Welcome to rabbani basra

আমার লেখালাখির খাতা

শুরু হোক পথচলা !

Member Login

Lost your password?

Registration is closed

Sorry, you are not allowed to register by yourself on this site!

You must either be invited by one of our team member or request an invitation by email at info {at} yoursite {dot} com.

Note: If you are the admin and want to display the register form here, log in to your dashboard, and go to Settings > General and click "Anyone can register".

পূর্ব-উত্তর দুই সীমান্তেই অস্বস্তিতে ভারত (২০২১)

Share on Facebook

লেখক: শুভজিৎ বাগচী, কলকাতা।

ঘটনা তিনটি জুলাই ও আগস্ট মাসের। প্রথম ঘটনাটি ২৬ জুলাই। এদিন ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে দুটি রাজ্য মিজোরাম ও আসামের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘাত হয়, গুলিতে নিহত হন পুলিশের ছয়জন সদস্য।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ২৮ জুলাই, নয়াদিল্লিতে তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামার দূতের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাক্ষাৎ। ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এই দালাই লামাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে চীন।

তৃতীয় ঘটনাটি আগস্ট মাসের শেষে যখন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করল।

‘গত দেড় দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বিষয়টিকে চীনের গুরুত্ব দেওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই রয়েছে।’

সঞ্জীব বড়ুয়া, নিউইয়র্কের বার্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক

আপাতদৃষ্টে ঘটনা তিনটি বিচ্ছিন্ন হলেও ভারতের জন্য গভীরভাবে তা সংযুক্ত ও উদ্বেগজনক। এই সংযুক্তির ক্ষেত্রটা মূলত চীনকেন্দ্রিক। চীনের পশ্চিমে রয়েছে শিনজিয়াং ও দক্ষিণ-পশ্চিমে তিব্বত। চীনের এ দুটি প্রদেশের আয়তন প্রায় ভারতের সমান। ভারতের উত্তর–পূর্বের অংশে অরুণাচল প্রদেশ থেকে লাদাখ (যা ২০১৯ সাল পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের অংশ ছিল) বা কাশ্মীরের পুরোটাই শিনজিয়াং ও তিব্বতের পশ্চিমে বা দক্ষিণ। সীমান্তের উত্তর অংশে সংঘাত হলে তার প্রভাব সীমান্তের পূর্বে বা উত্তর-পূর্ব কোণে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আবার পূর্ব ভারতের সীমান্তে কোনো সংঘাত হলে তার প্রভাব পড়বে উত্তরে। এই উত্তর সীমান্ত লাগোয়া হলো চীনের শিনজিয়াং প্রদেশ। ফলে আফগানিস্তানের যখন সেনা প্রত্যাহার হয়, তিব্বত নিয়ে ওয়াশিংটন যখন নতুন করে নাড়াচাড়া শুরু করে বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ভারতে কোনো সংঘাত হয়, তখন সব কটি ঘটনাই ভারতের জন্য উদ্বেগের হয়ে দাঁড়ায়।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার

৯৮ বছর বয়সী মার্কিন কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার এখনো সক্রিয়। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরে তিনি লিখেছেন, এবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘শরিকেরা আশাহত, শত্রুরা উৎসাহিত ও পর্যবেক্ষকেরা বিভ্রান্ত হবে।’ এশিয়ায় গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য শরিক ভারত। সেই শরিক যে আশাহত, তা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কথায় পরিষ্কার। দিল্লিতে ২৮ জুলাই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের পাশে বসে জয়শঙ্কর বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের (আফগানিস্তানে) বিরাট সামরিক উপস্থিতি ছিল, সেটা চলে গেলে তার প্রভাব পড়বেই। এটা ভালো না মন্দ, প্রশ্ন তুলে লাভ নেই। কূটনীতিতে আজ যা হাতে আছে, তা দিয়েই কাজ চালাতে হয়।’

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চীনবিষয়ক বিভাগের অধিকর্তা রাস দোসি জুলাই মাসে প্রকাশিত তাঁর দ্য লং গেম: হাউ দ্য চায়নিজ নেগোসিয়েট উইথ ইন্ডিয়া বইয়ে লিখেছেন, কখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কখনো কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বিনিয়োগ করে চীন কয়েক দশকে যখন লাগাতার উন্নতি করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ‘শিল্পহীন, ইংরেজি-বলা লাতিন আমেরিকার একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা জমি-গাড়ি কেনাবেচা এবং সম্ভবত বিশ্বময় কর ফাঁকি দেওয়ায়।’

আফগানিস্তান লাগোয়া পাকিস্তানের খাইবার গিরিপথ থেকে জম্মু-কাশ্মীরের দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক খারাপ। ফলে আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজদের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থন জম্মু-কাশ্মীরে অশান্তি বাড়াতে পারে, যেমনটা বেড়েছিল ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে ১৯৯৩ সালে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছিল, সে সময় অন্তত ৪০০ আফগান গেরিলা পাকিস্তান টপকে কাশ্মীরে ঢুকে পড়েছিল।

বিস্তর অর্থ ব্যয় ও সেনা মোতায়েন করে, কার্যত গৃহযুদ্ধ চালিয়ে ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে ভারত ১৯৯০-এর দশকে কাশ্মীরকে নিয়ন্ত্রণে এনেছিল। এ ছাড়া বর্তমানে আফগানিস্তানে ভারতের বিনিয়োগ রয়েছে। এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ভারতের জন্য অস্বস্তিকর। দিল্লিকে এখন তালেবানের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হচ্ছে। এরপর ভারত কতটা এবং কত দিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্য শরিক থাকে, তা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।

চীন নিয়ে দুশ্চিন্তা

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের প্রতি শুধু পাকিস্তান নয়, চীনেরও আগ্রহ রয়েছে। তাই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মাসখানেক আগে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের সফর তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি দিল্লিতে দালাই লামার দূতের সঙ্গেও বৈঠক করে চীনকে বার্তা দিলেন যে তিব্বতের স্বাধীনতার দাবিকে এখনো অস্বীকার করে না যুক্তরাষ্ট্র। ভারতের অনুমতি ছাড়া এই বৈঠক সম্ভব ছিল না, তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে এই দাবি সমর্থন করে দিল্লিও। বৈঠকটি চীনকে অসন্তুষ্টও করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও ইঙ্গিত দিয়েছেন, চীনের বিরুদ্ধে অবস্থানের প্রস্তুতি জোরদার করা হবে। মার্কিন কূটনীতিক সাবেক রাষ্ট্রদূত নিক হ্যালে বলেছেন, চীনের বিরুদ্ধে অবস্থানে ভারতকে পাশে পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ভারতকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে হবে, প্রধানত দুটি কারণে।

প্রথমত, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি মোকাবিলা করার জন্য ২০০৭ সালে তৈরি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত জোট (কোয়াড)। তখন ভারতের পক্ষে এটা ভাবা সম্ভব ছিল না যে একদিন আফগানিস্তানে পরাজিত হবে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ২০০৭ সালে ভাবা যায়নি, চীন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে দেবে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের চীনবিষয়ক বিভাগের অধিকর্তা রাস দোসি জুলাই মাসে প্রকাশিত তাঁর দ্য লং গেম: হাউ দ্য চায়নিজ নেগোসিয়েট উইথ ইন্ডিয়া বইয়ে লিখেছেন, কখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কখনো কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে বিনিয়োগ করে চীন কয়েক দশকে যখন লাগাতার উন্নতি করেছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ‘শিল্পহীন, ইংরেজি-বলা লাতিন আমেরিকার একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষতা জমি-গাড়ি কেনাবেচা এবং সম্ভবত বিশ্বময় কর ফাঁকি দেওয়ায়।’ খোদ মার্কিন কূটনীতিক অশীতিপর কিসিঞ্জার ও সরকারি প্রতিনিধি দোসির মন্তব্যের পর ভারতকে তাই দুই দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।

দ্বিতীয়ত, ইতিহাস বলছে, চীনের সঙ্গে লড়াইয়ে (১৯৬২) ওয়াশিংটনকে পাশে পায়নি দিল্লি। অথচ খানিকটা যুক্তরাষ্ট্রের ভরসাতেই চীনের সঙ্গে লড়তে গিয়েছিল ভারত। এ নিয়ে জানা যায় ব্রুস রিডলের জেএফকেস ফরগটেন ক্রাইসিস: তিব্বত, দ্য সিআইএ, অ্যান্ড দ্য সিনো–ইন্ডিয়ান ওয়ার বইয়ে। ব্রুস রিডল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএতে প্রায় ৩০ বছর চাকরি করেছেন। তিনি এই বইয়ে লিখেছেন কীভাবে পঞ্চাশের দশকে যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষুব্ধ তিব্বতিদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিত। ১৯৬১ সালে সিআইএ ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অর্থনীতিবিদ জন গলব্রেথকে জানিয়েছিল, পূর্ব পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে প্যারাস্যুটারদের তিব্বতে নামার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

চীন-ভারত যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে ভারতের আশা ছিল, যুক্তরাষ্ট্র তার যুদ্ধবিমানের বহর নিয়ে পাশে দাঁড়াবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গলব্রেথের কাছে জানতে চেয়েছিল, এর প্রয়োজন আছে কি না। গলব্রেথ লেখেন, চীন সব ফ্রন্টে আক্রমণ করবে না, যেমন ভারতীয়রা আশঙ্কা করছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বিমান পাঠায়নি, ভারতের পরাজয় হয়। সর্বশেষ গত আগস্টেও আফগানিস্তানে স্থায়ীভাবে বিমানবাহিনীকে রাখতে রাজি হয়নি ওয়াশিংটন।
উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে কেন উদ্বেগে ভারত

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব বড়ুয়া তাঁর ডিউরেবল ডিজঅর্ডার: আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য পলিটিকস অব নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৬২ সালের যুদ্ধ উত্তর-পূর্বে যে ভারতের দুর্বলতা রয়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দিল্লিকে।

সঞ্জীব বড়ুয়া নিউইয়র্কের বার্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপকও। তিনি বললেন, ‘গত দেড় দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। বিষয়টিকে চীনের গুরুত্ব দেওয়ার আশঙ্কা অবশ্যই রয়েছে।’

দক্ষিণ তিব্বতের ঠিক নিচে উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়াও রয়েছে সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর প্রান্তে শিলিগুড়িতে রয়েছে ‘চিকেনস নেক’ করিডর। বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যবর্তী অঞ্চলে মুরগির গলার মতো সরু ২০ কিলোমিটারের করিডর পশ্চিম ভুটানের ডোকলামের থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে। ২০১৭ সালের জুন মাসে চীনা সেনারা ডোকলামে রাস্তা তৈরির উদ্যোগ নিলে নিরাপত্তার স্বার্থে ভারতীয় বাহিনী বাধা দেয়। ভারতের দাবি, ওই অংশ বিতর্কিত এবং তিন দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই ওই বিতর্কের মীমাংসা হতে হবে। চীনেরও দাবি, ওই অংশ তাদের। জমি বিনিময়ের মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে চীন দীর্ঘদিন ভুটানের সঙ্গে আলোচনা করছে। ডোকলাম-সংলগ্ন অঞ্চল চীন অধিগ্রহণ করতে পারলে ভারতের বিপদ আরও বাড়বে।

এই করিডর আটকে গেলে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে উত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশের পাঁচ জেলা ও সিকিম। এসব অঞ্চলে ছয় কোটির বেশি মানুষের বসবাস। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দিয়ে উত্তর-পূর্বে ও নেপাল দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গে ঢুকতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভারতকে ওই দুই দেশের অনুমতি লাগবে। স্রেফ চীন ও চিকেনস নেকের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই তাই বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে স্থায়ীভাবে ভারতের সম্পর্ক ভালো রাখা প্রয়োজন। এই অবস্থায় তিব্বত নিয়ে নাড়াচাড়া ভারতকে চিন্তায় রাখছে। বিশেষত যখন তিব্বতের দক্ষিণে উত্তর-পূর্ব ভারতে সংঘাত বাড়ছে।
উত্তর-পূর্বের একাধিক সমস্যা

গত ২৬ জুলাই মিজোরাম ও আসামের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের ছয়জন কর্মী নিহত হন। ১৯৮০–এর দশকে নাগাল্যান্ড ও আসামের মধ্যে গুলিবিনিময়ে ৩২ জন নিরাপত্তাকর্মী নিহত হওয়ার পরে এমন ঘটনা ঘটেনি। এর প্রধান কারণ রাজ্যগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা যায়নি। চীন যুদ্ধের অভিঘাতে ১৯৬০-এর দশকে আসাম ভেঙে পাঁচ রাজ্য: আসাম, অরুণাচল প্রদেশ (তখন নেফা), মেঘালয়, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ড তৈরি হয়।

কেন ৬০ বছর পরেও আসামের সঙ্গে রাজ্যগুলোর সীমানা নির্ধারণ করা গেল না? এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক সঞ্জীব বড়ুয়া বললেন, সমস্যার সূত্রপাত নতুন রাজ্যগুলো গঠনের মধ্য দিয়ে। এই রাজ্যগুলো আসামের ছোট ছোট জেলা ছিল। একটি রাজ্যের ভেতরে বিভিন্ন জেলার সীমানা নিয়ে নমনীয়তা থাকে। প্রশাসনিক কারণে জেলার সীমানা মাঝেমধ্যে পরিবর্তন করতে হয়। এ নিয়ে সমস্যা হয় না নমনীয়তার কারণে। কিন্তু নতুন রাজ্য গঠনের পরে সেই সীমানা রাজ্যের স্থায়ী সীমানায় পরিণত হয়, সমস্যা বাড়তে থাকে। এর কী ফল হতে পারে, তা ১৯৬০-এ ভাবা হয়নি, এখন অস্থির অবস্থা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। যদিও সমস্যা মেটাতে দিল্লির মধ্যস্থতায় বৈঠক শুরু হয়েছে।

সংঘাতের পেছনে দ্বিতীয় আরেকটি কারণ রয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা হিন্দুত্ববাদের অনেক সূত্র ইদানীং উত্তর-পূর্ব ভারতে আমদানি করছেন। যেমন গরু সংরক্ষণ আইন। এর ফলে আসামে গরুর ব্যবসা করা মুশকিল হবে। কিন্তু গরুর মাংস যে শুধু আসামেই খাওয়া হয় তা নয়, উত্তর-পূর্বের অন্য রাজ্যগুলোতেও হয়। কারণ, পাঁচটি রাজ্যে উপজাতি ও খ্রিষ্টানরা সংখ্যাগুরু। গরুর বাজারও বিরাট। গরু যায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসামের মধ্য দিয়ে। স্বাভাবিকভাবেই খাসি-নাগা-মিজো–অরুণাচলের অধিবাসীরা আইন নিয়ে খুশি নন, যদিও বলা হয়েছে, ‘বৈধ পরিবহন অনুমতি সাপেক্ষে’ গরু নিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু কার্যত সেটা সম্ভব নয়। ফলে প্রোটিনের প্রধান সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বাজার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা।

মিজোরামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসেনা রালটেক বললেন, গরু আসতে না দিলে তা মিজোরাম লাগোয়া মিয়ানমার থেকে আনবেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।

যদিও মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে দেশটির চিন প্রদেশের মানুষ মিজোরামে প্রবেশ শুরু করলে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ভারত। এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা। এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মিজোরামের মতবিরোধও প্রকাশ্যে এসেছে। কারণ, চিন প্রদেশ ও মিজোরামের অনেক বাসিন্দার মধ্যে জাতিগত আত্মীয়তা রয়েছে।

আরও একাধিক বিষয় নিয়ে সমস্যা চলছে উত্তর-পূর্ব ভারতে। নাগাল্যান্ডের শক্তিশালী দল ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড-আইজ্যাক মুইভার (এনএসসিএন-আইএম) সঙ্গে বৃহত্তর নাগাল্যান্ড নিয়ে কেন্দ্রের আলোচনা ও অন্তর্বর্তী চুক্তি ভেস্তে গেছে। নাগাল্যান্ডে সমান্তরাল সরকার চালানো এনএসসিএন-আইএম মাসখানেক আগে ১২ ঘণ্টার ধর্মঘট করে নতুন আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এ ছাড়া অরুণাচল প্রদেশে চাকমা-হাজংদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সংঘাত এখন রোজকার ঘটনা।

এসবের মধ্যেই উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিজোরামের দিক থেকে সীমান্ত পেরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে কিছু অস্ত্রশস্ত্র ঢুকেছে বলে সূত্র মারফত জানা গেছে। উল্লেখ্য, ২০০৯-এ ক্ষমতায় আসার পরে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতবিরোধী কাজকর্ম বন্ধে ভারতের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। উত্তর–পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভিন্ন সংগঠনের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকে হস্তান্তরও করে ঢাকা।

পাশাপাশি মেঘালয়ে পুলিশের গুলিতে এক সাবেক জঙ্গিনেতা নিহত হওয়ায় সম্প্রতি সেখানে সহিংস বিক্ষোভ হয়েছে। মানুষ অসন্তুষ্ট, পরিস্থিতি থমথমে। আর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নিজেই আসাম-লাগোয়া উত্তরবঙ্গে নতুন রাজ্য গড়ার চেষ্টা করছে। এতেও উত্তেজনা বাড়ছে।

১৯৭০–৮০–এর পরে পূর্ব ভারতে এত সমস্যা একসঙ্গে মাথাচাড়া দেয়নি, পূর্ব ও উত্তর—দুই সীমান্তেই একসঙ্গে চাপও দীর্ঘদিন বাড়েনি। দুই সীমান্তেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে ভারত কীভাবে সামাল দেয়, সেদিকে নজর থাকবে বিশ্বের।

সূত্রঃ প্রথম আলো।
তারিখঃ সেপ্টম্বর ১৯, ২০২১

রেটিং করুনঃ ,

Comments are closed

বিভাগসমূহ

Featured Posts

বিভাগ সমুহ