Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

সুগন্ধি সাবানের বিক্রিতে ভাটা অর্থাৎ ক্রয় ক্ষমতা কমছে (২০২৩)

Share on Facebook

লেখক:রাজীব আহমেদ।

এক.

বছরের শুরুতেই সুখবর। ছয় মাসে রপ্তানি আয় বেড়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ। প্রথম আলোতে রপ্তানি আয় নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন উপ বাণিজ্য সম্পাদক শুভংকর কর্মকার। তাঁর প্রতিবেদনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের উদ্ধৃতিতে ফুটে উঠেছে রপ্তানি আয়ে শুভংকরের ফাঁকি।

কী সেই ফাঁকি, সেটা একটু বুঝে নেওয়া যাক। বিশ্ববাজারে ২০১৯ সালে তুলার যে দাম ছিল, তা ২০২২ সালের শুরুতে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। তুলার মূল্যবৃদ্ধির কারণে সুতার দাম বাড়ে। সুতার দাম বাড়লে পোশাকের দাম বাড়ে। পোশাকের দাম বাড়লে রপ্তানি আয়ও বেশি দেখায়।

প্রশ্ন হলো, পরিমাণের দিক দিয়ে রপ্তানি বাড়ছে কি না। যদি না বাড়ে, তাহলে পোশাক কারখানায় বাড়তি সময় কাজ হবে না, শ্রমিকেরা অতিরিক্ত সময়ের (ওভারটাইম) কাজের মজুরি পাবেন না। শ্রমিকেরা আবার পণ্য ও সেবা কেনা কমিয়ে দেবেন। সব মিলিয়ে অর্থনীতিতে ভাটার টান লাগতে পারে।

পরিমাণের দিক দিয়ে রপ্তানি আয়ের তথ্য বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশ করে না। ফলে জানা যায় না রপ্তানির আসল চিত্র কী।

একইভাবে অর্থনীতি কেমন আছে, তা বোঝার সূচক হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জিডিপির হিসাব করে অর্থবছর ধরে। ফলে অর্থনীতিতে কী ঘটছে, তা মাসে মাসে অথবা তিন মাস অন্তরও জানা যায় না। খুচরা বিক্রি বা রিটেইল সেলের হালনাগাদ হিসাবও বিবিএসের কাছে নেই। তাহলে অর্থনীতির অবস্থা কী, বোঝা যাবে কী করে?

বছর ছয়েক আগে প্রথম আলো কার্যালয়ে এসেছিলেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তখন তিনি মাসে মাসে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য দুটি অপ্রচলিত সূচকের কথা বলেছিলেন—১. বন্দরে কনটেইনার ওঠানামার পরিস্থিতি। ২. সুগন্ধি সাবানের বিক্রির পরিস্থিতি।

সুগন্ধি সাবানের বিক্রি দেখে বোঝা যায় মানুষের জীবনযাত্রা কেমন যাচ্ছে। যখন মানুষের আয় ভালো থাকে, সংসারে চাপ কম থাকে, তখন সুগন্ধি সাবানের বিক্রি বাড়ে। আর যখন সংসার আর্থিক চাপে থাকে তখন সুগন্ধি সাবানের বিক্রিতে ভাটার টান লাগে।

দেশের নিত্যব্যবহার্য পণ্য খাত, যা ফাস্ট মুভিং কনজ্যুমার গুডস (এফএমসিজি) নামে পরিচিত, সেই খাতের উৎপাদন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, সাবান বিক্রি বাড়ছে না। বাজার অনেকটা স্থবির।
দেশে কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি বাজার নিয়ে নিয়মিত জরিপ করে। একটি সুপরিচিত প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, সাবানের বাজারের আকার বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সাবানের বাজারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৪ শতাংশের মতো। যেটা সাধারণত ১০ শতাংশের বেশি থাকে।

দুটি কোম্পানির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, এখন দেখা যাচ্ছে, মানুষ কম দামি সাবান বেশি কিনছে। বড় সাবানের বদলে ছোট ছোট সাবানের বিক্রি বেশি। কেন এই প্রবণতা, তা জানতে চাইলে তাঁরা একবাক্যে বললেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে খরচের খাতে বিগত কয়েক বছরে যুক্ত হয়েছিল হাত ধোয়ার তরল সাবান, যা হ্যান্ডওয়াশ নামেই বেশি চেনেন মানুষ। তবে অনেক পরিবার যে হ্যান্ডওয়াশ কেনা ছেড়ে দিয়েছে, তা দেখা যায় বাজারের পরিসংখ্যানে। শীর্ষস্থানীয় একটি কোম্পানি বলছে, পরিমাণের দিক দিয়ে এক বছরে হ্যান্ডওয়াশ বিক্রি ৬ শতাংশ কমেছে। কয়েক বছর ধরে বিক্রি বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৪০ শতাংশ।
বেসরকারি এসব হিসাবে যাঁদের আস্থা নেই, তাঁরা পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যান দেখতে পারেন। সংস্থাটির হিসাব বলছে, সাবান ও কাপড় ধোয়ার গুঁড়া সাবানের উৎপাদন গত মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের মধ্যে চার মাসই কমেছে। আগস্টে কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ২৪ শতাংশ। পরের মাসগুলোর (নভেম্বর ও ডিসেম্বর) হিসাব এখনো তৈরি হয়নি।

দুই.

কনটেইনার পরিবহনেও ভাটার টান লেগেছে। চট্টগ্রাম বন্দর, কমলাপুর কনটেইনার ডিপো ও পানগাঁও নৌ টার্মিনালের কনটেইনারের সম্মিলিত হিসাবে ২০২২ সালে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন হয়েছে ৩১ লাখ ৩৩ হাজারটি (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা হিসাব করে), যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় আড়াই শতাংশ কম। অবশ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, পণ্য পরিবহন ২ শতাংশের কিছু বেশি বেড়েছে।
মনে রাখতে হবে, পণ্য পরিবহন ২ শতাংশ বৃদ্ধি দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ, বাংলাদেশের জিডিপি প্রতিবছর ৭ শতাংশের মতো বাড়ে এবং হিসাবটি মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে করা হয়।

 তিন.

প্রশ্ন হলো, অর্থনীতির অবস্থা বোঝার জন্য প্রচলিত সূচক বাদ দিয়ে অপ্রচলিত সূচকের দিকে কেন যেতে হবে, যেখানে জিডিপির মতো বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য একটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রশ্নটির উত্তর একটু পরে, আগে জেনে নিই জিডিপি কী?

দেশের অভ্যন্তরে যত পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তার মূল্য হিসাব করে জিডিপি নির্ধারণ করা হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। এটা স্থির মূল্যে। উল্লেখ্য, স্থির মূল্য হলো একটি বছরকে ভিত্তি ধরে ওই বছরে পণ্য ও সেবার যে দাম ছিল সেটা দিয়ে পরের বছরগুলোর উৎপাদনের হিসাব করা। এতে মূল্যস্ফীতির কারণে উৎপাদনের আর্থিক মূল্য যেটা বাড়ে, সেটা বাদ দেওয়া হয়।

জিডিপি বড় হওয়া মানে হলো অর্থনীতি বড় হওয়া। তবে মানুষের ভালো থাকা, খারাপ থাকা, জিডিপি দিয়ে বোঝা যায় না। মানুষের অসুখও জিডিপি বাড়ায়, সড়ক দুর্ঘটনা জিডিপি বাড়ায়। ধরুন, আপনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলেন। হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ব্যয় পাঁচ লাখ টাকা। আপনার সব সঞ্চয় শেষ হলো, জিডিপিতে যোগ হলো পাঁচ লাখ টাকা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দেশের মানুষের সঞ্চয় কমছে। তিন অর্থবছর আগে জাতীয় সঞ্চয় জিডিপির অনুপাতে ৩১ শতাংশের বেশি, যা কমতে কমতে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে ২৬ শতাংশের নিচে নেমেছে। কিন্তু একই সময়ে জিডিপি বেড়েছে।

টাকা ব্যাংকে রাখবেন কি না; স্ত্রীর সোনার গয়না বিক্রি করে দেবেন, নাকি আরও কিনবেন; শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন কি না, করলে কোন খাতের কোম্পানিতে; এখন কি জমি–ফ্ল্যাট কেনার সময়; সংসারে মিতব্যয়ী হবেন নাকি ইচ্ছেমতো টাকা ওড়াবেন—

জিডিপি ও মাথাপিছু আয় রাজনীতিবিদদের বেশ পছন্দ। কারণ, এতে বৈষম্য ধরা পড়ে না। বাংলাদেশে রাজনীতিবিদেরা জিডিপি ও মাথাপিছু আয় নিয়ে যত কথা বলেন, ততটাই চুপ থাকেন গিনি সহগ নিয়ে। যে সহগ বৈষম্য প্রকাশ করে এবং সেখানে বাংলাদেশ একটি বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও দেশের মানুষের মুক্তিসংগ্রামের বড় কারণ ছিল বৈষম্য।

দেশের অর্থনীতি ও মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য পরিমাপের আরও কিছু সূচক রয়েছে—জেনুইন প্রগ্রেস ইন্ডিকেটর, ওয়েলবিয়িং ইনডেক্স, গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস ইনডেক্স, হ্যাপি প্ল্যানেট ইনডেক্স ইত্যাদি। যদিও এসব সূচক তেমন কেউ গ্রহণ করেনি। আবার কেউ কেউ করেছে। ভুটান জিডিপি না মেপে মানুষের সুখ মাপে।

জিডিপির হিসাব নিয়ে কারসাজির অভিযোগও রয়েছে। তাই আপনি যদি অর্থনীতির অবস্থা নিজে বুঝতে চান, তাহলে কনটেইনারের জাহাজে ওঠানামা এবং সুগন্ধি সাবানের বিক্রি হতে পারে একটি কার্যকর সূচক। কনটেইনার দিয়ে আপনি সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন, আর সুগন্ধি সাবান বিক্রির চিত্র দেখে বুঝতে পারবেন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে আছে কি না।
চার.

এতক্ষণ পড়ার পর ভাবছেন, অর্থনীতি বুঝে কী করবেন? উত্তর হলো, টাকা ব্যাংকে রাখবেন কি না; স্ত্রীর সোনার গয়না বিক্রি করে দেবেন, নাকি আরও কিনবেন; শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করবেন কি না, করলে কোন খাতের কোম্পানিতে; এখন কি জমি–ফ্ল্যাট কেনার সময়; সংসারে মিতব্যয়ী হবেন নাকি ইচ্ছেমতো টাকা ওড়াবেন—সব সিদ্ধান্তের জন্যই তো অর্থনীতি বোঝা দরকার।

মার্কিন অর্থনীতিবিদ টাইলার কোয়েন বলেছেন, ‘অর্থনীতি সবখানে এবং অর্থনীতি বুঝতে পারা আপনাকে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। ভালো সিদ্ধান্ত জীবন সুখী করে।’

সূত্র:প্রথম আলো।
তারিখ:জানুয়ারী ০৮, ২০২৩

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ