Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

র‍্যাব ও সাতজনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা যে প্রভাব ফেলতে পারে (২০২১)

Share on Facebook

লেখক:মারুফ মল্লিক।

প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যাবের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মার্কিন অর্থ দপ্তর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে সাতজন বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য এ নিষেধাজ্ঞা ক্ষতিকর ও হতাশার। ভবিষ্যতে উত্তর কোরিয়া, চীন, রাশিয়া, ইরানসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের নামও উচ্চারিত হবে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন হিসাব নিকাশের প্রয়োজন পড়তে পারে, যা দেশের স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে এ নিষেধাজ্ঞা।যদিও সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন কূটনৈতিক কথাবার্তায় নিষেধাজ্ঞার উপসর্গ ফুটে উঠছিল। কূটনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে ফিসফাস করে কথাও হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে এ নিষেধাজ্ঞা নেমে এল। বিবেচনা করতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র হুট করে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করল কেন? যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে মাদকবিরোধী অভিযানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এই মানবাধিকার লঙ্ঘন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

এতে জানানো হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে র‍্যাবের বিরুদ্ধে ৬০০ জনকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা ও ৬০০ জনকে গুম করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে কক্সবাজারে পৌর কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এই বিজ্ঞপ্তিতে। এ ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক, গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

র‍্যাবের বিরুদ্ধে এক দশক ধরেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনাও হয়েছে। সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন। তাই কৌশল হিসেবে শুরুতেই এসব বিষয়ে কোনো কথা না বলে এখন নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে বাংলাদেশকে চাপে রাখার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র সম্মেলনেও বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেনি।

চাপের কারণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে রাশিয়া ও চীনকে কেন্দ্র করে নতুন এক বিশ্বের উদ্ভব ঘটছে। নতুন এই বিশ্বব্যবস্থায় রাশিয়া থেকে মিলছে অস্ত্র এবং চীন থেকে মিলছে ঋণ, সস্তা পণ্য ও প্রযুক্তি। ফলে, অনেকেই চীন ও রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে। তারপরও আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে পিছু হটেছে যুক্তরাষ্ট্র। পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তেও সুবিধা করতে পারছে না।

যুক্তরাষ্ট্র তাই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা বলে বিভিন্ন দেশকে চীন-রাশিয়ার অক্ষ থেকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করবে। বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের জোটভুক্ত করতে চাইবে। বাংলাদেশ পুরোপুরি চীন-রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে আছে, তা বলা যাবে না; বরং সবদিকেই ভারসাম্য রক্ষা করে এত দিন চলছিল। কিন্তু ভারসাম্যের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, বাংলাদেশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় সামরিক জোটে যোগ দিক— এটা যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া। বাংলাদেশ এখনো এসব জোটে যোগদানের প্রতিশ্রুতি না দেওয়ায় চাপ আসছে। এই চাপ অব্যহত থাকবে বলে মনে হয়। কারণ, চাপ আসার পরিস্থিতি সরকার নিজেই করে রেখেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পুরোনো। এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়টি বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের নির্বাচনব্যবস্থা কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন নির্বাচনীব্যবস্থাকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ, র‍্যাব ছাড়াও সরকারি দলের ‘হেলমেট বাহিনী’ হামলা করেছে। তুচ্ছ সমালোচনামূলক বক্তব্যের জন্যও সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা ঘটেছে, লোকজনকে আটক করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষহীন চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক সহিংসতা হচ্ছে। গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনেরা জীবিত না হোক অন্তত কবরের সন্ধান চেয়ে মানববন্ধন করছেন। এসব কোনো কিছুই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গোপন নেই।

সবকিছু যুক্তরাষ্ট্রের নজরে থাকলেও ওবামা বা ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র সময়মতো কেবল তার ‘অস্ত্র’ প্রয়োগ করেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে পরোক্ষভাবে বাণিজ্যসহ কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপও যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করতে পারে। বৈদেশিক ঋণের প্রবাহে ভাটা পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। সর্বোপরি কারও ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে সম্পদ থাকলে তা বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নানা কথা বলে বিষয়টিকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে তাঁরা তা বলতে শুরু করেছেন। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত বিভিন্ন দেশের উদাহরণও তুলে ধরতে পারেন। বলতে পারেন, ইরান, উত্তর কোরিয়া, কিউবা, ভেনেজুয়েলা ও চীন নানা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভালোভাবেই টিকে আছে। আমাদের কিছু হবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য পরিস্থিতি ভিন্ন।

২০০৮ সালের বিশ্বরাজনীতির পরিস্থিতি ও বর্তমান পরিস্থিতি এক নয়। তখন রাজনীতি সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে আবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধ গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। চীন-রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকলে দিন দিন পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন জোটে যোগ দিলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোর ব্যাপারে বাংলাদেশকে ছাড় দিতে পারে। কিন্তু নদীর জল মনে হয় অনেকটাই গড়িয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটে যোগ দেওয়া বেশ কঠিন। তা হলে ছাড় দিতে হবে অনেক বেশি। ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলে রোহিঙ্গা প্রবেশের ঢেউ আবার শুরু হতে পারে।

বলা যায়, আন্তর্জাতিক রাজনীতির জটিলতায় পড়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোনো জোটে যোগ দিলে আপসকামী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। না গেলে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশ হিসেবে ভাবমূর্তির সংকটে পড়বে। সংকটের এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে যদি দেশে কার্যকর গণতন্ত্র ফিরে না আসে।

*** ড. মারুফ মল্লিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ ডিসেম্বর ১২, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ