খুদে কাপড় ব্যবসায়ী তফাজ্জল হোসেন বলেন, করোনার কারণে প্রায় এক বছর ধারদেনা করে চললেও এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। পাঁচ মাস ঘরভাড়া দিতে না পেরে পরিবারকে দেবিদ্বারে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আলী আহসান টিটু সমকালকে বলেন, করোনার কারণে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের লোকদের এখন নাজুক অবস্থা। মাসিক বাজার খরচ জোগাড় করাই অনেকের জন্য কষ্টকর। বাড়িভাড়া দিতে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে অনেকেই গ্রামে বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখাই এখন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

যশোরে ভাড়াটিয়া মিলছে না, উপরন্তু বেড়েছে হোল্ডিং ট্যাক্স :যশোর থেকে তৌহিদুর রহমান জানান, যশোরের ঝুমঝুমপুর এলাকার বাড়ি মালিক বাদশা বিশ্বাসের দুটি বাড়িতে রয়েছে ১১টি ফ্ল্যাট। এগুলো সব সময় ভাড়াটিয়ায় পরিপূর্ণ থাকত। কিন্তু করোনার শুরুতে খালি হয়ে যায় সাতটি ফ্ল্যাট। এক বছর পর চারটি ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া এলেও খালি আছে এখনও তিনটি। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে ভাড়া ঠিকমতো পাননি। অনেকে ভাড়া না দিতে পেরে ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছেন। এখন নতুন করে ভাড়াটিয়া আসছে। কিন্তু তার ফ্ল্যাট ভাড়া চার হাজার; ভাড়াটিয়ারা এসে বলে দুই-তিন হাজার টাকা। এ কারণে তিনটি ফ্ল্যাট এখনও খালি পড়ে আছে। এ ধরনের সমস্যায় পড়েছেন প্রায় সব বাড়িওয়ালা।

উপশহর এলাকার বাড়ি মালিক আরিফুজ্জামান জানান, তার তিনতলা বাড়িতে পাঁচটি ফ্ল্যাটের মধ্যে দুটি খালি পড়ে আছে সাত মাস। ওই দুটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। করোনার সময় চাকরি হারান তারা। দীর্ঘ কয়েক মাস ভাড়া দিতে না পেরে গ্রামে চলে গেছেন। যশোরের একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক শাহিনুর রহমান জানান, করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় বেতন হয়নি। সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান তিনি। বেতন স্বাভাবিক হলে আবার পরিবার নিয়ে শহরে উঠবেন।

যশোর সরকারি এমএম কলেজ এলাকার বাসিন্দা সরদার মুজিবুর রহমান বলেন, করোনার আগে কলেজের আশপাশে কোনো বাসাবাড়ি ফাঁকা থাকত না। আর এখন বাড়িতে ভাড়াটিয়া উঠছে না। উপরন্তু অতিরিক্ত গৃহকরের চাপে নাকাল হয়ে পড়েছেন। কর কমাতে অনেকে পৌরসভার কার্যালয়ে ছুটছেন। হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে পৌর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আগে তার হোল্ডিং ট্যাক্স ছিল ১২৭ টাকা। সেটি বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে তার কোনো ঘর ভাড়া বাড়েনি। এর পরও তার হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে।

সূত্রঃ সমকাল।
তারিখঃ অক্টোবর ২৫, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ